Remove ads

সুকেন্দ্রিক জীব বা ইউক্যারিওট (eukaryote) বলতে সেই সমস্ত জীবকে বোঝানো হয়ে থাকে যাদের কোষের নিউক্লিয়াস ও অন্যান্য অঙ্গাণু জৈব পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে।

দ্রুত তথ্য বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ...
সুকেন্দ্রিক জীব
সময়গত পরিসীমা: রায়াসিয়ান - বর্তমান
Thumb
বিভিন্ন বৈচিত্র্যের সুকেন্দ্রিক জীব
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
ক্ষেত্র: ইউক্যারিওটা
(এডোয়ার্ড স্যাটন, ১৯২৫) রবার্ট হুইটাকারলিন মার্গুলিস, ১৯৭৮
মহাদল[১]জগৎ
  • আর্কিপ্লাস্টিডা
  • এসএআর (স্ট্র্যামেনোপাইলস + অ্যালভিওলাটা + রিজারিয়া)
  • এক্সক্যাভেটা
  • ওপিস্থোকোন্ট

যে সমস্ত জীবকে উদ্ভিদ, প্রাণী বা ছত্রাক জগতের মধ্যে শ্রেণীভুক্ত করা যায় না, তাদের অনেক সময় প্রোটিস্টা জগতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বন্ধ

এই জীবগুলি ইউক্যারিয়া বা ইউক্যারিওটা শ্রেণিবিন্যাসের অন্তর্গত। এই জীবদের মূল বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এদের কোষে পর্দা-বেষ্টিত নিউক্লিয়াস সহ অন্যান্য অঙ্গাণু থাকে, যা প্রাক-কেন্দ্রিক জীবদের সঙ্গে এদেরকে পৃথক করে।[২][৩][৪] এই কোষে নিউক্লিয়াসের উপস্থিতির কারণে এই জীবদের নামকরণ ইউক্যারিওট দেওয়া হয়েছে, যা গ্রিক শব্দ ευ (ইউ) এবং κάρυον (ক্যারিওন) থেকে এসেছে।[৫] নিউক্লিয়াস ছাড়া আর যে সমস্ত পর্দা বেষ্টিত অঙ্গাণু এই কোষে থাকে, সেগুলি হল, মাইটোকন্ড্রিয়াগল্গি বস্তু। এছাড়া উদ্ভিদ জগতে ক্লোরোপ্লাস্ট নামক এক ধরনের অঙ্গাণু থাকে। সুকেন্দ্রিক জীব এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে। বহুকোষী জীবে বিভিন্ন ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত অনেক রকমের কলা থাকে।

সুকেন্দ্রিক জীব মাইটোসিসের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন এবং মিওসিসের মাধ্যমে যৌন প্রজনন করে থাকে। মাইটোসিসের ক্ষেত্রে একটি কোষ বিভক্ত হয়ে জিনগত ভাবে অভিন্ন দুইটি কোষ উৎপন্ন হয়। মিওসিসের ক্ষেত্রে কোষে ডিএনএ রেপ্লিকেশন ও তার পরে দুই বারে কোষ বিভাজনের ফলে চারটি নতুন কোষ উৎপন্ন হয়, যাদের প্রত্যেকের মূল কোষের ক্রোমোজোমের থেকে অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমজোম থাকে। মিওসিসের ফলে উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষগুলি জননকোষ হিসেবে কাজ করে থাকে।

সমগ্র জীবজগতের তুলনায় সুকেন্দ্রিক জীবদের সংখ্যা নগণ্য বললেই চলে,[৬] এমনকি মানবদেহের সমস্ত কোষের সংখ্যা মানব অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যার চেয়ে কম।[৭] কিন্তু সুকেন্দ্রিক জীবদের অধিকাংশ সদস্যের আকৃতি বড় হওয়ার কারণে সারা বিশ্বজুড়ে তাদের সমষ্টিগত জৈবভর প্রাক-কেন্দ্রিক জীবের মোটামুটি সমান বলা চলে।[৮]

