Loading AI tools
মার্কিন লেখক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জেরোমি ডেভিড স্যালিঞ্জার (১ জানুয়ারী, ১৯১৯ – ২৭ জানুয়ারী, ২০১০) একজন আমেরিকান লেখক যিনি তার উপন্যাস দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এর জন্য পরিচিত । তিনি ম্যানহাটন-এ বেড়ে ওঠেন এবং মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই ছোট গল্প লেখা শুরু করেন । তার বাবা তাকে মাংস আমদানির ব্যবসা শেখাতে চেষ্টা করেন, বাবার মন রাখতে তিনি ইউরোপেও যান কিন্তু কসাইখানার ঘৃন্য পরিবেশ তার মোটেও পছন্দ হয় না, ফলে তিনি অন্য পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন । ১২ মার্চ, ১৯৩৮ সালে জার্মান নাৎসি বাহিনী অস্ট্রিয়া দখল করার এক মাস আগে তিনি অস্ট্রিয়া ত্যাগ করেন । ১৯৪২ সালে তিনি নাট্যকার ইউজিন ও’নীল-এর মেয়ে ওনা ও’নীল-এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন । মেয়েটাকে তার কাছে আত্নমগ্ন মনে হয়, তবুও তিনি প্রায়ই তাকে ডাকেন এবং লম্বা চিঠি লিখেন। তাদের সম্পর্ক শেষ হয় যখন ওনা চার্লি চ্যাপলিন-এর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে পড়েন এবং তাকেই বিয়ে করেন ।
জন্ম | জেরোমি ডেভিড স্যালিঞ্জার ১ জানুয়ারি ১৯১৯ ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র |
---|---|
মৃত্যু | জানুয়ারি ২৭, ২০১০ ৯১) কর্ণিশ, নিউ হ্যাম্পশায়ারে, যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স
পেশা | লেখক |
শিক্ষা | নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় আরসিনআস কলেজ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | দ্যা ক্যাচার ইন দ্যা রায় (১৯৫১) নাইন স্টোরিজ (১৯৫৩) রেইজ হাই দ্য রুফ, কারপেইন্টারস এ্যন্ড স্যইমোউর: এন ইনট্রোডাকশন (১৯৬৩) ফ্রাননি এ্যান্ড জোই্ (১৯৬১) |
দাম্পত্যসঙ্গী | সিলভিয়া ওয়েলটার (বি. ১৯৪৫; বিচ্ছেদ. ১৯৪৭) ক্লেইরি ডাগলস (বি. ১৯৫৫; বিচ্ছেদ. ১৯৬৭) কললিন ও'নীল (বি. ১৯৮৮) |
সন্তান | মার্গারেট স্যালিঞ্জার ম্যাট স্যালিঞ্জার |
স্বাক্ষর |
১৯৪৮ সালে দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে তার “এ পারফেক্ট ডে ফর বানানাফিস” গল্পটি প্রকাশিত হয়, এই ম্যাগাজিনই পরবর্তি সময়ে তার আরো অনেক লেখা প্রকাশ করে । ১৯৫১ সালে দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । অনেক তরুণ পাঠক এটার প্রধান চরিত্র হোল্ডেন কোলফিল্ড-এর বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের একাকিত্ব, সবার থেকে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করা এবং নিজের মধ্যের কোমলমতি ভাবটা হারিয়ে ফেলার বর্ণনার প্রশংসা করেন । উপন্যাসটি একইসাথে ব্যাপকভাবে পঠিত আর বিতর্কিতও হয় এবং এক বছরে প্রায় এটির ২,৫০,০০০ টি কপি বিক্রি হয় । দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এর সফলতা জেরোমিকে খ্যাতি এনে দেয় এবং তার লেখার সমালোচনাও হতে থাকে, বিষয়টির সাথে জেরোমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি, ফলে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তি জীবন কাটান । ১৯৬৫ সালে তিনি নিজের শেষ লেখা প্রকাশ করেন এবং ১৯৮০ সালে নিজের শেষ সাক্ষাৎকারটি দেন । ২৭ জানুয়ারী, ২০১০ সালে কর্ণিশ, নিউ হ্যাম্পশায়ার-এ নিজ বাড়িতে তিনি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ।
স্যালিঞ্জার ম্যানহাটনে বেড়ে উঠেন এবং মাধ্যমিক স্কুল থেকেই ছোট গল্প লেখা শুরু করেন । ১৯৪০ এর দশকের শুরুর দিকে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেওয়ার আগে তার একাধিক ছোটগল্প স্টোরি ম্যাগাজিনে [1] প্রকাশিত হয় । ১৯৪৮ সালে তার, সমালোচকদের দ্বারা বহুল প্রশংসিত গল্প “এ পারফেক্ট ডে ফর বানানাফিস” দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । এই ম্যাগাজিনেই পরবর্তি সময়ে তার আরো অনেক লেখা প্রকাশিত হয় । দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে এবং তাৎক্ষনিক সফলতা অর্জন করে । অনেক তরুণ পাঠক এটার প্রধান চরিত্র হোল্ডেন কোলফিল্ডের বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের একাকিত্ব, সবার থেকে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করা এবং নিজের মধ্যের কোমলমতি ভাবটা হারিয়ে ফেলার বর্ণনার প্রশংসা করেন । [2] উপন্যাসটি একইসাথে ব্যাপকভাবে পঠিত হয় এবং বিতর্কিতও হয় [lower-alpha 1] । উপন্যাসটির এক বছরে প্রায় ২,৫০,০০০ টি কপি বিক্রি হয় ।
দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এর সফলতা তাকে খ্যাতি এনে দেয় এবং তার লেখার সমালোচনাও হতে থাকে । এরফলে স্যালিঞ্জার অনেকটা আত্নকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন এবং তার নতুন লেখাগুলো প্রকাশ করতে আর তেমন আগ্রহ দেখান না । এর পরে “নাইন স্টোরিজ” (১৯৫৩) নামে তার একটি ছোটগল্প সমগ্র বের হয়, যেটাতে একটি নোভেলা বা ছোট উপন্যাস এবং একটি ছোট গল্প ছিল । এরপরে প্রকাশিত হয় “ফ্রাননি এ্যান্ড জোই্” (১৯৬১); এটাতে ২টা ছোট উপ্যাস ছিল । পরবর্তি সময়ে আরো প্রকাশিত হয় “রেইজ হাই দ্য রুফ, কারপেইন্টারস এন্ড স্যইমোউর: এন ইনট্রোডাকশন” (১৯৬৩) । তার শেষ লেখা “হ্যাপওরথ ১৬, ১৯২৪” নামের একটি নোভেলা বা ছোট উপন্যাস ১৯ জুন, ১৯৬৫ সালে দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । পরবর্তি সময়ে, স্যালিঞ্জার তার প্রতি মানুষের অবাঞ্ছিত মনোযোগে কিছুটা ভুগান্তির শিকার হন । তিনি ১৯৮০ এর দশকে বায়োগ্রাফার ইএন হ্যমিলটন এবং ১৯৯০ এর দশকে আরো দুইজন কাছের মানুষের সাথে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন; এরা হচ্ছেন তার সাবেক প্রেমিকা জয়েস মেইনার্ড এবং নিজের মেয়ে মার্গারেট স্যালিঞ্জার । একটা ছোট প্রকাশক ১৯৯৬ সালে “হ্যাপওরথ ১৬, ১৯২৪” কে বই আকারে প্রকাশ করা জন্য স্যালিঞ্জারের সাথে একটি চুক্তি করেন । কিন্তু স্যালিঞ্জারের এত জটিলতার মধ্যে বইটির প্রকাশ অনিদৃষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায় । [3][4] তার লেখা কপি করার অভিযোগে জুন ২০০৯ সালে তিনি একজন লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করলে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর ছাপানো হয় । জেরোমি বলেন ঔ লেখক “দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়” থেকে একটি চরিত্র নিজের লেখায় ব্যবহার করেছেন । [5]
২৭ জানুয়ারী, ২০১০ সালে কর্ণিশ, নিউ হ্যাম্পশায়ার-এ তিনি নিজ বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন । [6][7][8] ২০১৩ সালে তার ৩ টি অপ্রকাশিত গল্প সংক্ষিপ্তভাবে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে একটি গল্প “দ্য ওশান ফুল অফ বোলিই বলস্” কে দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এর প্রিকুয়েল বা আগের কাহিনী হিসেবে মনে করা হয় ।
জেরোমি ডেভিড স্যালিঞ্জার ১ জানুয়ারী, ১৯১৯ সালে ম্যানহাটনে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবার নাম সোল স্যালিঞ্জার যিনি লিথুয়ানিয়ান বংশভূত একটি ইহুদি পরিবারের মানুষ । [9] সোল স্যালিঞ্জার একজন ইহুদি পণ্ডিত ছিলেন এবং তিনি লোইসভেলি, কেন্টাকি-তে এ্যাডাথ যেসউরান কনগ্রিগেশন-এর জন্য কাজ করতেন । [10] স্যালিঞ্জারের মায়ের নাম ম্যারি যিনি স্যালিঞ্জারের বাবকে বিয়ে করার পরে নিজের নাম বদলে ম্যারিয়াম রাখেন ।[11] ম্যারি জার্মান এবং স্কটিস বংশগতির একজন মানুষ যিনি বিয়ের পরে ইহুদি হয়ে যান । [12][13][14] স্যালিঞ্জার জানত না তার মা ইহুদি বংশভূত না, সে বার মিটযাভ উযাপনের পরে এটা জানতে পারে । [15] ডোরিস (১৯১২-২০০১) নামে তার শুধুমাত্র একটি বড় বোন ছিল এবং কোন ভাই ছিল না । [16]
