পতঙ্গ, কীট বা পোকা বা কীটপতঙ্গ হলো আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত অমেরুদন্ডীদের একটি শ্রেণী যাদের একটি করে কাইটিনযুক্ত বহিঃকঙ্কাল, একটি তিন খণ্ডের দেহ (মস্তক, ধড় ও উদর), তিন জোড়া করে সংযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি, এবং এক জোড়া করে শুঙ্গ বা এ্যান্টেনা রয়েছে। দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত। এরা হল পৃথিবীর প্রাণীদের মধ্যে সবচাইতে বৈচিত্রময় যাদের দশ লাখেরও বেশি বর্ণনাকৃত প্রজাতি রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত জানা জীবন্ত জীবকূলের অর্ধেকেরও বেশির প্রতিনিধিত্ব এরাই করে।[1][2] এখন পর্যন্ত বিদ্যমান প্রজাতির সংখ্যা ৬০ লক্ষ থেকে ১ কোটির মধ্যে।[1][3][4] এরা সম্ভবত পৃথিবীর ৯০ শতাংশেরও বেশি বিসদৃশ প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করে।[5] প্রায় সব ধরনের পরিবেশেই এদেরকে পাওয়া যায়।
এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
কীটপতঙ্গ সময়গত পরিসীমা: ৩৯.৬–০কোটি আদি ডেভোনিয়ান–বর্তমান | |
---|---|
ফুলের মধুপানরত সাধারণ মৌমাছি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | আর্থ্রোপোডা |
উপপর্ব: | ম্যান্ডিবুলাটা |
শ্রেণী: | ইনসেক্টা লিনিয়াস, ১৭৫৮ |
কীটের জীবনচক্রের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ কীটই ডিম থেকে ফুটে বের হয়। অনমনীয় বহিঃকঙ্কাল থাকার ফলে কীটের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এর ক্রমবিকাশের সাথে বেশ কয়েকটি মোচন সংশ্লিষ্ট থাকে। অপরিণত পর্যায়ের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক কীটের গঠন, অভ্যাস ও আবাসের মধ্যে তফাৎ থাকতে পারে এবং যেসব উপদল সম্পূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় তাদের মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় পিউপা পর্যায় দেখা যায়। যেসব কীট অসম্পূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় তাদের মাঝে পিউপা পর্যায় অনুপস্থিত থাকে, এবং প্রাপ্তবয়স্করা ক্রমাণ্বয়ে নিম্ফ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে ক্রমবিকাশ লাভ করে।[6] সবচাইতে বৈচিত্রময় পতঙ্গের দল সপুষ্পক উদ্ভিদের সাথে সহবিবর্তনের মাধ্যমে আবির্ভূত হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ সাধারণত হাঁটা, উড়া, অথবা মাঝে মাঝে সাতারের মাধ্যমে চলাচল করে। দ্রুত অথচ স্থির চলাচলের সুবিধার জন্য অনেক কীট ত্রিপদি চলনভঙ্গি পরিগ্রহণ করে থাকে যেখানে তারা একান্তর ত্রিভূজে মাটির সাথে পা স্পর্শ করে হাঁটাহাঁটি করে। কীট হল একমাত্র অমেরুদন্ডী যারা বিবর্তনের মাধ্যমে উডডয়ন আয়ত্ত করেছে। শূক বা লার্ভার কানকো অভিযোজনের ফলে অনেক পোকা জীবনের অন্তত একটি অধ্যায়ে পানির নিচে বসবাস করে। কিছু প্রাপ্তবয়স্ক কীট জলজ এবং সাতারের জন্য অভিযোজিত। কয়েকটি প্রজাতি, যেমন ওয়াটার স্ট্রাইডার, পানির উপরিতলে হাঁটতে সক্ষম। পোকারা প্রধানত একাকী, কিন্তু কিছু কিছু, যেমন মৌমাছি, পিঁপড়া, এবং উইপোকা, সামাজিক এবং এরা বৃহৎ, সুসংগঠিত বসতিতে বসবাস করে। কতিপয় কীটে, যেমন ইয়ারউইগ বা কেন্নোপোকা, মাতৃযত্ন দেখা যায় যারা তাদের ডিম এবং বাচ্চাকে প্রহরা দেয়। পুরুষ মথেরা স্ত্রী মথের ফেরোমোনের ঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও আঁচ করতে পারে। অন্যান্য প্রজাতিরা শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করেঃ ঝিঁঝিঁ পোকারা তাদের ডানাকে একসাথে ঘসে শব্দ উৎপন্ন করে যা সঙ্গীকে আকর্ষণ করে এবং পুরুষকে বিকর্ষণ করে। জোনাকিপোকা আলোর সাহায্যে যোগাযোগ সম্পন্ন করে।
প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ সাধারণত হাঁটা, উড়া, অথবা মাঝে মাঝে সাতারের মাধ্যমে চলাচল করে। দ্রুত অথচ স্থির চলাচলের সুবিধার জন্য অনেক কীট ত্রিপদি চলনভঙ্গি পরিগ্রহণ করে থাকে যেখানে তারা একান্তর ত্রিভূজে মাটির সাথে পা স্পর্শ করে হাঁটাহাঁটি করে। কীট হল একমাত্র অমেরুদন্ডী যারা বিবর্তনের মাধ্যমে উডডয়ন আয়ত্ত করেছে। শূক বা লার্ভার কানকো অভিযোজনের ফলে অনেক পোকা জীবনের অন্তত একটি অধ্যায়ে পানির নিচে বসবাস করে। কিছু প্রাপ্তবয়স্ক কীট জলজ এবং সাতারের জন্য অভিযোজিত। কয়েকটি প্রজাতি, যেমন ওয়াটার স্ট্রাইডার, পানির উপরিতলে হাঁটতে সক্ষম। পোকারা প্রধানত একাকী, কিন্তু কিছু কিছু, যেমন মৌমাছি, পিঁপড়া, এবং উইপোকা, সামাজিক এবং এরা বৃহৎ, সুসংগঠিত বসতিতে বসবাস করে। কতিপয় কীটে, যেমন ইয়ারউইগ বা কেন্নোপোকা, মাতৃযত্ন দেখা যায় যারা তাদের ডিম এবং বাচ্চাকে প্রহরা দেয়। পুরুষ মথেরা স্ত্রী মথের ফেরোমোনের ঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও আঁচ করতে পারে। অন্যান্য প্রজাতিরা শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করেঃ ঝিঁঝিঁ পোকারা তাদের ডানাকে একসাথে ঘসে শব্দ উৎপন্ন করে যা সঙ্গীকে আকর্ষণ করে এবং পুরুষকে বিকর্ষণ করে। জোনাকিপোকা আলোর সাহায্যে যোগাযোগ সম্পন্ন করে।
মানুষ, কিছু নির্দিষ্ট পতঙ্গকে বালাই হিসেবে বিবেচনা করে, এবং কীটনাশক ও অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালায়। কতিপয় পোকা প্রাণরস, পাতা ও ফল ভোজন করে শস্যের ক্ষতি করে থাকে। অল্পসংখ্যক পরজীবীয় প্রজাতি রোগসৃষ্টিকারি বা প্যাথজেনিক। কয়েক ধরনের কীটের রয়েছে জটিল বাস্তুগত ভূমিকা। যেমন, ব্লো ফ্লাই, পূতিমাংস বা ক্যারিয়ন ভক্ষণে সহায়তা করে আবার রোগও ছড়ায়। পতঙ্গ পরাগবহনকারীরা বহুসংখ্যক সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির জীবন-চক্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। মানুষসহ অধিকাংশ জীবসত্তা এদের উপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। এসব পতঙ্গ ছাড়া জীবমন্ডলের (মানুষসহ) স্থলজ অংশ বিধ্বস্ত হয়ে যেত।[7] অন্যান্য বহুসংখ্যক কীট পরিবেশগতভাবে উপকারি, যেমন, শিকারি পোকা এবং অল্পসংখ্যক অন্যান্য পোকা সরাসরি অর্থনৈতিক উপকার সাধন করে। রেশম পোকা এবং মৌমাছিকে যথাক্রমে রেশম এবং মধু উৎপাদনের জন্য মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। কতিপয় সংস্কৃতিতে, নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির শূক অথবা প্রাপ্তবয়স্ক পোকা মানুষের খাদ্যের উৎস যোগায়। উদাহরণ: পিপীলিকা, আরশোলা, চিংড়ি ইত্যাদি।