Remove ads

বৈশিষ্ট্য

সুকেন্দ্রিক কোষগুলি প্রাক-কেন্দ্রিক কোষগুলির তুলনায় অনেকটাই বড় হয়। এই কোষে অন্তঃপর্দা যুক্ত বিভিন্ন অঙ্গাণু এবং মাইক্রোটিবিউল, মাইক্রোফিলামেন্টইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট দ্বারা গঠিত কোষ-কঙ্কাল বর্তমান। এই কোষের ডিএনএ কুন্ডলীকৃত অবস্থায় ক্রোমোজোম গঠন করে, যেগুলি নিউক্লিয়ার বিভাজনের সময় বিভক্ত হয়ে পৃথক হয়ে যায়।

অন্তঃপর্দা

Thumb
সুকেন্দ্রিক কোষের অন্তঃপর্দা তন্ত্র

সুকেন্দ্রিক কোষগুলিতে পর্দা বেষ্টিত কাঠামো বর্তমান যাদেরকে সমষ্টিগত ভাবে অন্তঃপর্দা তন্ত্র বলা হয়ে থাকে।[৯] কোষের নিউক্লিয়াস নিউক্লিয়ার পর্দা নামক একটি অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত দ্বিস্তরীয় অন্তঃপর্দা দ্বারা বেষ্টিত থাকে, যার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন কোষীয় উপাদান নিউক্লিয়াসের ভেতরে বা বাইরে যেতে পারে। এই পর্দা থেকে বিভিন্ন চ্যাপ্টাকৃতি ও নলাকৃতি অংশ এন্ডোপ্লাজনিক রেটিকুলাম গঠন করে, যা কোষের প্রোটিন পরিবহনে সহায়তা করে। রাইবোজোম নামক অঙ্গাণু এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রোটিন তৈরি করে। উৎপন্ন প্রোটিন এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের মধ্যে প্রবেশ করে ভেসিকল বা ক্ষুদ্র থলির মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে গল্গি বস্তু নামক চ্যাপ্টা থলির মতো আকৃতি বিশিষ্ট অঙ্গাণুতে জমা হয় ও পুনর্গঠিত হয়।

বিভিন্ন ধরনের ভেসিকলে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে। যেমন, লাইসোজোমে অবস্থিত উৎসেচক প্রোটিন ভেঙ্গে সরল অণুতে পরিণত করতে সহায়তা করে। পারক্সিজোম নামক ভেসিকল কোষের পক্ষে ক্ষতিকারক পারক্সাইড ভেঙ্গে ফেলে। কিছু প্রোটোজোয়ার কোষে এক্সট্রুজোম নামক সংকোচনশীল ভেসিকল থাকে যেগুলি কোষের অতিরিক্ত জল কোষের বাইরে নিক্ষেপ করতে সহায়তা করে। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদের কোষের অধিকাংশ আয়তন একটি বৃহদাকৃতি ভ্যাকুওল বা বায়ুথলি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে যা কোষের অভিস্রবণ চাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে।

মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্ট

Thumb
মাইটোকন্ড্রিয়ারস সরলীকৃত গঠন

প্রায় সমস্ত সুকেন্দ্রিক কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গাণু অবস্থান করে। এই অঙ্গাণুগুলি অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট নামক অণু উৎপন্ন করে কোষের শক্তি সরবরাহ করে থাকে।[১০] এই অঙ্গাণুগুলি দ্বি-স্তরযুক্ত লিপিড অণু দ্বারা গঠিত পর্দা দ্বারা বেষ্টিত থাকে যার ভেতরের স্তর মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরে ক্রিস্টি নামক ভাঁজ সৃষ্টি করে। মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ থাকে। মনে করা হয়ে থাকে যে, প্রোটিওব্যাক্টেরিয়া নামক এক প্রকার অন্তঃমিথোজীবি প্রাক-কেন্দ্রিক জীব সুকেন্দ্রিক কোষে প্রবেশ করে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গাণুতে পরিণত হয়।

উদ্ভিদ ও বহু শৈবালের কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট নামক অঙ্গাণু থাকে, যা সায়ানোব্যাক্টেরিয়া নামক এক প্রকার অন্তঃমিথোজীবি প্রাক-কেন্দ্রিক জীব এই সকল কোষে প্রবেশ করায় গঠিত হয়। এই সকল অঙ্গাণুতে ক্লোরোফিল নামক এক ধরনের জৈব অণু থাকে যা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতি দ্বারা গ্লুকোজ উৎপন্ন করতে সহায়তা করে।