তার কিশোর বয়সে, স্যালিঞ্জার ম্যানহাটনের পশ্চিম পাশের এটি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন । এরপরে ১৯৩২ সালে তার পরিবার পার্ক এভিনিউ-এ চলে যায় এবং ম্যাকবার্নে স্কুল-এ ভর্তি হন । [14] নতুন স্কুলে নিজেকে মানিয়ে নিতে তার বেশ কষ্ট হয়, পরিস্থিতি সহজ করতে তিনি নিজেকে জ্যারি নামে পরিচয় দিতে থাকেন । তার পরিবারের মানুষ তাকে সনি বলে ডাকতেন । [17] পরে তিনি স্কুলের ফেন্সিং বা তলোয়ার খেলার দলে সুযোগ পান, স্কুলের পত্রিকায় লেখালেখি করেন এবং নাটকে অংশগ্রহণ করেন । [14] অভিনয়ে তার দারুণ প্রতিভা ছিল, যদিও তার বাবা ছেলের একজন অভিনেতা হওয়ার বিরোধী ছিলেন । [18] তার বাবা-মা তাকে এবার পেনসালভেনিয়ার ওয়েনি-তে অবস্থিত ভ্যালি ফর্জ মিলিটারি এ্যকাডেমিতে ভর্তি করে দেন ।[14] সেখানে স্যালিঞ্জার রাতে বিছানায় চাদরের নিচে ফ্লাসলাইট জ্বালিয়ে গল্প লিখতে শুরু করেন । [19] স্যালিঞ্জার তার ক্লাসের বার্ষিক বই , ক্রস্ড সাবরিস (Crossed Sabres), এর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন । তিনি আরো অংশগ্রহণ করেন গ্লি ক্লাব, এভিএশন ক্লাব, ফ্রেন্স ক্লাব এবং নন-কমিশনড অফিসারদের ক্লাবে । [20]
স্যালিঞ্জার একজন মধ্যম মানের শিক্ষার্থী ছিলেন । [21][22] ১৯৩৬ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যলয়-এ পড়াশোনা শুরু করেন । তিনি স্পেশাল এডুকেশন [23] পড়া শুরু করেন এবং কিছুদিন পরে আবার বাদও দেন । এরপরে তার বাবা তাকে মাংস আমদানির বিষয়ে শেক্ষার জন্য বলেন । বাবার কথামত তিনি একটি কোম্পানির হয়ে কাজ করতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা এবং বাইডগোসেজেস নামের একটি পোলিস শহরে যান । [24] স্যালিঞ্জার ইচ্ছাকৃতভাবে ওখানে গেলেও কসাইখানার ঘৃন্য পরিবেশ তার মোটেও পছন্দ হয় না এবং তিনি অন্য পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন । সম্ভবত তিনি একজন ভেজিটেরিয়ান হওয়ার কারণে মাংস ব্যবসার প্রতি তার এই ঘৃণা জন্মায় । [25] ১২ মার্চ, ১৯৩৮ সালে জার্মান নাৎসি বাহিনী অস্ট্রিয়া দখলের এক মাস আগে তিনি অস্ট্রিয়া ত্যাগ করেন ।
১৯৩৮ সালে তিনি পেনসালভেনিয়ার আরসিনআস কলেজ-এ ভর্তি হন যেখানে তিনি “স্কিপ্ড ডিপ্লমা” নামে একটি কলাম লিখেন যাতে মুভি রিভিউও যুক্ত ছিল । [26] এক সেমিস্টার পরেই তিনি আবার ওখানে পড়াশোনা বাদ দেন । [14][17] ১৯৩৯ সালে তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ জেনারেল স্টাডিজ-এ ভর্তি হন । এখানে তিনি স্টোরি ম্যাগাজিনের দীর্ঘসময়ের সম্পাদক হোয়াইট বার্নেট-এর কাছে লেখালেখির ওপর শিক্ষা নিতে থাকেন । বার্নেটের বর্ণনা মতে স্যালিঞ্জার দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত অন্যদের মতোই ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ তার মধ্যে পরিবর্তন হয় এবং তিনি তিনটি গল্প লিখে ফেলেন । [27] বার্নেট স্যালিঞ্জারকে বলেন তার লেখার মধ্যে কৌশল এবং পূর্ণতা আছে । বার্নেট “দি ইয়াং ফোকস” গল্পটিকে স্টোরি ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য গ্রহণ করেন । [27] স্টোরি ম্যাগাজিনের মার্চ-এপ্রিল সংখ্যায় ১৯৪০ সালে স্যালিঞ্জারের প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় । বার্নট তার পরামর্শদাতায় পরিনত হন এবং তারা বেশ কয়েক বছর একসাথে কাজ করেন । [20][28]
১৯৪২ সালে স্যালিঞ্জার নাট্যকার ইউজিন ও’নীল-এর মেয়ে ওনা ও’নীল-এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন । ওনাকে অসম্ভব-রকম আত্নমগ্ন মনে হলেও তিনি ওনাকে প্রায়ই ডাকেন এবং লম্বা চিঠি লিখেন । [29] তাদের সম্পর্ক শেষ হয় যখন ওনা চার্লি চ্যাপলিন-এর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে পড়েন এবং শেষপর্যন্ত তাকেই বিয়ে করে । [30] ১৯৪১ সালের শেষের দিকে স্যালিঞ্জার সাময়িক সময়ের জন্য একটি ক্যারিবিয়ান ক্রুজ শিপ-এ কাজ করেন । সেখানে উনি একজন এ্যক্টিভিটি ডাইরেক্টর এবং সম্ভবত একজন পারফর্মার হিসেবেও ছিলেন । [31]
একই বছরে স্যালিঞ্জার দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে নিজের ছোটগল্পগুলো জমা দেওয়া শুরু করেন । ম্যাগাজিনটি ঔবছর “লাঞ্চ ফর থ্রি”, “মোনোলগ ফর এ ওয়াটারি হাইবল” এবং “ আই ওয়েন্ট টু স্কুল উইথ এ্যাডল্ফ হিটলার” এর মত স্যালিঞ্জারের ৭টি ছোটগল্প রিজেক্ট করে । অবশেষে ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে তার “স্লাইট রিবিলিওন অফ ম্যাডিসন” নামের গল্পটি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করা হয় । এটি হোল্ডেন ক্লফিল্ড নামের একজন ম্যানহাটন তরুণের যুদ্ধপূর্ববর্তী ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থার গল্প । [32] একই মাসে জাপান পার্ল হার্বার আক্রমণ করলে স্যালিঞ্জারের গল্পটিকে প্রকাশের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয় । এতে তিনি মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন । পরে “রাইজ হাই দি রুফ বিম, কারপেন্টার্স” উপন্যাসে তিনি লিখেন “আমার মনে হয় মৃত্যুর আগেপর্যন্ত আমি ১৯৪২ সালকে ঘৃণা করব, শুধু সাধারণ কারণগুলোর জন্য” । [33] শেষপর্যন্ত গল্পটি ১৯৪৬ সালে দি নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশ হয় । [32] যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের কয়েকমাস পরে স্যালিঞ্জার ১৯৪২ সালের বসন্তে আর্মিতে যোগ দেন । আর্মিতে তিনি ১২তম ইনফ্যান্ট্রি রিজিমেন্ট, ৪তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন-এর অংশ ছিলেন । [31] তিনি ডি-ডে তে উটাহ সমুদ্র সৈকতে, ব্যটাল অফ দ্য ব্লগ-এ, এবং ব্যটাল অফ হুর্টজেন ফরেস্ট-এ উপস্থিতি ছিল । [34][35]
নরম্যান্ডি থেকে জার্মানির ভেতরে ক্যাম্পেইনের সময় স্যালিঞ্জার আর্নেস্ট হেমেংওয়ে-র সাথে দেখা করার একটা সুযোগ পান । হেমিংওয়ে তখন প্যারিসে একজন সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন । [36] স্যালিঞ্জার হেমিংওয়ের লেখা অনেক পছন্দ করতেন । হেমিংওয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিনয়ী আচরণে স্যালিঞ্জার মুগ্ধ হন, তার মনে হয় হেমিংওয়েকে মানুষ যেভাবে দেখে তার থেকে তিনি অনেক নরম স্বভাবের মানুষ । [37] হেমিংওয়েও স্যালিঞ্জারের লেখায় অনেক পছন্দ করেন এবং বলেন স্যালিঞ্জারের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে । এরপর থেকে দুই লেখক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন । জুলাই ১৯৪৬ সালে স্যালিঞ্জার হেমিংওয়েকে লেখেন তাদের কথোপকথনের স্মৃতিগুলো তার কাছে যুদ্ধের কিছুসংখ্যক ভালস্মৃতির একাংশ । [37] স্যালিঞ্জার আরো লিখেন যে হোল্ডেন ক্লফিল্ডের সম্পর্কে তিনি একটা নাটক লিখছেন যেটাতে তিনি নিজে ক্লফিল্ডের চরিত্রে অভিনয় করতে চান । হোল্ডেন ক্লফিল্ড স্যালিঞ্জারের “স্লাইট রিবিলিওন অফ ম্যাডিসন” গল্পের প্রধান চরিত্র । [37]
স্যালিঞ্জারকে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । সেখানে তিনি ফরাসি ও জার্মান ভাষার ওপর নিজের দক্ষতা ব্যবহার করে যুদ্ধে বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন । [38] এপ্রিল ১৯৪৫-এ তিনি কাউফারিং IV কনসেনট্রশন ক্যাম্পে যোগ দেন, এটা ডাচাউ এর একটি উপক্যাম্প ছিল । যেখানে স্যালিজ্ঞার স্টাফ সার্জেন্ট [39] হয়ে যান এবং ৫টি ক্যাম্পেইনে কাজ করেন । [40] যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তার ওপর মানুষিক প্রভাব ফেলে । জার্মানির পরাজয় বরণের পর তাকে স্ট্রেস কমব্যাট রিএ্যাকশন বা যদ্ধকালীন সময়ে পাওয়া মানুষিক চাপের জন্য কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে রাখা হয়। [41][42] পরে তিনি নিজের মেয়েকে বলেন, একজন মানুষ যতদিনই জীবিত থাকুন না কেনো, মানুষের পোড়া মাংসের গন্ধ কখনও তার নাক থেকে পুরোপুরি যায় না । [38] স্যালিঞ্জারের ২ জন বায়োগ্রাফার বা জীবনীকারীই এটা মনে করেন যে তিনি নিজের যদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা তার বেশকিছু গল্পে বর্ণনা করে গেছেন । [43] “ফর এসমি—উইথ লাভ এ্যন্ড স্কুওলর” এমনই একটি লেখা, এখানে একজন সৈন্য গল্পটি বর্ণনা করেন । আর্মিতে থাকাকালীন সময়েও স্যালিঞ্জার নিজের লেখা চালিয়ে যান । কোলিয়ারস এবং দি স্যাটারডে ইভিনিং পোস্ট এর মত স্লিক ম্যাগাজিনগুলোতে তার বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশ পায় । তিনি দ্য নিউ ইয়র্কারেরে গল্প পাঠাতে থাকেন তবে সেখানে তেমন সফলত পান না । ম্যাগাজিনটি ১৯৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত সময়ে তার সব লেখা রিজেক্ট করে দেয় । [32]
