Loading AI tools
বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী, ছাপচিত্রী, এবং লেখক। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবু নাজিব মোহাম্মদ তারেক, যিনি নাজিব তারেক হিসাবে পরিচিত, (জন্ম: সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭০) একজন বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী, ছাপচিত্রী[1] এবং লেখক।[2] বাংলাদেশে শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে তিনি সর্বপ্রথম অনলাইন গ্যালারির উদ্যোক্তা;[2][3][4] পাশাপাশি একবিংশ শতাব্দীর শিল্পীদের মধ্যে নিউ মিডিয়া চর্চার পথিকৃৎ হিসাবে বিভিন্ন ভার্চুয়াল শিল্পপ্রকল্প চর্চার সূচনা করেছেন তিনি।[5] একক ও যৌথ মিলিয়ে তারেকের চিত্র প্রদর্শনীর সংখ্যা পঁচিশের আধিক।[6] ১৯৯৮ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তর কর্তৃক তিনি ভূষিত হন।
নাজিব তারেক | |
---|---|
জন্ম | আবু নাজিব মোহাম্মদ তারেক সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭০ |
জাতীয়তা |
|
শিক্ষা | স্নাতকোত্তর |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৮৯–বর্তমান |
শৈলী | নিউ মিডিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফারহানা আফরোজ |
সন্তান |
|
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | নিচে দেখুন |
আবু নাজিব মোহাম্মদ তারেক, ১৯৭০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দিনাজপুরে জন্ম নেন। তার পিতা তমিজউদ্দিন এবং মাতা নুজরাতুন নেসা। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পিতার পেশাজীবনের প্রভাবে তার ছেলেবেলা এবং শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক সময় কাটে ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী এবং দিনাজপুর জেলায়।[7] তৎকালীন গ্রামের পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর তিনি দিনাজপুর সরকারি কলেজে অধ্যায়ন করেছেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ছাপচিত্র বিভাগ স্নাতক বর্ষে ভর্তি হন।[2] একই বিভাগ থেকে ১৯৯৪ সালে স্নাতক এবং ২০০০ সালে স্নাতকোত্তর সম্মন্ন করেন তিনি।[8] ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল সহ প্রভৃতি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।[3]
তারেক কর্মজীবনে ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তর এবং ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দৈনিক জনকণ্ঠের প্রধান শিল্পী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[8] ২০০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত কাজ করেছেন একুশে টেলিভিশনে। পরবর্তীতে ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেডের ব্র্যান্ড মার্কেটিং কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[1][8] এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের একজন তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক।[6][9]