Remove ads

প্রজনন

সুকেন্দ্রিক কোষের অযৌন কোষ বিভাজন মাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে যেখানে প্রতি অপত্য নিউক্লিয়াস মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের একটি করে সমসংখ্যক ও সমগুণসম্পন্ন প্রতিলিপি লাভ করে। অধিকাংশ সুকেন্দ্রিক কোষে মিওসিস পদ্ধতির মাধ্যমে যৌন প্রজনন হয়ে থাকে, যেখানে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি উপর্যুপরি দুবার বিভাজিত হলেও ক্রোমোসোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার, ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।

যৌন প্রজননের বিবর্তন প্রতি সুকেন্দ্রিক জীবের প্রাচীন ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়। ড্যাক্স ও রজারের মতে, প্রথম দিকের সুকেন্দ্রিক জীবদের মধ্যে ঐচ্ছিক প্রজননের ভূমিকা ছিল।[১১] পূর্বে অযৌন প্রাণীরূপে চিহ্নিত ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিসজিয়ার্ডিয়া ইন্টেস্টিনালিসের দেহে মিওসিসের জন্য দায়ী জিন অবস্থিত।[১২][১৩] সুকেন্দ্রিক জীবের বিবর্তনের প্রথম দিকেই আলাদা হয়ে যাওয়া প্রাণীদের উত্তরসূরী হিসেবে এই দুইটি প্রজাতির জিনে এই বৈশিষ্ট্য থাকায় সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে, যৌন জনন সুকেন্দ্রিক জীবদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের মধ্যে বর্তমান ছিল।[১২][১৩] এছাড়া পূর্বে অযৌন প্রাণীরূপে চিহ্নিত লিসম্যানিয়া গণের পরজীবী প্রোটোজোয়া এবং অ্যামিবা ইত্যাদি প্রাণীতেও সুদূর অতীতে যৌন প্রজননের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং মনে করা হয় বর্তমানে এই সকল জীবের অযৌন প্রজননের ক্ষমতা সাম্প্রতিককালে স্বাধীনভাবে গড়ে উঠেছে।[১৪]

Remove ads

শ্রেণিবিন্যাস

লিনিয়াস প্রাণীউদ্ভিদকে জগৎ নামক শ্রেণীবিনাসের ক্রমে স্থান দিয়েছিলেন। যদিও তিনি খুব সাবধানে ছত্রাককেও উদ্ভিদের অন্তর্গত করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে স্পষ্ট হয় যে, ছত্রাক উদ্ভিদ অপেক্ষা অনেকাংশে ভিন্ন এবং একে অন্য একটি পৃথক জগতের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।[১৫] বিভিন্ন এককোষী সুকেন্দ্রিক জীবদের প্রাণী বা উদ্ভিদের মধ্যে স্থান দেওয়া হয়। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে, জার্মান জীববিজ্ঞানী গেওর্গ অগস্ট গোল্ডফাস সিলিয়া যুক্ত প্রাণীদের সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রোটোজোয়া নামক একটি নতুন শব্দ প্রণয়ন করেন এবং এই দলের সদস্যদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে পেতে একসময় সকল এককোষী সুকেন্দ্রিক জীবকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আর্নেস্ট হেকেল এই সকল জীবদের প্রোটিস্টা নামক এক নতুন জগতের অন্তর্ভুক্ত করেন।[১৬][১৭] প্রোটিস্টদের আদিম জীব হিসেবে মনে করা হত যাদের সকলের আদিম এককোষী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।[১৭]

জীবনবৃক্ষে নিউক্লিক অ্যাসিড ক্রমের ওপর নির্ভর করে সুকেন্দ্রিক অধিজগতকে বিভিন্ন সুকেন্দ্রিক জগতে বিভক্ত করা হয়।[১৮] ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব প্রোটিওলোজিস্টস সুকেন্দ্রিক অধিজগৎকে ছয়টি মনোফাইলি মহাদলে বিভক্ত করে।[১৯] কিন্তু এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি, বিশেষতঃ ক্রোম্যালভিওলাটা, প্রকৃতপক্ষে মনোফাইলি কি না তা নিয়ে সেই বছরই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়,[২০] এবং ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে এই সংক্রান্ত প্রমাণের অভাবকে উল্লেখ করা হয়।[২১] ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের একটি শ্রেণিবিভাগে[১] সুকেন্দ্রিক অধিজগতকে পাঁচটি মহাদলে বিভক্ত করা হয়।

