Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
“টোটাল ফুটবল” (ডাচ: totaalvoetbal) হল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের একটি প্রভাবশালী কৌশল, যেখানে দলের একজন আউটফিল্ড খেলোয়াড় অন্য যেকোনো একজন খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করতে পারেন। এই কৌশলের প্রবর্তন করে ডাচ ফুটবল ক্লাব আয়াক্স ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ১৯৭৪ ফিফা বিশ্বকাপে এটি ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডস জাতীয় ফুটবল দল। বিখ্যাত ডাচ ফুটবল প্রশিক্ষক রাইনাস মিশেলস এর উদ্ভাবক (সে সময় তিনি আয়াক্স এবং নেদারল্যান্ডস উভয় দলেরই কোচ ছিলেন)।
টোটাল ফুটবল একজন খেলোয়াড় তার অবস্থান থেকে সরে গেলে অন্য একজন খেলোয়াড় সে অবস্থান পুরণ করেন। এতে দলের সাংগঠনিক কাঠামো বজায় থাকে। এই পদ্ধতিতে কোনো আউটফিল্ড খেলোয়াড় একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামেন না। যেকোনো খেলোয়াড় সফলভাবে অ্যাটকার, মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতে পারেন। শুধুমাত্র গোলরক্ষকের অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে।
টোটাল ফুটবলের সফলতা দলের ভেতরে খেলোয়াড়দের অভিযোজনের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে, বিশেষ করে মাঠের পরিস্থিতির ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের দ্রুত অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষমতার উপরও এর সফলতা নির্ভরশীল।
এই পদ্ধতিতে খেলার সময় আয়াক্স তাদের সবথেকে সুন্দর ফুটবল প্রদর্শন করায়। ১৯৭১–৭২ এবং ১৯৭২–৭৩, এই দুই মৌসুমে তারা ঘরের মাঠে ৪৬টি খেলায় সবকয়টিতে জয় লাভ করে এবং ১৯৭১–৭২ মৌসুমে সব মিলিয়ে তারা মাত্র একটি খেলায় পরাজিত হয়। ১৯৭২ সালে তারা পাঁচটি শিরোপা ঘরে তোলে (এরিদিভিজি, কেএনভিবি কাপ, ইউরোপীয়ান কাপ, ইউরোপীয়ান সুপার কাপ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ)।
টোটাল ফুটবলের ভিত্তি স্থাপন করে হাঙ্গেরি ১৯৫০ সালে, যা ফুটবল খেলায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনে। সে সময় তারা গোল্ডেন টিমের মাধ্যমে পুরো ফুটবল বিশ্বকে রাজত্ব করে। জ্যাক রেইনল্ডস,[1] যিনি ১৯১৫–১৯২৫, ১৯২৮–১৯৪০ এবং ১৯৪৫–১৯৪৭ সালে আয়াক্সের কোচ ছিলেন, প্রথম এই পদ্ধতিটি প্রত্যক্ষ এবং পরিশোধন করেন।
রাইনাস মিশেলস, যিনি রেইনল্ডসের অধীনে খেলেছেন, পরবর্তীতে আয়াক্সের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এই ধরনাটিকে পুনরায় পরিশোধন করেন যা বর্তমানে “টোটাল ফুটবল” নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭০ এর দশকে আয়াক্স এবং নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে এই কৌশল ব্যবহার করেন। মিশেলস বার্সেলোনায় চলে গেলে স্টিফান কোভাস এটির পুনরায় পরিশোধন করেন। ডাচ ফরোয়ার্ড ইয়োহান ক্রুইফ ছিলেন এই পদ্ধতির সবচেয়ে বিখ্যাত খেলোয়াড়।[2]
যদিও ক্রুইফ সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে মাঠে নামতেন, তিনি পুরো মাঠেই খেলতেন। যার ফলে টোটাল ফুটবলের মত একটি গতিশীল কৌশলের প্রয়োজন পড়ে। ক্রুইফের সতীর্থরা তার নড়াচড়ার সাথে নিজেদের মানিয়ে নেন। তারা প্রয়োজনমত অবস্থান পরিবর্তন করে খেলার ধারা বজায় রাখতেন।
টোটাল ফুটবলকে অনেক সময় আক্রমণাত্মক ফুটবল বলে অপব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে টোটাল ফুটবল হল প্ররোচক যা পাল্টা আক্রমনবিহীন এবং অবস্থান পরিবর্তন ও অধিক চাপ প্রয়োগ ভিত্তিক একটি ফুটবল কৌশল।[3] ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা, আর্সেনাল ফুটবল ক্লাব, অ্যাথলেতিক ক্লাব দি বিলবাও, এএফসি আয়াক্স এবং স্পেন জাতীয় ফুটবল দল যে পদ্ধতিতে খেলে তা “টিকি-টাকা” নামে পরিচিত। যার মূল রয়েছে টোটাল ফুটবলে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন সময় ক্রুইফ যে কৌশল ব্যবহার করতেন তার উন্নত ও বিবর্ধিত রূপই হল টিকি-টাকা। এই উন্নত কৌশলটি ব্যবহার করে লুইস আরাগনস এবং ভিসেন্তে দেল বস্ক-এর ইউরো ২০০৮, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ইউরো ২০১২ জয়ী স্পেন জাতীয় দল। পেপ গার্দিওলার অধীনে বার্সেলোনাও এই কৌশল ব্যবহার করে। টোটাল ফুটবলের সাথে টিকি-টাকার পার্থক্য হল এটি খেলোয়াড়দের অবস্থান পরিবর্তনের চেয়ে বল নিয়ন্ত্রণ এবং পাসিং-এ অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.