জার্মানির পরাজয়ের পরে, স্যালিঞ্জার কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স পুলিশের হয়ে জার্মানিতে [44] ৬ মাস ব্যাপী নাৎসি বাহিনীর চিহ্নসমূহ মুছে দেওয়ার কাজ করেন । তিনি উইসসেনবার্গে থাকতেন এবং সেখানে তিনি সিলভিয়া ওয়েলটারকে বিয়ে করেন । সিলভিয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসেন ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে, কিন্তু তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ৮ মাস পরে সিলভিয়া জার্মানিতে ফিরে চলে যান । [45] ১৯৭২ সালে, স্যালিঞ্জারের মেয়ে মার্গারেট তার সাথে ছিলেন যখন তিনি সিলভিয়ার চিঠি পান । তিনি খামটির দিকে তাকান এবং না পড়েই ওটা ছিড়ে ফেলেন । তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরে এটাই তাদের প্রথম যোগাযোগ ছিল । মার্গারেট বিষয়টিকে এভাবে বলেন, “যখন তিনি কারো সাথে সম্পর্ক শেষ করেন, তিনি তাদের সাথে আর কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখেন না ।" [46]
১৯৪৬ সালে, হোয়াইট বার্নেট স্যালিঞ্জাকে তার একটি ছোটগল্প সংগ্রহ প্রকাশে সাহয্য করার জন্য রাজি হন । তার এটা ‘’স্টোরি’’ প্রেসের লিপপিনকোট ইমপ্রিন্টে করার কথা চিন্তা করে । [47] এই ছোটগল্প সংগ্রহের নাম দেওয়া হয় ‘’দি ইয়াং ফোকস’’ এবং এটাতে মোট ২০টি গল্প ছিল । এর মধ্যে টাইটেল স্টোরি এবং “স্লাইট রিরিলিয়ন অফ ম্যাডিসন”-এর মত ১০টি গল্প ইতমধ্যেই ছাপা হয়েছিল আর ১০টি গল্প আগে ছাপা হয়নি । [47] যদিও বার্নেট বলেছিল বইটি প্রকাশিত হবে এবং বইটির বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্যালিঞ্জারের সাথে ১,০০০ ডলারের একটি সমঝোতাও করেছিল এরপরেও বইটি শেষপর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি । লিপপিনকোট বার্নেটের প্রস্তাব গ্রহণ করে না এবং বইটির প্রকাশ হওয়া রিজেক্ট করে দেয় । [47] স্যালিঞ্জার বইটি প্রকাশ না হওয়ার জন্য বার্নেটকে দ্বায়ী করেন এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন । [48]
১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে স্যালিঞ্জার জেন বৌদ্ধধর্ম-এর একজন বড় ভক্ত হয়ে যান । তিনি এতবড় ভক্ত হয়ে যান যে নিজের প্রেমিকাদের এই বিষয়ে পড়ার জন্য বই এর তালিকা দিতে থাকেন । [2] তিনি নিজের জন্য বৌদ্ধ স্কলার ডি. টি. সুজুকি-এর সাথে দেখা করার জন্য একটা মিটিংয়ের ব্যবস্থাও করেন ।
১৯৪৭ সালে স্যালিঞ্জার “দি বানানাফিস” নামের একটি ছোট গল্প প্রকাশের জন্য ‘’দি নিউ ইয়র্কার’’-এ জমা দেন । ম্যাগাজিনটির ফিকশন এডিটর উইলিয়াম ম্যাক্সওয়েলের গল্পটি পড়ে ভাল লাগে এবং তিনি স্যালিঞ্জারকে বলেন গল্পটির কিছুটা সংশোধন করতে । এক বছর ধরে স্যালিঞ্জার ‘’দি নিউ ইয়র্কার’’-এর এডিটরদের সাথে কাজ করেন এবং এরপরে ম্যাগাজিনটি গল্পটি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করে । গল্পটির নতুন নামকরণ করা হয় “এ পার্ফেক্ট ডে ফর বানানাফিস”, এটি ৩১ জানুয়ারী, ১৯৪৮ সালের সংখ্যায় প্রকাশিত হয় । পরবর্তীতে ম্যাগাজিনটি স্যালিঞ্জারের লেখা ভবিষ্যৎ-এ প্রকাশের জন্য তাকে একাট চুক্তির প্রস্তাব করে । [49] “বানানাফিস”-এর উপর হওয়া সমালোচনা এবং এর সাথে “স্লিকস” এ বিভিন্ন গল্প পরিবর্তীত হয়ে যাওয়ার সমস্যার করাণে, স্যালিঞ্জার রীতিমত একচোটিয়াভাবে দি নিউ ইয়র্কার-এ লেখা প্রকাশ করতে থাকেন । [50] “বানানাফিস” স্যালিঞ্জারের প্রকাশিত গল্পগুলোর মধ্যে প্রথম ছিল যেটাতে গ্লাসেস নামের একটি কাল্পনিক পরিবারে কথা বর্ণনা করা হয় । এই পরিবারে ২জন ভাউডিভিলি, একধরনের ফরাসি নাটক,পারফর্মার ছিল এবং তাদের ৭টি ইচড়ে পাকা বাচ্চা ছিল: সেইমউর, বাড্ডি, বু বু, উয়াল্ট, উয়াকার, জোই এবং ফ্রাননি । [51] গ্লাসেস পরিবার সম্পর্কে স্যালিঞ্জার ৭টি গল্প প্রকাশ করেন । গল্পগুলোতে গ্লাসেস পরিবারে বিস্তারিত অতীত ইতিহাস বর্ণনা করেন এবং সেইমউর এর উপর বিশেষ আলোকপাত করেন । সেইমউর গ্লাসেস পরিবারে বড় সন্তান, সে অনেক প্রতিভাশীল কিন্তু একটু সমস্যাগ্রস্থ । [51]
১৯৪০-এর দশকের শুরুর দিকে স্যালিঞ্জার একটি চিঠিতে হোয়াইট বার্নেটকে জানা যে তিনি নিজের কিছু গল্পের ওপর সিনেমা তৈরির সত্বাধিকার বিক্রয় করত চান যাতে তার আর্থিক সচ্ছলতা আসে। [52] ইএ্যান হ্যামিলটনের মতে, স্যালিঞ্জার হাতাশ হন যখন ১৯৪৩ সালে তার ছোট গল্প “দি ভেরিওনি ব্রাদার্স”-এর ওপর সিনেমা নির্মানের বিষয়ে হলিউডে হওয়া গুঞ্জন থেকে কোনো ফলাফল আসে না । তাই যখন ১৯৪৮-এর মাঝামাঝি সময়ে স্বাধীন সিনেমা প্রযোজক সামুয়েল গোল্ডওয়েন তার ছোটগল্প “আংকেল উইগগলি ইন কানেকটিকাট” [52] – এর ওপর সিনেমা নির্মানের সত্বাধিকার কিনতে চান, স্যালিঞ্জার তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়ে যান । যদিও স্যালিঞ্জার অনেক আশা নিয়ে তার গল্পটা বিক্রি করেন যে এটা নিয়ে ভাল একটা সিনেমা তৈরি হবে [53] কিন্তু ১৯৪৯ সালে যখন “উইগগলি” সিনেমাটা মুক্তি পায় এটা সমালোচকদের বেশ নিন্দার শিকার হয় । [54] সিনেমাটার নাম বদলে ‘’মাই ফুলিস হার্ট’’ রাখা হয় । এটাতে অভিনয় করেন ডানা এন্ড্রিউস এবং সুজান হেইওয়ার্ড এবং এই মেলো ড্রামাটিক সিনেমাটি স্যালিঞ্জারের মূল গল্প থেকে একেবারেই দূরে সরে যায় । [54] এরপরে স্যালিঞ্জার আর কখনও নিজের গল্পের ওপর সিনেমা তৈরির অনুমতি দেননি । [55] যখন ব্রিগেট বারডট “এ পারফেক্ট ডে ফর বানানাফিস-এর ওপর সিনেমা তৈরি করতে চান, স্যালিঞ্জার তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন । [56]
১৯৪০ সালে স্যালিঞ্জার কিছু মানুষকে বলেন যে তিনি তার ছোট গল্প স্লাইট রিবিলিওন অফ ম্যাডিসন[57]-এর প্রধান চরিত্র হোল্ডেন ক্লফিল্ড নামের একজন কিশোর বালককে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখছেন এবং ১৬ জুলাই, ১৯৫১ সালে লিটিল, ব্রাউন এবং কম্পানির মাধ্যমে তার দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় । [58] উপন্যাসের গল্পটি সাহজ, এখানে একটি অভিজাত স্কুল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর নিউ ইয়র্ক শহরে ১৬ বছর বয়সী হোল্ডেন ক্লফিল্ডের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে । সে শুধু এই স্কুল থেকেই নয় বরং এর আগেও ৩টি স্কুল থেকে বহিস্কৃত হয়েছে । [59] বইটি হোল্ডেনের ব্যক্তিত্ব এবং তার সাক্ষ্যমূলক কন্ঠে দেওয়া বর্ণনার জন্য উল্লেখযোগ্য । [60] হোল্ডেন এখানে একজন অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কিন্তু অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে অনুগত্যের গুরুত্ব, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ঠকবাজিতা এবং নিজের বদমাসির কথা বলেছে । [60] ১৯৫৩ সালে একটি মাধ্যমিক স্কুল পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যালিঞ্জার স্বীকার করেন উপন্যাসটি কিছুটা তার নিজের জীবন সম্পর্কিত । তিনি বলেন “আমার বাল্যকাল অনেকটা বইয়ে বর্ণনাকৃত ছেলেটির বাল্যকালের মতোই ছিল ... মানুষকে এটা সম্পর্কে বলে আমি বড় রকম মুক্তি পেয়েছি ।" [61]
প্রথমিকভাবে বইটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়, একদিকে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস এটাকে “একটি অস্বাভাবিক চমৎকার প্রথম উপন্যাস” হিসেবে উল্লেখ করে [62] এবং অপর দিকে বইটির একঘেয়ে ভাষা এবং খোলামেলাভাবে অনৈতিক যৌনতার বিষয়সমূহে আলচনা করার জন্য সমালোচিত হয় । [63][64] উন্যাসটি জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রকাশের ২ মাসের মধ্যে এর অষ্টম মুদ্রণ হয়, এছাড়া উপন্যাসটি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার লিস্টে ৩০ সপ্তাহ ধরে অবস্থান করে ।