আর্কিপ্লাস্টিডাএম্ব্রায়োফাইট, সবুজ শৈবাল, লাল শৈবালগ্লকোফাইট
এসএআর মহাদলস্ট্র্যামেনোপাইলস, অ্যালভিওলাটারিজারিয়া
এক্সক্যাভেটাফ্ল্যাজেলা যুক্ত প্রোটোজোয়া
অ্যামিবোজোয়াঅ্যামিবয়েড জীব
ওপিস্থোকোন্টপ্রাণী, ছত্রাক, কোয়ানোফ্ল্যাজেলেট ইত্যাদি

সুকেন্দ্রিক জীবদের কিছু ছোট ছোট বিভাগ রয়েছে, যাদের অবস্থান নির্ণয় করা যায় নি এবং এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বাইরে অবস্থান বলে মনে করা হয়,[২২] যেমন হ্যাপ্টোফাইটা, ক্রায়োফাইটা, টেলোনেমিয়া, পিকোজোয়া[২৩], আপুসোমোনাডিডা, অ্যাঙ্কাইরোমোনাডিডা, ব্রেভিয়াটাকোলোডিক্টায়ন গণ।[২৪] যদিও অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু মনে করা হয়ে থাকে বিবর্তনের ইতিহাস ও শ্রেণিবিভাগে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে রজার ও সিম্পসন বলেন যে, সুকেন্দ্রিক জীবেদের জীবনবৃক্ষ সম্বন্ধে আমাদের বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল ধারণার কারণে আমাদের সাবধানে এগোনো প্রয়োজন।[২৫]

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে রিজারিয়া এবং স্ট্র্যামেনোপাইলসঅ্যালভিওলাটা মহাদলগুলিকে এসএআর মহাদল নাম দিয়ে একই পংক্তিতে রাখা হয়; একই ভাবে অ্যামিবোজোয়াওপিস্থোকোন্ট প্রত্যেকেই মনোফাইলি হলেও এরা ইউনিকোন্ট নামক ক্লেড গঠন করে।[২৬][২৭][২৮][২৯][৩০] এগুলি বাদ দিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্যের প্রচুর অবকাশ রয়েছে। মনে করা হয়েছে যে, সুকেন্দ্রিক জীবেদের ৭৫টি পৃথক বংশানুক্রম রয়েছে।[৩১]

সুকেন্দ্রিক হীবদের পরিচিত জিনোমের আকার ৮.২ মেগাবেস (ব্যাবেসিয়া বোভিস) থেকে শুরু করে ১১২,০০০–২২০,০৫০ (প্রোরোসেন্ট্রাম মাইক্যান্স) পর্য্যন্ত পাওয়া গেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে বিবর্তনে সুকেন্দ্রিক জীবের বহুল প্রকারে বিবর্তন ঘটেছে।[৩১]

পাঁচটি মহাদল

অ্যাডল[১] ও বার্কি[২২] ফাইলোজেনেটিক প্রমাণ, জিন স্বাক্ষর এবং অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্যের সহমতের ভিত্তিতে সুকেন্দ্রিক জীবের জীবনবৃক্ষ রচনা করেছেন।

ইউক্যারিওট
ডায়াফোরেটিক্স

আর্কিপ্লাস্টিডা

এসএআর

স্ট্র্যামেনোপাইলস

অ্যালভিওলাটা

রিজারিয়া

এক্সক্যাভেটা

অ্যামর্ফিয়া

অ্যামিবোজোয়া

ওপিস্থোটোকোন্ট

কয়েকটি বিশ্লেষণে হ্যাক্রোবিয়া দলটিকে (হ্যাপ্টোফাইটা + ক্রায়োফাইটা) আর্কিপ্লাস্টিডা মহাদলের পাশে [২৬] আবার কয়েকটিতে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়।[৩২] আবার, সাম্প্রতিককালের কিছু গবেষণা থেকে সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে, হ্যাপ্টোফাইটাক্রায়োফাইটা একই মনোফাইলি গঠন করে না।[৩৩] হ্যাপ্টোফাইটা এসএআর মহাদলের এবং ক্রায়োফাইটা আর্কিপ্লাস্টিডা মহাদলের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।[৩৪]

