Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
টাকার ইতিহাস বলতে এশিয়ার, বিশেষত বাংলাদেশ সহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ও তিব্বতের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক মুদ্রাকে বোঝায়। বিভিন্ন অঞ্চলে ও সময়ে এটি টঙ্কা, তঙ্কা বা টংকা নামেও পরিচিত আছে বা ছিল। চতুর্দশ শতকে চালু হওয়া এই মুদ্রাটি একসময় সিল্ক রোডের একটি অন্যতম মুদ্রা হয়ে ওঠে। এর ইতিহাস বাংলা সালতানাত তথা ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যযুগীয় ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত।
আধুনিক সময়ে, বাংলাদেশী টাকাকে ঐতিহাসিক টাকার উত্তরাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ বাংলা ছিল টাকার শক্ত ঘাঁটি। বাংলা সালতান আমলে এই অঞ্চলে ছিল বহু টাকশাল। বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, হিন্দুস্তানি, বাংলা, নেপালি, তিব্বতি এবং মান্দারিন সহ অসংখ্য ভাষায় টাকা বা টঙ্কা খোদাই করা হয়েছিল।
আমেরিকান হেরিটেজ অভিধান ও বাংলাপিডিয়া অনুসারে, টাকা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ টঙ্কা থেকে। [1] [2]
১৩২৯ সালে দিল্লি সালতানাতের সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজকীয় টঙ্কা (সুলতানি টঙ্কা নামেও পরিচিত) চালু হয়েছিল। এটি প্রতিনিধিত্বমূলক অর্থ হিসাবে নকশা করা হয়েছিল। চীন ও পারস্যের মঙ্গোলদের দ্বারা কাগজের অর্থ ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি প্রবর্তিত হয়েছিল। সেসময় তামা ও পিতল দিয়ে টঙ্কা তৈরি করা হয়েছিল। এর মূল্যমান রাজকীয় কোষাগারে মজুদ থাকা স্বর্ণ ও রৌপ্যের সাথে বিনিময় করা হয়েছিল। মূলত ধাতুর ঘাটতির কারণে এই মুদ্রা চালু করা হয়েছিল।[3] সময়ের সাথে সাথে, তামার টঙ্কা রুপার টঙ্কায় পরিণত হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে এর সূচনার পরে সালতানাত-জুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যার ফলে তুঘলক রাজবংশের পতন ঘটে। তুঘলুকদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল অসংখ্য আঞ্চলিক রাজ্য, বিশেষ করে বাংলা সালতানাত, বাহমানি সালতানাত ও গুজরাট সালতানাত । এই রাজ্যগুলি তাদের নিজস্ব শাসকদের নামে নতুন মুদ্রার টাকশাল চালু করে। এমনকি অনেক পরে আধুনিক মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আঞ্চলিক মুদ্রাগুলোকেও তখন টাঙ্কা/টংকা/টাকা হিসাবে উল্লেখ করা হতো।
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকারেন ম্রাউক-উ রাজ্যে (বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন) বাংলা সালতানাতের টঙ্কা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। সেসময় এটি বাংলার সুলতানের অধীনের একটি করদ রাজ্য ছিল।
বাংলাদেশী টাকা আধুনিক বাংলাদেশের মুদ্রা। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তির পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন টাকা ছাপিয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় ৳ (টাকা) চিহ্ন রয়েছে।
ইসলামী বাংলায় টাকা সাধারণত এক রৌপ্যমুদ্রার সমান ছিল। [4] ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে বতুতা লক্ষ্য করেন, ইসলামী দিনারের পরিবর্তে রুপার টাকা এই অঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রা। [5] ১৪১৫ সালে অ্যাডমিরাল ঝেং হি'র দলের সদস্যরাও বাংলায় টাকার আধিপত্য লক্ষ্য করেছিলেন। বাংলার সুলতানের জন্য এই মুদ্রা ছিল তার সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। বাংলার সালতানাত রাজ্যজুড়ে প্রাদেশিক রাজধানীগুলোতে অন্তত ২৭ টি টাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। [6] [7]
বাংলা সালতানাতের উত্তরাধিকারী মুঘল শাসনাধীন সুবাহ বাংলায় টাকা জারি করা অব্যাহত ছিল। মুঘল শাসনের অধীনে বাংলা আরও সমৃদ্ধ হয়।এসময় বাংলা বিশ্ব অর্থনীতিতে একীভূত হওয়ার সাথে সাথে গ্রামীণ অঞ্চলের মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত কড়ির স্থলে টাকা প্রতিস্থাপিত হতে শুরু করে এবং এটি মানসম্মত ও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র-স্বীকৃত বৈধ বিনিময় মাধ্যমে পরিণত হয়। এটি ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বাণিজ্যেও ব্যবহৃত হয়েছিল।
চতুর্দশ শতাব্দীর ওড়িশার এপিগ্রাফিক রেকর্ডগুলোতে ভেন্ডি-টাঙ্কা (মিশ্রিত রৌপ্য) এবং সাসুকানি-টাঙ্কা (বুলিয়ন) এর মতো শব্দ ব্যবহার করা হয়। দিল্লি সালতানাত থেকে টাঙ্কা এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। [8]
ষোড়শ শতাব্দীতে হিমালয়ের সমৃদ্ধ কাঠমান্ডু উপত্যকায় (নেপাল) টাঙ্কা মান চালু করা হয়েছিল। দিল্লি, বাংলা ও মুঘল সাম্রাজ্যের মুদ্রার আদলে এটি তৈরি করা হয়েছিল। নেপালি টাঙ্কা ছিল ১০ গ্রাম ওজনের খাদ মেশানো রৌপ্য মুদ্রা, যার মূল্য ছিল 1⁄4, 1⁄32, 1⁄123, 1⁄512-এর মতো ছোট ছোটো মান। রাজা ইন্দ্র সিংহ এটি প্রবর্তন করেছিলেন। [9]
১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপিতে উর্দু ও বাংলায় দ্বিভাষিক ছাপ ছিল। সেসময় পাকিস্তানের মুদ্রাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপি এবং টাকা উভয় নামেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে টাকার স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।
দক্ষিণাত্য সালতানাত এবং দাক্ষিণাত্যের মুঘল প্রদেশগুলোতে টাঙ্কা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। বেরার সালতানাত এবং বেরার সুবাহ যুগে এক টাঙ্কা-ই-বারারি দিল্লির আটটি টাঙ্কার সমান ছিল।
তিব্বতীয় তাংকা তিন শতাব্দী ধরে তিব্বতের একটি সরকারি মুদ্রা ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে নেপালের লাসা নেওয়ার বণিকদের দ্বারা এটি প্রবর্তিত হয়েছিল। বণিকেরা সিল্ক রোডে নেপালি টাঙ্কা ব্যবহার করত। তিব্বত সরকার অষ্টাদশ শতাব্দীতে নিজস্ব টাকশালে তাংকা ছাপাতে শুরু করে। প্রথম তিব্বতি টাংকা ১৭৬৩/৬৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল। তিব্বতের উপর আধিপত্য বিস্তারকারী[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চীনের কিং রাজবংশ ১৭৯২ সালে এই অঞ্চলে টাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চীন-তিব্বতী তাংকায় চীনা ভাষা উৎকীর্ণ ছিল।[10]
১৯১২ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে ৫, ১০, ১৫, ২৫ ও ৫০ টাংকা মূল্যের ব্যাঙ্কনোট জারি করা হয়েছিল।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গুজরাট সালতানাত রৌপ্য টঙ্কা তৈরি করতে শুরু করে। এটি ছিল গুজরাটের মুজাফফরীয় রাজবংশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.