Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কদর (আরবি: قدر) শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিমাপ করা, কোনো বস্তু উপযোগিতা অনুসারে পরিমিতরূপে তৈরি করা। এছাড়া শরীআতের পরিভাষায় ‘কদর’ শব্দটি আল্লাহর "তাকদীর" তথা বিধিলিপির অর্থেও ব্যবহৃত হয়।[১] অর্থাৎ কদর হল স্বর্গীয় নিয়তি বা ভাগ্য।[২] এটি ইসলামের ঈমানের ছয়টি বিশ্বাসের একটি, বাকিগুলো হচ্ছে তাওহিদ, আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস, ইসলামের নবীদের উপর বিশ্বাস, মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস এবং ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। এই ধারণাটি কুরআনের মধ্যে উল্লেখ করা হয় আল্লাহর “ফরমান” হিসাবে।[৩]
ইসলামের মধ্যে “পুনরুত্থান” বাংলা শব্দের অর্থ অনুযায়ী পুনরুত্থানে বিশ্বাস যেটি মুসলিমরা বলে আল-কাদা ওয়া আল-কদর (القضاء والقدر)। বাক্যটির অর্থ হচ্ছে “ঐশ্বরিক নির্দেশ এবং পুনরুরুত্থান”। আল-কদর শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে “পরিমাপ করা”।[৪]
আকীদার মূল বিশ্বাসের একটি হচ্ছে কদর। কিছু মুসলিম বিশ্বাস করে যে ঐশ্বরিক ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যখন সৃষ্টিকর্তা সংরক্ষিত ফলক (আল-লাওহ্ আল-মাহফুজ) করেছেন, যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটবে, তা সবকিছুই লিখা আছে। এই বিশ্বাসনুযায়ী, একজন লোক কোন কাজকর্ম করে সেই ফলকের লিখানুযায়ী নয়, বরং সেটা সেখানে লিখা আছে কারণ সৃষ্টিকর্তা সময়ের কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়া সকল কর্মসমূহ সম্পর্কে জানেন।[৫] অন্যদিকে কার্যকারণ সম্বন্ধীয় সম্পর্ক কদরের অংশ, কারণ মানুষের কর্ম প্রভাব ফেলে যা “মুছা এবং বিবৃত করা ফলকে”(লাওহে মাহফুজ)। বাক্যটির প্রতিফলন মুসলিম মতবাদনুযায়ী যে আল্লাহ একজন লোকের জীবনের সবকিছু পরিমাপ করেছেন, তাদের সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, এবং তাদের চেষ্টার ফলও।[৬] আবার আল্লাহ কাউকে জোর করার প্রয়োজন পড়ে না ভালো বা খারাপ কিছু করার জন্য তার ইচ্ছার উপর বাধা দিয়ে এবং কেউ বলতে পারবে না যে আল্লাহ তা করেছেন।[৭] ভবিষ্যৎ এর উপর যখন নির্দেশ করা হয়,
"মুনাফিকরা (ভণ্ড) মুমিনদেরকে (বিশ্বাসী) ডেকে বলবে, ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ তাঁরা বলবে ‘হ্যাঁ!’, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। আর তোমরা অপেক্ষা করেছিলে [আমাদের অমঙ্গলের] এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং আকাঙ্ক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গেল। আর মহাপ্রতারক (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল।"
আল-কুরআন অনুযায়ী, কিছু লোক জাহান্নামে যাবে কারণ তাঁরা খারাপ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বাকিরা জান্নাত যাবে কারণ তাদের ভালো কাজের ফলাফল। এমনকি আল্লাহ তাদেরকে সত্যের পথপ্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন তারপরও তারা বিশ্বাস করতে প্রত্যাখান করবে।
"আর আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ জানতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে শুনাতেন। আর যদি শুনাতেন তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিত, এমতাবস্থায় যে, তাঁরা উপেক্ষাকারী।"