জাতিজনি এবং বিবর্তন
অন্যান্য প্রাণী দলের সাথে কীটের বিবর্তনীয় সম্পর্ক এখনো অপরিষ্কার। যদিও প্রথাগতভাবে একে মিলিপেড এবং সেন্টিপেডের সাথে দলভুক্ত করা হয়, কিন্তু স্বাক্ষ্য-প্রমাণ বলছে এর সাথে ক্রাস্টাসিয়ানদের ঘনিষ্ঠ বিবর্তনীয় বন্ধন রয়েছে। প্যানক্রাস্টাসিয়া তত্ত্বে, রেমিপিডিয়া এবং ম্যালাকস্ট্রাকার সাথে মিলে কীট একটি প্রাকৃতিক ক্লেড গঠন করে।[8] অন্যান্য স্থলজ আর্থ্রোপোড, যেমন, সেন্টিপেড বা শতপদী, মিলিপেড বা কেন্নো, বৃশ্চিক, এবং মাকড়সাদেরকে মাঝে মাঝেই কীট বলে ভুল করা হয় কারণ এরা সকলেই কীটের মতো একটি সংযুক্ত বহিঃকঙ্কাল ধারণ করে যার ফলে এদেরকে একই রকম দেখতে মনে হয়। তথাপি, খুব কাছে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে তাদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিশেষ ফারাক লক্ষ করা যায়; সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো যেটি তা হল পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গের মতো এদের ছয় পায়ের বৈশিষ্ট্য থাকে না।[9]
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আর্থ্রোপোড এবং এর সংশ্লিষ্ট দলগুলোর জাতিজনিক বৃক্ষ [10] |
আর্থ্রোপোডের উচচ পর্যায়ের জাতিজনি বা ফাইলোজেনি এখনো একটি বিতর্ক ও গবেষণার বিষয়। ২০০৮ সালে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কার্বনিফেরাস যুগের ৩০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো একটি প্রাচীণ উড়ন্ত মাছির সম্পূর্ণ দেহের ছাপ উন্মুক্ত করেছেন যা তাদের মতে এখন পর্যন্ত জানা পৃথিবীর সবচাইতে পুরোনো পূর্ণাঙ্গ দেহের নমুনা।[11] এখন পর্যন্ত সবচাইতে পুরোনো নিশ্চিত কীট জীবাশ্ম হল ৩৯৬ মিলিয়ন বছর পুরোনো রাইনি চার্ট থেকে প্রাপ্ত ডেভোনিয়ান Rhyniognatha hirsi. আধুনিক সিলভারফিস পতঙ্গের সাথে এটির এক ধরনের ভাসা ভাসা মিল রয়েছে। এই প্রজাতিটি ইতোপূর্বে ডাইকন্ডাইলিক চোয়াল (চোয়ালের মাঝে দু’টি গ্রন্থি) ধারণ করেছিল। ডাইকন্ডাইলিক চোয়ালের এই বৈশিষ্ট্যটি সাধারণত পাখাওয়ালা পতঙ্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ থেকে ধারণা করা যায় যে ইতোমধ্যেই প্রজাতিটির মাঝে পাখনার বিবর্তন হয়েছিল। সুতরাং, প্রথম পতঙ্গটি সম্ভবত এর আগেই অর্থাৎ সিলুরিয়ান যুগে বা পিরিয়ডে আবির্ভুত হয়েছিল।[12][13]
কীটপতঙ্গের চারটি অতিবিকিরণ সম্পন্ন হয়েছেঃ গুবরে পোকা (প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিবর্তিত), মাছি (প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিবর্তিত), মথ এবং বোলতা (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিবর্তিত)।[14] এই চারটি দল মিলে বর্ণনাকৃত প্রজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রকাশ করে। উপমক্ষিকা বা ফ্লীসহ মাছি এবং মথ মেকোপ্টেরা থেকে বিবর্তিত হয়েছে।
পতঙ্গের উড্ডয়নের উৎপত্তি এখনো আবছা রয়ে গেছে, কারণ আমাদের পরিচিত সবচাইতে প্রাচীন ডানাওয়ালা পতঙ্গরা বেশ ভালোভাবেই উড়তে সক্ষম ছিল। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কিছু প্রজাতির ধড়ের প্রথম খণ্ডে এক জোড়া অতিরিক্ত ডানা ছিল, অর্থাৎ সেইসব পতঙ্গের সর্বমোট ডানার সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে তিন জোড়া। ডানার বৈশিষ্ট্য বিবর্তিত হবার আগে পতঙ্গরা যে খুব একটা সফল প্রাণী ছিল, ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[15]
অত্যন্ত সফল হাইমেনোপ্টেরা পতঙ্গরা ক্রিটেশিয়াস যুগে, প্রায় ১৪ কোটি বছর আগে, উদ্ভূত হয়ে সাম্প্রতিক সিনোজোয়িক যুগে, যা শুরু হয়েছিল ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে, বিস্তৃত বৈচিত্র লাভ করে। অনেকগুলো অতিসফল পতঙ্গদল সপুষ্পক উদ্ভিদের পাশাপাশি বিবর্তিত হয় যা সহবিবর্তনের শক্তিশালি একটি ব্যাখ্যাচিত্র।[16]
পতঙ্গের অনেকগুলো আধুনিক গণ সিনোজোয়িক যুগে বিকশিত হয়েছে। ঐ যুগের অনেক পতঙ্গকে অ্যাম্বারের মধ্যে প্রায় অবিকল অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এসব নমুনার অঙ্গসংস্থান বা দেহ পরিকল্পনা তাই খুব সহজেই এখনকার প্রজাতিগুলোর সাথে তুলনা করা যায়। জীবাশ্ম পতঙ্গ বিষয়ক অধ্যয়নকে প্যালিওএন্টোমোলজি বা জীবাশ্মকীটতত্ত্ব বলে।
বিবর্তনীয় সম্পর্ক
স্থলজ মেরুদণ্ডী ছাড়াও, নানান ধরনের জীবের শিকার হল এই পতঙ্গ। ডাঙ্গাতে প্রায় ৪০ কোটি বছর পূর্বে সবচাইতে প্রাচীন মেরুদণ্ডী প্রাণী বসবাস করতো যারা ছিল উভচর পিশিভোর বা মৎস্যখেকো। বিবর্তনের পথ ধরে পতঙ্গভোজন ছিল এর পরবর্তী খাবারের ধরন। [17]
পতঙ্গরা ছিল ডাঙ্গার প্রাচীন শাকাশীদের মধ্যে অন্যতম এবং এরা উদ্ভিদের বিবর্তনে প্রধান নির্বাচনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। [16] উদ্ভিদেরা যখন এসব শাকাশীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বিবর্তিত করেছে, পতঙ্গেরাও তখন সেসব উদ্ভিদ বিষের সাথে পাল্লা দেবার জন্য কলকব্জা বিবর্তিত করেছে। অনেক পতঙ্গ তাদের শিকারীদের হাত থেকে বাচতে এসব বিষ ব্যবহার করেছে। এ ধরনের পতঙ্গ সতর্কীকরণ বর্ণ ব্যবহার করে প্রায়সই তাদের বিষাক্ততা প্রচার করে।[16] বিবর্তনের এই সফল ধরন ছদ্মবেশ বা মিমিক্রি দ্বারাও কাজে লাগানো হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে, এসব বিষয় সহবিবর্তিত প্রজাতির জটিল গোষ্ঠিদের পথপ্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে, পতঙ্গ আর উদ্ভিদের মধ্যে পরাগায়ণের মতো আন্তঃক্রিয়াগুলো উভয় জীবের জন্যই উপকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বনে সহবিবর্তন খুব নির্দিষ্ট পারষ্পরিক মঙ্গলজনক সহাবস্থান বা মিউচুয়ালিজমের বিকাশের পথ নির্দেশ করেছে।
