উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রিমিয়ার লিগ (ইংরেজি: Premier League; এছাড়াও সংক্ষেপে পিএল নামে পরিচিত) হচ্ছে দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ইংল্যান্ডের পেশাদার ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যকার আয়োজিত ইংরেজ ফুটবল লিগ পদ্ধতির শীর্ষ স্তরের পেশাদার ফুটবল লিগ। এই লিগে ইংল্যান্ডের সর্বমোট ২০টি পেশাদার ফুটবল ক্লাব ইংরেজ ক্লাব পর্যায়ের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।[১]
![]() | |
সংগঠক | দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন |
---|---|
স্থাপিত | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ |
প্রথম মৌসুম | ১৯৯২–৯৩ |
দেশ | ইংল্যান্ড |
কনফেডারেশন | উয়েফা |
দলের সংখ্যা | ২০ |
লিগের স্তর | ১ |
অবনমিত | ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ |
ঘরোয়া কাপ | এফএ কাপ এফএ কমিউনিটি শিল্ড |
লিগ কাপ | ইএফএল কাপ |
আন্তর্জাতিক কাপ | |
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন | ম্যানচেস্টার সিটি (৮ম) (২০২৩–২৪) |
সর্বাধিক শিরোপা | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৩) |
সর্বাধিক ম্যাচ | গ্যারেথ বেরি (৬৫৩) |
শীর্ষ গোলদাতা | অ্যালান শিয়ারার (২৬০) |
সম্প্রচারক | সম্প্রচারকের তালিকা |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
![]() |
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রিমিয়ার লিগে এপর্যন্ত সর্বমোট ৫১টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, যার মধ্য হতে মাত্র ৭টি ক্লাব এই লিগের শিরোপা জয়লাভ করেছে এবং চারটি ক্লাব একাধিকবার জয়লাভ করেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এই লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব, যারা সর্বমোট ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করার পাশাপাশি সাত বার রানার-আপ হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, যারা এপর্যন্ত সাত বার এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ক্লাব চেলসি, যারা এপর্যন্ত পাঁচ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি ২০২২–২৩ মৌসুমে ৮৯ পয়েন্ট অর্জন করে ক্লাবের ইতিহাসে ৭ম বারের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল; উক্ত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি হতে ৫ পয়েন্ট কম অর্জন করে আর্সেনাল রানার-আপ হয়েছিল।[২]
ইংলিশ ফুটবলের জন্য ৮০ দশক ছিল খুব শোচনীয়। স্টেডিয়ামগুলো ছিল ভাঙ্গাচোরা, দর্শকদের জন্য তেমন কোন সুবিধাদি ছিল না, গুন্ডাগিরি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ১৯৮৫ সালে সংঘটিত হাইসেল দুর্ঘটনার[৩] জন্য ইউরোপীয় খেলায় ইংলিশ দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের ১৮৮৮ থেকে চলতে থাকা শীর্ষস্থানীয় লিগ প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ ইউরোপের অন্যান্য লিগ যেমনঃ ইতালির সিরি এ ও স্পেনের লা লিগা প্রভৃতি থেকে দর্শক ও আয়ের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল, ফলে ইংল্যান্ডের কিছু শীর্ষ খেলোয়াড় বিদেশে চলে যায়।[৪] এতকিছুর পরেও ৯০ দশকে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড সফল হয় যেখানে তারা টাইব্রেকারে সেমিফাইনালে হেরে যায়। ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান উয়েফা ১৯৯০ সাল থেকে ইউরোপীয়ান খেলাতে ইংল্যান্ডের দলগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত টেলরের রিপোর্টে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয়বহুল উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা বলা হয়।[৫]
টেলিভিশনের সম্প্রচারস্বত্বের গুরুত্ব ততদিনে অনেক বেড়ে গিয়েছে। ১৯৮৬ সালে যেখানে ফুটবল লিগ মাত্র ৬.৩ মিলিয়ন পাউন্ড পেয়েছিল দুই বছরের চুক্তির জন্য, সেখানে ১৯৮৮ সালে যখন চুক্তির নবায়ন করা হয় তখন চুক্তির মূল্য মাত্র চার বছরে বেড়ে হয় ৪৪ মিলিয়ন পাউন্ড।[৬] ১৯৮৮ সালের চুক্তিটি ছিল লিগের ভাঙ্গনের একটি চিহ্ন। দশটি দল লিগ ছেড়ে একটি সুপার লিগ গঠনের হুমকি দিলেও পরে লিগে থাকতে রাজি হয়। [৭] স্টেডিয়ামের উন্নতির সাথে সাথে মাঠে দর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে শীর্ষস্থানীয় দলগুলো খেলায় মূলধনের অন্তঃপ্রবাহ ধরে রাখার জন্য আবার ফুটবল লিগ ত্যাগ করার চিন্তা করেছিল।
