মেট্রিক উপসর্গ একধরনের উপসর্গ যা কোনো পরিমাপের মৌলিক এককের আগে যুক্ত হয়ে এককের গুণিতককে চিহ্নিত করে। বর্তমানের সমস্ত মেট্রিক উপসর্গ দশমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রত্যেক উপসর্গের আলাদা চিহ্ন বর্তমান যা যেকোনো এককের চিহ্নের আগে যোগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কিলো- উপসর্গকে গ্রাম এককের সঙ্গে যুক্ত করলে এটি গ্রামকে ১,০০০ দিয়ে গুণ বোঝায়, সুতরাং এক কিলোগ্রাম সমান ১,০০০ গ্রাম। একইভাবে, মিলি- উপসর্গকে মিটার এককের সঙ্গে যুক্ত করলে এক মিটারকে ১,০০০ দিয়ে ভাগ বোঝায়, সুতরাং এক মিলিমিটার সমান ১⁄১,০০০ মিটার।
দশমিক গুণিতক উপসর্গগুলি সমস্ত প্রকারের মেট্রিক পদ্ধতির এক বৈশিষ্ট্য, এবং এদের মধ্যে ৬টি উপসর্গ ১৭৯০-এর দশকে মেট্রিক ব্যবস্থার সূচনার সময়কার। মেট্রিক নয় এমন এককের জন্যও এই মেট্রিক উপসর্গগুলি ব্যবহার করা হয়। এসআই উপসর্গ হচ্ছে আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে (এসআই) ব্যবহার করার জন্য ১৯৬০ থেকে ২০২২-এর বিভিন্ন প্রস্তাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ ব্যুরো (বিআইপিএম) দ্বারা প্রমিত মেট্রিক উপসর্গ।[১][২]
তালিকা
উপসর্গ | বৈজ্ঞানিক অঙ্কপাতন |
গৃহীত [ক] | |||
---|---|---|---|---|---|
বাংলা নাম | ইংরেজি নাম | প্রতীক (বাংলা লিপি) | প্রতীক (লাতিন লিপি) | ||
কুয়েটা | quetta | — | Q | ১০৩০ | ২০২২[৩] |
রনা | ronna | — | R | ১০২৭ | |
ইয়টা | yotta | — | Y | ১০২৪ | ১৯৯১ |
জেটা | zetta | — | Z | ১০২১ | |
এক্সা | exa | — | E | ১০১৮ | ১৯৭৫[৪] |
পেটা | peta | — | P | ১০১৫ | |
টেরা | tera | — | T | ১০১২ | ১৯৬০ |
গিগা | giga | — | G | ১০৯ | |
মেগা | mega | — | M | ১০৬ | ১৮৭৩ |
কিলো | kilo | কি | k | ১০৩ | ১৭৯৫ |
হেক্টো | hecto | হে | h | ১০২ | |
ডেকা | deca বা deka | ডেকা | da | ১০১ | |
— | — | — | — | ১০০ | — |
ডেসি | deci | ডেসি | d | ১০−১ | ১৭৯৫ |
সেন্টি | centi | সে | c | ১০−২ | |
মিলি | milli | মি | m | ১০−৩ | |
মাইক্রো | micro | — | μ | ১০−৬ | ১৮৭৩ |
ন্যানো | nano | — | n | ১০−৯ | ১৯৬০ |
পিকো | pico | — | p | ১০−১২ | |
ফেমটো | femto | — | f | ১০−১৫ | ১৯৬৪ |
অ্যাটো | atto | — | a | ১০−১৮ | |
জেপ্টো | zepto | — | z | ১০−২১ | ১৯৯১ |
ইয়ক্টো | yocto | — | y | ১০−২৪ | |
রন্টো | ronto | — | r | ১০−২৭ | ২০২২[৩] |
কুয়েক্টো | quecto | — | q | ১০−৩০ |
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে ফরাসি বিপ্লবের পরে কিলোগ্রাম এককের সংজ্ঞা নির্ধারণের সময় মেট্রিক পদ্ধতিতে প্রথম উপসর্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এর পরে আরও অনেক উপসর্গ ব্যবহৃত হতে লাগল এবং ১৯৪৭ সালে আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থার চতুর্দশ আন্তর্জাতিক রসায়ন সম্মেলনে এই উপসর্গগুলি স্বীকৃতি লাভ করেছিল।[৫] পরে ১৯৬০ সালে প্রথমবার দাপ্তরিকভাবে এগুলি গৃহীত হয়েছিল।[৬]