শ্রেণিবিন্যাস
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রজাতি সংখ্যার উল্লেখসহ জীবন্ত পতঙ্গদলসমূহের ক্ল্যাডোগ্রাম[5][18] |
চিরাচরিত অঙ্গসংস্থানবিদ্যা বা আকার-আকৃতির উপর নির্ভরশীল সিস্টেমেটিক্সে হেক্সাপোডাকে মহাশ্রেণীর মর্যাদাক্রম দেয়া হয়েছে,[19] এবং এই মহাশ্রেণীর ভেতরে ফেলা হয়েছে চারটি দলকেঃ ইনসেক্টা (এক্টোগনাথা), স্প্রিংটেইল (কলেম্বোলা), প্রটুরা ও ডাইপ্লুরা। শেষোক্ত তিনটিকে অভ্যন্তরীণ মুখোপাঙ্গের উপর ভিত্তি করে একত্রে এন্টোগনাথা বলা হয়।
আধুনিক তত্ত্বমতে হেক্সাপোডা হল পলিফাইলেটিক (যেখানে সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ দলের সদস্য ছিল না), যেখানে এন্টোগনাথাদের রয়েছে আলাদা বিবর্তনীয় ইতিহাস। যেহেতু চিরাচরিত অঙ্গসংস্থানভিত্তিক অনেক ট্যাক্সাই প্যারাফাইলেটিক, সেহেতু উপশ্রেণী, মহাবর্গ বা অধবর্গের মতো মর্যাদাক্রম ব্যবহার না করে মনোফাইলেটিক দলীয়করণ উত্তম বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পতঙ্গকে ভাগ করা যায় দুইটি প্রধান ভাগে যাদেরকে ঐতিহাসিকভাবে উপশ্রেণী হিসেবে গণ্য করা হয়ঃ ডানাবিহীন পতঙ্গ বা অ্যাপ্টেরাইগোটা, এবং ডানাওয়ালা পতঙ্গ বা টেরাইগোটা। অ্যাপ্টেরাইগোটা আদিম ডানাবিহীন সিলভারফিশ (থিজানুরা) বর্গ নিয়ে গঠিত। চোয়ালের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আর্কিওগনাথা নিয়ে গড়ে উঠেছে মনোকন্ডাইলিয়া, অন্যদিকে থিজানুরা ও টেরাইগোটা একসাথে গঠন করেছে ডাইকন্ডাইলিয়া। থিজানুরা নিজে মনোফাইলেটিক নাও হতে পারে, যেখানে এর লেপিডোট্রিকিডা পরিবারটি ডাইকন্ডাইলিয়ার সিস্টার গ্রুপ।[20][21]
প্যালিওপ্টেরা এবং নিওপ্টেরা হল ডানাওয়ালা পতঙ্গের দল যারা স্ক্লেরাইট নামক শক্ত দেহাংশের উপস্থিতির দ্বারা পৃথকীকৃত। এছাড়াও, নিওপ্টেরার পেশী তাদের ডানাকে স্পষ্টভাবে উদরের উপর ভাঁজ করতে পারে। নিওপ্টেরাকে আবার দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ অসম্পূর্ণ রূপান্তর-ভিত্তিক ও সম্পূর্ণ রূপান্তর-ভিত্তিক।
৩১ টি জীবন্ত পতঙ্গ বর্গের নামের উৎপত্তি নিচে দেয়া হল।[22][23]
- প্রটুরা (প্রট= আদি; উরা=লেজ)
- কলেম্বোলা (কল = আঠা; এম্বোলা= কীলক)
- ডাইপ্লুরা (ডাইপ্ল = দুই; উরা = লেজ)
- আর্কিওগনাথা (আর্কিও = প্রাচীন; নাথ = চোয়াল)
- থিজানুরা (থিজান = প্রান্ত বা কূর্চ; উরা = লেজ)
- ওডোনাটা (ওডোন = দাঁত)
- এফেমেরোপ্টেরা (এফেমেরো = সংক্ষিপ্ত; টেরা= ডানা)
- প্লেকোপ্টেরা (প্লেকো = গুটানো; টেরা = ডানা)
- এম্বিওপ্টেরা (এম্বিও = প্রাণবন্ত; টেরা = ডানা)
- ফাজমিডা বা ফাজমাটোডা বা ফাজমাটোপ্টেরা (ফাজম = অশরীরী)
- অর্থোপ্টেরা (অর্থো = সোজা; টেরা = ডানা)
- ডার্মাপ্টেরা (ডার্মা = চামড়া; টেরা = ডানা)
- গ্রিলোব্লাটোডা (গ্রিল = ঝিঁঝিঁ পোকা; ব্লাটা = আরশোলা)
- ম্যান্টোফাজমাটোডা (ম্যান্টিড = ভবিষ্যদ্বক্তা; ফাজম = অশরীরী)
- আইসোপ্টেরা (আইসো = সমান; টেরা = ডানা)
- ব্লাটোডা (ব্লাটা = আরশোলা)
- ম্যান্টোডা (ম্যান্টিড = ভবিষ্যদ্বক্তা)
- যোরাপ্টেরা (যোর = বিশুদ্ধ; অ্যাপ্টেরা = ডানাবিহীন)
- সোকোপ্টেরা (সোকো = ঘষা বা চিবানো; টেরা = ডানা)
- থিরাপ্টেরা (থিরা = উকুন; অ্যাপ্টেরা = ডানাবিহীন)
- থিজানোপ্টেরা (থিজানো = প্রান্ত বা কূর্চ; টেরা = ডানা)
- হেমিপ্টেরা (হেমি = অর্ধেক; টেরা = ডানা)
- কোলিওপ্টেরা (কোলিও = আবরণ; টেরা = ডানা)
- নিউরোপ্টেরা (নিউরো = স্নায়ু; টেরা = ডানা)
- হাইমেনোপ্টেরা (হাইমেন = ঝিল্লী বা পর্দা; টেরা = ডানা)
- ট্রাইকোপ্টেরা (ট্রাইকো = চুল; টেরা = ডানা)
- লেপিডোপ্টেরা (লেপিডো = আঁশ বা শল্ক; টেরা = ডানা)
- মেকোপ্টেরা (মেকো = লম্বা; টেরা = ডানা)
- সাইফোনাপ্টেরা (সাইফোন = নল; অ্যাপ্টেরা = ডানাবিহীন)
- স্ট্রেপসিপ্টেরা (স্ট্রেপসি = পাকান বা মোচড়ানো; টেরা = ডানা)
- ডিপ্টেরা (ডাই = দুই; টেরা = ডানা)
যেকোনো পতঙ্গের শ্রেণিবিন্যাসের অধ্যয়ণকে বলা হয় সিস্টেমেটিক কীটতত্ত্ব।[24] কেউ যদি নির্দিষ্ট কোনো বর্গ বা পরিবার নিয়ে কাজ করেন, তবে শব্দটি সেই নির্দিষ্ট বর্গ বা পরিবারের ভিত্তিতে হয়, যেমন, সিস্টেমেটিক ডিপ্টেরোলজি।
অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও শারীরবিদ্যা
বাহ্যিক
পতঙ্গের দেহ বিভিন্ন ভাগে বিখন্ডিত যা মূলত কাইটিন দ্বারা নির্মিত শক্ত বহিঃকঙ্কাল দ্বারা আবৃত থাকে। দেহখন্ডগুলো তিনটি স্বতন্ত্র অথচ পরষ্পরসংযুক্ত একক বা ট্যাগমাটা দিয়ে গঠিতঃ একটি মস্তক, একটি ধড় ও একটি উদর। মস্তক ধারণ করে থাকে একজোড়া সংজ্ঞাবহ শুঙ্গ বা অ্যান্টেনা, একজোড়া জটিল পুঞ্জাক্ষি, এক থেকে তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি (যদি থেকে থাকে), এবং নানাভাবে পরিবর্তিত তিন সেট উপাঙ্গ যা মুখোপাঙ্গ তৈরী করে। ধড়ে রয়েছে ছয়টি খন্ডিত পা যাদের প্রথম জোড়া অগ্রবক্ষ, দ্বিতীয় জোড়া মধ্যবক্ষ ও তৃতীয় জোড়া পশ্চাৎবক্ষ গঠন করে। এছাড়াও ধড়ের মাঝে প্রজাতিভেদে দুই থেকে চারটি ডানা থাকতে পারে আবার কেউ কেউ ডানাবিহীনও হতে পারে। সাধারণ্ত এগারোটি খন্ড নিয়ে উদর গঠিত হয়, যদিও এই খন্ডগুলো একীভূত অথবা আকারে হ্রাসপ্রাপ্ত অবস্থায়ও থাকতে পারে। এই উদরই দেখা যায় অধিকাংশ পাচন, শ্বসন, রেচন এবং প্রজনন সম্পর্কিত অভ্যন্তরীন গঠন ধারণ করে থাকে।[19] পতঙ্গের দেহের অংশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকরণ ও নানান অভিযোজন বস্তুত ডানা, শুঙ্গ, পা এবং মুখোপাঙ্গেই ঘটে থাকে।
সেগমেন্টেশন