নাজিব মূলত একজন ছাপচিত্রী। তবে এছাড়াও তিনি তেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রেলিক সহ বিভিন্ন প্রচলিত-অপ্রচলিত শিল্প মাধ্যমে চিত্র রচনা করলেও মূলত মিশ্রমাধ্যমেই অধিকাংশ কাজ করেছেন।[10] প্রাথমিকভাবে প্রকৃতি, গঠন, প্রতিকৃতি তার চিত্রকর্মের বিষয় হয়ে ওঠে। তার প্রতিকৃতি অর্ধ-বাস্তবসম্মত এবং প্রায়শই পরাবাস্তব হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তার অধিকাংশ চিত্রকর্মে স্পন্দনশীল রঙ, এবং চলমান পশ্চাদপটের প্রাধান্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার চিত্রকর্মে ফিগারের বহুভঙ্গিম ভঙ্গুরতা লক্ষনীয় যা প্রায়শই ফবিস্ট শিল্পীদের শিল্পকর্মের স্মরণ করিয়ে থাকে।[11] অনন্তের অনুসন্ধান এবং নারী বনাম নারী চিত্রকর্মের স্থান এবং অভিপ্রায় বিশ্লেষণ করলে প্রায়শই পল ক্লীর চিত্রকর্মের স্মরণ হয়ে থাকে।[11] তারেক প্রায়শই চিত্র রচনায় আরবি বর্ণমালা এবং শব্দের ব্যবহার ঘটিয়েছেন।[12] তারেক মূলত নির্দিষ্ট কোনো মতবাদের পরিবর্তে চিত্রকলার বিভিন্ন মতবাদসমূহের সংশ্লেষলের মাধ্যমে নিজস্ব শিল্পধারা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। উদৃত বাক্যাংশে শিল্পী নাজিব তারেকের জীবনদর্শন সম্পর্কে যৌক্তিক উপলব্ধী পাওয়া যায়।
১৯৯৪ সালে তার দুইটি একক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।[3] "জয় মানবতা" তার প্রথম একক প্রদর্শনী যা ১৯৯৪ সালের মে মাসে ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ আয়োজিত হয়।[13] প্রদর্শনীর ৪২টি চিত্রকর্মের অধিকাংশের উপজীব্য বিষয় ছিল মানুষ। যেখানে মানবরূপের চিত্রায়ন ঘটেছে দূর্গা, যাযাবর, রাবণ, উল্লাস ইত্যাদি চরিত্রের অভিপ্রায়ে। বিবর্তনবাদে আস্থাশীল তারেকের কিছু চিত্রকর্মে মানবদেহের সঙ্গে অমাবনসাদৃশ মুখায়ব পাওয়া যায়, যার সাহায্যে তিনি মানুষের কুৎসিত চিত্র ফুটিয়ে তোলায় প্রয়াশ রেখেছেন।[10] উদৃত বাক্যাংশে তারেকের শিল্পদর্শন সম্পর্কে উপলব্ধী পাওয়া যায়।
২০০৯ সালে ভারতের মুম্বইয়ে অংশগ্রহণ করেন দলীয় চিত্র প্রদর্শনীতে। তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ অলঙ্করণ, সাহিত্য সাময়িকী সচিত্রকরণ, পোশাক নকশা[6][14] প্রভৃতি শিল্পমাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন।[2] বাংলাদেশে প্রথাগত বইয়ের প্রচ্ছদ এবং সচিত্রকরণকে তিনি আধুনিক শিল্পমাধ্যমে পরিণত করার প্রয়াস চালিয়েছেন।[3]
তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত দেশি–বিদেশি বহু একক ও দলীয়[15] প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।[1] তিনি ‘জলরং’ নামে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম একটি অনলাইন গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন।[1][8][6] জুলাই ২০১৫ সালে তিনি চিত্র প্রদর্শনী এবং সামগ্রিক শিল্প চর্চার জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরে স্টুডিও ৬/৬ প্রতিষ্ঠা করেন।[8][6][16]
অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল শিল্প প্রকল্প শিল্প আমাদের মানুষ করে তোলে বা আর্ট মেকস আস হিউম্যান শুরু হয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সামাজিক মাধ্যম ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে।[1] পরবর্তীতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ঢাকায় অবস্থিত স্টুডিও ৬/৬ গ্যালারিতে প্রকল্পটির একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।[1] এই চলমান প্রকল্পরের অংশ হিসেবে তারেক পুরোনো এবং নতুন অলংকরণের সমন্বয় রচনা করেছেন।[4] প্রকল্পের অধীনে প্রায় সহস্রাধিক শিল্পকর্ম প্রকাশ করা হয় ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোয়।[1][4]