বইটির প্রাথমিক জনপ্রিয়তা পরবর্তি সময়ে অনেকটা কমে যায়, কিন্তু এর পরেও ইএন হ্যমিলটনের মতে ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে বইটি “সকল ভাবুক তরুণ-তরুণীদের জন্য আবশ্যকে পরিনত হয় যেখান থেকে নিজেকে অযত্ন অবহেলার শিকার দেখায় এমন স্টাইল শেখা যাবে ।“ [65] এটিকে মার্ক টোয়েনের দি এ্যাডভেনচার অফ হাকলেবেরি ফিন – এর সাথে তুলনা করা হয় ।[66] বইটির প্রভাব সম্পর্কে পত্রিকায় লেখালেখি হতে শুরু করে এবং বেশ কিছু দেশে উন্যাসটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় । বইটির বিষয়বস্তু এবং শব্দের ব্যবহারের কারণে বইটিকে যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু স্কুলে নিষিদ্ধি করা হয় । [65][67][67]
১৯৭০-এর দশকে অনেক মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক যারা বইটিকে স্কুল সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেন তাদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয় বা চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয় । ১৯৭৯ সালে একটি সেনসরশিপ বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায় পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে নিয়মিত সেনসর হওয়া বইগুলোর মধ্যে ‘’দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়’’ প্রথম অবস্থানে আছে আবার পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পাবলিক হাই স্কুলগুলোতে নিয়মিত পড়ানো হয় এরকম উপন্যাসের তালিকায়ও এটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে । [68] বইটি ব্যপকভাবে পাঠিত হয়; ২০০৪ সালের হিসেবে প্রতি বছর এটি প্রায় ২,৫০,০০০ কপি করে বিক্রি হয়, পুরো পৃথিবীজুড়ে বইটির প্রায় ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় । [69]
১৯৫০-এর দশকে উপন্যাসটির সফলতার পরে এটির উপর সিনেমা তৈরির জন্য স্যালিঞ্জার, স্যামুয়েল গোল্ডওয়িন-সহ বেশ অনেকের কাছ থেকে প্রস্তাব পান এবং সবগুলো নাকোচ করে দেন । [54] এরপরেও উপন্যাসটির ওপর সিনেমা নির্মাতাদের আগ্রহ কমে না, বিলি ওয়াইলডার,[70] হার্ভি ওয়েইনস্টাইন এবং স্টিভেন স্পিলবার্গ [71]-এর মতো সিনেমা নির্মাতারাও উপন্যাসটির আগ্রহ দেখান । স্যালিঞ্জার বলেন ১৯৭০-এর দশকে জেরি লুইস কয়েক বছর ধরে হোল্ডেনের চরিত্রটি পাওয়ার চেষ্টা করেন । [72] স্যালিঞ্জার তাকে বারবার ফিরিয়ে দেন, ১৯৯৯ সালে জয়েস মেনার্ড নিশ্চিতভাবেই বলেন, “হোল্ডেন ক্লফিল্ডের চরিত্রে হয়তো একজন মানুষই অভিনয় করতেন আর সেটা হতো জে. ডি. স্যালিঞ্জার নিজেই ।" [72]
জুলাই ১৯৫১ সালে বুক অফ দি মান্থ ক্লাব নিউজ-এর এক প্রোফাইলে, স্যালিঞ্জারের বন্ধু এবং নিউ ইয়র্কার সম্পাদক উইলিয়াম ম্যাক্সওয়েল স্যালিঞ্জারকে তার সাহিত্যকর্মে প্রভাবিতকারী লেখকের নাম জিজ্ঞাস করেন । উত্তরে স্যালিঞ্জার বলেন, “যখন একজন লেখককে তার নৈপুন্য নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়, তখন তাকে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তিনি যে লেখকদের ভালবাসেন শুধু তাদের নাম উচ্চস্বরে বলতে হবে । আমি ভালবাসি কাফকা, ফ্লাওবার্ট, টলস্টয়, চেখভ, দস্তয়েভস্কি, প্রাউস্ট, ও'কেসি, রিলকে, লোরকা, কিটস, রিমবৌড, বার্নস, ই. ব্রন্টি, জেন অস্টেন, হেনরি জেমস, ব্লেক, কোলারিজ । আমি কোনো জীবিত লেখকের নাম নিব না, কারণ আমি মনে করি এটা ঠিক হবে না” (ও'কেসি যদিও ঐসময় জীবিত ছিলেন) । [73] ১৯৪০-এর দশকে লেখা কিছু চিঠিতে, স্যালিঞ্জার ৩ জন জীবিত বা সম্প্রতি মৃত লেখকদের সম্পর্কে নিজের শ্রদ্ধার কথা লেখেন: শেরউড অ্যান্ডারসন, রিং লর্ডনার এবং এফ স্কট ফিটজেরাল্ড;[74] ইয়ান হ্যামিলটন লেখেন স্যালিঞ্জার এমনকি নিজেকে “ফিটজেরাল্ডের উত্তরাধীকারী” হিসেবে ভাবতে থাকেন । [75] স্যালিঞ্জারের “এ পার্ফেক্ট ডে ফর বানানাফিস”-এর সমাপ্তিটা ফিটজেরাল্ডের প্রথমদিকে প্রকাশিত ছোটগল্প “মে ডে”-এর সমাপ্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । [76]
স্যালিঞ্জরা ১৯৫২ সালে যখন বেশ কয়েক বছর ধরে জেন বৌদ্ধধর্ম পাল করার পরে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক শ্রী রামকৃষ্ণ সম্পর্কে লেখা দি গোসপেল অফ শ্রী রামাকৃষ্ণা পড়ছিলেন তখন তার বন্ধুদের কাছে নিজের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হওয়া সম্পর্কে লেখেন । [77] তিনি রামকৃষ্ণের আবেদিতা বেদান্ত হিন্দুইজমের একজন অনুসারী হয়ে যান, যেটা জ্ঞান-অর্জনকারীদের যৌনতা এবং পরিবারের মতো দ্বায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে সমর্থন করে । [78][79] স্যালিঞ্জারের ধর্মীয় শিক্ষা তার কিছু লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে । “টেডি” গল্পটিতে একজন ১০ বছর বয়সী শিশু আছে যে বৈদান্তিক অর্ন্তদৃষ্টি সম্পর্কে কথা বলে । [80] তিনি রামকৃষ্ণের ছাত্র বিবেকানন্দ-এর লেখাও পড়েন; “হ্যাপওরথ ১৬, ১৯২৪” গল্পে, সিমুর গ্লাস নামের চরিত্রটি নিজেকে বর্ণনা করে “এই শতাব্দীর সব থেকে উদ্দীপ্ত, আসল এবং সেরা-সজ্জিত একজন হিসেবে ।" [78]
১৯৫৩ সালে স্যালিঞ্জার ৭টি গল্পের একটি সংকলন দি নিউ ইয়র্কার-এ প্রকাশ করেন (যার মধ্যে “বানানাফিস”-ও ছিল), ম্যাগাজিনের প্রত্যাখ্যান করা ২টি গল্পও এর সাথে ছিল । সংকলনটি যুক্তরাষ্ট্রে নাইন স্টোরিস নামে এবং যুক্তরাজ্যে স্যালিঞ্জারের সুপরিচিত অনেক গল্পগুলোর মধ্যে একটি অনুসারে "ফর এসমি—উইথ লাভ এ্যন্ড স্কুওলর"-এর নামে প্রকাশ করা হয় । [81] বইটি অনেক পজেটিভ রিভিউ পায় এবং আর্থিকভাবেও সফল হয় — হ্যামিলটনের মতে “একটি ছোটগল্প সংকলনের জন্য এটা চমকপ্রদ সাফল্য ছিল” । [82] নাইন স্টোরিস দি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার লিস্ট-এ ৩ মাস ধরে অবস্থান করে । [82] ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা থেকে মুখফেরাতে শুরু করা স্যালিঞ্জার তার গল্পের প্রকাশকদের ধুলোর জ্যাকেট তার গল্পের চরিত্রগুলোর ছবি দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, এদিকে পাঠকরা তাদের সম্পর্কে পূর্ব ধরনা করেত থাকে ।
দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়-এর কুখ্যাতি বাড়তে থাকলে স্যালিঞ্জার জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে চলে যান । ১৯৫৩ সালে তিনি ৩০০ ইস্ট ৫৭ স্ট্রিট,[83] নিউ ইয়র্ক এর একটি এ্যাপার্টমেন্ট থেকে কর্ণিশ, নিউ হ্যাম্পশায়ারে চলে যান । প্রথমদিকে কর্ণিশে তিনি তুলনামূলক সামাজিক ছিলেন, বিশেষ করে তিনি উইন্ডসর হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে ভালই মিশতেন । স্যালিঞ্জার প্রায়ই তাদের নিজের বাড়িতে দাওয়া করতেন রেকর্ড বাজানোর জন্য এবং স্কুলে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে শোনার জন্য । [84] এরকমই একজন শিক্ষার্থী শিরলে ব্ল্যানি তাকে শহরের পত্রিকা দি ডেইলি ইগল-এর হাই স্কুল পৃষ্ঠায় একটি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করান । পরবর্তীতে ব্ল্যানির সাক্ষাৎকার পত্রিকাটির সম্পাদকীয় অংশে প্রকাশিত হলে স্যালিঞ্জার কোনো কথা না বলেই হাইস্কুল পড়ুয়াদের সাথে সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন । [84] তাকে শহরের ভেতরেও তেমন একটা দেখা যেত না, তিনি শুধু তার একজন ঘনিষ্ট বন্ধু আইনজ্ঞ লার্নড হ্যান্ড-এর সাথে দেখা করতেন । [85] তিনি আগের থেকে অনেক কম সংখ্যক লেখা প্রকাশ করতে থাকলেন । ১৯৫৩ সালে ‘’নাইন স্টোরিস’’ প্রকাশের পর এই দশকে তিনি মাত্র ৪টি গল্প প্রকাশ করেন; ১৯৫৫ সালে ২টি এবং ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে একটি করে ২টি ।
