আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি ব্লক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি ব্লক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি প্রশাসনিক বিভাগ (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক)।
আলিপুরদুয়ার ২ | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে আলিপুরদুয়ারের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৬.৪৮° উত্তর ৮৯.৫৪° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | আলিপুরদুয়ার |
আয়তন | |
• মোট | ৩১৮.৯২ বর্গকিমি (১২৩.১৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,১৮,২৭২ |
• জনঘনত্ব | ৬৮০/বর্গকিমি (১,৮০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | আইএন-ডব্লিউবি |
লোকসভা কেন্দ্র | আলিপুরদুয়ার |
বিধানসভা কেন্দ্র | আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রাম, কালচিনি |
ওয়েবসাইট | www |
শোভাগঞ্জের স্থানাংক ২৬°২৯′ উত্তর ৮৯°৩২′ পূর্ব।
আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকটি জেলার দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। চিকলাঝোরা নদী এই ব্লকের পূর্ব সীমান্ত বরাবর প্রবহমান। এই অঞ্চলের ভূমিরূপ পাহাড়ি, যা উত্তর-হিমালয় পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত।[1][2]
আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে কালচিনি ও কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্ব দিকে কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণ দিকে কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ ১ ও তুফানগঞ্জ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং পশ্চিম দিকে আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অবস্থিত।[2][3]
আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৩১৮.৯২ বর্গ কিলোমিটার। এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৬১টি গ্রাম সংসদ, ৭৯টি মৌজা, ৭৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম ও ২টি জনগণনা নগর রয়েছে।[4] ব্লকটি শামুকতলা থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অধীনস্থ। ব্লকের সদর যশোডাঙায় অবস্থিত।[2]
আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: ভাটিবাড়ি, চাপোরের পার ১, চাপোরের পার ২, কোহিনুর, মহাকালগুড়ি, মাঝের ডাবরি, পারোকাটা, শামুকতলা, টাটপাড়া ১, টাটপাড়া ২ ও তুরতুরি।[5]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ২১৮,২৭২। এর মধ্যে ২০৪,৬৫২ জন গ্রামাঞ্চলের এবং ১৩,৬২০ জন শহরাঞ্চলের বাসিন্দা। পুরুষের মোট সংখ্যা ১১২,৪৩৪ (৫২%) ও মহিলার মোট সংখ্যা ১০৫,৮৩৮ (৪৮%)। ২৫,০৬৭ জনের বয়স ছয় বছরের কম। তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৯১,২৫৩ (৪১.৮১%) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৪০,২৪৫ (১৮.৪৪%)।[6]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৯৬,৯০৯; যার মধ্যে ১০১,৫১৫ জন ছিল পুরুষ এবং ৯৫,৩৯৪ জন ছিল মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ১৫.৮০ শতাংশ।[7]
আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনগণনা নগরগুলি (৪,০০০+ জনসংখ্যাবিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): শামুকতলা (৮,১৩২) ও শোভাগঞ্জ (৫,৪৮৮)।[6]
আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪,০০০+ জনসংখ্যাবিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): চাপোরের পার (৪,০১৮), দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ি (৪,৬৭৭), চণ্ডীঝাড় (৪,৬১৫), পশ্চিম বরাচৌকি (৪,৫৬৬), সালসাবাড়ি (৪,৬৮২), যশোডাঙা (৪,০৬৮), টাটপাড়া (৪,৪০৯), কুমারিজান (৪,১৬৪), পূর্ব চিকলিগুড়ি (৪,৯৯৯), কোহিনুর চা বাগান (৮,৮২২), উত্তর পারোকাটা (৫,৭৯৯) ও দক্ষিণ পারোকাটা (৪,৪৫৭)।[6]
