Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইলিয়াম হাইড ওলাস্টোন PRS এফআরএস (/ˈwʊləstən/; ৬ আগস্ট ১৭৬৬ – ২২ ডিসেম্বর ১৮২৮) একজন ইংরেজ রসায়নবিদ এবং পদার্থবিদ। তিনি রাসায়নিক মৌল প্যালাডিয়াম এবং রোডিয়াম আবিষ্কার করার জন্য বিখ্যাত। তিনি প্ল্যাটিনাম আকরিক থেকে নমনীয় ধাতুপিন্ড প্রক্রিয়াকরণের একটি উপায়ও উদ্ভাবন করেছিলেন। [১]
উইলিয়াম হাইড ওলাস্টোন PRS | |
---|---|
জন্ম | ইষ্ট ডারহাম, নরফোক, ইংলন্ড | ৬ আগস্ট ১৭৬৬
মৃত্যু | ২২ ডিসেম্বর ১৮২৮ ৬২) চিসলেহার্স্ট, ইংলন্ড | (বয়স
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | গনভিলে এবং কায়স কলেজ, কেমব্রিজ |
পরিচিতির কারণ | প্যালাডিয়াম, রোডিয়াম, ক্যামেরা লুসিডা, সৌর বর্ণালীতে গাঢ় রেখার আবিষ্কারক |
পুরস্কার | কোপলে পদক (১৮০২) রয়্যাল পদক (১৮২৮) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন পদার্থবিদ্যা |
তিনি জন্মে ছিলেন ইষ্ট ডারহাম এর নরফোক এ। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান অপেশাদার জ্যোতির্বিদ ফ্রান্সিস ওলাস্টোন (১৭৩৭–১৮১৫) এর পুত্র এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল আলিথা হাইড। তিনি ১৭ সন্তানের একজন হলেও পরিবারটি আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল এবং তাঁর যথাযথ বৌদ্ধিক বিকাশ উপযোগী পরিবেশ তিনি পেয়েছিলেন। ১৭৭৪ থেকে ১৭৭৮ সালে তিনি বেসরকারীভাবে (প্রত্যন্ত অঞ্চলের) চার্টারহাউস স্কুল এ পড়াশুনা করেছিলেন। তারপর কেমব্রিজের গনভিলে এবং কায়স কলেজ এ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। ১৭৯৩ সালে তিনি মেডিসিন এ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট (এমডি) অর্জন করেন এবং ১৭৮৭ থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত তাঁর কলেজের ফেলো ছিলেন।[১]
১৭৯৭ সালে লন্ডন এ চলে আসার আগে [১] তিনি ১৭৮৯ থেকে হান্টিংডন এ চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং তারপরে বারি সেন্ট এডমান্ডস এ চলে আসেন।[২] অধ্যয়নকালে ওলাস্টোন রসায়ন, স্ফটিকবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা এবং পদার্থবিজ্ঞান এর প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮০০ সালে তিনি তাঁর এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণের পরে তিনি চিকিৎসা জীবন ত্যাগ করেন এবং তাঁর প্রশিক্ষিত বৃত্তির বাইরে রসায়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে তাঁর আগ্রহ অনুসরণে মনোনিবেশ করেন।
তিনি ১৭৯৩ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। সেখানে তিনি প্রভাবশালী সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৮২০ সালে তিনি এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] ১৮২২ সালে তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর একজন বিদেশি সম্মানীয় সদস্য নির্বাচিত হন। [৩]
ওলাস্টোন কখনও বিয়ে করেননি। ১৮২৮ সালে তিনি লন্ডন এ মারা যান এবং তাঁর বাবার সাথে তাঁকে সমাহিত করা হয়[৪] ইংল্যান্ডের চিসলেহার্স্ট এর সেন্ট নিকোলাস চার্চইয়ার্ডে।[১]
রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করার জন্য ১৮০০ সালে স্মিথসন টেন্যান্ট এর সাথে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওলাস্টোন ব্যবহারিক পরিমাণে প্ল্যাটিনাম আকরিক প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করে ধনী হয়ে ওঠেন। এই প্রক্রিয়াকরণের জন্য তিনি প্রথম ভৌত-রাসায়নিক পদ্ধতির বিকাশ সাধন করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটির বিবরণ গোপন রেখেছিলেন। প্রায় ২০ বছর ধরে ইংল্যান্ডের একমাত্র সরবরাহকারী থাকার কারণে এবং পণ্যটি সোনার মতো একই গুণাবলীর অধিকারী অথচ অনেক সস্তা হওয়ায় প্রচুর লাভ করেছিলেন। [১]
প্ল্যাটিনাম পরিশোধিত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত রাসায়নিক বিশ্লেষণের সময় ১৮০২ সালে ওলাস্টোন প্যালাডিয়াম (প্রতীক Pd) এবং ১৮০৪ সালে রোডিয়াম (প্রতীক Rh) আবিষ্কারে নেতৃত্ব দেন। [১]
অ্যান্ডারস গুস্তাভ একেবার্গ ১৮০২ সালে ট্যান্টালাম আবিষ্কার করেন। তবে ওলাস্টোন ঘোষণা করেন যে এটি নিওবিয়াম (তখন কলম্বিয়াম হিসাবে পরিচিত) এর সাথে অভিন্ন। পরে হেইনরিজ রোজ ১৮৪৬ সালে প্রমাণ করেছিলেন যে কলম্বিয়াম এবং ট্যান্টালাম আসলে আলাদা উপাদান এবং তিনি কলম্বিয়ামের নামকরণ করেছিলেন "নিওবিয়াম"। (নিওবিয়াম এবং ট্যানটালাম একই পর্যায়সারণী গ্রুপ এ থাকে এবং রাসায়নিকভাবে তারা অনুরূপ))।
ক্রিস্টালোগ্রাফি এবং খনিজ বিশ্লেষণে অবদান রাখার জন্য পরে খনিজ ওলাস্টোনেট নামকরণ করা হয় ওলাস্টোনের নামে।[১]
ওলাস্টোন বিদ্যুৎ এও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। ১৮০১ সালে তিনি একটি পরীক্ষায় দেখিয়েছিলেন যে ঘর্ষণ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ভোল্টাইক পাইল দ্বারা উৎপাদিতর অনুরূপ।[৫] জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি বৈদ্যুতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। এরই ফলে মাইকেল ফ্যারাডে এর বৈদ্যুতিক মোটর এর শেষ নকশার ১০ বছর পূর্বে আকস্মিকভাবে তাঁর বৈদ্যুতিন চৌম্বকীয় আবেশ আবিষ্কৃত হয়েছিল। ফ্যারাডে তাঁর প্রথম কার্যকরী বৈদ্যুতিক মোটর নির্মাণ করে ওলাস্টোনের আগের কাজটির স্বীকৃতি না দিয়েই তাঁর ফলাফল প্রকাশ করেন। রয়্যাল সোসাইটির কাছে ওলাস্টোনের একটি মোটর প্রদর্শন ব্যর্থ হয়েছিল। তবুও যে কাগজে তাঁর আগের কাজের জন্য হ্যামফ্রি ডেভি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন সেই একই কাগজে ফ্যারাডের "বুদ্ধিমান" পরীক্ষাগুলির প্রশংসাও করেছিলেন।[৬] ওলাস্টোন এমন একটি ব্যাটারিও আবিষ্কার করেছিলেন যাতে জিংক প্লেটগুলিকে অ্যাসিড থেকে বের করে আনত এবং জিংকটিকে দ্রুত দ্রবীভূত হতে দিত না।
তাঁর অপটিক্যাল সম্পর্কীয় কাজও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে ক্ষেত্রে সৌর বর্ণালীর (১৮০২) অন্ধকার ফাঁকগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি স্মরণীয়।