সবচেয়ে সাম্প্রতিক গৃহীত উপসর্গগুলি হলো রনা-, কুয়েটা-, রন্টো- ও কুয়েক্টো-। ব্রিটিশ মেট্রোলজিস্ট জে. সি. ব্রাউনের প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২২ সালে এগুলি গৃহীত হয়েছিল। ডেটা বিজ্ঞানে চাহিদার প্রত্যাশা এবং বিভিন্ন অনানুমোদিত মেট্রিক উপসর্গের ব্যবহারের জন্য রনা- ও কুয়েটা- উপসর্গ গৃহীত হয়েছিল। এধরনের চাহিদা না থাকলেও প্রতিসাম্য বজায় রাখার জন্য ছোট উপসর্গও গ্রহণ করা হয়েছিল।[৭]
নিয়মাবলী
- পরিমাপের এককের চিহ্নের আগে সংশ্লিষ্ট উপসর্গের চিহ্ন যুক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, লাতিন লিপিতে কিলোমিটার, কিলোগ্রাম ও কিলোওয়াট এককের এসআই চিহ্ন হচ্ছে যথাক্রমে km, kg ও kW (লাতিন লিপিতে কিলো- উপসর্গের চিহ্ন হচ্ছে k)। কিলো-, হেক্টো- ও ডেকা- উপসর্গ ব্যতীত গুণিতক উপসর্গের চিহ্ন বড় হাতের এবং উপগুণিতক উপসর্গের চিহ্ন ছোট হাতের হয়।[৮]
- মাইক্রো- ব্যতীত সমস্ত মেট্রিক উপসর্গের চিহ্ন বড় হাতের ও ছোট হাতের লাতিন অক্ষর। মাইক্রো- উপসর্গের চিহ্ন হচ্ছে গ্রিক অক্ষর μ।
- মেট্রিক উপসর্গের প্রতীক মাঝে কোনো স্পেস বা যতিচিহ্ন ছাড়া সর্বদা এককের চিহ্নের আগে যুক্ত হবে।[৯] এর মাধ্যমে উপসর্গ যুক্ত এককের প্রতীককে বিভিন্ন এককের প্রতীকের গুণফল থেকে আলাদা করা যায়, এবং বিভিন্ন এককের প্রতীকের গুণফল প্রকাশ করার জন্য মাঝে স্পেস বা মাঝারি বিন্দুর প্রয়োজন। সুতরাং, ms হচ্ছে মিলিসেকেন্ড এবং m s বা m·s হচ্ছে মিটার-সেকেন্ড।
- ১,০০০ ঘাতের উপসর্গকে সাধারণত প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং ১০ (ডেসি-, ডেকা-) ও ১০০ (সেন্টি-, হেক্টো-) ঘাতের উপসর্গদের অপছন্দ করা হয়। সুতরাং, ১ hm (হেক্টোমিটার) বা ১ dam (ডেকামিটার) লেখার জায়গায় ১০০ m বা ১০০ মি প্রাধান্য লাভ করে। তবে ১০ ও ১০০ ঘাতের উপসর্গ দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সেন্টিমিটার (cm বা সেমি) এককটি বহুল প্রচলিত। কিছু আধুনিক বিল্ডিং কোডে সেন্টিমিটারের জায়গায় মিলিমিটার (mm বা মিমি) একককে প্রাধান্য দেওয়া হয়, কারণ সেন্টিমিটার ব্যবহার করলে দশমিক বিন্দুর অতিব্যবহার ও বিভ্রান্তি দেখা দেবে।[১০]
উদাহরণ
- একটি ইলেকট্রনের ভর প্রায় ১ rg (রন্টোগ্রাম)।[৭]
- এক লিটার পানি বা জলের ভর প্রায় ১ kg বা ১ কিগ্রা (কিলোগ্রাম)।[১১]
- পৃথিবীর ভর প্রায় ৬ Rg (রনাগ্রাম)।[৭]
- বৃহস্পতি গ্রহের ভর প্রায় ২ Qg (কুয়েটাগ্রাম)।[৭]
মেট্রিক উপসর্গসহ এককের ঘাত
- ১ km২ বা ১ কিমি২ কথার অর্থ হচ্ছে এক বর্গকিলোমিটার, কিংবা ১,০০০ × ১,০০০ মিটার বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল। অন্যভাবে বলতে গেলে, এটি ১০,০০,০০০ বর্গমিটার, ১,০০০ বর্গমিটার ময়।