এই ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): ভাটিবাড়ি (২,৬৪২), মহাকালগুড়ি (১,৯১৭) ও তুরতুরি (২,০৫৭)।[6]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৪৬,৩৮০ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৭৫.৭৬ শতাংশ); এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরের সংখ্যা ৮১,০৪৪ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী পুরুষ জনসংখ্যার ৮১.৪৮ শতাংশ) এবং সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৬৫,৫১১ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মহিলা জনসংখ্যার ৬৯.৯৬ শতাংশ)। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের হার ছিল ১১.৭৭ শতাংশ।[6]
ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি, ২০১১ সেন্সাস-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (২০১৪ সালে যে জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়) মোট জনসংখ্যার ৫৫.৮ শতাংশের মাতৃভাষা ছিল বাংলা; এরপর ছিল সাদান/সাদরি (১৪.৩ শতাংশ), নেপালি/গোর্খালি (৬.৯ শতাংশ), হিন্দি (৪.৬ শতাংশ), কুরুখ/ওঁরাও (২.৬ শতাংশ), সাঁওতালি (১.০ শতাংশ), বোড়ো (০.৮ শতাংশ), মুন্ডারি (০.৭ শতাংশ), ভোজপুরি (০.৭ শতাংশ), রাজবংশী (০.৫ শতাংশ), তেলুগু (০.৪ শতাংশ), উর্দু (০.৩ শতাংশ), রাভা (০.৩ শতাংশ), ওডিয়া (০.৩ শতাংশ), খাড়িয়া (০.১ শতাংশ) ও অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষ (১০.৮ শতাংশ)। এই জেলায় বাংলা-ভাষী মানুষের জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫৪.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮১ সালে ৬৮.৫ শতাংশ হয়েছিল। ২০০১ সালে তা আবার কমে ৫৫.৮ শতাংশ হয়। অন্যদিকে সাদান/সাদরি-ভাষী জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০১ সালে হয় ১৪.৩ শতাংশ। তবে নেপালি/গোর্খালি, হিন্দি, কুরুখ/ওঁরাও, সাঁওতালি, মুন্ডা ও রাজবংশী-ভাষী জনসংখ্যার হার হ্রাস পায়।[8]
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬১ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (সংশোধনী) আইন, ২০১২ অনুয়ায়ী, সারা পশ্চিমবঙ্গেই সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য মহকুমাগুলিতে এবং কালিম্পং জেলায় নেপালিও সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া যে সকল জেলা/মহকুমা/সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পৌরসভায় উর্দুভাষীর সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি সেখানে উর্দুও সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। এই আইনগুলি কার্যকর হওয়ার আগে ইংরেজি ভাষা সরকারি কাজে ব্যবহৃত হত; আইনগুলি পাসের পরও তার ব্যবহার অব্যাহত থাকে।[9][10][11][12]
২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট ব্লক বা মহকুমা বা জেলায় জনসংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি অংশের ভাষা হিন্দি, সাঁওতালি, ওডিয়া বা পাঞ্জাবি হলে সংশ্লিষ্ট ভাষাটি সেই অঞ্চলে অতিরিক্ত সরকারি ভাষার মর্যাদা পাবে। এরপর ২০১৮ সালের পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিলে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভাষার তালিকায় কামতাপুরী, রাজবংশী ও কুর্মালিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[13][14]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের হিন্দুদের মোট সংখ্যা ১৮৪,২৩২; যা মোট জনসংখ্যার ৮৪.৪০ শতাংশ। খ্রিস্টানের সংখ্যা ১৮,৮৫১ (৮.৬৪ শতাংশ), মুসলমানের সংখ্যা ১৪,১৮৫ (৬.৫০ শতাংশ), বৌদ্ধের সংখ্যা ১০১ (০.০৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ১৯,৭৫৪ (৯.০৫ শতাংশ)।[15] অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আছে আদিবাসী, মারাং বোরো, সাঁওতাল, সারনাথ, সারি ধর্ম, সর্না, আলছি, বিদিন, সন্ত, সায়েভধর্ম, সেরান, সরন, সারিন, খেরিয়া,[16] ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়।[15]
১৯৯৯-২০০০ শালে এনএসএস ৫৫তম রাউন্ডের কেন্দ্রীয় নমুনা তথ্য ব্যবহার করে গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মাথাপিছু ভোগের একটি পর্যালোচনায় জানা যায়, অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় ৩৫.৭৩ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৬১.৫৩ শতাংশ। এটি দেশের অল্প কয়েকটি জেলার অন্যতম যেখানে শহরাঞ্চলীয় দারিদ্র্যের হার গ্রামীণ দারিদ্র্যের হারের থেকে বেশি।[17]