পতঙ্গের মস্তক একটি শক্ত, ভীষণ ক্লেরোটিনময়, অখণ্ড মস্তকাবরণ বা এপিক্রেনিয়াম দ্বারা আবৃত থাকে যা শুঙ্গ, সরলাক্ষি বা চোখ, আর মুখোপাঙ্গসহ দেহের অধিকাংশ সংবেদনশীল অঙ্গ ধারণ করে রাখে। সবগুলো বর্গের মধ্যে একমাত্র অর্থোপ্টেরা বর্গের পোকারাই অন্যসব পোকাতে প্রাপ্ত সুচার ও স্ক্লেরাইটের মতো বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রদর্শন করে।[25] হাইপোগনেথাস ও অপিসথোগনেথাস ধরনের মস্তকওয়ালা পতঙ্গগুলোর ক্ষেত্রে ভার্টেক্স বা শীর্ষ সাধারণত পুঞ্জাক্ষির মধ্যিখানে অবস্থান করে। অন্যদিকে প্রোগনেথাস ধরনের মস্তকবিশিষ্ট পতঙ্গের ক্ষেত্রে ভার্টেক্স সাধারণত সরলাক্ষি যেখানে থাকে, সেখানে পাওয়া যায়। এর কারণ হল, মস্তকের প্রধান অক্ষটি শরীরের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে আসার জন্য ৯০ ডিগ্রী আবর্তিত। কিছু পতঙ্গে এই অঞ্চলটি পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং নানান ধরনের নামে পরিচিত হয়।[25]
ধড় বা বক্ষ হল একটি ট্যাগমা যা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিতঃ অগ্রবক্ষ, মধ্যবক্ষ ও পশ্চাৎবক্ষ। মাথার কাছের দিকের খন্ডটি হল অগ্রবক্ষ যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল প্রথম পা জোড়া, এবং প্রটোনাম ধারণ করা। মধ্যিখানের খন্ডটি হল মধ্যবক্ষ যার মধ্যে দ্বিতীয় জোড়া পা এবং সম্মুখস্থ ডানাগুলো পাওয়া যায়। উদরের গা ঘেঁষে ধড়ের তৃতীয় ও সবচাইতে পশ্চাদ্বর্তী খন্ডটই হল পশ্চাৎবক্ষ যেটি তৃতীয় জোড়া পা এবং পশ্চাদ্বর্তী ডানা ধারণ করে রাখে। আন্তঃখন্ড সুচার দিয়ে প্রতিটি খন্ড একে অপরের সাথে লেগে থাকে। প্রতিটি খণ্ডের চারটি মৌলিক অঞ্চল রয়েছে। উদরীয় টার্গা থেকে আলাদা করার জন্য বক্ষের পৃষ্ঠদেশকে টার্গাম বা নোটাম বলা হয়।[19] পার্শ্বীয় অঞ্চল দুইটিকে প্লিউরা (একবচনে প্লিউরন) এবং অঙ্কীয় অঞ্চলকে স্টার্নাম বলা হয়। একইভাবে, অগ্রবক্ষের নোটামকে প্রোনোটাম বা অগ্রনোটাম, মধ্যবক্ষের নোটামকে মেসোনোটাম এবং পশ্চাৎবক্ষের নোটামকে মেটানোটাম বলা হয়। একই যুক্তিতে মেসোপ্লিউরা ও মেটাপ্লিউরা, এবং মেসোস্টার্নাম ও মেটাটার্নামও ব্যবহার করা হয়।[25]
উদর হচ্ছে পতঙ্গের সবচাইতে বড় ট্যাগমা যা সাধারণত ১১ থেকে ১২ টি খন্ড নিয়ে গঠিত এবং মস্তক ও ধড়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম স্ক্লেরোটিনযুক্ত। উদরের প্রতিটি খন্ডকে স্ক্লেরোটিনময় টার্গাম ও স্টার্নাম দিয়ে চিত্রিত করা হয়। টার্গা একে অপরের থেকে এবং পাশের স্টার্নাম বা প্লিউরা থেকে ঝিল্লীর মাধ্যমে আলাদা করা যায়। স্পাইরাকল অবস্থান করে প্লিউরা অঞ্চলে। কিছু পতঙ্গ পার্শ্বীয় অঞ্চলে স্ক্লেরাইট বহন করে যেগুলোকে লেটেরোটার্গাইট বলে। অঙ্কীয় স্ক্লেরাইটগুলোকে মাঝেমধ্যে লেটেরোস্টার্নাইট বলা হয়। ভ্রুণীয় অথবা এর পরবর্তী দশায় অনেক আদিম পতঙ্গে ১১ টি উদরীয় খন্ড উপস্থিত থাকে। আধুনিক পতঙ্গগুলোতে উদরীয় খণ্ডের সংখ্যা হ্রাস পাবার প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও এমব্রায়োজেনেসিসের সময় আদিম সেই ১১ টি খন্ড বজায় থাকে। উদরীয় খণ্ডের সংখ্যার মধ্যে ভিন্নতা উল্লেখ করার মতো। এপ্টেরিগোটাকে যদি টেরিগোটার আদিম পরিকল্পনা হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে এক্ষেত্রেও ধাঁধাঁয় পরে যেতে হয়ঃ প্রোটুরাতে যেমন ১২ টি খন্ড, কলেম্বোলাতে আছে ৬ টি। অর্থোপ্টেরার গোত্র অ্যাক্রিডিডাতে রয়েছে ১১ টি খন্ড, এবং জোরাপ্টেরার জীবাশ্ম নমুনায় পাওয়া গেছে ১০ খন্ডবিশিষ্ট উদর।[25]
বহিঃকঙ্কাল
কিউটিকল বা কৃত্তিক নামে পরিচিত পতঙ্গের বাহ্যিক কঙ্কালটি দুইটি স্তর দিয়ে গঠিত। একটি হল এপিকিউটিকল বা বহিঃকৃত্তিক, যা মূলত কাইটিনবিহীন একটি পাতলা ও মোমযুক্ত, পানিপ্রতিরোধক বাহ্যিক স্তর। নিচের স্তরকে প্রোকিউটিকল হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রোকিউটিকলটি কাইটিনযুক্ত এবং এপিকিউটিকলের চাইতে অনেক বেশি ঘন। এর আবার দুইটি স্তর রয়েছেঃ বাইরের স্তরটি এগজোকিউটিকল এবং ভেতরের স্তরটি এন্ডোকিউটিকল। ঘন ও নমনীয় এন্ডোকিউটিকল নানান ধরনের ফাইবারযুক্ত কাইটিন ও প্রোটিনের স্তর দিয়ে গঠিত যা স্যান্ডউইচের গঠনের মতো একটি অপরটির সাথে আড়াআড়ি হয়ে থাকে। অন্যদিকে এগজোকিউটিকল হয় অনমনীয় এবং শক্ত।[19] মূলত শূককীট দশায় অনেক পোকায় এগজোকিউটিকলটি অত্যন্ত হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।
অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে একমাত্র পতঙ্গের মাঝেই সক্রিয় উড্ডয়নের বিকাশ ঘটেছে যা এর সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[19] স্নায়ুর প্রতিটি স্পন্দনের জন্য তাদের পেশীগুলো একাধিকবার সঙ্কুচিত হতে পারে যেটি ডানার ঝাপটানোকে দ্রুততর করে যা অন্য উপায়ে সম্ভব হতো না। বহিঃকঙ্কালের সাথে পেশী যুক্ত থাকে বলে এটি অধিক কার্যকর এবং সেই সাথে আরো পেশী সংযুক্তির পথ খুলে দেয়। ক্রাস্টাসিয়ান বা কবচীরা একই উপায় ব্যবহার করে যদিও সব মাকড়শা তাদের পা প্রসারণের জন্য আর্থ্রোপডপূর্ব পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হাইড্রোলিক চাপ ব্যবহার করে। পতঙ্গের বিপরীতে জলে বসবাসকারি অধিকাংশ কবচী পানি থেকে আহরিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দ্বারা বায়োমিনারালাইজ্ড বা জৈবখনিজসমৃদ্ধ হয়ে থাকে। [26][27]
অভ্যন্তরীণ
স্নায়ুতন্ত্র
সাধারণভাবে পতঙ্গের স্নায়ুতন্ত্রকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ মস্তিষ্ক ও অঙ্কীয় স্নায়ুরজ্জু। মস্তকাবরণটিতে রয়েছে ছয়টি একীভূত খন্ড যার প্রত্যেকটি হয় একজোড়া গ্যাংলিয়া অথবা মস্তিষ্কের বাইরে অবস্থিত একগুচ্ছ স্নায়ুকোষ। প্রথম তিন জোড়া গ্যাংলিয়া মস্তিষ্কের ভেতর একীভূত হয়ে থাকে এবং পরের তিনটি গ্যাংলিয়া অবস্থিত পতঙ্গের খাদ্যনালী বা এসোফ্যাগাসের নিচে যাদেরকে সাব-এসোফ্যাগাল গ্যাংলিয়ন বলে। আধুনিক পতঙ্গে সাব-এসোফ্যাগাল গ্যাংলিয়ন কেবল ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা ও ল্যাবিয়ামকেই নয়, এমনকি হাইপোফ্যারিংস, লালাগ্রন্থি, গ্রীবাদেশীয় পেশীতেও স্নায়ু প্রবাহিত করে।[19]
