Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এ কে এম আজহার উদ্দীন (২২ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ - ৮ মে, ২০১৪ ) বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের একজন ভাষা সংগ্রামী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা।[১]
এ কে এম আজহার উদ্দীনবরিশাল জেলার দক্ষিণ আলেকান্দাস্থ এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। তিনি বরিশালনগরীর একে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৫ সালে বিএম কলেজ থেকে আই.এ পাস করার পর তিনি আর পড়াশোনা করেননি। ১৯৬৫ সালের ৩১শে জানুয়ারি বিয়ে করেন। তিনি জল উন্নয়ন বোর্ডের সাধারণ কর্মকতা হিসেবে চাকরি করেন।
এ. কে. স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় এ কে এম আজহার উদ্দীন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সময়ে তার বয়োজ্যেষ্ঠ মোশাররফ হোসেন, আবুল হাসেম, প্রভৃতি ভাষা আন্দোলনে যোগ দিতে অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি হলে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি নিজ উদ্যোগে স্কুলছাত্রদের নিয়ে বরিশাল শহরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মিছিল-সমাবেশ করেন। সেই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে প্রথম কাপড় দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে তা পুলিশ ভেঙে ফেলে।
এ কে এম আজহার উদ্দীন ১৯৫৩ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর শিশু-কিশোরদের সংগঠিত করে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন কিশোর মজলিশ নামে একটি সংগঠন । এই সংগঠনের কর্মীদের দিয়েই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি কিশোর মজলিস প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালে এ.আর.এস. গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বরিশালের দক্ষিণ আলেকান্দাস্থ বেগম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে এ কে এম আজহার উদ্দীনের নেতৃত্বে কিশোর মজলিশের সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় যুবকরা সবাই লাঠি সোটা, রড প্রভৃতি নিয়ে মজলিশ প্রাঙ্গণে সমবেত হন। সবাইকে একত্রে করে মিছিল সহকারে নগরীর ওয়াপদা কলোনী, মেডিকেল কলেজ হয়ে সি.এস.ডি গোডাউন পর্যন্ত যান। পাকিস্তান সৈন্যবাহীর নৌ-পথে আসা কোন জাহাজ যাতে জেটিতে ভিড়তে না পারে, তার জন্য তারা ওয়াপদার প্রাচীর ও সি.এস.ডি’র জেটি ভেঙ্গে ফেলন। বরিশাল জেলার সংগ্রাম পরিষদের সদর দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় পরিষদের সদস্য নূরুল ইসলাম মঞ্জু এবং যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) এম.এ জলিল। এ কে এম আজহার উদ্দীন ও তার কিশোর মজলিশের সদস্যদের কথা শুনে মেজর(অব.) এম.এ জলিল যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য তাদের চারটি রাইফেল তুলে দিলেন। বরিশাল নগরীতে প্রথম দল হিসেবে-আলেকান্দা, রূপাতলী ও সাগরদি অঞ্চলে লড়াই করেন। রাইফেল হাতে পাওয়ার পর কিশোর মজলিশ প্রাঙ্গণে প্রথমে ২০ থেকে ২৫ জন যুবককে নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। কয়েকদিন পর মঞ্জু প্রশিক্ষণ দেখতে এসে খুশি হয়ে আরো দশটি কাঠের রাইফেল দিয়েছিলেন প্রশিক্ষণের জন্য। সেখানে তিনি যুবকদের নিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিতেন। পরবর্তীতে জল ও স্থল পথে পাকিস্তানিবাহিনী বরিশালে প্রবেশের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একাধিকবার সম্মুখ যুদ্ধ হয়। কিশোর মজলিশের মাধ্যমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অপরাধে তাকে একবার পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়তে হয়। কৌশলে ও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।[২]
ভাষাসংগ্রামী এ কে এম আজহার উদ্দীন ২০১৪ সালের ৮ মে, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা ৪৫ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বহুমূত্র রোগ এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.