পূর্ব হতেই, দুইটি ফ্ল্যাজেলা ও একটি ফ্ল্যাজেলা যুক্ত দুই ধরনের পূর্বপুরুষেরর ওপর ভিত্তি করে সুকেন্দ্রিক জীবকে বাইকোন্ট (আর্কিপ্লাস্টিডা + এসএআর মহাদল + এক্সক্যাভেটা) এবং ইউনিকোন্ট (অ্যামিবোজোয়া + ওপিস্থোটোকোন্ট) নামক দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।[৩২][৩৫][৩৬] ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে এক গবেষণায় প্রায় একই ধরনের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছিল।[২৩]

ক্যাভেলিয়র-স্মিথ বৃক্ষ

২০১০[৩৭], ২০১৩[৩৮] ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে[৩৯] নিম্ন প্রকারে সুকেন্দ্রিক জীবের শ্রেণিবিভাগ করেন।

 Eukaryotes 

ইউগ্লেনোজোয়া

এক্সক্যাভেটা

কর্টিকাটা

উদ্ভিদ

ক্রোমিস্টা

পোডিয়েট

অ্যামিবোজোয়া

ওপিস্থোটোকোন্ট

অন্যান্য মত

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে রোগোজিন আর্কিওপ্লাস্টিডা ও অন্যান্য সুকেন্দ্রিক জীবের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি করেন।[৪০]

ইউক্যারিওট

আর্কিপ্লাস্টিডা

এক্সক্যাভেটা

এসএআর

ইউনিকোন্ট

অ্যামিবোজোয়া

ওপিস্থোটোকোন্ট

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের একটি গবেষণাপত্রে পূর্বের উপাত্তগুলিকে বিশ্লেষণ করে ও নতুন করে বিশ্লেষণ করে নিম্নের শ্রেণিবিভাগটি করা হয়।[৪১]

ইউক্যারিওট

অ্যামিবোজোয়া

ওপিস্থোটোকোন্ট

এক্সক্যাভেটা

লাল শৈবাল

গ্লকোফাইটা

এসএআর

সবুজ উদ্ভিদ

Remove ads

উৎপত্তি

জীবাশ্ম

জীবনের বিবর্তনের ইতিহাসে সুকেন্দ্রিক কোষের উৎপত্তি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির অন্যতম, কারণ এরপর থেকেই বিশ্বে জটিল কোষ ও বহুকোষী জীবদের উৎপত্তি সম্ভবপর হয়। যদিও এই উৎপত্তিকাল সঠিক ভাবে নির্ণয় করা কঠিন, কিন্তু অ্যান্ড্রিউ হারবার্ট নল ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে মত ব্যক্ত করেছেন যে, ১৬০ থেকে ২১০ কোটি বছর আগে এই ঘটনা ঘটে। কিছু কিছু অ্যাক্রিটার্ক জীবাশ্ম ১৬৫ কোটি বছর ও গ্রিপানিয়া জীবাশ্মটি ২১০ কোটি বছরের পুরোনো বলে জানা গেছে।[৪২]

গ্যাবনে প্রাপ্ত ২১০ কোটি বছরের পুরাতন কালো কাদাপাথরের প্যালিওপ্রোটেরোজোয়িক ফ্রান্সভিলিয়ান গঠনে সুগঠিত জীবিত কাঠামো পাওয়া গেছে।[৪৩] ১২০ কোটি বছর আগে লাল শৈবালের মত আধুনিক জীবদের জীবাশ্ম গঠিত হয়। বিন্ধ্য উপত্যকায় ফিলামেন্টযুক্ত শৈবালের জীবাশ্ম পাওয়া যায় যা, সম্ভবতঃ ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি বছরের পুরাতন।[৪৪]অস্ট্রেলিয়ার কাদাপাথরে স্টের‍্যানের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, সুকেন্দ্রিক জীব এই পাথরে ২৭০ কোটি বছর আগেও উপস্থিত ছিল।[৪৫][৪৬]