বক্ষীয় তিনটি খণ্ডের প্রতিটিতে একজোড়া করে বক্ষীয় গ্যাংলিয়া রয়েছে। বক্ষীয় পেশিসমূহ এবং স্নায়বিক রিসেপ্টরগুলো এসব গ্যাংলিয়ার সাথে সম্পর্কিত রয়েছে। একইভাবে পরবর্তী উদরীয় গ্যাংলিয়া উদরের পেশীসমূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একীভবণ অথবা হ্রাসকরণের ফলে অনেক প্রজাতির পতঙ্গে গ্যাংলিয়ার সংখ্যা কম।[28] কয়েক প্রজাতির আরশোলার উদরে মাত্র ছয়টি গ্যাংলিয়া রয়েছে, আবার ভেসপা ক্রাবরো নামের বোলতার ধড়ে দুইটি এবং উদরে তিনটি গ্যাংলিয়া পাওয়া যায়। ঘরের মাছি বা মুসকা ডমেস্টিকার মতো কিছু প্রজাতিতে দেহের সব গ্যাংলিয়া একীভূত হয়ে একটি একক, বৃহৎ বক্ষীয় গ্যাংলিয়ায় পরিণত হয়েছে।
অন্তত কয়েক প্রজাতির পতঙ্গে ব্যাথার অনুভূতি শনাক্ত ও প্রদানকারি কোষ রয়েছে যা নসিসেপ্টর নামে পরিচিত।[29] ২০০৩ সালে সাধারণ ফলের মাছি ড্রসোফিলার নানান শূককীটের মধ্যে উত্তপ্ত এবং সাধারণ প্রোব স্পর্শ করিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ করে এই বিষয়টি আবিষ্কার করা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, শূককীটকে উত্তপ্ত প্রোব স্পর্ষ করালে তারা নিজেদের গুটিয়ে ফেলে, অন্যদিকে অনুত্তপ্ত প্রোব স্পর্ষ করালে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।[30] নসিসেপসনের বিষয়টি পতঙ্গের মাঝে সন্দেহাতীতভাবে দেখা গেলেও, এরা সচেতনভাবে ব্যাথা অনুভব করে কী-না, সে বিষয়ে গবেষকরা একমত নন।[31]
পাচনতন্ত্র
খাদ্য গ্রহণের পর তা থেকে পুষ্টি ও অন্যান্য উপাদান আহরণ করার জন্য পতঙ্গ তার পাচনতন্ত্র ব্যবহার করে থাকে।[32] বেশিরভাগ খাবারই এরা প্রোটিন, পলিস্যাকারাইড, চর্বি এবং নিউক্লিয়িক এসিডের মতো ম্যাক্রোমলিকুল ও অন্যান্য জটিল উপাদানরূপে আহার করে। শক্তি, বৃদ্ধি, ও প্রজননের জন্য দেহের কোষ দ্বারা ব্যবহৃত হবার আগে এসব ম্যাক্রোমলিকুলকে অবশ্যই ক্যাটাবোলিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে অ্যামিনো এসিড ও সরল চিনির মতো ক্ষুদ্র অণুতে পরিণত হতে হয়। ভাঙনের এই পদ্ধতি পরিপাক হিসেবে পরিচিত।
পতঙ্গের পাচনতন্ত্রের প্রধান কাঠামোটি হল একটি দীর্ঘ, আবৃত নালী যাকে পৌষ্টিক নালী বলে এবং সেটি দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত হয়ে আছে। গৃহীত খাদ্যকে পৌষ্টিক নালী মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত একদিকে প্রবাহিত করে। এর তিনটি শাখা রয়েছে যারা পরিপাকের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে। পৌষ্টিক নালী ছাড়াও, পতঙ্গের জোড় লালাগ্রন্থি ও লালাধার রয়েছে। এই কাঠামোগুলো সাধারণত অগ্রঅন্ত্রের কাছেই বক্ষে অবস্থান করে।[19]
পতঙ্গের মুখে অবস্থিত লালাগ্রন্থি (রেখাচিত্রের ৩০ তম উপাদান) থেকে লালা উৎপন্ন হয়। লালানালী, লালাগ্রন্থি থেকে আধার বা রেজার্ভোয়ারের দিকে যায় এবং তারপর মস্তক হয়ে স্যালাইভারিয়াম নামের একটি মুক্ত গহ্বরে প্রবেশ করে যেটি হাইপোফ্যারিংসের পেছনে অবস্থিত। মুখোপাঙ্গগুলো (রেখাচিত্রে ৩২ তম) নড়াচড়া করিয়ে পতঙ্গ তার খাবারের সাথে এই লালা মেশাতে পারে। খাদ্য ও লালার মিশ্রণটি অতঃপর লালানলের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করে মুখে প্রবেশ করে যেখানে এটি ভাঙতে থাকে। [32][33]মাছির মতো কয়েকটি পতঙ্গে মুখবহির্ভূত পরিপাক সংঘটিত হয়। যেসব পতঙ্গ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা খাদ্য ভাঙার জন্য তাদের খাদ্যে পাচক উৎসেচক নির্গত করে। এই কৌশলটি পতঙ্গকে তাদের খাদ্য উৎস থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লভ্য পুষ্টি আহরণ করতে সহায়তা করে।[34] অন্ত্রের মধ্যেই প্রায় সমস্ত প্রজাতির কীট তাদের পরিপাক সম্পাদন করে। অন্ত্রকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়ঃ অগ্রান্ত্র, মধ্যান্ত্র ও পশ্চাৎ-অন্ত্র।
অগ্রান্ত্র
পৌষ্টিক নালীর প্রথম অংশটি হলো অগ্রান্ত্র (রেখাচিত্রে ২৭ তম) বা স্টোমোডিয়াম। শক্ত খাদ্য থেকে রক্ষা পেতে অগ্রান্ত্রটি কাইটিন ও প্রোটিনের তৈরী কৃত্তিক আস্তরণ দিয়ে সজ্জিত। অগ্রান্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মুখগহ্বর, গলবিল, খাদ্যনালী, ক্রপ এবং প্রোভেন্ট্রিকুলাস (যেকোনো অংশ অনেকখানি পরিবর্তিত হতে পারে) যারা খাদ্য মজুত রাখার পাশাপাশি কখন মধ্যান্ত্রে প্রবেশ করতে হবে, সেই ভূমিকা রাখে।[19]
লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসরিত লালার মাধ্যমে আংশিক চর্বনকৃত খাদ্য ভাঙার মধ্য দিয়ে মুখগহ্বরে পরিপাক শুরু হয়। লালাগ্রন্থি যেহেতু তরল এবং কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের উৎসেচক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যামাইলেজ) উৎপন্ন করে, গলবিলের শক্ত পেশিগুলো তরলকে মুখগহ্বরের দিকে পাম্প করে যা স্যালাইভারিয়ামের মতোই খাদ্যকে পিচ্ছিল করে এবং রক্তচোষক, জাইলেম আর ফ্লোয়েম খাদকদের সহায়তা করে। সেখান থেকে গলবিল খাদ্যকে খাদ্যনালীর দিকে চালিত করে। এক্ষেত্রে সেখান থেকে সরল একটি নালীর মাধ্যমে এই খাদ্য ক্রপ অথবা প্রোভেন্ট্রিকুলাসে চালিত হতে পারে এবং তারপর মধ্যান্ত্রে চলে যায়। এর বিকল্প হিসেবে অগ্রান্ত্রটি বৃহদাকার ক্রপ এবং প্রোভেন্ট্রিকুলাসে বিস্তৃত হতে পারে, অথবা ক্রপটি কেবল ডাইভারটিকুলাম অথবা ডিপ্টেরার প্রজাতির মতো তরল-পূর্ণ কাঠামোতে পরিণত হতে পারে।[34]
মধ্যান্ত্র