১৯৯২ সালে এফএ প্রিমিয়ার লিগ নামে এই লিগটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অতঃপর ১৯৯২–৯৩ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমের মাধ্যমে এই লিগটি যাত্রা শুরু করেছে। প্রিমিয়ার লিগের উক্ত মৌসুমে সর্বমোট বাইশটি ক্লাব দ্বৈত রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৯২ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে শুরু হয়ে ১৯৯৩ সালের ১১ই মে তারিখে সম্পন্ন হওয়া উক্ত মৌসুমে প্রতিটি ক্লাব সর্বমোট ৪২টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিল; যার মধ্যে ক্লাবগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দুইটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। ৪২তম ম্যাচদিন শেষে ৮৪ পয়েন্ট অর্জন করে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ স্থান অধিকারী ক্লাব হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রথম ক্লাব হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে, পয়েন্ট তালিকার সর্বনিম্ন পয়েন্ট অর্জনকারী ক্লাব হিসেবে নটিংহ্যাম ফরেস্ট প্রথম ক্লাব হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ হতে ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপে অবনমিত হয়েছিল; একই সাথে উক্ত মৌসুমে ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব হিসেবে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড পরবর্তী মৌসুমে প্রথম ক্লাব হিসেবে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড হতে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত হয়েছিল। ১৯৯২–৯৩ মৌসুমে নটিংহ্যাম ফরেস্টের ইংরেজ আক্রমণভাগের খেলোয়াড় টেডি শেরিংহ্যাম ২২ গোল করে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কার জয়লাভ করেছিলেন।[৮] প্রথম প্রিমিয়ারশিপ গোল করেন ব্রায়ান ডিন শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে, যে খেলায় তার ২-১ গোলে জয়ী হয়। ঘরোয়া লিগে দলগুলোর খেলার সংখ্যা কমাতে ফিফার চাপের কারণে ১৯৯৫ সালে দলের সংখ্যা কমিয়ে ২০ করা হয় যখন ৪টি দলকে প্রথম বিভাগে নামিয়ে দেয়া হয় ও মাত্র ২টি দলকে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সালের ৮ জুন ফিফা সব ইতালির সিরি এ ও স্পেনের লা লিগা সহ প্রধান ইউরোপীয়ান লিগগুলিকে ২০০৭-০৮ মৌসুমে ১৮টি দলে কমিয়ে আনতে অনুরোধ করে। প্রিমিয়ার লিগ দলের সংখ্যা কমানোর জন্য ফিফার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।[৯]
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০০৭ তারিখ থেকে প্রিমিয়ার লিগের নাম কেবল 'প্রিমিয়ার লিগ' থেকে পরিবর্তন করে 'এফএ প্রিমিয়ার লিগ' করা হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রিমিয়ার লিগ তাদের ২০টি সদস্য দলের মাধ্যমে কর্পোরেশন এর মত পরিচালিত হয়। প্রতি দলকে একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং নিয়ম-কানুন পরিবির্তন বা চুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে সকল সদস্য একটি করে ভোট দিতে পারেন। দলগুলো লিগের কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য একজন চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী ও পরিচালকমন্ডলী নির্বাচন করে থাকে। [১০] ফুটবল এসোসিয়েশন প্রিমিয়ার লিগের দৈনন্দিন কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, তবে বিশেষ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে তাদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী নির্বাচন অথবা নতুন নিয়ম কানুন প্রণয়নে ভেটো দানের ক্ষমতা আছে।[১১]
উয়েফার ইউরোপীয়ান ক্লাব ফোরাম এ প্রিমিয়ার লিগের প্রতিনিধি থাকে। উয়েফা আনুপাতিক হারে দলের সংখ্যা ও দল নির্বাচন করে। ইউরোপীয়ান ক্লাব ফোরাম উয়েফার দলগত প্রতিযোগিতার কমিটির তিনজন সদস্য নির্বাচন করে, যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ বা উয়েফা কাপ এর মত প্রতিযোগিতা পরিচালনায় অংশ নেয়। [১২]
