Remove ads
একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবদুস সালাম বাংলাদেশী সাংবাদিক যিনি স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক উভয় শাসনকালেই বাঙালিদের অধিকার সম্বন্ধে তার সম্পাদিত পাকিস্তান অবজার্ভার বর্তমানে বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকায় লিখে তিনি শাসকদের বিরাগভাজন হন এবং একাধিকবার কারারুদ্ধ ছিলেন।[১]
আবদুস সালাম | |
---|---|
জন্ম | আগস্ট ২, ১৯১০ |
মৃত্যু | ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯৭৭ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত(১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পেশা | সাংবাদিকতা |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক |
আবদুস সালাম(জন্ম:২ আগস্ট, ১৯১০- মৃত্যু:১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭) ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুর নামে এক অজ পাড়াগাঁয়ে ১৯১০ সালের ২রা আগস্ট আবদুস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। আবদুস সালাম ছাত্রজীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান পান। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আই,এস,সি পরীক্ষায় মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে তিনি শীর্ষস্থান লাভ করেন। কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এরপর ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম হয়ে টনি মেমরিয়াল স্বর্ণপদক পান।
আবদুস সালাম ইংরেজিতে অল্প কিছুদিন ফেণী কলেজে অধ্যাপনার পরে সরকারী চাকরিতে যোগ দেন ।ইংরেজ আমলে বেঙ্গল সরকারের আয়কর, সিভিল সাপ্লাইজ, অডিট ইত্যাদি বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে দেশ বিভাগের সময় তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ব বাংলা সরকারের উপ-মহা হিসাব পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিম গাঁওয়ের করিমুল হক ও মাহমুদা খাতুনের একমাত্র কন্যা ফাতেমা খাতুনকে বিয়ে করেন। ফাতেমা খাতুনের বড় ভাই মুহাম্মদ শামস-উল হক শিক্ষা মহাপরিচালক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রভৃতি গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।
আবদুস সালাম উপলব্ধি করেন যে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী একটা উপনিবেশ করে রাখতে চায়। লোভনীয় সরকারী চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে অবজার্ভার পত্রিকাতে অনিশ্চিত নতুন জীবন শুরু করেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির এক সপ্তাহ আগে তার এক সম্পাদকীয়কে ধর্ম বিরোধী আখ্যা দিয়ে নূরুল আমীনের মুসলিম লীগ সরকার সালামকে কারারুদ্ধ করেন এবং পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ দু'বছর সালামকে এখানে-সেখানে ছোটোখাটো চাকরি করে সংসার চালাতে হয়। এর পরে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সালাম যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে বিপুল ভোটে প্রাদেশিক সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। অবজার্ভার পুনরায় তার সম্পাদনায় প্রকাশনা শুরু করে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সূত্রপাত হয়। আবদুস সালাম আইউব খানের আত্মজীবনী Friends, not Masters এর বিরূপ সমালোচনা করায় তার পত্রিকায় সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। অবাঙালিদের স্বার্থের মুখপত্র ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকার প্রেস দুর্ঘটনাক্রমে আগুনে পুড়ে গেলে আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সমস্ত পাকিস্তানেই আবদুস সালাম বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য একটি সম্মানিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাকে পাকিস্তান কাউন্সিল অব নিউজপেপার এডিটরস-এর সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ঢাকার সব দৈনিকের সম্পাদক পরিবর্তন হলেও আবদুস সালাম স্বপদে থেকে যান। কিন্তু নতুন সরকারকে কিছু গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে ‘দি সুপ্রীম টেস্ট’ নামে একটি সম্পাদকীয় লেখায় তাকে সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পরেও তিনি অধুনালুপ্ত ‘বাংলাদেশ টাইমস’ পত্রিকায় কলাম ও সম্পাদকীয় লিখতে থাকেন। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে জিয়াউর রহমান তার অণুরোধে প্রেস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং আবদুস সালাম হন তার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতেই তিনি শেষ শক্তি ব্যয় করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম একুশে পদক প্রবর্তন হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মত আব্দুস সালামও এই পদকে ভূষিত হন।
আবদুস সালামের নেতৃত্বে সেই সময়ে অবজার্ভারে যাঁরা সাংবাদিকতা করেছেন, তাদের অনেকেই পরে দেশে-বিদেশে খ্যাতিমান সাংবাদিক হয়েছেন; যেমন - ওবায়েদ উল হক , এস, এম, আলী, মাহবুব জামাল জাহেদী, কে,জি, মুস্তফা, আতাউস সামাদ, এ বি এম মূসা, এনায়েতুল্লাহ্ খান প্রমুখ; আবার অনেকে পরে অন্য পেশায় শীর্ষে পৌঁছেছেন, যেমন শাহ কিবরিয়া, শেখ রাজ্জাক আলী, রাজিয়া খান, মীজানুর রহমান শেলী প্রমুখ।
১৯৭৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি তারিখে এক আকস্মিক হৃদ-আক্রমণে ৬৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.