ক্রপ থেকে খাদ্য চলে যায় মধ্যান্ত্রে (১৩ তম উপাদান) যা মেসেন্টেরন নামেও পরিচিতিত যেখানে অধিকাংশ পরিপাক সংঘটিত হয়। মধ্যান্ত্রের দেয়াল থেকে বের হওয়া আণুবীক্ষণিক অভিক্ষেপ, যাকে মাইক্রোভিলি বলে, দেয়ালের পৃষ্ঠের আয়তন বাড়ায় এবং অধিক পুষ্টি শোষণ করতে সহায়তা করে। মাইক্রোভিলি মূলত মধ্যান্ত্রের উৎসের কাছাকাছি থেকেই উৎপন্ন হয়। কিছু প্রজাতিতে মাইক্রোভিলির কাজ এবং অবস্থান ভিন্নভিন্ন হতে পারে।[34]
পশ্চাৎ-অন্ত্র
পশ্চাৎ-অন্ত্র (১৬ তম উপাদান) বা প্রোক্টোডিয়াম অপাচিত খাদ্য কণাকে ইউরিক এসিডের মাধ্যমে সংযুক্ত করে মলের দলা তৈরী করে। মলনালী এসব মলের দলার ৯০% পানি শোষণ করে নেয়, এবং তারপর সেইসব শুষ্ক দলা পায়ু দিয়ে নিষ্কাশিত হবার (১৭ তম উপাদান) মাধ্যমে পরিপাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ইউরিক এসিড তৈরী হয় মালপিঘিয়ান নালিকা থেকে ব্যাপ্ত হওয়া হিমোলিম্ফের বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করে। তারপর এটি পৌষ্টিক নালীর মধ্যান্ত্র ও পশ্চাৎ-অন্ত্রের মিলনস্থলে সরাসরি বিলীন হয়ে যায়। মালপিঘিয়ান নালিকার সংখ্যা প্রজাতিভেদে বিভিন্ন হতে পারে।[19]
জননতন্ত্র
স্ত্রী পতঙ্গের জননতন্ত্র একজোড়া ডিম্বাশয়, সহায়ক গ্রন্থি, এক বা অধিক স্পার্মাথেকা এবং এসব অঙ্গের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিকারি নালী দিয়ে গঠিত। ডিম্বাশয়গুলো অনেকগুলো ডিম্বনালী বা ওভারিওল দিয়ে গঠিত যেগুলো প্রজাতিভেদে বিভিন্ন আকার ও সংখ্যার হয়ে থাকে। স্ত্রী পতঙ্গ যেসব কাজ করতে সক্ষম সেগুলো মূলত ডিম তৈরী, শুক্রাণু গ্রহণ ও মজুত, বিভিন্ন পুরুষের শুক্রাণুকে নিপূনভাবে ব্যবহার করা, এবং ডিম পাড়া। সহায়ক গ্রন্থিগুলো শুক্রাণু রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহন এবং ডিম সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদার্থ উৎপন্ন করে। ডিমের উপর আস্তরণ দেবার জন্য তারা আঠা এবং প্রতিরক্ষামূলক পদার্থ উৎপন্ন করতে পারে। এছাড়াও অনেকগুলো ডিমকে একসাথে আবৃত করতে উওথেকা নামক আস্তরণের সৃষ্টি করে। স্পার্মাথেকা হলো নালী বা থলিকা যার মধ্যে মিলনের সময় থেকে ডিম নিষেক পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে শুক্রাণু জমা করে রাখে।[25]
পুরুষ পতঙ্গের জননতন্ত্র হল শুক্রাশয় যা ট্রাকিয়া ও চর্বি ঘট দ্বারা দেহ গহ্বরে ঝুলে থাকে। অধিকাংশ পুরুষের একজোড়া শুক্রাশয় থাকে, যার ভেতর ঝিল্লীময় থলের অভ্যন্তরে আবদ্ধ শুক্র নালী বা ফলিকল অবস্থান করে। ফলিকলগুলো ভাস ডিফারেন্স হয়ে [[এজাকুলেটরি ডাক্ট এজাকুলেটরি ডাক্ট বা নির্গমন নালী হয়ে দেহের বাইরে চলে যায়। ভাস ডিফারেন্সের একটি অংশ প্রায়ই প্রসারিত হয়ে সেমিনাল ভেসিকল তৈরী করে যা স্ত্রী পতঙ্গে নিষ্কাশন করার পূর্বে শুক্রাণুকে মজুত করে রাখে। সেমিনাল ভেসিকলের গায়ে গ্রন্থিময় আস্তরণ রয়েছে যা শুক্রাণুর পুষ্টি প্রদান ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিপোষক পদার্থ নিসৃত করে। বিকাশের সময় এপিডার্মাল কোষের ইনভেজাইনেশনের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়ার কারণে নির্গমন নালীর মধ্যে কৃত্তিক আস্তরণ রয়েছে। নির্গমন নালীর প্রান্তীয় ভাগটি ইডিয়াগাস নামক ইন্ট্রোমিটেন্ট অঙ্গ তৈরী করার জন্য স্ক্লেরোটিনময় হতে পারে।[25]
শ্বসনতন্ত্র
ফুসফুস ছাড়াই পতঙ্গের শ্বসন সম্পন্ন হয়। ফুসফুসের বদলে পতঙ্গের শ্বসনতন্ত্র বেশ কিছু আভ্যন্তরীন নালী ও থলিকার ব্যবহার করে যাদের মধ্য দিয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অথবা সক্রিয়ভাবে পাম্প করার মাধ্যমে গ্যাস প্রবাহিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ট্রাকিয়া’র (রেখাচিত্রের ৮ নং উপাদান) মাধ্যমে বাইরের অক্সিজেন সরাসরি প্রয়োজনীয় কলায় প্রদান করা হয়। সরাসরি অক্সিজেন সংবহনের কারণে রক্তসংবহনতন্ত্র এ কাজে ব্যবহৃত হয় না যার ফলে সেটি আকারে অনেক বেশি হ্রাস পায়। পতঙ্গের রক্তসংবহনতন্ত্রে কোনো ধরনের শিরা বা ধমনী নেই, বরং এটি সচ্ছিদ্র পৃষ্ঠীয় নল দিয়ে তৈরী যা পেরিস্টালটিক উপায়ে স্পন্দন সৃষ্টি করে। ধড়ের দিকে পৃষ্ঠীয় নলটি (রেখাচিত্রে ১৪ তম) কয়েকটি প্রকোষ্ঠে ভাগ হয়ে পতঙ্গের হৃৎপিন্ডের কাজ করে। পৃষ্ঠীয় নলের প্রান্তীয় দিকটি মহাধমনী হিসেবে হিমোলিম্ফ সংবহন করে।[19][35] উদরের পাশের স্পাইরাকল নামক ছিদ্র দিয়ে বাতাস সঞ্চালিত হয়।
পতঙ্গের ক্ষুদ্র আকারের জন্য শ্বসনতন্ত্রের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পতঙ্গের আকার বড় হলে এ ধরনের অক্সিজেন পরিবহনের দক্ষতা কমে যায়, যে কারণে এই মুহুর্তে সবচাইতে বড় পতঙ্গটির ওজনও ১০০ গ্রামের কম হবে। কিন্তু, বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাল্লা দিয়ে পতঙ্গের আকারও বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্ত প্যালিওজোয়িক মহাযুগে এই ঘটনাটিই ঘটেছিল যখন দুই ফুটেরও অধিক বিস্তারের ডানাসম্পন্ন ফড়িং বসবাস করতো। [36]
নানান পতঙ্গের মাঝে নানান ধরনের গ্যাস বিনিময় ঘটে থাকে যা অবিচ্ছিন্ন ও পরিব্যাপক বায়ুচলন থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্ন গ্যাস বিনিময় ধরনেরও হতে পারে।[19] অবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিনিময়ের ক্ষেত্রে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্ব-ডাই-অক্সাই নিঃসরণে বিষয়টি একটি নিরন্তর চক্রের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন গ্যাস বিনিময়ের ক্ষেত্রে পতঙ্গ যখন সক্রিয় থাকে তখন অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং যখন বিশ্রামে থাকে তখন সামান্য পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে।[37] পরিব্যাপক বায়ুচলন হল অবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিনিময়েরই একটি প্রকার যেখানে অক্সিজেন গ্রহণের বিষয়টি দৈহিকভাবে না ঘটে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেসব পতঙ্গ পানির নিচে ডুবে থাকে, শ্বসনের জন্য তাদেরও নানান অভিযোজন রয়েছে। শূককীট দশায় অনেক পতঙ্গের ফুলকা থাকে যেটির সাহায্যে সে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন আহরণ করতে পারে। অন্যান্য ডুবে থাকা পতঙ্গ সময় সময় পানির উপরে ভেসে উঠে বাতাস পরিপূর্ণ করে নেয় যা তারা বিশেষ কাঠামোতে ধরে অথবা আটকে রাখে।[38][39]