প্রিমিয়ার লিগের প্রতিটি মৌসুমে সর্বমোট ২০টি ক্লাব দ্বৈত রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দুইটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়; যার মধ্যে একটি নিজেদের মাঠে এবং অপরটি প্রতিপক্ষ দলের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়; ক্লাবগুলো এক মৌসুমে সর্বমোট ৩৮টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে।[১৩][১৪] প্রিমিয়ার লিগের প্রতিটি মৌসুম বছরের আগস্ট মাস হতে পরবর্তী বছরের মে মাস পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাবগুলো প্রতিটি জয়ের জন্য তিন পয়েন্ট এবং ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট করে অর্জন করে থাকে, হারের জন্য কোন পয়েন্ট অর্জন করে না। পয়েন্ট তালিকায় ক্লাবগুলোর অর্জিত পয়েন্টের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি মৌসুম শেষে পয়েন্ট তালিকায় সর্বাধিক পয়েন্ট অর্জনকারী ক্লাবটি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শিরোপা জয়লাভ করে। যদি দুই বা ততোধিক ক্লাব সমান পয়েন্ট অর্জন করে থাকে, তবে গোল পার্থক্যের মাধ্যমে পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। সমতা ভঙ্গের সকল নিয়ম প্রয়োগ করার পরও যদি দুই বা ততোধিক ক্লাব পয়েন্ট তালিকায় সমতায় থাকে, তবে উক্ত ক্লাবগুলো পয়েন্ট তালিকার একই অবস্থানে আছে বলে মনে করা হয়। তবে, চ্যাম্পিয়ন ক্লাব, অবনমিত ক্লাব অথবা অন্যান্য প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ ক্লাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি সমতায় থাকে, তবে একটি নিরপেক্ষ মাঠে একটি প্লে-অফ ম্যাচের মাধ্যমে ক্লাবগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
প্রিমিয়ার লিগের প্রতিটি মৌসুমের বিজয়ী ক্লাব পরবর্তী মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হয়; এছাড়াও পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থানের ভিত্তিতে এক বা একাধিক ক্লাব উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা ইউরোপা লিগ এবং উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগের জন্য উত্তীর্ণ হয়। প্রিমিয়ার লিগে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি ক্লাবগুলো ইংরেজ ঘরোয়া ফুটবল কাপ এফএ কাপেও অংশগ্রহণ করে।
ফুটবল লিগ পদ্ধতির মাধ্যমে ইংরেজ ফুটবল লিগ পদ্ধতির শীর্ষ স্তরের লিগ প্রিমিয়ার লিগ এবং দ্বিতীয় স্তরের লিগ ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ উন্নয়ন ও অবনমনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। প্রতিটি মৌসুম শেষে, প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় সর্বনিম্ন পয়েন্ট অর্জনকারী তিনটি ক্লাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপে অবনমিত হয়; পক্ষান্তরে, উক্ত মৌসুমে ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন, রানার-আপ এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী ক্লাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত হয়।
প্রিমিয়ার লিগে ২০টি দল থাকে। এক মৌসুমে (আগস্ট থেকে মে পর্যন্ত একটি মৌসুম) প্রতিটি দল অন্য দলগুলোর সাথে দু’বার খেলায় মিলিত হয়, একবার নিজস্ব মাঠে অন্যবার বিপক্ষ দলের মাঠে। একটি দল এক মৌসুমে সবমিলিয়ে ৩৮টি খেলা খেলে, একটি মৌসুমে সর্বমোট ৩৮০টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জয়ের জন্য বিজয়ী দল ৩ পয়েন্ট পায়, ড্রয়ের জন্য উভয় দল ১ পয়েন্ট করে পায়। হারের জন্য কোন পয়েন্ট দেয়া হয় না। দলগুলোকে উচ্চক্রমে সাজানো হয় প্রথমে মোট পয়েন্ট, তারপর গোল ব্যবধান ও তারপর পক্ষে করা গোলের সংখ্যার উপর। মৌসুম শেষে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দলকে শিরোপা প্রদান করা হয়। যদি পয়েন্ট সমান হয় তাহলে গোল ব্যবধান ও গোল সংখ্যার উপর নির্ভর করে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। যদি তাও সমান হয় তাহলে দু’দলকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। যদি এভাবে শিরোপাধারী দল, রেলিগেশনের আওতায় পড়া দল অথবা অন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণ করা না যায় তাহলে নিরপেক্ষ মাঠে দলগুলোর খেলা আয়োজন করা হয় (এ পর্যন্ত ঘটে নি)। সর্বনিম্নে থাকা তিনটি দলকে ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়নশিপএ নামিয়ে দেয়া হয়। ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থানীয় দু’টি দলকে প্রিমিয়ারশিপে খেলার জন্য উন্নীত করা হয়। তিন থেকে ষষ্ঠ স্থানের চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি দলের মধ্যে খেলার মধ্য থেকে আরও একটি দলকে প্রিমিয়ারশিপে উন্নীত করা হয়।