"আর তোমার রব এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে জনপদসমূহ ধ্বংস করে দেবেন, অথচ তার অধিবাসীরা সংশোধনকারী। যদি তোমার রব চাইতেন, তবে সকল মানুষকে এক উম্মতে পরিণত করতেন, কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধকারী রয়ে গেছে, তবে যাদেরকে তোমার রব দয়া করেছেন, তারা ছাড়া। আর এজন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমার রবের কথা চূড়ান্ত হয়েছে যে, ‘নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম ভরে দেব জিন ও মানুষ দ্বারা একত্রে’।"
পৃথিবী এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো সমস্যা আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
একটি হাদীস যেটি মুহাম্মদ কদর সম্পর্কে বলেন,
আলী ইবনে আবি তালিব হতে বর্ণিত যে, একদিন মুহাম্মদ একটি কাঠের কাঠি নিয়ে বসেছিলেন যেটি দিয়ে মাটিতে আঁকছিলেন। তিনি তাঁর মাথা তুললেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার স্থান জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হয়নি।” তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে আমরা কেন ভালো কাজ করবো, আমরা কি কদরের (আল্লাহর ইচ্ছা) উপর নির্ভর করবো না এবং আমাদের কাজ ছেড়ে দেবো না? ”মুহাম্মদ বললেন: “না, তোমরা কাজ করতে থাকো, কারণ এর মাধ্যমেই তোমরা সহজে পৌছাতে পারবে যে কর্মের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এরপর তিনি একটি আয়াত পড়ে শুনান: “সুতরাং যে দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব।”"(আল-লাইল ৯২: ৫-৭)
যাইহোক, এটি পরিষ্কার করা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তির সেই শক্তি নেই যেটি অন্য কারও জন্য লাভবান হবে বা ক্ষতিকর হবে, এবং শুধুমাত্র আল্লাহ সেই পথপ্রদর্শন করেন, অন্যকারো ক্ষমতা নেই পথপ্রদর্শনের। কুরআনে বলা হয়:
"যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি। আর ধূলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তাঁরাই জান্নাতবাসী। তাঁরা তাতে স্থায়ী হবে।"
দুইটি দল যারা কদর সম্পর্কে চরম। আল-জাবিরিয়াহ তাদের মতনুযায়ী মানুষদের তাদের কর্মের উপর কোনো হাত নেই এবং সবকিছুই সৃষ্টিকর্তা নির্ধারিত। অন্য দলটি হচ্ছে আল-কাদেরীয়াহ (সুফী তরিকা আল-কাদেরিয়ার সাথে বিভ্রান্ত হবেন না), তাদের মতামত হচ্ছে মানুষ তাদের নিয়তির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে, এটি ব্যাখ্যা করলে এমন যে সৃষ্টিকর্তা জানেন না আমরা কি নির্বাচন করবো। সুন্নিদের দৃষ্টি এই দুই মতবাদের মধ্যবর্তী স্থানে পড়ে, তারা বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টিকর্তা যা ঘটবে সবকিছু সম্পর্কে জানেন, কিন্তু মানুষ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীনভাবে কোনোকিছু করতে পারবে।
সুন্নি দৃষ্টিকোণ ঐতিহাসিকভাবে সমর্থন করেছেন যেসকল পণ্ডিত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন:
সুন্নি দৃষ্টিকোণ নিয়ে যারা সমালোচনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন:
সুন্নীরা কদরকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের(আরবি: আকীদা) একটি হিসাবে বিবেচনা করে। তারা বিশ্বাস করে যে নিয়তি তখনই নির্ধারিত হয়েছে যখন সৃষ্টিকর্তা তার সংরক্ষিত ফলক(আল-লাওহে আল-মাহফুজ) এর মধ্যে লিখেছেন যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটবে তার সবকিছু।
এই বিশ্বাসনুযায়ী, একজন লোকের কর্ম ঘটে না কারণ তা সংরক্ষিত ফলকে লিখা আছে বরং কর্ম সংরক্ষিত ফলকে লিখা আছে কারণ সৃষ্টিকর্তা কোন সময়ের বাধা ছাড়া জানেন সব ঘটনাসমূহ।[৫]