রক্তসংবহনতন্ত্র
পতঙ্গের রক্তসংবহনতন্ত্র হিমোলিম্ফ নামের এক প্রকার তরল ব্যবহার করে যা রক্তের মতোনই কাজ করে এবং পতঙ্গের নানা ধরনের কলার সাথে সরাসরি সংস্পর্শে থেকে দেহের অভ্যন্তরে চক্রভ্রমণ করে। এটি রক্তরস দিয়ে তৈরী যার মাঝে অবস্থান করে রক্তকণিকাসমূহ। রক্তকণিকা ছাড়াও, রক্তরসের মাঝে নানান ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এছাড়াও এটি আর্থ্রোপোডের, বিশেষ করে মাকড়শা, কবচী ও পতঙ্গের, মুক্ত সংবহনতন্ত্রের একটি অন্যতম কলার ধরন।[40][41]
প্রজনন ও বিকাশ
অধিকাংশ কীট ডিম থেকে ফুটে বের হয়। কোরিয়ন নামক বহিরাবরণ দিয়ে আবৃত ডিমের মধ্যেই নিষেক ও বিকাশ ঘটে থাকে। অন্যান্য আর্থ্রোপোড প্রাণীর বিপরীতে কীটপতঙ্গের ডিম সাধারণত বেশ খরা-সহিষ্ণু। এর কারণ হল কোরিয়নের ভেতরের দিকে ভ্রুণকলা থেকে আরও দুইটি আবরণ উৎপন্ন হয় যাদের একটি অ্যামনিওন, আরেকটি সেরোসা। এই সেরোসা কাইটিনসমৃদ্ধ একটি কৃত্তিক নিঃসরণ করে যা ভ্রুণকে শুষ্কতার হাত থেকে বাচায়। স্কিৎজোফোরা পোকাদের সেরোসা নেই বলে তারা আর্দ্র জায়গাতে, যেমন পঁচনশীল বস্তু, ডিম পারে।[42] ডিম্বজ প্রজননের বাইরেও লাপতিকা দুবিয়া নামের আরশোলা, অপরিণত এফিড, ও সি-সি মাছিদের মতো কয়েকটি প্রজাতির মাঝে অভোভিভিপ্যারাস বা ডিম্ব-জরায়ুজ প্রজনন দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের প্রাণীরা সম্পূর্ণরূপে স্ত্রী এর অভ্যন্তরে বিকশিত হয়, এবং ডিম পাড়ার সাথে সাথেই ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে।[6] এই দুই ধরনের প্রজননের বাইরেও আরশোলার ডিপ্লোপ্টেরা গণের অন্তর্ভুক্ত পোকারা জরায়ুজ, অর্থাৎ মায়ের অভ্যন্তরেই গর্ভধারণের কাল সম্পন্ন করে এবং জীবন্ত বেরিয়ে আসে।[19] পরজীবী বোলতার মতো কয়েক প্রকারের কীট আবার পলিএমব্রায়োনি প্রজনন প্রদর্শন করে যেখানে একটিমাত্র নিষিক্ত ডিম বিভক্ত হয়ে অনেকগুলো (কিছু ক্ষেত্রে কয়েক হাজার) আলাদা ভ্রুণে পরিণত হয়।
বছরে কয়টি প্রজন্ম উৎপাদন করে, তার উপর ভিত্তি করে কীটপতঙ্গকে ইউনিভল্টাইন (একটি প্রজন্ম), বাইভল্টাইন (দুইটি প্রজন্ম), মাল্টিভল্টাইন (অনেক প্রজন্ম) হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।[43] কিছু কিছু কীট দুই বছরে একটি প্রজন্ম উৎপন্ন করে যাদেরকে সেমিভল্টাইন বলা হয়।
প্রজনন ও বিকাশের অন্যান্য প্রকরণগুলো হচ্ছে হ্যাপ্লোডিপ্লোয়ডি, পলিমরফিজম, পেডোমরফিজম বা পেরামরফোসিস, সেক্সুয়াল ডাইমরফিজম, অপুংজনি এবং কদাচিৎ উভলিঙ্গত্ব।[19] হ্যাপ্লোডিপ্লোয়ডি একটি লিঙ্গ-নির্ধারণ পদ্ধতি যেখানে সন্তানের লিঙ্গ, গৃহীত ক্রোমোজোম-জোড়ের সংখ্যার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট হয়। মৌমাছি ও বোলতার মাঝে এই পদ্ধতিটি বিশেষভাবে বিদ্যমান।[44] পলিমরফিজমের ক্ষেত্রে একটি প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের রূপান্তর বা স্বরূপ লক্ষ করা যায়। যেমন, অবলং উইংগড কেটিডিড বা আয়ত ডানা কেটিডিড-এর চারটি ভিন্ন প্রকরণ রয়েছেঃ সবুজ, গোলাপী, হলুদ ও তামাটে। কয়েক প্রজাতির পোকা তাদের অপরিণত বয়সের ফেনোটাইপগুলো পূর্নাঙ্গ বয়সেও ধরে রাখে, এই বিষয়টাকে বলা হয় পেডোমরফোসিস। এই প্রক্রিয়ার বিপরীত হল পেরামরফোসিস, যেখানে পূর্ণাঙ্গ পোকার মাঝে এমনসব বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যেসব প্রথমদিকে দেখা যায়নি। অনেক পোকা সেক্সুয়াল ডাইমরফিজম বা যৌন দ্বিরূপতা প্রদর্শন করে যেখানে পুরুষ এবং স্ত্রী পোকার চেহারা লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে অর্জিয়া রেচেন্স মথের কথা। কিছু কিছু পতঙ্গে পুরুষের দ্বারা ডিম নিষিক্ত না করেই স্ত্রী পোকা সন্তান জন্ম দান করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি। অনেক প্রকারের এফিড এক ধরনের অপুংজনির মধ্য দিয়ে যায় যাকে চাক্রিক অপুংজনি বলা হয়ে থাকে, যেখানে তারা এক বা একাধিক প্রজন্মের মধ্যে পালা করে যৌন ও অযৌন প্রজনন সম্পন্ন করে।[45][46] গ্রীষ্মে, এফিডেরা সাধারণত স্ত্রী এবং অপুংজনিক হয়। শরতে তারা যৌন প্রজননের নিমিত্তে পুরুষের উৎপাদন করতেও পারে। অপুংজনি পদ্ধতিতে প্রজনন করে এমন অন্যান্য পোকা হচ্ছে মৌমাছি, বোলতা এবং পিঁপড়া। এদের পুরুষেরা হয় হ্যাপ্লয়েড, আর স্ত্রীরা হয় ডিপ্লয়েড। [6] কিছু পোকা কদাচিৎ হার্মাফ্রোডাইটিজম প্রদর্শণ করতে পারে, যেখানে একটি পোকার মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ, উভয় প্রকার জনন অঙ্গ বিদ্যমান থাকে।
কীটপতঙ্গের জীবনেতিহাসে দেখা যায়, তারা সাধারণত ঠান্ডা এবং শুষ্ক দশার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যাবলি অভিযোজন করেছে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের কতিপয় পতঙ্গ শীতকালেও ক্রিয়াশীল থাকতে পারে, যেখানে বাকিরা হয় অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে প্রব্রজন করে অথবা অসাড় অবস্থায় চলে যায়। এর বাইরেও অন্য কিছু পতঙ্গ ডায়াপোজ নামের এক ধরনের পদ্ধতির বিবর্তন ঘটিয়েছে যা একে এই ধরনের দশাতে টিকে থাকতে সহায়তা করে।[47]
রূপান্তর
রূপান্তর হল পূর্ণ বিকাশের জৈবিক একটি প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে প্রতিটি পতঙ্গকেই যেতে হয়। মূলত দুই ধরনের রূপান্তর পোকাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়ঃ অসম্পূর্ণ রূপান্তর এবং সম্পূর্ণ রূপান্তর।
অসম্পূর্ণ রূপান্তর