প্রিমিয়ারশিপের শীর্ষ চার দল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য মনোনীত হয়। শীর্ষ দু’টি দল সরাসরি গ্রুপ পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। গ্রুপ পর্যায়ে খেলতে হলে তৃতীয় ও চতুর্থ দলদু’টি তৃতীয় যোগ্যতা নির্ধারণী খেলায় অংশগ্রহণ করতে হয় এবং দুইলেগের নক-আউট খেলায় জিততে হয়। পঞ্চম স্থানের দলটি উয়েফা কাপে সরাসরি খেলতে পারে। ষষ্ঠ ও সপ্তম দলদু’টি ঘরোয়া দু’টি লিগের ফলাফলের উপর নির্ভর করে উয়েফা কাপে অংশ নিতে পারে। যদি এফএ কাপের বিজয়ী ও দ্বিতীয় স্থানের দলদু’টি প্রিমিয়ারশিপে প্রথম পাঁচটি দলের ভিতরে থাকে তাহলে ষষ্ঠ দলটি এফএ কাপ কোটায় উয়েফা কাপে অংশ নিতে পারবে। যদি লিগ কাপ বিজয়ী দল ইতোমধ্যে কোন ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যায় তবে পরবর্তী শীর্ষদলটি লিগ কাপ কোটায় উয়েফা কাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তবে এফএ কাপের মত এক্ষেত্রে লিগ কাপের দ্বিতীয় স্থানের দলকে সুযোগ দেয়া হয় না। যে পরবর্তী শীর্ষস্থানীয় দল চ্যাম্পিয়িনস লিগ বা উয়েফা কাপে স্থান পায়নি তাকে ইন্টারটোটো কাপে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ দেয়া হয়, যদি তারা এ কাপে অংশগ্রহণ করার আবেদন জমা দেয়। ইন্টারটোটো বিজয়ী দল সরাসরি উয়েফা কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
নীতিগতভাবে ফুটবল এসোসিয়েশন (এফএ) যে কোন দলকে ইউরোপে খেলার জন্য মনোনীত করতে পারে, যদিও তারা স্বভাবতই সেরা দলগুলোকেই পাঠায়। এই নিয়মটি আলোচিত হয় যখন ২০০৫ সালে লিভারপুল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেও পরবর্তী মৌসুমে খেলার জন্য তারা প্রিমিয়ারশিপে যথেষ্ট উপরে উঠতে ব্যর্থ হয়। ফলে এই প্রথমবারের মত কোন বিগত মৌসুমের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারবে না এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। আসলে এরকম ঘটনা আগেও একবার ঘটেছে ২০০০-০১ মৌসুমে যখন বিগত চ্যাম্পিয়ন রিয়েল মাদ্রিদ লা লিগায় যথেষ্ট উপরে স্থান নিতে পারেনি। সেসময় তারা অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিতে পেরেছিল কারণ চতুর্থ স্থানীয় দলটিকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছিল। কিন্তু লিভারপুলের ক্ষেত্রে এফএ তাদের সেরা চার নীতিতে অটল ছিল। অধিকন্তু চতুর্থ স্থানীয় দল এভারটন তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ হারাতে চাইছিল না, যা তার অর্জন করেছিল। ফলে যদিও উয়েফা প্রথমে চারটির বেশি ইংলিশ দলকে সুযোগ দিতে চায়নি, কিন্তু পরে তারা ইংলিশ লিগের সেরা চার দল ও বিগত চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলসহ পাঁচটি ইংলিশ দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এর একটি বড় কারণ ছিল উয়েফা প্রেসিডেন্ট লেনার্ট জোহানসন,[১৫] ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার,[১৬] ও খেলার প্রসিদ্ধ মুখ ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার প্রমুখের সমর্থন।[১৭] পরবর্তীকালে উয়েফা নিয়ম করে যে বিগত চ্যাম্পিয়ন অবশ্যই পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস লিগের যোগ্যতা অর্জন করবে, ঘরোয়া লিগে তাদের ফলাফল যাই হোক না কেন।
উয়েফার তালিকা অনুযায়ী ইউরোপীয়ান লিগগুলির মধ্যে স্পেনের লা লিগার পরই প্রিমিয়ারশিপের অবস্থান। তাদের পরই আছে ইতালির সিরি এ। এ তালিকা করা হয়েছে পাঁচ বছরব্যাপী বিভিন্ন ইউরোপীয়ান প্রতিযোগিতার ফলাফল হিসেব করে। [১৮] বর্তমান নিয়মানুযায়ী ইউরোপের শীর্ষ তিন লিগ থেকে চারটি ও অন্যান্য লিগ থেকে তিনটি করে দল চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে আসে। তবে, সাবেক উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি ভবিষ্যতে ইউরোপের যেকোন লিগ থেকে কেবলমাত্র তিনটি দলের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন।.