আর্কিয়ার সাথে সম্পর্ক

জিনগত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, ব্যাক্টেরিয়া অপেক্ষা সুকেন্দ্রিক জীব আর্কিয়ার সঙ্গে অধিক সম্পর্কযুক্ত, আবার কোষপর্দার উপাদানের মত অন্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে সুকেন্দ্রিক জীব ও ব্যাক্টেরিয়া কিছুটা অনুরূপ। সাধারণতঃ এর কারণ হিসেবে তিনটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

সুকেন্দ্রিক কোষের ক্রোনোসাইট প্রকল্প অনুযায়ী, সুকেন্দ্রিক কোষ ক্রোনোসাইট নামক এক ধরনের কোষের সঙ্গে আর্কিয়াব্যাক্টেরিয়ার অন্তঃমিথোজীবিত্বের ফলে সুকেন্দ্রিক কোষ উৎপন্ন হয়েছে।[৫২]

বিভিন্ন তত্ত্ব

সুকেন্দ্রিক কোষের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন ধরনের তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, যেগুলিকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় - স্বতোত্পাদন তত্ত্ব এবং কাইমেরা তত্ত্ব।

স্বতোত্পাদন তত্ত্ব

Thumb
সুকেন্দ্রিক কোষের উৎপত্তি সংক্রান্ত ক্রমিক অন্তঃমিথোজীবিত্ব তত্ত্ব

সুকেন্দ্রিক কোষের আন্তঃপর্দা তন্ত্র ও মাইটোকন্ড্রিয়ার উৎপত্তি সুস্পষ্ট নয়।[৫৩]

স্বতোত্পাদন তত্ত্ব অনুসারে, প্রথমে নিউক্লিয়াস যুক্ত একটি প্রাক-সুকেন্দ্রিক কোষের অস্তিত্ব ছিল, যা পরবর্তীকালে মাইটোকন্ড্রিয়া লাভ করে।[৫৪] এই তত্ত্ব অনুসারে, কোন বিশাল প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের ক্ষেত্রফল ও আয়তনের অনুপাত বৃদ্ধির জন্য কোষ পর্দায় ভাঁজের সৃষ্টি হয়, যার ফলে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গল্গি বস্তু, নিউক্লীয় পর্দা ইত্যাদি বিভিন্ন অন্তঃপর্দা তন্ত্র গড়ে ওঠে।[৫৫] এই সমস্ত কোষে ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বায়ুজীবী প্রোটিওব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করে ও ধীরে ধীরে অন্তঃমিথোজীবিত্বের কারণে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গাণুতে পরিণত হয়। এটিকে ফ্যাগোট্রোফিক প্রকল্প বলা হয়ে থাকে।[৫৬] যে সমস্ত কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া উপস্থিত ছিল না, তা ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যায়।[৫৭]

কাইমেরা তত্ত্ব

কাইমেরা তত্ত্ব অনুসারে, প্রথমে আর্কিয়াব্যাক্টেরিয়া এই দুই ধরনের প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের অস্তিত্ব ছিল, যেগুলি একে অপরের সঙ্গে অন্তঃমিথোজীবিত্বের ফলে যুক্ত হয়ে সুকেন্দ্রিক কোষ উৎপন্ন করে। পিসানি ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মত দেন যে, কোন কালেই মাইটোকন্ড্রিয়া-বিহীন সুকেন্দ্রিক কোষের অস্তিত্বের কোণ প্রমাণ নেই। তার মতে থার্মোপ্লাজমাটেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর্কিয়া এবং আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে মিথোজীবিত্বের ফলে সুকেন্দ্রিক কোষের সৃষ্টি হয়েছে এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোম আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়ার অন্তঃমিথোজীবিত্বের ফলাফল বিশেষ।[৫৮] কাইমেরা তত্ত্বকে ক্রমিক অন্তঃমিথোজীবিত্ব, হাইড্রোজেন তত্ত্ব এবং সিনট্রোফিক প্রকল্প এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

