ভারতীয় ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আব্বাস আলী বেগ (উর্দু: عباس علی بیگ; জন্ম: ১৯ মার্চ, ১৯৩৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
;ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | আব্বাস আলী বেগ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | হায়দ্রাবাদ, ব্রিটিশ ভারত | ১৯ মার্চ ১৯৩৯|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | লেগ ব্রেক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান, কোচ, প্রশাসক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | মুর্তুজা বেগ (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৯৩) | ২৩ জুলাই ১৯৫৯ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৬ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৫৪ - ১৯৭৬ | হায়দ্রাবাদ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৫৯ - ১৯৬২ | অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৬০ - ১৯৬২ | সমারসেট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৭ জানুয়ারি ২০২০ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদ এবং প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি।
১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত আব্বাস আলী বেগের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ধ্রুপদী ডানহাতি স্ট্রোক খেলার উপযোগী খেলোয়াড় হিসেবে তার সুনাম ছিল। অদ্যাবধি ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম দূর্ভাগ্যজনক খেলোয়াড় হিসেবে রয়ে গেছেন। প্রতিভাধর ও দক্ষ খেলার অধিকারী আব্বাস আলী বেগ মাত্র দশটি টেস্ট খেলার সুযোগ লাভ করেছিলেন। দুই দশকব্যাপী প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বেশ সফলতা লাভ করেন।
ব্রিটিশ ভারতের ভারতীয় অংশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী আব্বাস আলী বেগ ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অন্ধ্রপ্রদেশ দলের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন।[১] পরের খেলায় মহীশূরের বিপক্ষে ১০৫ ও অপরাজিত ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।[২] ঐ প্রতিযোগিতা শেষে স্বীয় দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন। ৬২.৩৩ গড়ে ১৮৭ রান করেছিলেন তিনি।[৩]
জয়সীমা, পতৌদি, আবিদ আলী, জয়ন্তীলাল, কৃষ্ণমূর্তি, গোবিন্দরাজ ও আসিফ ইকবাল রাজভিকে সাথে নিয়ে পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকে সত্তুরের দশকের সূচনাকাল পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ দলকে শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় দলে রূপান্তরকরণে ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘদিনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ২১ সেঞ্চুরি সহযোগে ৩৪.১৬ গড়ে ১২,৩৬৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দক্ষিণ অঞ্চলের সদস্যরূপে উত্তর অঞ্চলের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২২৪ রান তুলেন। অক্সফোর্ড থেকে ব্লুধারী হন। দীর্ঘ ২১ বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। এ পর্যায়ে ৩৪.১৬ গড়ে ১২,৩৬৭ রান তুলেছিলেন তিনি।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দশটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন আব্বাস আলী বেগ। ২৩ জুলাই, ১৯৫৯ তারিখে ম্যানচেস্টারে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে কলকাতায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে তিনি অক্সফোর্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন।[৪] ১৯৫৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে ১৫টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সময়ে ফ্রি ফরেস্টার্সের বিপক্ষে অপরাজিত ২২১ ও ৮৭ রান তুলেন। এরফলে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দলের পক্ষে ডেরিক ডি সরমের খেলায় সংগৃহীত ২৮৩ (২০৮ ও ৭৫) রানের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।[ক] এ সময়ে ভারত দল ইংল্যান্ড গমনে আসে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ খেলায় আঘাতপ্রাপ্ত বিজয় মাঞ্জরেকারের পরিবর্তে বেগকে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৬]
২০ বছর ১৩১ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন।[৭] এছাড়াও, ভারতের বাইরে এটিই কোন ভারতীয় ক্রিকেটারের অভিষেকে শতরানের প্রথম ঘটনা ছিল।[৮] পলি উমরিগড়ের আরেকটি সেঞ্চুরিও ভারতকে খেলায় পরাজয়বরণ করা থেকে রক্ষা করতে পারেনি।[৬] তবে, বেগকে সিরিজের চূড়ান্ত খেলায়ও দলে রাখা হয়। এছাড়াও, টেস্ট অভিষেকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন।[৯][১০]
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার পর আব্বাস আলী বেগকে ঐ বছরের শেষদিকে নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারত দলে রাখা হয়। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১৯ ও ৩৬ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও এ খেলায় ভারত দল প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখায়।[১১] বোম্বেতে পরের টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ইনিংসে নরি কন্ট্রাক্টরের সাথে ১৩৩ রানের জুটি গড়েন। নিজে করেন ৫০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮ রানের আরেকটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। এরফলে ভারত দল খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।[১২]
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে রামকান্ত কেনিকে নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে এক তরুণী তার চিবুকে উষ্ণ চুম্বন দেয়।[৬] এরফলে ভারতের ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে চুমু খাবার অধিকারী হন তিনি।[১৩] ধারাভাষ্যকর্মে নিয়োজিত বিজয় মার্চেন্ট মন্তব্য করেন যে, ‘আমি এ তরুণীর বিনোদনধর্মী কাজে বিস্ময়ীভূত। কিন্তু, আমি যখন শতরান ও দ্বি-শতরানের ইনিংসে খেলেছিলাম, তখন তরুণীরা কোথায় ছিল!’[১৪] এ ঘটনার পর ১৯৯৫ সালে সালমান রুশদী’র উপন্যাস ‘দ্য মুরস লাস্ট সাই’য়ে ‘দ্য কিসিং অব আব্বাস আলী বেগ’ শিরোনামে চিত্রের নামকরণ করেন।[১৫] ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে আব্বাস আলী বেগের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ তাকে পাঁচজন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের অন্যতমরূপে ঘোষণা করে।[১৬]
পরের মৌসুমে পাকিস্তানের মুখোমুখি হন তিনি। তবে, চার ইনিংসে মাত্র ৩৪ রান করে ব্যাপক অর্থে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এর খেসারত গুণত হয় তাকে। পরবর্তী সিরিজগুলো থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। এ সময়ে সতীর্থ মুসলিমদের বিপক্ষে বাজে খেলার জন্য উড়ো চিঠিতে হুমকি পেয়েছিলেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।[১৭] তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের রঞ্জী ট্রফি ও দিলীপ ট্রফি প্রতিযোগিতায় ঠিকই দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
১৯৬৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজ দেশে মুখোমুখি হন। সিরিজের দুই টেস্টে অংশ নিয়ে ৪৮ রান তুলেন। এরপর তাকে দল থেকে পুনরায় বাদ দেয়া হয় ও আর তাকে টেস্ট আঙ্গিনায় খেলতে দেখা যায়নি। তাসত্ত্বেও, ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য দলে রাখা হলেও শেষ মুহূর্তে খেলানো হয়নি। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে দলে রাখা হয়। তবে, এগারো টেস্টের কোনটিতেই তিনি মাঠে নামেননি। তার পরিবর্তে অশোক মানকড়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল।[৮]
১৯৯১-৯২ মৌসুমে ভারত দলের কোচের দায়িত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন ও ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে দলীয় কোচ ছিলেন।[১৮]
আব্বাস আলী বেগের তিন কনিষ্ঠ ভ্রাতা - মুর্তুজা বেগ, মাজহার বেগ ও মুজতবা বেগ পেশাদারী পর্যায়ে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন। মুর্তুজাও হায়দ্রাবাদের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছেন। তবে, আব্বাসের তুলনায় কম সফল ছিলেন।[১৯]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.