১৯৯৩ সাল থেকে প্রিমিয়ার লিগ সৌজন্যস্বত্ত্ব চুক্তি করেছে। বিজ্ঞাপন বা সৌজন্যদাতা প্রিমিয়ারশিপের নাম ঠিক করার অধিকার পান। এ পর্যন্ত সব স্পন্সর প্রতিযোগিতার নাম 'প্রিমিয়ারশিপ' রেখেছে। নিচে এযাবতকালের সকল সৌজন্যদাতা ও প্রতিযোগিতার নাম দেয়া হয়েছেঃ
ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের অনেকে প্রিমিয়ারশিপে খেলেন। প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক লিগ। ডেলইট টাচ টোহমাতসু এর মতে ২০০৪-০৫ মৌসুমে সব দলের সম্মিলিত আয় ছিল ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের অধিক যা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইতালির সিরি এ থেকে ৪০% বেশি।[১৯] ২০০৭-০৮ মৌসুমে আয় আরও বৃদ্ধি পাবে যখন নতুন সম্প্রচার স্বত্ত্বের চুক্তি হবে। জানুয়ারি ২০০৭ এর মুদ্রামান অনুযায়ী ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের সমতুল্য হচ্ছে ২.৫১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এই আয় বিশ্বে যে কোন খেলার প্রতিযোগিতায় বার্ষিক আয়ের তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সামনে আছে কেবল উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় মেজর প্রফেশনাল স্পোর্টস লিগ, (জাতীয় ফুটবল লিগ (এনএফএল), মেজর লিগ বেজবল, ও জাতীয় বাস্কেটবল এসোসিয়েশন (এনবিএ)) এবং ঠিক পিছনেই রয়েছে জাতীয় হকি লিগ। প্রিমিয়ার লিগে কেবল ২০টি দল আছে (এনএফএল এ আছে ৩২টি ও অন্যান্য প্রধান লিগে দলের সংখ্যা ৩০টি) এটি ধরলে ও মুদ্রা বিনিময় হারের ও আয়ের সংজ্ঞার কথা বিবেচনা করে বলা যায় প্রিমিয়ার লিগের প্রতি দলের গড় আয় এনবিএ এর গড় আয়ের সমান বা কোন কোণ ক্ষেত্রে একটু বেশিই।
২০০৫-০৬ মৌসুমে প্রতি খেলায় গড় দর্শক সংখ্যা ৩৩,৮৭৫ যা যেকোন পেশাদার লিগের দর্শকের তালিকায় চতুর্থ। এক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লিগ সিরি এ ও লা লিগার আগেই আছে তবে জার্মান বুন্দেসলিগার পেছনে পড়ে গেছে। দর্শকদের সংখ্যা লিগের প্রথম মৌসুমের (১৯৯২-৯৩) তুলনায় ৬০% বেশি যা তখন ছিল গড়ে ২১,১২৬।[২০] অবশ্য ১৯৯২-৯৩ মৌসুমের শুরুতে অধিকাংশ স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা কমিয়ে ফেলা হয়েছিল কারণ টেলরের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৪-৯৫ সালের ভিতর স্টেডিয়ামের সংস্কারের একটি দাবি ছিল। [২১][২২] ২০০৫-০৬ সালের দর্শক সংখ্যা ছিল প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড গড় দর্শক সংখ্যা ৩৫,৪৬৪ যা হয়েছিল ২০০২-০৩ মৌসুমে, এর তুলনায় কম।[২৩]
নতুন তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী প্রিমিয়ারশিপের সম্প্রচারের জন্য স্কাই দেবে ১.৩১৪ বিলিয়ন পাউন্ড ৯২টি খেলার জন্য ও সেটান্টা ৩৯২ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ৫০টি খেলার জন্য। বিদেশী টেলিভিশন সম্প্রচারস্বতত্ত্ব থেকে পাওয়া যাবে ৬২৫ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া যাবে আরও ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড। প্রিমিয়ারশিপের বিজয়ী দল পাবে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রাইজ মানি ও টিভি আয়সহ) যা বর্তমানে আছে ৩০.৪ মিলিয়ন পাউন্ড। ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড এনএফএল দলগুলোর টিভিস্বত্ত্ব আয়ের সাথে তুলনীয় (এনএফএল তার টিভিস্বত্ত্বের আয় দলগুলোর সাথে বণ্টন করে)। নতুন চুক্তির অধীনে সবচেয়ে নিচের দল পাবে ২৬.৪ মিলিয়ন পাউন্ড। নতুন চুক্তির ফলে প্রিমিয়ার লিগ খেলাধুলায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনী সম্প্রচারস্বত্ত্বের অধিকারী হবে। শীর্ষস্থানটি অবশ্য এখনো উত্তর আমেরিকার জাতীয় ফুটবল লিগের।