১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ৩৬ বছর বয়সে স্যালিঞ্জার রেডক্লিফ কলেজ-এর শিক্ষার্থী ক্লেয়ার ডগলাসকে বিয়ে করেন (ক্লেয়ার এর বাবা রবার্ট ল্যাংটন ডগলাস একজন শিল্প সমালোচক ছিলেন) । তাদের ২টা সন্তান হয়, মার্গারেট (যিনি পেগী নামেও পরিচিত – জন্ম ১০ ডিসেম্বর, ১৯৫৫) এবং ম্যাথিউ (জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০) । মার্গারেট স্যালিঞ্জার তার ড্রিম ক্যাচার স্মৃতিকথায় লেখেন যে তিনি মনে করেন তার বাবা-মায়ের বিয়ে হত না, তারও কখনও জন্ম হত না, যদি তার বাবা লাহিড়ী মহাশায়া-এর লেখা না পড়তেন । লাহিড়ী মহাশায়া পরমহংস যোগানন্দ-এর একজন গুরু, যেটা একজন সংসারী মানুষেরও (যার স্ত্রী ও সন্তান আছে) যে পরমজ্ঞান অর্জন সম্ভব সেই পথ দেখায় । [86] তাদের বিয়ে হওয়ার পরে, ১৯৫৫ সালে স্যালিঞ্জার এবং ক্লেয়ার ওয়াশিংটন ডিসি-এর একটি ছোট হিন্দু মন্দিরে ক্রিয়া ইয়োগা-এর পথ অনুসরণ করা শুরু করেন । [87] তাদেরকে দিনে দুইবার ১০ মিনিট করে অনুশীলন করার জন্য একটি মন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশাস সম্পর্কিত ব্যাম শিক্ষানো হয় । [87]
ক্লেয়ারার স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার ৪ মাস আগে স্যালিঞ্জার ক্লেয়ারকে বলেন তার পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসে তার সাথে থাকা শুরু করতে, এবং ক্লেয়ার বিষয়টা মেনে নেন । ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত “ফ্রাননি” গল্পের বেশ কিছু অংশ তার সাথে ক্লেয়ার এর সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে লেখা, যার মধ্যে ক্লেয়ারের দি ওয়ে অফ দি পিলগ্রিম বইটির মালিকানাও অন্তর্ভুক্ত । [88] তাদের বিচ্ছিন্ন জায়গায় বসবাস এবং স্যালিঞ্জারের স্বভাবের কারণে অনেক লম্বা সময় ধরে তাদের অন্য মানুষের সাথে দেখা হত না । স্যালিঞ্জারের সদা-পরিবর্তনশীল ধর্মীয় বিশ্বাসেও ক্লেয়ার অনেকটা বিরক্ত হন । যদিও ক্লেযার ক্রিয়া ইয়োগা চালিয়ে যান, তিনি স্মরণ করেন স্যালিঞ্জার কোনো গল্পে কাজ করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কর্ণিশ ছেড়ে চলে যেতেন এবং “কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরতেন তার যে গল্পটি লেখার কথা ছিল সেটা অসম্পূর্ণ বা নষ্ট অবস্থায় এবং নিজেদের অনুসরণের জন্য নতুন কোনো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে” । [89] ক্লেয়ার মনে করেন “জেরি এরকম করত তার লেখা গল্পটি নষ্ট করা বা ফেলে দেওয়া বা গল্পের মান পছন্দ না হওয়া বা প্রকাশ করাতে না চাওয়ার বিষয়টি ঢাকার জন্য” । [89]
ক্রিয়া ইয়োগা ত্যাগ করার পরে, স্যালিঞ্জার ডায়ানেটিক্স (সায়েন্টোলজি-র অগ্রদূত ) অনুসরণের চেষ্টা করেন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা এল রন হাববার্ড-এর সাথেও সাক্ষাৎ করেন, কিন্তু ক্লেয়ার বলেন ডায়ানেটিক্স সম্পর্কে তার এই আগ্রহ বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না । [89][90] এর পরে তিনি বেশ কয়েকটি অধ্যাতিক, চিকিৎসা এবং পুষ্টি সিস্টেমের বিশ্বাসের ওপর অনুগত হন যার মধ্যে আছে খ্রিস্টান বিজ্ঞান, এডগার কেইস, হোমিওপ্যাথি, আকুপাংচার এবং ম্যাক্রোবায়োটিকস । [91]
প্রথম সন্তান জন্মের পর স্যালিঞ্জারের পারিবারিক জীবনে দ্বন্দের স্মৃষ্টি হয়; মার্গারেটের বই অনুসারে, ক্লেয়ার অনুভব করেন তার মেয়ে স্যালিঞ্জারের মনে তার সব জায়গাটুকু দখল করে নিয়েছে । [92] শিশু মার্গারেট বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকতেন, কিন্তু স্যালিঞ্জার খ্রিস্টান বিজ্ঞানের মতবাদগুলি অনুসরণ করে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন । [93] মার্গারেট বলেন, অনেক বছর পরে তার মা তার কাছে স্বীকার করেন যে ১৯৫৭ সালের শীতে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় এবং তিনি মার্গারেটকে হত্যা করে নিজে অত্নহত্যার পরিকল্পনা করেন । ধারণা করা হয় ক্লেয়ার স্যালিঞ্জারের সাথে একবার নিউ ইয়র্ক ভ্রমনের সময় এটা করার জন্য মানুষিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি এটা না করে হোটেল থেকে মার্গারেটকে নিয়ে পালিয়ে যান । কয়েক মাস পরে, স্যালিঞ্জার তাকে বুঝিয়ে কর্ণিশে ফিরিয়ে নিয়ে যান । [93]
১৯৮০-র দশকে স্যালিঞ্জার টেলিভিশন অভিনেত্রী ইলেইন জয়েস-এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং এটি বেশ কয়েক বছর স্থায়ী হয় । তাদের সম্পর্ক শেষ হয় যখন তিনি কলিন ও'নিলের ( জন্ম ১১ জুন, ১৯৫৯) সাথে পরিচিত হন । কলিন ও'নিল একজন নার্স এবং লেপ তৈরিকারী ছিলেন, স্যালিঞ্জার যাকে ১৯৮৮ সালে বিয়ে করেন । [94] ও’নিল স্যালিঞ্জারের ৪০ বছরের ছোট ছিলেন । তিনি একবার মার্গারেটকে বলেন তিনি এবং স্যালিঞ্জার একটি বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছেন । [95]
স্যালিঞ্জার ১৯৬১ সালে ফ্রাননি এ্যান্ড জোই্ এবং ১৯৬৩ সালে রেইজ হাই দ্য রুফ বিম, কারপেইন্টারস এন্ড স্যইমোউর: এন ইনট্রোডাকশন প্রকাশ করেন । প্রতিটি বইয়ে, গ্লাস পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কিত, ২টি করে ছোট গল্প বা নোভেলা ছিল, যেগুলো দি নিউ ইয়র্কার-এ পূর্বেও প্রকাশিত হয়েছিল । এই ৪টি গল্প মূলত ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল এবং নাইন স্টোরিস-এর পরে প্রকাশিত এগুলোই তার একমাত্র গল্প । ফ্রাননি এ্যান্ড জোই্-এর ডাস্ট জ্যাকেটে, তার জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার ইচ্ছা উল্লেখ করে, স্যালিঞ্জার লেখেন : “এটা আমার কিছুটা বিপরীতমুখী মতামত যে একজন লেখেকের নামহীনতা ও অস্পষ্টতার অনুভূতি তার কর্মজীবনে ঋণের ওপর নেওয়া তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান সম্পদ ।" [96]
১৯৬১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর, টাইম ম্যাগাজিন তাদের কাভার স্যালিঞ্জারের নামে উৎসর্গ করেন । তার নির্জনবাসী জীবন সম্পর্কিত একটা আর্টিকেলে ম্যাগাজিনটি লেখেন যে তার গ্লাস পরিবার সিরিজটি “এখনও সম্পন্ন হয়নি... স্যালিঞ্জার একটি গ্লাস ট্রিওলজি লেখার কথা চিন্তা করছেন” । এরপরে স্যালিঞ্জার শুধুমাত্র একটি গল্প প্রকাশ করেন: “হ্যাপওয়ার্থ ১৬, ১৯২৪”, লম্বা চিঠি আকারে লেখা একটি নোভেলা, সিমুর গ্লাস যেটা গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে থাকাকালিন লিখেছেন । ৬ বছরের মধ্যে এটা তার প্রথম নতুন কাজ ছিল, নোভেলাটি দি নিউ ইয়র্কার-এর জুন ১৯, ১৯৬৫ ইস্যুর প্রায় পুরো অংশ জুড়ে ছিল, এটি সমালোচকদের দ্বারাও বেশ আলোচিত হয় । এই সময়ের আশেপাশে স্যালিঞ্জার ক্লেয়ারকে তার বন্ধুবান্ধব এবং আত্নীয় স্বজনের থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলে —মার্গারেট স্যালিঞ্জারের ভাষায় — “একজন ভার্চুয়াল বন্দী” । [89] ক্লেয়ার স্যালিঞ্জার থেকে আলাদা হয়ে যান ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে এবং অক্টোবর ৩, ১৯৬৭ সালে তাদের ডিভোর্স সম্পন্ন হয় । [97]
১৯৭২ সালে ৫৩ বছর বয়সে স্যালিঞ্জরা ১৮ বছর বয়সী জয়েস মেইনার্ড-এর সাথে একটি সম্পর্কে জড়ান যেটা ৯ মাস স্থায়ী হয় । মেইনার্ড সেই সময়েই সেভেন্টিন ম্যাগাজিনের একজন অভিজ্ঞ লেখিকা ছিলেন । নি নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে তাদের জন্য একটি আর্টিকেল লিখতে বলেন যেটা “এ্যান এইটটিন-ইয়ার-ওল্ড লুকস ব্যাক অন লাইফ” শিরনামে এপ্রিল ২৩, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় [98] এবং তাকে সেলিব্রেটি বানিয়ে দেয় । খ্যাতি নিয়ে বসবাস করা সম্পর্কে সতর্ক করে স্যালিঞ্জার তাকে একটি চিঠি লিখেন । ২৫ টি চিঠি আদান-প্রদানের পর, ইয়েল বিশ্ববিদ্যলয়-এ নিজের প্রথম বছর শেষ করে গ্রীষ্মে মেইনার্ড স্যালিঞ্জারের সাথে থাকার জন্যে চলে আসেন । [99] সেই বছর শরৎকালে মেইনার্ড আর ইয়েলে ফিরে যায় না এবং স্যালিঞ্জারের কর্ণিশের বাড়িতে ১০ মাস অতিথি হিসেবে থাকেন । একটি পারিবারিক ভ্রমণের সময় স্যালিঞ্জার তার মেয়ে মার্গারেটকে বলেন সম্পর্কটি শেষ হয় কারণ মেইনার্ড সন্তান নিতে চাচ্ছিলেন এবং তার মনে হয় সন্তান নেওয়ার মতো বয়স এখন আর তার নেই । [100] যদিও, মেইনার্ড তার আত্নজীবনীতে অন্য কথা বলেন, তিনি বলেন স্যালিঞ্জার হঠাৎ করে তাদের সম্পর্ক শেষ করে দেন এবং তাকে আর ফেরত নিতে অস্বীকার করেন । মেইনার্ড স্যালিঞ্জারের জন্য ইয়েল বিশ্ববিদ্যলয় ছেড়ে চলে এসেছিলেন এবং একটা বৃত্তিও ত্যাগ করেন । মেইনার্ড পরবর্তিতে তার স্মৃতিকথায় লেখেন যে কীভাবে তিনি জানতে পারেন স্যালিঞ্জার অল্পবয়সী মেয়েদের সাথে চিঠি লিখে তাদের সাথে সম্পর্ক শুরু করে । এই চিঠিগুলা যারা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে স্যালিঞ্জারের সর্বশেষ স্ত্রীও আছেন, তিনি একজন নার্স ছিলেন এবং স্যালিঞ্জারের সাথে যখন তার দেখা হয় তখন তিনি অন্যকারো সাথে বিয়ের জন্য এংগেজড ছিলেন । [101]