যেসব পোকা অসম্পূর্ণ রূপান্তর বা হেমিমেটাবোলিজম প্রদর্শন করে তারা মূলত তিনটি দশার মধ্য দিয়ে যায়ঃ ডিম, নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পোকা। নিম্ফ দেখতে পূর্ণাঙ্গ পোকার মতো হলেও আকৃতিতে এর চেয়ে ছোট হয়। নিম্ফ সাধারণত ডানাবিহীন হয়ে থাকে। এরা বেশ কয়েকটি মোচনের মধ্য দিয়ে যায়। একটি পোকা তখনই মোচন সম্পন্ন করে যখন এর বহিঃকঙ্কাল অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে আর বাড়তে পারে না এবং যার ফলে পোকার বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত হয়। মোচন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই যখন পোকার বহিঃত্বক একটি নতুন বহিঃকৃত্তিক ক্ষরণ করে। এই বহিঃকৃত্তিক ক্ষরণের পর, বহিঃত্বক উৎসেচকের একটি মিশ্রণ নিষ্কাশন করে যা অন্তঃকৃত্তিককে হজম করে ফেলে এবং ফলে পুরাতন কৃত্তিক আলাদা হয়ে পড়ে। এই ধাপ সম্পন্ন হবার পর পানি এবং বাতাস খেয়ে পোকা তার দেহকে এমনভাবে ফুলিয়ে দেয় যা পুরাতন কৃত্তিককে একটি পূর্বনির্ধারিত দুর্বল জায়গা দিয়ে বিদীর্ণ হয়ে পড়তে সাহায্য করে।[19][48]
সম্পূর্ণ রূপান্তর
সম্পূর্ণ রূপান্তর বা হোলোমেটাবোলিজম প্রদর্শনকারী পোকারা চারটি নির্দিষ্ট দশার মধ্য দিয়ে যায়ঃ ডিম, শূককীট বা লার্ভা, মূককীট বা পিউপা, এবং পূর্ণাঙ্গ পোকা। এই পদ্ধতি অবলম্বনকারী পোকা প্রজাতিতে ডিম ফুটে শূককীট উৎপন্ন করে যেগুলো দেখতে কীড়া বা বিছার মতো। কীড়ার মতো রূপটি কয়েক ধরনের হতে পারেঃ এরুসিফর্ম (শুয়াপোকা), স্কারাবিফর্ম (ইংরেজি বর্ণ "C" এর মতো), ক্যাম্পোডিফর্ম (লম্বা, চ্যাপ্টা এবং সক্রিয়), এলাটেরিফর্ম (সরু তারের মতো), ভার্মিফর্ম (কৃমির মতো)। শূককীট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে শেষে মূককীটে পরিণত হয় যে দশাটি সাধারণত নিষ্ক্রিয় হয় এবং গুটি বা কোকুন দ্বারা আবৃত থাকে। তিন ধরনের মূককীট পাওয়া যায়ঃ অবটেক্ট, এক্সারেট, কোআর্কটেট। অবটেক্ট মূককীটে পা এবং অন্যান্য অঙ্গ ঠাসাঠাসি করে একসাথে জড়িয়ে থাকে। এক্সারেট মূককীটের পা ও অঙ্গগুলো মুক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে থাকে। কোআর্কটেট মূককীট, শূককীটের চামড়ার ভেতর বিকশিত হয়।[19] মূককীট দশায় পোকারা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং পরিশেষে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। এই পদ্ধতি অবলম্বনকারী হিসেবে প্রজাপতিরা বেশ জনপ্রিয়। কতিপয় পোকা এই পদ্ধতিটাতে বিবর্তনের ধারায় উৎকর্ষ সাধন করে হাইপারমেটামরফোসিস বা অতিরূপান্তরে নিয়ে গেছে।
এন্ডোপ্টেরাইগোটার মতো কিছু অতি পুরাতন এবং সফলকাম পদঙ্গদল এই ধরনের রূপান্তর ব্যবহার করে।[19] এই পদ্ধতির স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী হিসেবে ডিপ্টেরা, লেপিডোপ্টেরা, এবং হাইমেনোপ্টেরা বর্গের পোকারা বেশ পরিচিত। এই ধরনের বিকাশ অনেকটা একচেটিয়া যা অন্য আর্থ্রোপডে দেখা যায় না।তবে বিভিন্ন পোকার বিভিন্ন রকম হতে পারে।
সামাজিক আচরণ
উইপোকা, পিঁপড়া, নানান জাতের মৌমাছি ও বোলতার মতো সামাজিক পতঙ্গরা ইউসোশাল বা সুসামাজিক প্রাণী হিসেবে অতি পরিচিত।[49] তারা বৃহৎ সুসংগঠিত কলোনি বা বসতিতে একসাথে বসবাস করে যা এমনি দৃঢ়ভাবে সমণ্বিত ও জিনগতভাবে সদৃশ হয় যে কতিপয় প্রজাতির কলোনিকে মাঝেমাঝে সুপারঅর্গানিজম বলা হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে এই বলে যুক্তিতর্ক করা হয় যে, অমেরুদণ্ডীদের মধ্যে কেবলমাত্র মৌমাছির বিভিন্ন প্রজাতিই বিমূর্ত সাঙ্কেতিক যোগাযোগের সংশ্রয় গড়ে তুলেছে যেখানে পরিবেশের কোনো নির্দিষ্ট তথ্য চিত্রিত ও বহন করতে আচরণকে ব্যবহার করা হয়। নৃত্য ভাষা বা ড্যান্স ল্যাঙ্গুয়েজ নামে পরিচিত এই যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোণে মৌমাছি নৃত্য করে তা সূর্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটি দিক নির্দেশিত করে, এবং নৃত্যের দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে কতটুকু উড়ে যেতে হবে।[19]
যেসব পতঙ্গ বাসায় বা কলোনিতে বসবাস করে কেবলমাত্র তারাই সত্যিকারভাবে সূক্ষ্ম-মাত্রার স্থানিক স্থিতি-বোধ বা স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে। এই ক্ষমতার সুবাদে ঐসব পোকা কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভ্রমণ শেষেও, একরকম দেখতে একগাদা গর্তের ভেতর নির্ভুলভাবে মাত্র কয়েক মিলিমিটার ব্যাসের নিজের গর্তটি চিনে ফেরত আসতে পারে। ফিলোপ্যাট্রি বলে পরিচিত একটি ঘটনার ফলে যেসব পতঙ্গ শীতনিদ্রায় যায় তারা বছরখানেক বাদেও শেষ দেখা নির্দিষ্ট জায়গাটি স্মরণ করার ক্ষমতা রাখে।[50] কতিপয় কীটপতঙ্গ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে বিশাল এলাকা মৌসুমী পরিযাণ সম্পন্ন করে (এক্ষেত্রে মনার্ক প্রজাপতির শীতকাল কাটানোর কথা বলা যেতে পারে)।[19]
বাচ্চার যত্ন
ইউসোশাল পতঙ্গেরা আবাস তৈরী করে, ডিম পাহাড়া দেয়, এবং সবসময় বাচ্চাদের খাবার সরবরাহ করে। অধিকাংশ পোকা পূর্ণাঙ্গ দশায় অল্পকাল বাচে এবং মিলন বা সঙ্গীর জন্য প্রতিযোগিতা ছাড়া একে অন্যের সংস্পর্শে আসে না। ক্ষুদ্র সংখ্যার পোকা জনিতৃযত্ন প্রদর্শন করে যেখানে অন্ততপক্ষে তারা তাদের ডিম পাহাড়া দেয়, এবং মাঝেমাঝে বেড়ে ওঠার আগ পর্যন্ত বাচ্চাদের আগলে রাখে, এমনকি মাঝেসাঝে তাদের জন্য আহারেরো ব্যবস্থা করে। আরেক ধরনের জনিতৃযত্ন হল বাসা তৈরী করা (গর্ত অথবা সত্যিকারের কোনো নির্মাণ যা সরল বা জটিল হতে পারে), সেখানে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা, এবং সেইসব জিনিসের উপর ডিম পারা। বেড়ে উঠতে থাকা বাচ্চাদের সাথে যোগাযোগ না করলেও, পূর্ণাঙ্গ পোকারা তাদেরকে খাবার-দাবার সরবরাহ করে। এধরনের যত্ন মৌমাছি ও বিভিন্ন বোলতার অধিকাংশ প্রজাতিতে সাধারণ। [49] এতাই বিভিন্ন প্রানির জীবন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.