নাজিব বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী ফারহানা আফরোজকে বিয়ে করেছেন। তাদের মেয়ে তাইয়ারা ফারহানা তারেক (জন্ম: ২২ নভেম্বর ১৯৯৪) একজন চিত্রশিল্পী[17][18][19] এবং শিল্প সমন্বয়কারী।[1] ছেলে ফারহান্দ আবু তামজিয়াদ। ২০১৭ সালের এপ্রিলে, ঢাকায় "নির্মাণ" শিরোনামে এই দম্পতির একটি যৌথ চিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।[8][20]
বছর | প্রদর্শনী | স্থান | টিকা |
---|---|---|---|
১৯৯৪, মে | জয় মানবতা | আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা | [13] |
১৯৯৪, সেপ্টেম্বর ৯-১৫ | জয় অব হিউমিনিটি | যোজন, ঢাকা | |
২০০৩, জানুয়ারি | হোয়াট ইজ আর্ট | ওয়েবসিটি, ঢাকা | |
২০১০, আগস্ট | ইকরা—অ্যা পেইন্টার'স স্যালুট টু রিডিং | গ্যালারি ইমপ্রেশন, ঢাকা | [12] |
২০১১, আগস্ট | ইকরা অ্যান্ড আদার্স | গ্যালারি ইমপ্রেশন, ঢাকা | |
২০১১, এপ্রিল | স্টোরি অব স্টোরি টেলিং | গ্যালারি ইমপ্রেশন, ঢাকা | |
২০১৬ | আর্ট মেকস আস হিউম্যান | স্টুডিও ৬/৬, ঢাকা | [1][21] |
২৯ নভেম্বর-১৫ডিসম্বের ২০১৯ | অ্যানিবডি ক্যান ডু ইট, প্লিজ ডু ইট... | দ্বীপ গ্যালারি, ঢাকা | বাংলা শিরোনাম: বিমূর্ততার গালগল্প[22] |
বছর | প্রদর্শনী | স্থান | সহশিল্পী | টিকা |
---|---|---|---|---|
১৯৮৯ | নাইন ইয়ং আর্টিস্ট | জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা | ||
১৯৯১ | জয়নুল উৎসব '৯১ | চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ||
বিজয়ের ২০ বছর | চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | |||
এক্সপ্র্রেশন '৯১ | বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, ঢাকা | |||
এক্সিভিশন অব ১০১ আর্টিস্ট | চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | |||
গ্রেটার দিনাজপুর আর্টিস্ট, এক্সপ্র্রেশন '৯১ | লোকভবন, দিনাজপুর | |||
প্রথম সমসাময়িক তরুণ শিল্পী প্রদর্শন '৯১ | বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, ঢাকা | |||
১৯৯২ | জয়নুল উৎসব '৯২ | চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ||
দ্বিতীয় সমসাময়িক তরুণ শিল্পী প্রদর্শন '৯২ | বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা | |||
অবসেশন গ্রুপ শো | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় | |||
দশম জাতীয় শিল্পী প্রদর্শন '৯২ | বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা | |||
১৯৯৩ | জয়নুল উৎসব '৯৩ | চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ||
গ্রেটার দিনাজপুর আর্টিস্ট, এক্সপ্র্রেশন '৯৩ | দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়,দিনাজপুর | |||
ন্যাশনাল মিনিয়েচার আর্ট এক্সিবিশন '৯৩ | গ্যালারি টোন, ঢাকা | |||
ষষ্ঠ এশিয়ন আর্ট বাইনাল বাংলাদেশ '৯৩ | বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা | |||
২০১৬ | ব্রেভ হার্ট | গ্যালারি কসমস, ঢাকা | [15][23][24] | |
মে ৬ - ১৫, ২০১৭ | নির্মাণ | স্টুডিও ৬/৬, ঢাকা | ফারহানা আফরোজ | [8][20] |
মে ৬ - ১৮, ২০১৭ | অবয়বি | স্টুডিও ৬/৬, ঢাকা | ফারহানা আফরোজ | [25] |
তারেক পদ্য,[3] প্রবন্ধ, আলোচনা প্রভৃতি লিখেছেন। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৬ সালে তার কবিতার চিত্রায়ন প্রসঙ্গে শিরোনামে চিত্রকলা ও সাহিত্য বিষয়ক বই প্রকাশিত হয়।[7] এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে দুই খণ্ডের শিশুদের ছবি আঁকার বই।[7][6]
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। ওসিএলসি 1114336582।Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.