মেইনার্ডের সাথে বসবাসকালেও স্যালিঞ্জার নিয়মমাফিক প্রতিদিন সকালে কয়েকঘণ্টা করে লিখতে থাকেন । মেইনার্ডের কথা মত, ১৯৭২ সালের মধ্যে তিনি ২টি উপন্যাস সম্পন্ন করে ফেলেন । [102][103] ১৯৭৪ সালে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে দেওয়া এক দুর্লভ সাক্ষাৎকারে স্যালিঞ্জার বলেন, “প্রকাশ না করার মধ্যে একটা অবিশ্বাস্য শান্তি আছে ... আমি লিখতে পছন্দ করি । আমি লিখতে ভালবাসি । কিন্তু আমি শুধু নিজের জন্য লিখি এবং নিজের আনন্দের জন্য লিখি” । [104] মেইনার্ড বলেন, স্যালিঞ্জার প্রকাশনাকে তার কাজের একটি বাধা হিসেবে দেখেন । [105] মার্গারেট স্যালিঞ্জার তার স্মৃতিকথায় তার বাবার অপ্রকাশিত লেখাসমূহের সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন, “ একটা লাল চিহ্নের অর্থ যদি আমি লেখা সম্পন্ন করার আগেই মরা যায় তাহলে এটা যেভাবে আছে সেভাবেই প্রকাশ করে দাও, নীল চিহ্নের মানে প্রথমে এটা সম্পাদন করো, এভাবে চলেতে থাকবে ।” [106] একজন প্রতিবেশী বলেন যে স্যালিঞ্জার তাকে বলেছেন যে তিনি ১৫টি অপ্রকাশিত উপন্যাস লিখে ফেলেছেন । [107]
স্যালিঞ্জারের সর্বশেষ সাক্ষাৎকার ছিল জুন ১৯৮০ সালে দি ব্যাটন রোউজ অ্যাডভোকেট-এর বেটি এপেস এর সাথে । এই সাক্ষাৎকারের ঘটনাটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । একজায়গায় বলা হয়, এপেস একজন সুন্দরী তরুণ মহিলা ছিলেন যিনি নিজেকে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী উপন্যাসিক হিসেবে পরিচয় দেন এবং স্যালিঞ্জারের অজানায়, বিনা অনুমতিতে সাক্ষাৎকারের অডিও রেকোর্ড করেন এবং তার কিছু ছবি তোলেন । [108] অন্য একজায়গায় গুরুত্বদিয়ে বলা হয় যে দেখা করার আগে এপেস স্যালিঞ্জারের সাথে একটি চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং স্যালিঞ্জার তার নিজের উদ্দোগে ব্রিজ পার হয়ে তার সাথে দেখা করতে আসেন । এপেস সাক্ষাৎকারের সময় পরিষ্কারভাবে বলে দেন যে তিনি একজন রিপোর্টার এবং স্যালিঞ্জার চলে যাওয়ার সময় তার কিছু ছবি তোলেন । প্রথম বর্ণনায় বলা হয়, সাক্ষাৎকারটি অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ হয় যখন একজন কর্ণশের স্থানীয় পথচারী খ্যাতনামা এই লেখকের সাথে হাত মেলানোর চেষ্টা করেন এবং যার ফলে স্যালিঞ্জার রেগে যান । [109] সাক্ষাৎকারটির আরো একটি অংশ দি প্যারিস রিভিউ-এ প্রকাশিত হয় এপেসের নামে যেটা এপেস প্রত্যাক্ষান করেন এবং আলাদাভাবে এটাকে রিভিউ এর সম্পাদক জর্জ প্লিম্পটন-এর একটি আহরণ করা কাজ বা ডিরাইভ্ড ওয়ার্ক বলা হয় । [110][111][112]
যদিও স্যালিঞ্জার চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার, এরপরেও তাকে জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের অযাচিত মনযোগের সম্মুখীন হতে হয় । [113] তার পাঠকরা এবং পাশের ডার্টমাউথ কলেজ-এর শিক্ষার্থীরা প্রায়ই দল বেঁধে কর্ণিশে চলে আসতেন এই লেখকের এক ঝলক পেতে । [114] ১৯৮৬ সালের মে মাসে স্যালিঞ্জার জানতে পারেন যে ব্রিটিশ লেখক ইএন হ্যমিলটন তার একটি জীবনী প্রকাশ করতে যাচ্ছেন যেটাতে তার বন্ধুদের এবং অন্য লেখকদের কাছে লেখা চিঠির ব্যপক আকারে ব্যবহার করা আছে । বইটির প্রকাশনা থামানোর জন্য স্যালিঞ্জার মামলা করেন । কোর্ট এই মামলায় স্যালিঞ্জারের পক্ষে রায় দেয় এবং বইটি আর প্রকাশিত হয় না । [115] পরবর্তীতে হ্যামিলটন ইন সার্চ অফ জে. ডি. স্যালিঞ্জার: এ রাইটিং লাইফ নামে আরেকটি বই প্রকাশ করেন । কিন্তু এই বইটিতে হ্যামিলটন স্যালিঞ্জারের জীবনীর পরিবর্তে তার তথ্য খুঁজে বের করা এবং সেসব তথ্যের কপিরাইট নিশ্চিত করণের বিষয়েই বেশি কথা বলেন । [116]
এই মামলায় অপ্রত্যাশিতভাবে স্যালিঞ্জারের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে, যেমন তিনি গত ২০ বছর ধরে লেখালেখি চালিয়ে গেছেন, তার কথায় “শুধু একটা ফিকশন … আর কিছু না” ।[55] তার চিঠির উদ্ধৃতাংশগুলো নিয়ে, বিশেষ করে ওনা ও’নীল-এর সাথে চার্লি চ্যাপলিন-এর বিয়ের বিষয়ে লেখা তার তিক্ত একটি মন্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয় ।
আমি সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে দেখতে পায় । চ্যাপলিন তার সিফোনিয়ার-এর উপর উলঙ্গ এবং ধূসর অবস্থায় স্কোয়ার্ট করছে, একটা মরা ইদুরের মতো সে গলার সাথে তার বাঁশের লাঠিটা মাথার চারপাশে ঘোরাচ্ছে । ওনা একটা নীলাভ-সবুজ রংয়ের গাউন পরে বাতরুম থেকে পাগলের মতো তালি দিচ্ছে । [30][115]
১৯৯৫ সালে ইরানি পরিচালক দারিউস মেহেরজুই স্যালিঞ্জারের ফ্রাননি এ্যান্ড জোই্ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অননুমোদিত ভাবে পারি নামের একটি সিনেমা মুক্তি দেন । যেহেতু ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কপিরাইট সম্পর্ক ছিল না তাই সিনেমাটি ইরানে বৈধভাবে বণ্টন করা যায় [117] কিন্তু ১৯৯৮ সালে লিংকন সেন্টার-এ সিনেমাটি প্রদর্শন করার ক্ষেত্র স্যালিঞ্জার তার আইনজীবীদের দিয়ে বাঁধা প্রদান করে প্রদর্শন বাতিল করান । [118] মেহেরজুই সিনেমাটিকে “একধরণের সংস্কৃতিক বিনিময়” হিসেবে দেখেন এবং তিনি স্যালিঞ্জারের এই কাজকে “বুদ্ধিভ্রংশজনক” কাজ বলেন । [119]
১৯৯৬ সালে স্যালিঞ্জার তার পূর্বে অসংগৃহীত নোভেলা “হ্যাপওরথ ১৬, ১৯২৪” প্রকাশের অনুমতি অর্কহিসেস প্রেস নামের একটি ছোট প্রকাশনীকে দেয় । [120] এটি ঔবছরই প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল এবং তখন আমাজন.কম এবং অন্যান্য বই বিক্রেতাদের তালিকায়ও এটা দেখা যায় । বিভিন্ন জায়গায় গল্পটি নিয়ে তুমুল লেখালেখি হয়, এটি সম্পর্কে অনেক আর্টিকের এবং ক্রিটিকাল রিভিউও প্রকাশ হয় । এসবের মধ্যে নোভেলাটির প্রকাশের তারিখ পেছাতে থাকে । প্রকাশের তারিখ পেছেতে পেছাতে শেষপর্যন্ত বইটির প্রকাশ বাতিল করা যায় । আমাজন আশা করছিল অর্কহিসেস এটি ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে প্রকাশ করবে [121][122] কিন্তু স্যালিঞ্জারের মৃত্যুর সময়েও এটি “বর্তমানে অপ্রাপ্য” হিসেবে তালিকাভুক্ত অবস্থায় থাকে । [123]
২০০৯ সালের জুনে স্যালিঞ্জার তার আইনজীবীদের সাথে সুইডিস বই প্রকাশক ফ্রেডরিক কল্টিং-এর ‘জে. ডি. ক্যালিফোর্নিয়া’ ছদ্মনামে লেখা দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়-এর অননুমোদিত সিকুয়েল প্রকাশ করার বিষয়ে আলোচনা করেন । ক্যালিফোর্নিয়ার বই এর নাম 60 ইয়ারস লেটার: কামিং থ্রু দি রাই এবং এখানেও স্যালিঞ্জারের প্রোটাগোনিস্ট হোল্ডেন কোলফিল্ডের গল্পই বলে । স্যালিঞ্জারের উপন্যাসে কোলফিল্ডের বয়স ছিল ১৬ বছর আর সে একটি প্রাইভেট স্কুল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল । ক্যালিফোর্নিয়ার উপন্যাসে তার বয়স এখন ৭৬ বছর এবং তাকে একটি নার্সিং হোম থেকে পালিয়ে আসার পরে চিন্তিত অবস্থায় দেখা যায় । স্যালিঞ্জারের নিউ ইয়র্ক লিটারারি এজেন্ট ফিলিস ওয়েস্টবার্গ ব্রিটেনের সানডে টেলিগ্রাফ-কে বলেন “বিষয়টি একজন উকিলকে দেখার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে” । যেহেতু কল্টিং সম্পর্কে খুব অল্প জানা যায় এবং “উইন্ডআপবার্ড পাবলিশিং” নামের একটি নতুন প্রকাশনীকে বইটি প্রকাশ করার ভার দেওয়ার হয়, তাই সাহিত্যের সাথে সম্পর্কিত অনেকেই এটিকে একটি স্টান্ট ভাবতে শুরু করে । [124] বিভাগীয় কোর্টের বিচরক ডেবোরাহ এ. ব্যাটস একটি নির্দেশ যারি করেন যেটা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বইটির প্রকাশ নিষিদ্ধ করে । [125][126] বইটির লেখক ২৩ জুলাই, ২০০৯ সালে সালে একটি আপীল করেন; ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে এটি সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট গ্রহণ করে । [127][128] ২০১১ সালে কেসটির সমাধান হয় যখন কল্টিং কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রে 60 ইয়ারস লেটার-এর সবরকম প্রকাশ বা অন্যভাবে বণ্টন থেকে বিরত থাকতে রাজি হন যতদিন না দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় সাধারণ মানুষের সম্পদে পরিনত না হয় । তাকে আরো রাজি হতে হয় “কামিং থ্রু দি রাই” শিরোনাম হিসেবে না ব্যবহার করার, বইটি স্যারিঞ্জারের নামে উৎসর্গ করার বা “দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়” শিরোনামটি উল্লেখ না করার । এসব শর্তের বাইরে কল্টিং নির্দিধায় এবং বিনা বাধায় বইটি পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় বিক্রয় করতে পারেন । [129]