প্রিমিয়ারশিপের ইতিহাসে টেলিভিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। টেলিভিশনের সম্প্রচারস্বত্ত্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থ খেলার ভিতর ও বাহির দুই ক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটিয়েছে। ১৯৯২ সালে 'ব্রিটিশ স্কাই ব্রডকাস্টিং' কে প্রচারস্বত্ত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত ছিল খুবই সাহসী পদক্ষেপ, পরে যার সুফল পাওয়া গেছে। সে সময় যুক্তরাজ্যের বাজারে পে-চ্যানেলে দর্শকদের খেলা দেখানোটা চিন্তার বাইরে ছিল। কিন্তু স্কাই এর বিপণন ব্যবস্থাপনা ও প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলের মানোন্নতির কারণে দর্শকের আগ্রহ দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে প্রিমিয়ারশিপের টিভিস্বত্ত্বের মূল্যও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া টিভির কথা বিবেচনায় রেখে খেলার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত রবি ও সোমবার খেলার সময় নির্ধারণ করা হয়। এ সময়সূচি সাধারণত অন্য কোন খেলার কথা বিবেচনায় রেখে করা হয় যাতে একই দিনে দুইটি জনপ্রিয় খেলা না পড়ে।
প্রিমিয়ার লিগ এর টিভিস্বত্ত্ব বিক্রি করে থাকে সমষ্টিগতভাবে। সিরি এ, লা লিগা সহ অন্যান্য ইউরোপীয়ান লিগের সাথে এক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লিগের কিছু পার্থক্য আছে। ঐসব লিগে দলগুলো তাদের সম্প্রচার স্বত্ত্ব বিক্রি করে আলাদাভাবে। ফলে টিভিস্বত্ত্ব থেকে পাওয়া অর্থের অধিকাংশই যায় বড় হাতেগোনা কয়েকটি দলের পকেটে। প্রিমিয়ার লিগে টিভিস্বত্ত্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থ তিনভাগে ভাগ করা হয়ঃ[২৪] অর্ধেক অর্থ সবগুলো ক্লাবের মাঝে সমান হারে বণ্টন করা হয়; এক চতুর্থাংশ লিগের অবস্থানের উপর নির্ভর করে দেয়া হয়, যাতে শীর্ষদলটি সর্বনিম্ন অবস্থানের দল থেকে বিশ গুন বেশি অর্থ পায় ও একই হারে বাকী অবস্থানের দলগুলো অর্থ পায়; বাকী এক চতুর্থাংশ টিভিতে খেলা দেখানোর জন্য বিভিন্ন পরিসেবা খাতে ব্যয় হয়, যার একটা বড় অংশ শীর্ষস্থানীয় দলগুলো পায়। খেলা বাবদ প্রাপ্ত বৈদেশিক অর্থের পুরোটাই সমান হারে ভাগ করে দেয়া হয় বিশটি দলের মধ্যে।
প্রথম যখন স্কাইয়ের সাথে চুক্তি হয় তখন এর মূল্য ছিল ১৯১ মিলিয়ন পাউন্ড, পাঁচ মৌসুমের জন্য।[২৫] ১৯৯৭–৯৮ মৌসুমে সম্পাদিত পরের চুক্তির মূল্য ছিল ৬৭০ মিলিয়ন পাউন্ড, চার মৌসুমের জন্য[২৫] প্রিমিয়ার লিগের স্কাইয়ের সাথে বর্তমান চুক্তি হচ্ছে ১.০২৪ বিলিয়ন পাউন্ড, আগস্ট ২০০৪ থেকে তিন মৌসুমের জন্য। ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৬-০৭ এ তিন মৌসুমের জন্য প্রিমিয়ার লিগ বিদেশে সম্প্রচারস্বত্ত্ব বাবদ ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ড পেয়েছে। প্রিমিয়ার লিগ বিদেশে তাদের সম্প্রচারস্বত্ত্ব এলাকাভিত্তিকভাবে বিক্রি করে। [২৬] আগস্ট ২০০৬ থেকে স্কাই টিভির একচেটিয়া বাণিজ্যের দিন শেষ হয়, যখন সেটান্টা স্পোর্টসকে মোট ছয় গুচ্ছ খেলার মধ্যে দুই গুচ্ছ খেলার স্বত্ত্ব দেয়া হয়। এটা করা হয় যখন ইউরোপীয়ান কমিশন চাপ দেয় যে একটি মাত্র টেলিভিশন কেন্দ্রের কাছে সম্পূর্ণ সম্প্রচারস্বত্ত্ব বিক্রি করা যাবেনা। স্কাই ও সেটান্টা সর্বমোট ১.৭ বিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করেছে যা আগের তুলনার দুই তৃতীয়াংশ বেশি। এটা অনেক ভাষ্যকারকেই বিস্মিত করেছে কারণ তারা মনে করেছিলেন অনেকদিন দ্রুত দাম বাড়ার পর হয়তো টিভিস্বত্ত্বের মূল্য সাম্যাবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিবিসি এই তিন মৌসুমের হাইলাইটস (খেলার দিন) দেখানোর স্বত্ত্ব পেয়েছে ১৭১.৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। গত তিন মৌসুমের জন্য এই মূল্য ছিল ১০৫ মিলিয়ন পাইন্ড যার তুলনায় বর্তমান মূল্য ৬৩% বেশি।[২৭]
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ চালু হওয়ার সময় কেবল এগারজন খেলোয়াড় প্রথম একাদশে 'বিদেশী' (যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড এর বাইরের দেশ) খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন।[২৮] ২০০০-০১ মৌসুমে বিদেশী খেলোয়াড়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬% এ। ২০০৪-০৫ মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫%। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে চেলসি প্রথম প্রিমিয়ার লিগের দল হিসেবে পুরো প্রথম একাদশই বিদেশী খেলোয়াড় দিয়ে গঠন করে,[২৯] এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে আর্সেনাল প্রথম দল হিসেবে কোন খেলার জন্য পুরো ১৬ জনের দলকেই বিদেশী খেলোয়াড় দিয়ে সাজায়। [৩০]