ক্রমিক অন্তঃমিথোজীবিত্ব তত্ত্ব

ক্রমিক অন্তঃমিথোজীবিত্ব তত্ত্ব অনুসারে, চলনশীল অবায়ুজীবী ব্যাক্টেরিয়া ও অম্ল ও গন্ধকযুক্ত আবহাওয়ায় বসবাসকারী ক্রেনার্কিয়ার সংযুক্তির ফলে সুকেন্দ্রিক কোষের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে অম্ল ও গন্ধক যুক্ত জলে বসবাসকারী জীবদের চলমান হতে সহায়তা করে। যে সমস্ত জীবের বিপাকীয় সরঞ্জাম নেই, অক্সিজেন তাদের পক্ষে ক্ষতিকর। এই সংযুক্তির ফলে আর্কিয়া ব্যাক্টেরিয়ার কোষে একটি বিজারক পরিবেশ সৃষ্টি করে যার ফলে সালফার ও অম্লের সালফেট বিজারিত হয়ে সালফাইড যৌগে পরিণত হয়। কম বায়ু যুক্ত পরিবেশে অক্সিজেন বিজারিত হয়ে জলে পরিণত হয় বলে ব্যাক্টেরিয়ার পক্ষে অক্সিজেন উপকারী রাসায়নিক উপাদান হিসেবে পরিণত হয়। অপরপক্ষে ব্যাক্টেরিয়া আর্কিয়ার চলমানতার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন গ্রাহক সরবরাহ করে। ব্যাক্টেরিয়াআর্কিয়ার ডিএনএ সংযুক্ত হয়ে সুপকেন্দ্রিক কোষের জিনোম সৃষ্টি করে।[৫৯][৬০][৬১][৬২] আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়াসায়ানোব্যাক্টেরিয়া অন্তঃমিথোজীবিত্বের ফলে এই সকল কোষে যুক্ত হয়ে যথাক্রমে মাইটোকন্ড্রিয়াক্লোরোপ্লাস্ট গঠন করে।

হাইড্রোজেন তত্ত্ব

হাইড্রোজেন তত্ত্ব অনুসারে, মিথেন উৎপাদক অবায়ুজীবী আর্কিয়ার কোষে বায়ুজীবী আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়া অন্তঃমিথোজীবিত্বের ফলে যুক্ত হয়ে সুকেন্দ্রিক কোষ সৃষ্টি করে। আর্কিয়া হাইড্রোজেনকার্বন ডাই অক্সাইড থেকে মিথেন প্রস্তুত করে, অন্যদিকে আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়া হাইড্রোজেনকার্বন ডাই অক্সাইডকে নিজ কোষ থেকে মুক্ত করে। এরফলে আর্কিয়ার মিথেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেনকার্বন ডাই অক্সাইড আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়া তার কোষ থেকে ক্ষতিকারক উপাদান হিসেবে বের করে দেয় বলে এই পরিবেশে আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়া থেকে জিন লাভ করে আর্কিয়া শর্করা বিপাকের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম লাভ করে ও ধীরে ধীরে এর মিথেন উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় ও কোষটি সুকেন্দ্রিক কোষে পরিণত হয়।[৬৩]

সিনট্রোফিক প্রকল্প

এই তত্ত্ব অনুসারে, সুকেন্দ্রিক কোষের উৎপত্তি একটি মিথেন উৎপাদক আর্কিয়া ও একটি ডেল্টাপ্রোটোব্যাক্টেরিয়ার বিপাকীয় মিথোজীবীত্বের ফলে ঘটে। অবায়ুজীবী পরিবেশে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে হাইড্রোজেনের আদান-প্রদানের ফলে এই মিথোজীবিত্ব তৈরি হয়। প্রথম দিকে আলফাপ্রোটিওব্যাক্টেরিয়া এই পদ্ধতির অংশীদার হয়ে ধীরে ধীরে মাইটোকন্ড্রিয়া অঙ্গাণুতে পরিণত হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া আত্মসাৎ করার পর মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনের সাহায্যে কোষ পর্দা সৃষ্টি হয়েছিল।[৬৪] ডেল্টাপ্রোটোব্যাক্টেরিয়া থেকে আর্কিয়াতে জিন আদান-প্রদানের ফলে মিথেন-উৎপাদক আর্কিয়া নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এরফলে আর্কিয়া থেকে সুকেন্দ্রিক কোষের জিন সরঞ্জাম ও ডেল্টাপ্রোটোব্যাক্টেরিয়া থেকে সাইটোপ্লাজমীয় বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়।[৬৫][৬৬]

Remove ads

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

Remove ads

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.

Remove ads