২৩ অক্টোবর, ১৯৯২ সালে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেন, “এমনকি মঙ্গলবার যে আগুনটা তার অর্ধেক বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল সেটাও, তারুণ্য বিদ্রহের ক্লাসিক উপন্যাস দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়-এর লেখক, নির্জনবাসী জে. ডি স্যালিঞ্জারকে তার বাড়ির বাইরে আনতে পারেনি । মি. স্যালিঞ্জার গোপনীয়তাকে একটি শৈল্পিক রূপ দেওয়ার জন্যও সমান খ্যাতিসম্পন্ন ।” [130]
সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার ২৫ বছর পর, ১৯৯৯ সালে জয়েস মেইনার্ড নিজের উদ্দেশ্যে লেখা স্যালিঞ্জারের একগুচ্ছ চিঠি নিলাম করেন । একই বছর মেইনার্ড এট হোম ইন দি ওয়ার্ল্ড: এ মেমওয়ার নামে তার জীবন এবং স্যালিঞ্জারের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন । বইটিতে অন্যান্য প্রসঙ্গগুলোর মধ্যে আলোচনা করা হয় কীভাবে মেইনার্ড তার মায়ের কাছ থেকে এই বয়স্ক লেখককে আকৃষ্ট করার বিষয়ে পরামর্শ নিতেন । লেখককে আকৃষ্ট করতে জয়েস বাচ্চাদের মতো পোশাক পরতেন । বইটিতে লেখকের সাথে তার সম্পর্কের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয় । চিঠি এবং মেমওয়ার সম্পর্কে হওয়া বিতর্কের বিষয়ে মেইনার্ড বলেন আর্থিক কারণে তিনি চিঠিগুলো নিলাম করতে বাধ্য হন, অন্যথা তিনি এগুলো ইয়েল-এর বেইনিকি লাইব্রেরিত-তে দান করে দিতেন । সফটওয়্যার ডেভেলপার পিটার নরটন চিঠিগুলা ১,৫৬,৫০০ মার্কিন ডলারে কেনেন এবং এগুলো স্যালিঞ্জারকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । [131]
একবছর পরে, স্যালিঞ্জার এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী ক্লেয়ার ডগলাসের মেয়ে মার্গারেট ড্রিম ক্যাচার: এ মেমওয়ার নামের একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন । বইটিতে তিনি, নিজের মায়ের ওপর স্যালিঞ্জারের প্রচন্ড নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন এবং ইয়ান হ্যামিল্টনের বইয়ে স্যালিঞ্জার সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা ছিল তা দূর করেন । পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার সম্পর্কে হ্যামিল্টন বলেন এটা স্যালিঞ্জারের উপর বড়রকম মানুষিক প্রভাব ফেলে এবং যুদ্ধের স্মৃতির সাথে স্যালিঞ্জার নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারেন না । মার্গারেট স্যালিঞ্জার বলেন “ব্লাডি মর্টেন-এর যুদ্ধে যে কয়েকজন মানুষ জীবিত ছিলেন (যার মধ্যে তার বাবাও ছিলেন) তারা শারীরিক এবং মানুষিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন”,[38] কিন্তু তিনি এটাও বলেন যে তার বাবা আর্মিতে নিজের অবদান সম্পর্কে অনেক গর্বিত বোধ করতেন, তিনি মিলিটারি হেয়ার্কাট বজায় রাখেন, সার্ভিস জ্যাকেটও ব্যবহার করেন এবং নিজের পুরোনো জিপে বিভিন্ন জায়গায় যেতেন ।
মার্গারেট এবং মেইনার্ড উভয়ের মতেই স্যালিঞ্জার সিনেমা অনেক পছন্দ করতেন । মার্গারেটের মতে, তার পছন্দের সিনেমাগুলোর মধে ছিল, জিজি (১৯৫৮), দি লেডি ভ্যানিসেছ (১৯৩৮), দি ৩৯ স্টেপস (১৯৩৫; দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায়-এ ফোবির পছন্দের সিনেমা), এবং ডাব্লিউ. সি. ফিল্ডস, লরেল এ্যন্ড হার্ডি, আর মার্কস ব্রাদার্স-এর কমেডি । [132] ভিসিআর এর সময় ১৬ এমএম প্রিন্টে ১৯৪০-এর দশকের ক্লাসিক সিনেমার ব্যপক সংগ্রহ ছিল স্যালিঞ্জারের কাছে। মেইনার্ড লেখেন "তিনি মুভি ভালবাসতেন, ফিল্ম না",[133] আর মার্গারেট স্যালিঞ্জার মনে করেন তার বাবার "পৃথিবী সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে ঔ সময়ের সিনেমার ওপর ভিত্তি করে। আমার বাবার কাছে সব স্পেনিস ভাষাভাষী হলো পোর্টো রিকান ধোপানী অথবা মার্কস ব্রাদারস এর সিনেমার একজন হাসিমুখী দাঁতহীন জিপসি।" [91] দি নিউ ইয়র্কার-এর একজন স্টাফ রিপোর্টার এবং স্যালিঞ্জারের পুরোন বন্ধু লিলিয়ান রস, স্যালিঞ্জারের মৃত্যুর পরে বলেন "স্যালিঞ্জার সিনেমা ভালবাসতেন, এবং অন্যকারো থেকে তার সাথে সিনেমার আলাপ করা বেশি মজার ছিল। তিনি অভিনেতাদের কাজকরা দেখে এবং তাদের জেনেও মজা পেতেন। (তিনি অ্যানি ব্যানক্রফ্ট-কে ভালবাসতেন এবং অড্রে হেপবার্ন-কে ঘৃণা করতেন এবং বলেন যে তিনি গ্রান্ড ইলিউশন ১০ বার দেখেছেন।)" [56]
দীর্ঘ সময় ধরে ম্যাক্রোবায়োটিক্স সম্পর্কে আগ্রহ, “বিকল্প ঔষধ এবং পূর্বের দর্শণ”-এর সাথে সম্পৃক্ততা ইত্যাদি স্যালিঞ্জার সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে বেশ পরিষ্কার ধারণা দেন মার্গারেট । ড্রিম ক্যাচার প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, মার্গারেটের ভাই ম্যাট মেমওয়ারটির নিন্দা করে দি নিউ ইয়র্ক অবজারভার-এ একটি চিঠি লেখেন । তিনি নিজের বোনের “তাদের শৈশবের গথিক গল্প” অবজ্ঞা করে বলেন “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারছি না যে ও সচেতনভাবে কোনো কিছু বানিয়ে বলছে । আমি শুধু এতটুকু জানি যে আমার বোনের বর্ণনার থেকে আমি একটি খুবই আলাদা বাড়িতে, আলাদা বাবা-মায়ের সাথে বেড়ে উঠেছি ।" [134]
স্যালিঞ্জার ২৭ জানুয়ারী, ২০১০ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারে নিজ বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালীন সময়ে তার বয়স ছিল ৯১ বছর । স্যালিঞ্জারের সাহিত্য প্রতিনিধি দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানান, মে ২০০৯ এ লেখকের হিপ (hip) ভেঙ্গে যায়, এর পরেও তিনি সুস্থই ছিলেন কিন্তু নিউ ইয়ারের পর থেকে তার স্বাস্থে হঠাৎ অবনতি হতে শুরু করে । [135] প্রতিনিধি মনে করেন স্যালিঞ্জারের মৃত্যুটা তেমন বেদনাদায়ক ছিল না । [135] মৃত্যুর পর স্যালিঞ্জারের তৃতীয় স্ত্রী এবং বিধবা, কোলিন ও’নীল জ্যাকর্জেসকি স্যালিঞ্জার, এবং স্যালিঞ্জারের ছেলে ম্যাট তার রেখে যাওয়া সম্পদ পান । [135]
স্যালিঞ্জার নিজের পুরো জীবনজুড়েই লেখালেখি চালিয়ে যান, যদিও শেষের দিকের লেখাগুলো তিনি প্রকাশ করেননি । তার বিধবা, কোলিন ও’নীল এবং ছেলে ম্যাট স্যালিঞ্জার ২০১৯ সালে ঘোষণা দেন স্যালিঞ্জারে সব লেখা কোনো না কোনো সময় প্রকাশিত হবে । তার প্রকাশের জন্য লেখকের কাজগুলোকে প্রস্তুত করতে থাকেন । এটা একটা বড় কাজ এবং এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় । [136][137]
১৯৪৬ সালে হার্পারস ম্যাগাজিন-এ দেওয়া এক লেখায় স্যালিঞ্জার বলেন "আমি প্রায় সবসময়ই অনেক অল্প বয়সীদের নিয়ে লিখি।" [138] স্যালিঞ্জারের সকল লেখায়, তার প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প দি ইয়াং ফোকস (১৯৪০) থেকে শুরু করে দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই এবং তার গ্লাস ফ্যামিলি-র গল্প গুলোতেও তরুণ ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৬১ সালে সমালোচক আলফ্রেড কাজিন ব্যাখ্যা করে বলেন, তরুণ পাঠকদের মধ্যে স্যালিঞ্জারের জনপ্রিয়তার একটা কারণ হল তিনি লেখার বিষয়বস্তু হিসেবে কিশোর ছেলে-মেয়েদের বেছে নিয়েছেন, আরেকটা কারণ হল "তরুণ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এমন একটা চেতনার তৈরি হয় যে তিনি তাদের হয়ে তাদের জন্যে লিখছেন, এমন ভাষায় লিখছেন যেটা তাদের একান্ত নিজের এবং অদ্ভুতরকম সত্য, এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেছেন যেটাতে পৃথিবী সম্পর্কে তাদের একান্ত গোপনীয় বিচারবিবেচনাগগুলোও প্রকাশ পেয়েছে।" [139] এই কারণে নরমান মেইলার একবার মন্তব্য করেন স্যালিঞ্জার ছিলেন, "প্রিপ স্কুলে থাকা সর্বকালের সেরা মস্তিষ্ক"। [140] স্যালিঞ্জারের ভাষা, বিশেষ করে তার তেজোদৃপ্ত, বিরল বাস্তবিক কথোপকথন তার প্রথম গল্পগুলো প্রকাশিত হওয়ার সময় একটি বৈপ্লবিক বিষয় ছিল; সমালোচকদের চোখে তার এই বিষয়টাই অন্য লেখকদের থেকে তার লেখাকে আলাদা করেছে। [141]
