Remove ads
পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জ্যাক সেন্ট ক্লেয়ার কিলবি (নভেম্বর ৮, ১৯২৩ - জুন ২০, ২০০৫) বিখ্যাত মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী। তিনি ২০০০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[1] কিলবি সমন্বিত বর্তনীর মূল উদ্ভাবকদের একজন। তিনি ১৯৫৮ সালে টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট্স-এ কাজ করার সময় প্রথম এই বর্তনী তৈরি করেন। একটিমাত্র সিলিকনের অণুচিলতে বা মাইক্রোচিপের উপরে স্থাপিত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত বহুসংখ্যক ট্রানজিস্টরের ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে "সমন্বিত বর্তনী" বলা হয়।
জ্যাক কিলবি | |
---|---|
জন্ম | জেফারসন সিটি, মিসৌরি, U.S. | ৮ নভেম্বর ১৯২৩
মৃত্যু | ২০ জুন ২০০৫ ৮১) ডালাস, টেক্সাস, U.S. | (বয়স
জাতীয়তা | আমেরিকা |
মাতৃশিক্ষায়তন | ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন University of Wisconsin–Milwaukee |
পুরস্কার | পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০০০ ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স মেডেল অব অনার, ১৯৮৬ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ প্রকৌশল |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট |
কিলবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের জেফারসন সিটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটান কানসাসের গ্রেট বেন্ড শহরে। তিনি গ্রেট বেন্ড হাই স্কুল বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই শহরের প্রবেশপথে স্থাপিত একটি ফলক সেখানে তার অবস্থানের স্মৃতি বহন করে। অন্য অনেকের মত ছোটবেলায় কিলবির ইলেকট্রনিকসে হাতেখড়ি ঘটে শৌখিন বেতার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। তার বাবা একজন তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি ক্যানসাস পাওয়ার কোম্পানি অফ গ্রেট বেন্ড নামক বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার পরিচালক ছিলেন। কিলবি যখন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন বরফ ঝড়ে বিদ্যুৎ সেবাব্যবস্থাটি ভেঙে পড়ে। তখন যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য যেসব শৌখিন বেতারচালকদেরকে ব্যবহার করা হয়; তাদের মধ্যে কিলবি-ও ছিলেন একজন। এরপর ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিলবি মার্কিন সেনাবাহিনীতে বিদ্যুৎ-মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
যুদ্ধের পরে কিলবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে পড়েন এবং ১৯৪৭ সালে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স বা বিজ্ঞানে স্নাতক সনদ লাভ করেন। স্নাতক হবার পর কিলবি উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকি শহরে অবস্থিত গ্লোব ইউনিয়ন ইনকর্পোরেটেড ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সেন্ট্রাল্যাব শাখাতে চাকুরি নেন। সেখানে তার কাজ ছিল অতিক্ষুদ্র মাপের ইলেকট্রনিক বর্তনী নকশা ও নির্মাণ করা। কাজ করার পাশাপাশি কিলবি ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলওয়াকি শাখাতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন এবং ১৯৫০ সালে স্নাতকোত্তর সনদ লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে বেল ল্যাবরেটরিস কোম্পানিতে ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করা হয়। ১৯৫২ সালে সেন্ট্রাল্যাব কিলবিকে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের মারি হিল শহরে বেল ল্যাবসের প্রধান কার্যালয়ে ট্রানজিস্টর সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পাঠায়, কেননা সেন্ট্রাল্যাব সেখান থেকে ট্রানজিস্টর উৎপাদন করার অনুমতিপত্র ক্রয় করেছিল। সেন্ট্রাল্যাবে ফেরত এসে কিলবি শ্রুতি সহায়ক যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জার্মেনিয়াম-ভিত্তিক ট্রানজিস্টরের উপর কাজ করা শুরু করেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন যে অতিক্ষুদ্রাকার বর্তনী নির্মাণের জন্য তার