স্বাধীনভাবে যে কারো শক্তি আছে পছন্দ করার, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সময় এবং স্থান তৈরি করেছেন তিনি জানেন কি ঘটবে। সৃষ্টিকর্তা সকল সময় এবং স্থানের উর্ধে। তাই যা কিছু ঘটবে তা শুধুমাত্র মানবজাতির জন্য কারণ তারা সময় এবং স্থানে সীমাবদ্ধ। একটা ব্যাখ্যা দেয়া যায় এমনভাবে যে কেউ যদি দ্বিতীয়বাড় কোন চলচ্চিত্র দেখে তবে সে জানে পরবর্তিতে কি ঘটবে কিন্তু কেউ যদি প্রথমবার সে চলচ্চিত্রটি তবে তার কাছে পরবর্তি দৃশ্য অজানা।
মাতুরিদি বিশ্বাস অনুযায়ী, সকল সম্ভাব্য ফলাফল সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সৃষ্টি করা আছে এবং মানুষরা শুধুমাত্র সেটি নির্বাচন করে সে ফল অনুসরণ করে। যদিও সিদ্ধান্তসমূহ পূর্বনির্ধারিত, কিন্তু তা মানুষের নিজের প্রভাবেই ঘটে।[১৪]
পাঁচটি ধাপ রয়েছে যেখানে কদর নির্ধারণ করা হয় এবং সৃষ্টিকে পাঠানো হয়ঃ
একটি উদাহরণের মাধ্যমে যেটি এ সকল শ্রেণিবিভাগ কীভাবে ভাগ্য নির্ধারণ করে সে বিষয়ে পরিষ্কার হবেঃ আল্লাহ প্রাত্যহিক/বার্ষিক ফরমান পাঠান যে একজন ব্যক্তি লাভবান হবে। তাহলে সে ব্যক্তির ভাল কাজের জন্য(ধরা যাক তার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক পরিপূর্ণ করে [তাদের সাথে ভাল ব্যবহার এবং ভাল সম্পর্ক রেখে]), আল্লাহ আরেকটি ফরমান পাঠান তার লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে। এই পরপর দুই ফরমান সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ অবগত আছেন এবং সেটি সংরক্ষিত ফলকে নথিভুক্ত আছে। একজন ব্যক্তি নিজে জানেনা যে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার ভাগ্যে কি লেখা আছে, কিন্তু সে সেটা জানে যে সে যদি ভাল কাজ করে তবে তার লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকবে(উপরের উল্লেখিত উদাহরণের মত) যদি সে সেকাজ করে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যেঃ
দ্বাদশবাদি, সাথে শিয়ার অন্যান্য শাখা যেমন জাইদি, পুনুরুত্থান প্রত্যাখ্যান করে।[১৭][১৮][১৯][২০] এই বিশ্বাস শিয়া দৃষ্টিকোণ থেকে বিদআত হিসাবে দেখা হয়, যাতে বলা হয় মানব ইতিহাসের নির্দিষ্ট পথ সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে দেননি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা চাইলে মানব ইতিহাসের পথ বদলাতে পারেন যেটি তার কাছে ভাল মনে হবে।
তারা বলে যে পুনরুত্থিত এবং স্বাধীন ইচ্ছার মধ্যে কোন বাধা নেই, শিয়া বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের নিয়তি নিয়ে তা দুই ধরনের একটি হচ্ছে নির্দিষ্ট এবং অন্যটি অনির্দিষ্ট। নির্দিষ্ট এর ব্যাখ্যায় শিয়ারা বলে যে, সৃষ্টিকর্তার সমগ্র কিছুর উপর সে শক্তি রয়েছে, যখন যেভাবে যা কিছু তিনি চান, তিনি একটি নিয়তিকে অন্য আরেকটি নিয়তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে পারেন এবং একে অনির্দিষ্ট নিয়ত বলে। এসকল নিয়তির কিছু পরিবর্তন মানুষ নিজেদের মধ্যে নিয়ে আসে, যারা নিজেদের ইচ্ছা-স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাদের নিয়তি পরিবর্তনের জন্য যেটি এই আয়াতে বর্ণিত হয়ঃ "....নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোন অভিভাবক নেই।"[২১] দুই ধরনের নিয়তিই ঈশ্বরের জ্ঞানের মধ্যে, শিয়াদের মধ্যে মতবিবাদ রয়েছে যে তার জ্ঞান সম্পর্কে কোন পরিবর্তন আসবে না। তাই প্রথম ধরনের নিয়তি সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কোন বাধা বোঝায় না কারণ কুরআনে বলা হয়েছে, আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তার দু’হাত প্রসারিত।...।[২২] তাই সৃষ্টিকর্তার সে শক্তি রয়েছে সবকিছু তার ইচ্ছায় পরিবর্তনের এবং তার সৃষ্টি অপরিসীম। সোবহানী এর মতে, “ইসলামের সব দলেই “বিদআত”কে বিশ্বাসের নীতি হিসাবে মানে, যদিও সবাই সে নামে এটি বলে না।"[২৩]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.