বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বা ইউএনডব্লিউটিও (ইংরেজি: World Tourism Organization) স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে বিবেচিত। পর্যটন শিল্পকে ঘিরেই এ সংস্থার উৎপত্তি হয়েছে। সংস্থাটি বিশ্ব পর্যটন র্যাঙ্কিং করে থাকে।[১] আন্তর্জাতিক পর্যটনের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং পরিসংখ্যানগত তথ্য বিতরণের লক্ষ্যে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা পর্যটন শিল্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল হিসেবে আসীন রয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পর্যটন সংস্থা থেকে প্রকাশিত তথ্য থেকে পর্যটনের নিম্নমূখী এবং ঊর্ধ্বমূখীতা যাচাইয়ান্তে বৈশ্বিক মানদণ্ড প্রণয়ন করে। এটি জাতিসংঘ উন্নয়ন গ্রুপের সদস্য।[২]
বিশ্ব পর্যটন সংস্থা | |
---|---|
সংস্থার ধরন | জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা |
সংক্ষিপ্ত নাম | ইউএনডব্লিউটিও |
প্রধান | তালেব রিফাই |
মর্যাদা | সক্রিয় |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৭৫ |
প্রধান কার্যালয় | মাদ্রিদ, স্পেন |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
২য় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটে। এ অবস্থায় পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবর্গ ও ভোক্তা শ্রেণীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ভ্রমণবিষয়ক সংস্থা বা আইইউওটিও। এ সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ে বিশেষ অবদান রাখার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানরূপে যুক্ত হয়। সংস্থাটির কার্যক্রম আরো জোরদার করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের বাৎসরিক সম্মেলনের সময় এই সংস্থার সদস্যভূক্ত দেশগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করার মাধ্যমে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছিল।
১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনে এর নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পুণঃমূল্যায়ণ ও নির্ধারণ করা হয় এবং তখন থেকে এটি "বিশ্ব পর্যটন সংস্থা" নামে চিহ্নিত করার বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যার কার্যক্রম নতুন নামে ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু হয়। ১৯৮০ সালের বার্ষিক সম্মেলনে, এই সংস্থার গঠনের দিবসে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বিশ্বব্যাপী পর্যটন দিবস পালনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে এতে একটি স্বাগতিক দেশ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আনয়ণের পক্ষে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
আঞ্চলিক সংস্থা
পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে যথাযথ ও সুচারুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বিশ্বকে ৬টি অঞ্চলে বিভক্তির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে:
- আফ্রিকা অঞ্চল
- আমেরিকা অঞ্চল (একত্রিতভাবে)
- ইউরোপ অঞ্চল
- মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল
- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং
- দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল।
সদর দফতর
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সদর দফতর স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত। সংস্থায় দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে আরবী, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় ১৫৯টি দেশ[৩], ৭টি অঙ্গরাজ্য এবং চার শতাধিক সহযোগী সদস্য রয়েছে। সহযোগী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে - বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
সচিবালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন মহাসচিব। জর্দানের নাগরিক তালেব রিফাই ২০১০ সাল থেকে বর্তমান মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন ১১০ জন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়াও, তার অধীনস্থ হিসেবে রয়েছেন একজন উপ-মহাসচিব। কর্মকর্তাগণ সংস্থা সদস্যভূক্ত দেশগুলোর চাহিদা মোতাবেক পর্যটনবিষয়ক রূপরেখা ও কার্যপদ্ধতি প্রণয়ন করে থাকেন। সহযোগী সদস্যগণ মাদ্রিদভিত্তিক সংস্থাটির পূর্ণকালীন নির্বাহী পরিচালকদের সহায়তা লাভ করেন। সচিবালয় থেকে জাপান সরকারের অর্থায়ণে ওসাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক সহায়তা কেন্দ্র সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয়।[৪]
মহাসচিব
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৫ জন মহাসচিব বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৫] তারা হলেন -
ক্রমিক নং | নাম | দেশ | মেয়াদকাল |
১। | রবার্ট লোনাতি | ফ্রান্স | ১৯৭৫-১৯৮৫ |
২। | উইলিবল্ড পার | অস্ট্রিয়া | ১৯৮৬-১৯৮৯ |
৩। | এনটোনিও এনরিকুয়েজ সেভিগন্যাক | মেক্সিকো | ১৯৯০-১৯৯৬ |
৪। | ফ্রান্সেস্কো ফ্রাঞ্জিয়াল্লি | ফ্রান্স | ১৯৯৮-২০০৯ |
৫। | তালেব রিফাই | জর্দান | ২০১০ - বর্তমান |
বাংলাদেশের পর্যটন সংস্থা
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পর্যটন খাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। আগস্ট, ১৯৭৫ সালে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। জানুয়ারি, ১৯৭৬ সালে এটি পুনরায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভাগে পরিণত হয়। ডিসেম্বর, ১৯৭৭ সালে পৃথকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খোলা হয়। ২৪ মার্চ, ১৯৮২ সালে এ মন্ত্রণালয়কে বিলুপ্ত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে উক্ত মন্ত্রণালয়কে পুণঃপ্রতিষ্ঠা অদ্যাবধি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নামে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।[৬]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.