আফগানিস্তানের সঙ্গীত ও সঙ্গীত-ঐতিহ্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সঙ্গীত সর্বদাই আফগানদের জীবনাচারের একটি অংশ হিসাবে গণ্য হয়, কিন্তু ১৯৭০'এর দশকের শেষ দিক থেকে দেশটিতে ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধ চলতে থাকে এবং এর ফলে মানুষ সঙ্গীতের প্রতি কম আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ পায়। যেমন, আফগানিস্তানের একটি সমৃদ্ধশালী সঙ্গীত ঐতিহ্যের পরও এটি দমিয়ে রাখা হয় এবং বহিরাগতদের জন্য খুব কম সঙ্গীত রেকর্ডিং করা হয়।
অনেকগুলি বাণিজ্য পথের মধ্যবর্তী পার্শ্ববর্তী পথে অবস্থিত হওয়ায় আফগানিস্তানের সঙ্গীত ঐতিহ্য আরব, পারসিয়ান, ভারতীয়, মঙ্গোলিয়ান, চীনা এবং আরও অনেক এলাকার পরিব্রাজকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এর ফলে আফগান সঙ্গীত পার্সি সুর, আরব লয়, ভারতীয় সঙ্গীত রচনারীতির পাশাপাশি পশতুন বা তাজিকের মত জাতিগত গোষ্ঠীগুলির শব্দসমূহ এবং ভারতীয় তবলা থেকে শুরু করে লম্বা-গলার লুতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এক্ষেত্রে উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী সঙ্গীত ঐতিহ্য - ভারতীয় সঙ্গীত ঐতিহ্য - আফগানিস্তানের সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋণ প্রদায়ী ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯০-এর দশকে তালিবান সরকার বাদ্যযন্ত্র নির্ভর সঙ্গীত এবং জনসাধারণের জন্য তৈরি করা অসংখ্য সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে।[১] গ্রেপ্তার ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করা সত্ত্বেও সঙ্গীতশিল্পীরা বর্তমানেও তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বহু-জাতিক শহর কাবুল দীর্ঘকাল যাবৎ আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক রাজধানী, তবে বাইরের লোকজন সাধারণত হেরাত শহরের দিকে অধিক আকৃষ্ট যেটি ঐতিহ্যগতভাবে দেশের অন্যান্য অংশ অপেক্ষা ইরানিয়ান সঙ্গীতের সাথেই বেশি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।[২] আফগানিস্তানের বেশিরভাগ গানের কথাগুলি সাধারণত দারি (ফার্সি) এবং পশতু ভাষায় লিখিত।
আফগানিস্তানে সঙ্গীত সম্পর্কিত ধারনাটি বাদ্যযন্ত্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং এর ফলশ্রুতিতে এককভাবে কেবল ধর্মীয় গীত গাওয়া হলে সেটি সঙ্গীত হিসাবে বিবেচিত হয় না। সূফীদের আধ্যাত্মিক পদ্ধতি যিকির রীতিতে সঙ্গীত ব্যবহৃত হয় যেটিকে না'ত বলে এবং শিয়াদের একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের ধরনগুলো যেমন মার্শিয়া, মানকাসাত, নওহেহ এবং রওজাহ'এর ক্ষেত্রে কোরআন আবৃতির ধরনগুলো একেকটি গুরুত্বপূর্ণ একক ধর্মীয় কর্মকাণ্ড। কাবুলের চিশতি ঘরানার সূফিরা এক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী গোষ্ঠী কারণ তারা তাদের সঙ্গীতে রাবাব, তবলা ও হারমোনিয়ামের মত যন্ত্র ব্যবহার করে; এই সঙ্গীত পদ্ধতিটিকে তাত্তি ("আত্মার খাদ্য") বলা হয়।[৩]
আফগানিস্তানে কোনো একক সঙ্গীত ধারা বা পদ্ধতির চল নেই; বরং বহু ধারার প্রচলন দেখা যায় এখানে। এই বিবিধ ধারা ও পদ্ধতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উপস্থিত জাতিগত, ভাষাগত, আঞ্চলিক, ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে যা আফগান সমাজেরও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.