ইংলিশ প্রতিযোগিতা হওয়া সত্ত্বেও কোন ইংরেজ ব্যবস্থাপক এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগ জিতেননি। ২০০৬ পর্যন্ত কেবল চারজন ভিন্ন ম্যানেজার লিগ শিরোপা জিতেছেনঃ দুজন স্কটিশ (স্যার এলেক্স ফার্গুসন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও কেনি ডালগ্লিশ, ব্ল্যাকবার্ন রোভারস), একজন ফরাসি (আর্সেন ওয়েঙ্গার, আর্সেনাল) ও একজন পর্তুগীজ (জোসে মরিনহো, চেলসি)। দু’জন ইংরেজ ম্যানেজার প্রিমিয়ারশিপে অবশ্য দ্বিতীয় স্থান লাভে সমর্থ হয়েছেন। এরা হলেন রয় এটকিনসন (অ্যাস্টন ভিলা, ১৯৯৩ সালে) ও কেভিন কিগান (নিউকাসল ইউনাইটেড, ১৯৯৬ সালে)।
একটি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে খেলোয়াড় কেনার রেকর্ড পরের কোন মৌসুমে ভেঙ্গে দেয়া বর্তমানে চল হয়ে দেখা দিয়েছে। লিগের শুরুর দিকে এই প্রবণতা বেশি ছিল। তবে একুশ শতকের শুরুতে আবার এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রথম পাঁচটি ট্রান্সফার রেকর্ড একবছরের বেশি স্থায়ী হয় নি। ডেনিস বার্গক্যাম্পের রেকর্ড একমাস স্থায়ী ছিল। অ্যালান শিয়ারারের রেকর্ড ইংল্যান্ডে পাঁচ বছর স্থায়ী ছিল, যদিও একবছরের মাথায় বিশ্বরেকর্ডটি ভেঙ্গে যায়। রিও ফার্ডিনান্ডের রেকর্ড প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়েছে। ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে আন্দ্রে শেভচেঙ্কোর ৩০ থেকে ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ডের মধ্যবর্তী কোন অজানা অঙ্কের বিনিময়ে এসি মিলান থেকে চেলসিতে আগমনের পর নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়। প্রিমিয়ার লিগ স্থাপনের ১৫ বছরের মাথায় এ পর্যন্ত ১১ বার রেকর্ড ট্রান্সফার সংঘটিত হয়েছে।
ফুটবল লিগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে অনেক প্রিমিয়ার লিগের দল নিচের বিভাগের দলগুলোর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। এর একটি মূল কারণ এসব লিগের মধ্যে টেলিভিশন প্রচারস্বত্ত্বের অসম ব্যবধান।[৩১] এ কারণে নতুন প্রিমিয়ার লিগে আগত দলগুলো প্রথম মৌসুমে সাধারণত রেলিগেশন এড়াতে পারে না। ২০০১-০২ মৌসুম ছাড়া বাকী সকল মৌসুমেই প্রিমিয়ারশিপে নবাগত অন্তত একটি দল রেলিগেশনের আওতায় পড়ে আবার ফুটবল লিগে ফেরত গেছে। ১৯৯৭-৯৮ সালে প্রিমিয়ারশিপে উন্নীত তিনটি দলই ফুটবল লিগে নেমে গেছে।
যেসমস্ত দল প্রিমিয়ারশিপ থেকে রেলিগেশনের খপ্পরে পড়ে, তাদেরকে লিগে প্রাপ্ত টেলিভিশন স্বত্ত্বের কিছু অংশ "প্যারাসুট পেমেন্ট" এর ধরনে দেয়া হয়। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে চালু হওয়া এই অর্থের পরিমাণ ৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ড যা তাদের নিম্ন লিগের প্রথম দু’বছর দেয়া হবে।[৩১] যদিও টেলিভিশন থেকে প্রাপ্ত আয় পুষিয়ে নিতে এই অর্থ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে (গড়ে প্রিমিয়ার লিগের দল পায় ২৮ মিলিয়ন পাউন্ড যেখানে চ্যাম্পিয়নশিপের দল গড়ে পায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড) [৩১]),তবুও সমালোচকরা মনে করেন এই পরিমাণ যেসকল দল প্রিমিয়ারশিপে খেলে আর যারা খেলতে পারে না তাদের মধ্যবর্তী ব্যবধান বাড়াচ্ছে। [৩২]। কারণ রেলিগেশন হওয়ার পরবর্তী বছরে আবার তাদের প্রিমিয়ারশিপে ফেরত আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিছু দল আছে যে তার এত বেশি রেলিগেশন এবং প্রমোশন পায় যে তাদের কে বলা হয় "ইয়ো-ইয়ো (yo-yo)" দল।
প্রিমিয়ার লিগের এ পর্যন্ত সবকটি আসরের বিজয়ীর তালিকা ও শীর্ষ গোলদাতার তালিকা দেখুন ইংলিশ ফুটবল শিরোপাধারী।
নিচের ১৯টি দল ২০০৭-০৮ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাকি একটি দল প্লে-অফ খেলার মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।
দল |
২০০৬-০৭ মৌসুমে অবস্থান |
শীর্ষ বিভাগে প্রথম মৌসুম |
শীর্ষ বিভাগে অবস্থানের ধারায় প্রথম মৌসুম |
---|---|---|---|
আর্সেনাল [৩৩][৩৪] | ৪র্থ | ১৯০৪–০৫ | ১৯১৯–২০ |