আরও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পদের প্রয়োজন। ১৯৫৮ সালে তিনি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে অবস্থিত ও বেল ল্যাবসের আরেক অনুমতিপত্রবাহক টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টসে আসার পরে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কিলবির মাথায় এক অভিনব চিন্তা আসে, যাকে "একখণ্ড-ভিত্তিক চিন্তা" বলা হয়। কিলবি বুঝতে পারেন যে বর্তনীর আলাদা আলাদা উপাদানগুলিকে সংযুক্ত না করে ইলেকট্রনিক উপাদানের সম্পূর্ণ একটি সমবায়কে একটি মাত্র যন্ত্র হিসেবে শুধুমাত্র একটি অর্ধপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করে প্রস্তুত করা সম্ভব। অর্ধপরিবাহী মাতৃকাতে বিভিন্ন ভেজাল পদার্থ স্থাপন করে বর্তনীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক উপাদানগুলিকে (যেমন রোধক, ধারক, ট্রানজিস্টর, ইত্যাদি) নকল করা যায়। শিঘ্রই কিলবি ডাকটিকিটের সমান আকারের একটি কর্মক্ষম প্রাথমিক নমুনা নির্মাণ করতে সক্ষম হন, যেটি জার্মেনিয়াম নামক অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টস কিলবির নকশাকৃত বিশ্বের ইতিহাসের সর্বপ্রথম সমন্বিত বর্তনীর তথা অতিক্ষুদ্রাকৃতির ইলেকট্রনিক বর্তনীর জন্য একটি পেটেন্ট বা কৃতিস্বত্ব আবেদনপত্র জমা দেয়। এর চার মাস পরে ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর কর্পোরেশনের বিজ্ঞানী রবার্ট নইস-ও প্রায় একই রকম একটি যন্ত্রাংশের জন্য কৃতিস্বত্বের আবেদনপত্র জমা দেন, যদিও সেটির নির্মাণ প্রক্রিয়াটি ভিন্ন ছিল। দশ বছর পরে মার্কিন আদালত কিলবিকে সমন্বিত বর্তনীর ধারণার উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং নইসকে তার সমতলীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য কৃতিস্বত্ব প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াতে সিলিকনের চিলতের ভেতরে সরাসরি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহী ধাতব পথ (অর্থাৎ এক ধরনের বৈদ্যুতিক তার) বসানো যায়। কিলবি এর পরে আরও ৫০টিরও বেশি কৃতিস্বত্ব অর্জন করেন, যেগুলি বেশিরভাগই ছিল সমন্বিত বর্তনী নকশাকরণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন সম্পর্কিত। ১৯৬৭ সালে কিলবি বিশ্বের সর্বপ্রথম সমন্বিত বর্তনীভিত্তিক ইলেকট্রনিক গণনাযন্ত্র (ক্যালকুলেটর) উদ্ভাবন করেন, যার নাম ছিল পকেটট্রনিক। এই উদ্ভাবনের জন্য তিনি এবং টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টস যে কৃতিস্বত্ব সনদটি লাভ করেন, সেটি বর্তমানের সমস্ত পকেট ক্যালকুলেটরের ভেতরের সবচেয়ে মৌলিক বর্তনীটির নকশার সাথে সম্পর্কিত। শুরুর দিকে পকেটট্রনিক ক্যালকুলেটর যন্ত্রে কয়েক ডজন সমন্বিত বর্তনীর প্রয়োজন ছিল, ফলে এটি ছিল জটিল। আর ক্রেতাদের জন্য উৎপাদন করার প্রক্রিয়াটিও তাই ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু ১৯৭২ সাল নাগাদ টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টস প্রয়োজনীয় সমন্বিত বর্তনীর সংখ্যা ১-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। তবে কিলবি ১৯৭০ সালেই প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেন ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গবেষণা শুরু করেন, বিশেষ করে সৌরশক্তি উৎপাদন বিষয়ে। তবে তিনি অর্ধপরিবাহী বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে খণ্ডকালীন চাকুরি করতেন। ১৯৭০ সালেই কিলবিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান পদক প্রদান করা হয়। ১৯৮৯ সালে তাকে চার্লস স্টার্ক ড্রেপার পদক এবং ১৯৯০ সালে জাতীয় প্রযুক্তি পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৭ সালে টেক্সাস ইনসট্রুমেন্টসের ডালাস শহরস্থিত নতুন গবেষণা ও প্রস্তুতকরণ ভবনটিকে কিলবি'র নামে নামকরণ করা হয়, যার নাম কিলবি সেন্টার। সুইডেমের রাজকীয় অ্যাকাডেমি সাধারণত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীদেরকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে থাকলেও ২০০০ সালে এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কিলবিকে অন্য বিজ্ঞানীদের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.