- ২ Mm৩ কথাটির অর্থ ২ ঘন মেগামিটার, অর্থাৎ ১০,০০,০০০ × ১০,০০,০০০ × ১০,০০,০০০ মিটার দুই ঘনকের মোট আয়তন। অর্থাৎ এটি ২×১০১৮ ঘনমিটার, ২০,০০,০০০ ঘনমিটার নয়।
অপ্রচলিত উপসর্গ
কিছু উপসর্গ একদা মেট্রিক পদ্ধতিতে প্রচলিত ছিল, কিন্তু সেগুলির ব্যবহার ক্রমে কমে গিয়েছিল এবং এসআই পদ্ধতিতে সেগুলি গৃহীত হয়নি।[১২][১৩][১৪] দশ হাজারের জন্য মিরিয়া- (myria-) বা মিরিও- (myrio-) উপসর্গ, এবং বাইনারি উপসর্গ দ্যুবল- (double-) (২×) ও দেমি- (demi-) (+১/২×) ১৭৯৫ সালে ফ্রান্স দ্বারা গৃহীত মেট্রিক পদ্ধতির অংশ ছিল,[১৫] কিন্তু ১৯৬০ সালে এসআই উপসর্গ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণ করার সময় সেগুলি আর প্রচলিত নয়।
যুগ্ম উপসর্গ
পূর্ব যুগ্ম উপসর্গ প্রচলিত ছিল, যেমন মাইক্রোমিলিমিটার বা মিলিমাইক্রন (μmm বা mμ; বর্তমানে ন্যানোমিটার, nm), মাইক্রোমাইক্রোফ্যারাড (μμF; বর্তমানে পিকোফ্যারাড, pF), কিলোমেগাটন (kMt; বর্তমানে গিগাটন, Gt) ও হেক্টোকিলোমিটার (hkm; বর্তমানে ১০০ কিলোমিটার), এবং সেখান থেকে উদ্ভূত বিশেষণ হেক্টোকিলোমেট্রিক (সাধারণত জ্বালানি ব্যয়ের হার নির্ণয়ের সময় ব্যবহৃত হতো)।[১৬]
নতুন উপসর্গের জন্য লাতিন বর্ণমালার কোনো বর্ণ বর্তমান নেই (সমস্ত অব্যবহৃত বর্ণ বিভিন্ন এককে ব্যবহৃত হয়েছে)। এর জন্য রিচার্ড জে. সি. ব্রাউন (যিনি ১০±২৭ ও ১০±৩০ সংখ্যার জন্য মেট্রিক উপসর্গের প্রস্তাব করেছিলেন) যুগ্ম উপসর্গের পুনঃপ্রচলনের প্রস্তাব করেছিলেন (যেমন: ১০৩৩ সংখ্যার জন্য কিলোকুয়েটা-) যদি এধরনের পরিমাণের জন্য কোনো চাহিদা উপলব্ধ হয়। এক্ষেত্রে শেষের উপসর্গটি সর্বদা কুয়েটা- বা কুয়েক্টো- হবে। এই ব্যবহার বিআইপিএম দ্বারা গৃহীত নয়।[১৭][১৮]
অনুরূপ উপসর্গ
বাইনারি উপসর্গ
১৭৯৫ সালে ফ্রান্স দ্বারা গৃহীত মেট্রিক পদ্ধতিতে দ্যুবল- (double-) (২×) ও দেমি- (demi-) (+১/২×), এই দুই বাইনারি উপসর্গ ছিল,[১৫] কিন্তু ১৯৬০ সালে এসআই উপসর্গ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণ করার সময় সেগুলি এর গ্রহণ করা হয়নি।
তথ্য প্রযুক্তির কিছু ক্ষেত্রে কিছু মেট্রিক উপসর্গকে (কিলো-, মেগা-, গিগা-) ১০০০-এর পরিবর্তে ১০২৪-এর ঘাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতির (এসআই) সঙ্গে সঙ্গত নয়।[১৯] জেইডিইসি-র মতো কিছু শিল্প সংস্থা একদা এই প্রথাকে মান্যতা দিয়েছিল, যদিও বাইনারিতে "অ্যাড্রেসেবল" (addressable) একক এবং দশমিকে "ট্রান্সমিটেড" (transmitted) একক পরিমাপের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।[খ]
এর জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রোটেকনিকাল কমিশন (আইইসি) প্রমিত বাইনারি উপসর্গ (কিবি-, মেবি-, গিবি-) চালু করেছিল।[২০][গ]
আরও দেখুন
- ক্ষুদ্র সংখ্যার নামের তালিকা
- বৃহৎ সংখ্যার নামের তালিকা
টীকা
- ১৯৬০-এর আগে গৃহীত উপসর্গ এসআই পদ্ধতি প্রচলনের আগেই প্রচলিত ছিল। ১৮৭৩ সালে সিজিএস পদ্ধতি চালু হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.