[৭][৮] এর দ্বারা অবশেষে সূর্যের নির্দিষ্ট উপাদানগুলির সনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছিল। তিনি ক্যামেরা লুসিডা (১৮০৭) আবিষ্কার করেছিলেন যার মধ্যে ওলাস্টোন প্রিজম রয়েছে (চার দিকের অপটিক্স যার সম্পর্কে প্রথমে মূলত কেপলার বর্ণনা করেছিলেন) [৯] এবং প্রতিফলিত গনিওমিটার (১৮০৯)। তিনি ১৮১২ সালে মেনিসকাস লেন্স নামে বিশেষ করে ক্যামেরার লেন্সের জন্য প্রথম লেন্স তৈরি করেন। ক্যামেরা অবস্কুরা দ্বারা অভিক্ষিপ্ত চিত্র উন্নত করার জন্য এই লেন্সটি তৈরি করা হয়েছিল। তখনকার দিনে দ্বিঅবতল লেন্স এর বেশিরভাগের যে বিকৃতি সমস্যা ছিল তা দূর করতে লেন্সের আকার পরিবর্তন করে ওলাস্টোন অভিক্ষিপ্ত চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ওলাস্টোন একটি ক্রিওফোরাসও তৈরি করেছিলেন। "এটি তরল জল এবং জলীয় বাষ্প থাকা একটি কাচের পাত্র। বাষ্পীভবন দ্বারা দ্রুত হিমায়ণ প্রদর্শনের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে এটি ব্যবহৃত হয়।"[১০] ১৮০৫ সালে শক্তির নিত্যতার প্রথম দিকের গঠন সম্পর্কে গটফ্রিড লিবিঞ্জ এর ভিস ভিভা নীতির পক্ষ অবলম্বন করে অন দ্য ফোর্স অফ পার্কাসন শিরোনামে তিনি তাঁর বাকেরিয়ান বক্তৃতা প্রদান করেন।
ওলাস্টোনের ডায়াবেটিস সম্পন্ন রক্তের সিরামে শর্করার উপস্থিতি সনাক্তকরণে প্রাপ্ত সীমিত মাধ্যমের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। তাঁর ১৮১১ সালের পত্র "ডায়াবেটিস মেলিটাসের অধীনে শ্রম করা ব্যক্তিদের রক্তে চিনির অনুপস্থিতি বিষয়ে"[১১] সিদ্ধান্ত টেনেছেন যে শর্করা রক্ত প্রবাহে না প্রবেশ করেই পাকস্থলী থেকে সরাসরি লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে বৃক্কে চলে যায়। ওলাস্টোন এই তত্বকে সমর্থণ করতে উল্লেখ করেন তখনকার এডিনবার্গের এক অল্প বয়স্ক মেডিকেল শিক্ষার্থী চার্লস ডারউইন (১৭৫৮-১৭৭৮)) এর গবেষণাপত্রটির। গবেষণা পত্রটির নাম "মিউকাজিনাস এবং পিউল্যান্ট পদার্থের মধ্যে একটি মানদণ্ড স্থাপনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কিছু কিছু রোগে প্রাণী দেহের বিশোষক কণার পশ্চাতমুখী গতির একটি বিবরণ"। [১২] এই চার্লস ডারউইন ছিলেন ইরাসমাস ডারউইন এর বড় ছেলে এবং তিনি তাঁর আরও বিখ্যাত ভাইপো চার্লস রবার্ট ডারউইন ছিলেন না।
ওলাস্টোন ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যে একবার যদি প্রাথমিক পরমাণুর তুলনামূলকভাবে ওজন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা হত দার্শনিকরা নিছক সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে প্রাথমিক কণাগুলি মহাকাশে কীভাবে স্থাপন করা হয়েছিল তার একটি জ্যামিতিক ধারণা অর্জন করতে চাইতেন। জ্যাকবাস হেনরিকাস ভ্যান 'টি হফ এর' লা 'চিমি ড্যানস এল এস্পেস'-এ এই ধারণাটির প্রথম ব্যবহারিক উপলব্ধি করা হয়েছিল।[১৩]
ওলাস্টোন রাজকীয় কমিশনের অংশ থাকায় ১৮১৪ সালে সাম্রাজ্যীয় গ্যালন গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি ১৮১৮ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে সরকারের দ্রাঘিমাংশ বোর্ড পদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন [১] এবং রাজকীয় কমিশন এর অংশ হিসাবে মেট্রিক পদ্ধতি (১৮১৯) গ্রহণের বিরোধিতা করেছিল। [১৪]
১৮২৮ সালে ওলাস্টোন তাঁর চূড়ান্ত বাকেরিয়ান বক্তৃতা দেওয়ার পক্ষে খুব অসুস্থ ছিলেন এবং সেটি হেনরি ওয়ারবার্টন কে অর্পণ করলে তা ওয়ারবার্টন ২০ নভেম্বর পাঠ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.