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৬-৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক হারের তুলনায় কিছুটা বেশি। রাজ্যের মোট ২০ শতাংশ মানুষ এই সীমার নিচে বাস করেন।[18]
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সকল শ্রমিকদের মধ্যে ১৮,৮৪২ জন কৃষক (২১.৮৪ শতাংশ), ৩২,৫০২ জন খেতমজুর (৩৭.৬৭ শতাংশ), ২,৬৫৮ জন কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত (৩.০৮ শতাংশ) এবং ৩২,২৭৪ জন অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক (৩৭.৪১ শতাংশ)।[19] ব্লকে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৮৯,২২৪ (মোট জনসংখ্যার ৪১.৪৩ শতাংশ) এবং অ-শ্রমিকের সংখ্যা ১২৭,৭০৭ (মোট জনসংখ্যার ৫৮.৮৭ শতাংশ)।[20]
টীকা: জনগণনার নথিতে সেই ব্যক্তিকেই কৃষক বিবেচনা করা হয়েছে, যিনি স্বীয়/সরকারি/প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন জমিতে কৃষিকাজ/তত্ত্বাবধানের কাজে নিযুক্ত। যে ব্যক্তি অন্যের জমিতে অর্থ বা সম্পদ বা অংশীদারিত্বের বিনিময়ে শ্রমদান করেন, তাঁকে খেতমজুর ধরা হয়। কুটিরশিল্প সেই শিল্পকেই বলা হয়, যাতে পরিবারে বা গ্রামের মধ্যে এক বা একাধিক সদস্য যুক্ত এবং যে শিল্প ১৯৪৮ সালের কারখানা আইন মোতাবেক কারখানা হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। অন্যান্য শ্রমিকেরা হলেন কৃষক, খেতমজুর বা কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ভিন্ন অন্য উপায়ে যাঁরা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। এঁদের মধ্যে আছেন কারখানা, খনি, বন, পরিবহণ ও অফিসের কর্মচারী, যাঁরা ব্যবসা ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, শিক্ষক, বিনোদনশিল্পী প্রমুখ।[21]
২০১১ সালে প্রকাশিত ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি-তে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৭৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানীয় জলের সরবরাহ রয়েছে। ৩৬টি গ্রামে (৪৬.১৫ শতাংশ) ডাকঘর রয়েছে। ৭০টি গ্রামে (৮৯.৭৪ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন সহ) রয়েছে। ৪২টি গ্রামে (৫৩.৮৫ শতাংশ) পাকা রাস্তা এবং ৪৩টি গ্রামে (৫৫.১৩ শতাংশ) পরিবহন সংযোগ (বাস, রেল ও নাব্য জলপথ) রয়েছে। ৫টি গ্রামে (৬.৪১ শতাংশ) কৃষিঋণ সংস্থা এবং ৯টি গ্রামে (১১.৫৪ শতাংশ) ব্যাংক পরিষেবা সুলভ।[22]
অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (অধুনা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা) অর্থনীতি মূলত কৃষি ও বাগিচা-নির্ভর। এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা চা ও কাঠের জন্য সুপরিচিত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল হল ধান, পাট, তামাক, সরষে, আখ ও গম। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩,৪৪০ মিলিমিটার, যা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় দ্বিগুণ। এলাকাটি বন্যাপ্রবণ এবং নদীগুলি প্রায়ই গতি পরিবর্তন করে শস্য ও শস্যক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।[23]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১০৪টি সারের ডিপো, ৪৯টি বীজের দোকান ও ৬৯টি রেশন দোকান রয়েছে।[24]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২,১৫১ হেক্টর জমি থেকে মোট ৪,১৯২ টন আমন ধান (প্রধান শীতকালীন ফসল); ৯৮২ হেক্টর জমি থেকে ১,৯৮৬ টন বোরো ধান; ৩,৯৩৮ হেক্টর জমি থেকে ৬,৪০৫ টন আউস ধান (গ্রীষ্মকালীন ফসল); ২,০৯৫ হেক্টর জমি থেকে ৫,৪১৪ টন গম; ২,৭৮৮ হেক্টর জমি থেকে ৩৭,৭৪০ টন পাট; ৩০০ হেক্টর জমি থেকে ২,৩৩৮ টন ভুট্টা; এবং ১,৪০৯ হেক্টর জমি থেকে ৩২,৫৬২ টন আলু উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এই ব্লকে মাসকলাই ও তৈলবীজও উৎপাদিত হয়।[24]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সেচিত জমির পরিমাণ ৪,৯৬০ হেক্টর, যার মধ্যে ১,৫৯০ হেক্টর জমির খালের জলে সেচিত, ১৭৬ হেক্টর জমি জলাধারের জলে সেচিত, ১,৩৪০ হেক্টর জমি নদী থেকে তোলা জলে সেচিত, ৪০ হেক্টর জমি গভীর নলকূপের জলে সেচিত, ১,৭৩০ হেক্টর জমি অগভীর নলকূপের জলে সেচিত এবং ৮৪ হেক্টর জমি খোলা কূপের জলে সেচিত হয়।[24]
ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে ২২৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়, যা ভারতের সমগ্র চা উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। ডুয়ার্স-তরাই চায়ের বৈশিষ্ট্য হল, এটি একটি উজ্জ্বল, মসৃণ ও সুঠাম পানীয়, যা আসাম চায়ের তুলনায় অতি অল্পই হালকা। ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিল এবং তার উন্নতিসাধন ঘটিয়েছিল ব্রিটিশরা, কিন্তু এতে ভারতীয় শিল্পপতিদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।[25][26]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এবং ১টি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় রয়েছে।[24]
পুরুলিয়া জেলা অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এই জাতীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, সারা দেশের ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত; যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলা রয়েছে।[27][28]
টেমপ্লেট:Barauni–Guwahati line টেমপ্লেট:New Jalpaiguri-Alipurduar-Samuktala Road Line আলিপুরদুয়ার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৩টি প্রান্তিক বাস রুট অবস্থিত।[24] ৩১৭ নং জাতীয় সড়ক এই ব্লকের উপর দিয়ে গিয়েছে।
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫,৫৭২ জন শিক্ষার্থী, ৮টি মধ্য বিদ্যালয়ে ১,২২৯ জন শিক্ষার্থী, ৬টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬,৪৪১ জন শিক্ষার্থী এবং ১৫টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮,৯৯৭ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই ব্লকের একটি প্রকৌশল/পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯৬ জন শিক্ষার্থী এবং বিশেষ ও অচিরাচরিত ধারার ৪৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫,৬৮৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। আলিপুরদুয়ার পৌর এলাকায় (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বাইরে অবস্থিত) ২টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ৪,৮৬২ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।[24]
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৭৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে একটি গ্রামে একটিও বিদ্যালয় নেই, ৬২টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ৩৬টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় আছে এবং ২০টি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[29]
২০১০ সালে শামুকতলায় শামুকতলা সিধু কানু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এই কলেজে কলা বিভাগে পঠনপাঠন চলে।[30]
২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২টি গ্রামীণ হাসপাতাল, ২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২টি এনজিও-পরিচালিত/বেসরকারি নার্সিং হোম আছে। এগুলিতে মোট ১০৫টি শয্যা ও ১৩ জন চিকিৎসক সুলভ (বেসরকারি সহ)। এছাড়া এই ব্লকে ৩৬টি পরিবার কল্যাণ উপকেন্দ্রও আছে। ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলিতে ৫,৬৫৭ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ও ১৮৩,০২৭ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুযোগ পান।[24]
যশোডাঙায় অবস্থিত ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট যশোডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। ভাটিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল ২০টি শয্যাবিশিষ্ট। এছাড়া শামুকতলায় ১০টি শয্যাবিশিষ্ট এবং তুরতুরিতে ৪টি শয্যাবিশিষ্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও আছে।[31][32]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.