এস্টন ভিলা [৩৩][৩৪] | ১১তম | ১৮৮৮–৮৯ | ১৯৮৮–৮৯ |
বার্মিংহাম সিটি [৩৪] | চ্যাম্পিয়নশিপে ২য় | ১৮৯৩–৯৪ | ২০০৭–০৮ |
ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স [৩৪] | ১০ম | ১৮৮৮–৮৯ | ২০০১–০২ |
বোল্টন ওয়ান্ডারার্স | ৭ম | ১৮৮৮–৮৯ | ২০০১–০২ |
চেলসি [৩৩][৩৪] | ২য় | ১৯০৭–০৮ | ১৯৮৯–৯০ |
এভারটন [৩৩][৩৪] | ৬ষ্ঠ | ১৮৮৮–৮৯ | ১৯৫৪–৫৫ |
ফুলহ্যাম | ১৬তম | ১৯৪৯–৫০ | ২০০১–০২ |
লিভারপুল [৩৩][৩৪] | ৩য় | ১৮৯৪–৯৫ | ১৯৬২–৬৩ |
ম্যানচেস্টার সিটি [৩৪] | ১৪তম | ১৮৯৯–১৯০০ | ২০০২–০৩ |
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড [৩৩][৩৪] | ১ম | ১৮৯২–৯৩ | ১৯৭৫–৭৬ |
মিডলসব্রো [৩৪] | ১২তম | ১৯০২–০৩ | ১৯৯৮–৯৯ |
নিউক্যাসল ইউনাইটেড | ১৩ম | ১৮৯৮–৯৯ | ১৯৯৩–৯৪ |
পোর্টসমাউথ | ৯ম | ১৯২৭–২৮ | ২০০৩–০৪ |
রিডিং | ৮ম | ২০০৬–০৭ | ২০০৬–০৭ |
সান্ডারল্যান্ড [৩৪] | চ্যাম্পিয়নশিপে ১ম | ১৮৯০–৯১ | ২০০৭–০৮ |
টোটেনহাম হটস্পার [৩৩][৩৪] | ৫ম | ১৯০৯–১০ | ১৯৭৮–৭৯ |
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড | ১৫তম | ১৯২৩–২৪ | ২০০৫–০৬ |
উইগান এথলেটিক | ১৭তম | ২০০৫–০৬ | ২০০৫–০৬ |
২০০৬-০৭ সালের যে দলগুলো প্লে-অফে অংশ নেবে তারা হলো ডার্বি কাউন্টি (চ্যাম্পিয়নশিপে ৩য়), ওয়েস্ট ব্রম (৪র্থ), উলভারহ্যাম্পটন (৫ম) ও সাউদাম্পটন (৬ষ্ঠ)।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত সর্বমোট ৭টি ক্লাব প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জয়লাভ করেছে; যার মধ্যে ৪টি ক্লাব একাধিকবার জয়লাভ করেছে। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব হচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, যারা এপর্যন্ত ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, যারা এপর্যন্ত ৭ বার এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ক্লাব চেলসি, যারা এপর্যন্ত ৫ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে।
|
|
|
অবস্থান | খেলোয়াড় | গোলসংখ্যা |
---|---|---|
১ | ![]() | ২৬০ |
২ | ![]() | ১৯৮ |
৩ | ![]() | ১৮৭ |
৪ | ![]() | ১৭৭ |
৫ | ![]() | ১৭৫ |
৬ | ![]() | ১৬৩ |
৭ | ![]() | ১৫৮ |
৮ | ![]() | ১৫০ |
৯ | ![]() | ১৪৯ |
১০ | ![]() | ১৪৬ |
এ তালিকা ২১ মে২০১৭ পর্যন্ত (মোটা হরফে লিখিত খেলোয়াড়েরা এখনও প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন)[৩৫] |
সাবেক ব্ল্যাকবার্ন রোভারস এবং নিউক্যাসল ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়ারার ২৬০ গোল করে সর্বোচ্চ প্রিমিয়ারশিপ গোলের রেকর্ডধারী। শিয়ারার তার খেলা ১৪ মৌসুমের ১০টিতেই শীর্ষ দশ গোলদাতার তালিকায় থেকেছেন এবং তিনবার শীর্ষ গোলদাতার খেতাব জিতেছেন।
১৯৯২–৯৩ থেকে চালু হওয়া প্রিমিয়ার লিগে এগারজন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় শীর্ষ গোলদাতার খেতাব জিতেছেন। ২০০৫-০৬ সালে থিয়েরি অঁরি ২৭ গোল করে টানা তৃতীয় বারের মত শীর্ষ গোলদাতার খেতাব জিতেছেন। শিয়ারারও অবশ্য টানা তিনবার শীর্ষ গোলদাতা হয়েছিলেন (১৯৯৪-৯৫ থেকে ১৯৯৬-৯৭ পর্যন্ত)। অন্যান্য একাধিক বার হওয়া শীর্ষ গোলদাতারা হলেন মাইকেল ওয়েন ও জিমি ফ্লয়েড হ্যাসলবেইঙ্ক, উভয়ে দু’বার এ খেতাব জিতেছেন। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৪ গোলের রেকর্ড করেছেন এন্ড্রু কোল নিউক্যাসলের পক্ষে ও অ্যালান শিয়ারার ব্ল্যাকবার্নের পক্ষে। কোলের রেকর্ড হয়েছে ১৯৯৩–৯৪ মৌসুমে, শিয়ারারের ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে। দুটিতেই ছিল ৪২টি করে খেলা (২২টি দলের অংশগ্রহণে)। পরবর্তীতে দলের সংখ্যা কমে ২০টি ও খেলার সংখ্যা কমে ৩৮টি হয়। ৩৮ খেলার মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেন শিয়ারার ৩১ টি গোল করে, ১৯৯৫–৯৬ মৌসুমে।
প্রিমিয়ারশিপে ১,০০০ দলীয় গোল করার মাইলফলক প্রথম স্থাপন করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০০৫-০৬ মৌসুমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এই গোলটি করেন। অবশ্য খেলায় তারা মিডলসব্রোর কাছে ৪-১ গোলে পরাজিত হয়। অন্য যে একটিমাত্র দল ১,০০০ গোলের মাইলফলক ছুতে পেরেছে তারা হচ্ছে আর্সেনাল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.