স্যালিঞ্জার তার চরিত্রগুলোর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং ইন্টিরিওর মোনোলগ, চিঠি এবং দীর্ঘায়িত টেলিফোন আলাপের মাধ্যে নিজের কথোপকথনের প্রতিভা প্রকাশ করেন। এই উপাদানগুলো তাকে আরো বিভ্রম দিয়েছে যে তার চরিত্রের নিয়তিগুলো তাদের কাজের মাধ্যমে হয়েছে। [142] তার গল্পে পুনরাবৃত্ত হওয়া বিষয়বস্তুগুলো সরলতা এবং তারুণ্যের ধারণার সাথে সংযুক্ত, যেখানা "হলিউড এবং বাইরের দুনিয়ার কুপ্রভাব",[143] তরুণ এবং অপ্রকৃত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতা,[143] শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আগেই বিকশিত হওয়া বুদ্ধিমত্তা। [43]
স্যালিঞ্জারের প্রকাশিত লেখার মধ্যে সমসাময়িক সমালোচকগন একটা পরিষ্কার অগ্রগতি লক্ষ করেন, যেটা ক্যাচার পরবর্তী তার তিনটি গল্পসংগ্রহের ক্রমবর্ধমান নেগেটিভ রিভিউ থেকে স্পষ্ট হয়। [144] ইয়ান হ্যামিলটন এই ধরনার সাথে একমত প্রকাশ করে বলেন, যেখানে “স্লিকস” –এর জন্য স্যালিঞ্জারের প্রথম গল্পগুলোতে “টানটান এবং তেজোদৃপ্ত” কথোপোকথন ছিল, তার সাথে বিধিবদ্ধতা এবং ভাবপ্রবণও ছিল । উইলিয়াম শন-এর মতো আরো দি নিউ ইয়র্কার সম্পাদকদের প্রচেষ্টায় তার এ পারফেক্ট ডে ফর বানানাফিস, দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এবং ১৯৫০-এর দশকের শুরুদিকের আরো গল্প থেকে “অতিরিক্ত, উত্ত্যক্ত করা রহস্য, প্রতিসংহৃত” জিনিসগুলো পরিশোধন করা হয় । [145] ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন স্যালিঞ্জার অনেকটা একাকী থাকা শুরু করেন এবং ধর্মীয় পড়াশোনা করতে থাকেন, হ্যামিলটন লক্ষ করেন তার গল্পগুলো আকারে বড় হতে থাকে, প্লটের ওর কম নির্ভরশীল হয়, আর অবান্তরতা জিনিসে ভরে যায় । [146] লুইস মেন্যান্ড একমত হন, দি নিউ ইয়র্কার-এ তিনি লেখেন স্যালিঞ্জার “প্রচলিত ধরন অনুযায়ী গল্প লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন... মনে হচ্ছিল যেন শিল্পের ধরন হিসেবে উপন্যাসের উপর তার আগ্রহ হারিয়ে গেছে – হয়তো তিনি মনে করেছিলেন সাহিত্য অলঙ্কার এবং লেখকের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কিছু একটা নকল এবং বেঠিক জিনিস আছে । [43] সম্প্রতি বছরগুলোতে, কিছু সমালোচক নাইন স্টোরি পরবর্তি কিছু লেখাকে সমর্থন করে কথা বলেছেন ; ২০০১ সালে, দি নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস-এ জেনেট ম্যালকম লেখেন যে “জোই্” সম্ভবত স্যালিঞ্জারের শেরা লেখা... এটা এবং এর সঙ্গে লেখা “ফ্রাননি” বারবার পড়া দি গ্রেট গ্যাটসবি বারবার পড়ার থেকে কোনো অংশে কম না ।
স্যালিঞ্জারের সাহিত্যকর্মগুলো অনেক বিশিষ্ট লেখকদের প্রভাবিত করেছে । স্যালিঞ্জার সম্পর্কে ও’হেনরি অ্যাওয়ার্ড জয়ী লেখক হ্যারল্ড ব্রডকি ১৯৯১ সালে বলেন, “তিনি হেমিংওয়ে পরবর্তি সময়ে ইংরেজি গদ্যের সবথেকে প্রভাবশালী লেখক ।" [147] ঐ প্রজন্মের অন্য লেখকদের মধ্যে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাসিক জন আপডাইক বলেন, “ জে ডি স্যালিঞ্জারের ছোট গল্পগুলো সত্যিই আমার চোখ খুলে দিয়েছে যে কীভাবে পরস্পর প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বা অতি অল্প সম্পর্কিত ঘটনাবলী দিয়েও গল্প লেখা যায় ... আমার নিজের বিষয়বস্তুগুলো সামলানোর ক্ষেত্রে স্যালিঞ্জারের লেখা আমাকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে ।“ [148] সমালোচক লুই মেন্যান্ড লক্ষ করেন পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখক ফিলিপ রথ এর প্রথম দিকের গল্পগুলো “স্যালিঞ্জারের ভয়েস এবং কমিক টাইমিং” দ্বারা প্রভাবিত ।
১৯৭৭ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফাইনালিস্ট রিচার্ড ইয়েটস দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে বলেন প্রথমবারের মতো স্যালিঞ্জারের গল্পগুলো পড়া একটি উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা ছিল এবং “এরপরে আমার জীবনে আর এরকরম কিছু হয়নি ।" [149] স্যালিঞ্জারকে বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়েটস বলেন “ স্যালিঞ্জার এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি ভাষাকে একটি নিয়ন্ত্রীত বিশুদ্ধ সুন্দর শক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন, এবং তিনি জানতেন যে প্রতিটি নিরবতা এবং শব্দের দ্বারা তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন ।" গর্ডন লিশ – এর ও’হেনরি অ্যাওয়ার্ড জয়ী ছোট গল্প “ফর জেরোমি — উইথ লাভ এন্ড কিসেস” (১৯৭৭, যেটা ১৯৮৪ সালে হোয়াট আই নো সো ফার – এ সংগৃহীত হয়) স্যালিঞ্জারের “ফর এসমি—উইথ লাভ এ্যন্ড স্কুওলর“ এর উপর লেখা একটি নাটক । [150][151]
২০০১ সালে লুই মেন্যান্ড দি নিউ ইয়র্কার-এ লেখেন “ক্যাচার ইন দ্য রায় রিরাইটস” নতুন প্রজন্মের মধ্যে “সাহিত্যের একটা ধরন তৈরি করেছে "। [43] তিনি এটাকে সিলভিয়া প্লাথ-এর দি বেল জার(১৯৬৩), হান্টার এস. থম্পসন-এর ফিয়ার এ্যান্ড লোথিয় ইন লাস ফেগাস (১৯৭১), জেই ম্যাক্লনারনি-র ব্রাইট লাইটস, বিগ সিটি (১৯৮৪), এবং ডেভ এগার্স-এর এ হার্টব্রেকিং ওয়ার্ক অফ স্টাগারিং জিনিয়াস (২০০০) এর দলে অন্তর্ভুক্ত করেন । লেখক এমি বেন্ডার তার প্রথম ছোটগল্প লেখার সময় সমস্যার সম্মুখিন হলে তার এক বন্ধু তাকে নাইন স্টোরিস-এর একটি কপি দেন; অনুপ্রানিত হয়ে তিনি পরে অন্য লেখকদের ওপর স্যালিঞ্জারের প্রভাব ব্যাখ্যা করেত গিয়ে বলেন, “মনে হয় যেন স্যালিঞ্জার দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় একদিনে লিখেছেন, এবং এটা থেকে একটা অসম্ভব প্রশান্তি এবং অনুপ্রেরণার অনুভূতি পাওয়া যায় । এটা একটি কন্ঠসরের সন্ধানকে অনুপ্রণিত করে । তার কন্ঠসর না । আমার কন্ঠসর । আপনার কন্ঠসর ।" [152] স্টিফেন চোবসস্কি,[153] জনাথন সাফার্ন ফোর,[154] কার্ল হিয়াসেন, সুজান মাইনট,[155] হারুকি মুরাকামি, গোয়েন্ডলেন রাইলি,[156] টমি রিবনস, লুইস সাচার,[157] জোয়েল স্টেইন [158] এবং জন গ্রীন-এর মত লেখকরা স্যালিঞ্জারকে নিজদের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেছেন । স্ট্রিটলাইট মেনুফেস্ট –এর মিউজিসিয়ান টমাস কাল্নকী-ও স্যালিঞ্জারকে একজন অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন, তিনি স্যালিঞ্জার এবং দ্য ক্যাচার ইন দ্য রায় এর প্রধান চরিত্র হোল্ডেন ক্লফিল্ড-কে “হেয়ারইস টু লাইফ” গানে উল্লেখ করেন । [159] বায়োগ্রাফার পল আলেকজান্ডার স্যালিঞ্জারকে “সাহিত্যের গ্রিটা গার্ব বলেন “ । গ্রিটা গার্ব একজন সুইডিস-আমেরিকান অভিনেত্রী ছিলেন যিনি তিনবার এ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এ সেরা অভিনেত্রী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন ।
১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জে. ডি. স্যালিঞ্জার নিজেই লেখক এবং চিন্তাবিদ ইদ্রিস শাহ-এর অনন্য বই দি সুফিস-এর মাধ্যমে সুফি মিস্টিসিজম-এর আকৃষ্টি হয়ে যান । তার মত আরো অনেকে যেমন লেখক ডরিস লেসিং ও জিওফ্রি গ্রিগসন এবং কবি রবার্ট গ্রেভস ও টেড হিউজেস সুফি মিস্টিসিজমে আকৃষ্ট হন । [160] ইদ্রিস শাহ এর পাশাপাশি তিনি তাওবাদী দার্শনিক লাও টসি এবং হিন্দু স্বামী বিবেকানন্দ-এর লেখা পড়েন । স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্ত এবং যোগ এর দর্শনের সাথে পশ্চিমা বিশ্বকে পরিচিত করিয়ে দেন । [161]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.