আগম (সংস্কৃত: आगम) হলো আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের একটি সংগ্রহ। পাঁচটি আগম একসাথে আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সুত্তপিটক নিয়ে গঠিত, এবং প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন সংশোধিত সংস্করণ ছিলো। থেরবাদের পালি ত্রিপিটকে, নিকায় শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আগম শব্দটি ব্যবহৃত হয় না।
বৌদ্ধধর্মে, আগম শব্দটি আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপদেশের সংগ্রহ (সংস্কৃত: সূত্র; পালি: সুত্ত) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেগুলি প্রাথমিকভাবে চীনা অনুবাদে সংরক্ষিত ছিল, এবং প্রাকৃত বা সংস্কৃতে অপেক্ষাকৃত কম কিন্তু এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গান্ধারী ও তিব্বতি অনুবাদে টিকে আছে। এই সূত্রগুলি পালি ত্রিপিটকের সুত্তপিটকের প্রথম চারটি নিকায় (এবং পঞ্চম অংশের) সাথে মিলে যায়, যাকে মাঝে মাঝে আগমও বলা হয়। এই অর্থে, আগম নিকায়ের প্রতিশব্দ। উভয় সংগ্রহের বিষয়বস্তু, আগম (এখানে: উত্তর সংগ্রহ), এবং নিকায় (এখানে: দক্ষিণী সংগ্রহ), কিছুটা ভিন্ন। অঙ্গুত্তরনিকায় ও সংযুত্তনিকায়ের বৃহত্তর অংশগুলি আগমে পাওয়া যায় না এবং বেশ কিছু সূত্রের বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা রয়েছে।[1]
কখনও কখনও আগম শব্দটি নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থকে বোঝাতে নয়, শাস্ত্রের শ্রেণিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষেত্রে, এর অর্থ সুত্তপিটকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যা থেরবাদ ঐতিহ্যকে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন এবং ঐতিহাসিকভাবে সঠিক উপস্থাপনা বলে মনে করে, সাথে বিনয়পিটক।[2]
মহাযান অভিধর্ম রচনা অভিধর্মসমুচ্চয়, আসঙ্গ সম্ভারকে বোঝায় যেখানে প্রাকৃত/সংস্কৃত আগমগুলি শ্রাবকপিটক হিসাবে রয়েছে, এবং এটিকে শ্রাবক ও প্রত্যেকবুদ্ধে সাথে যুক্ত করে।[3] আসঙ্গ মহাযান সূত্রগুলিকে বোধিসত্ত্বপিটকের অন্তর্গত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে, যেটিকে বোধিসত্ত্বদের শিক্ষার সংগ্রহ হিসাবে মনোনীত করা হয়।[3]
জেনস-উই হার্টম্যান লিখেছেন,[4]
ঐতিহ্য অনুসারে, বুদ্ধের উপদেশগুলি বুদ্ধের মৃত্যুর পরপরই অনুষ্ঠিত প্রথম পরিষদের সময়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল ... পণ্ডিতরা, তবে, গ্রন্থগুলিকে অজানা মূল অংশ থেকে ক্রমাগত সংখ্যা ও আকারে ক্রমবর্ধমান হিসাবে দেখেন, যার ফলে ভাষা ও বিষয়বস্তুতে বিভিন্ন পরিবর্তন হয় ...
এটা স্পষ্ট যে, আদি সম্প্রদায়গুলো মধ্যে, সর্বনিম্নভাবে সর্বাস্তিবাদ, কাশ্যপীয়, মহাসাংঘিক ও ধর্মগুপ্তক পাঁচটি প্রাকৃত/সংস্কৃত আগমের মধ্যে চারটির সংশোধিত সংস্করণ ছিল যা ভিন্ন ছিল। সমসাময়িক পণ্ডিতরা সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং মূল বাক্যাংশ চিহ্নিত করার প্রয়াসে আগমগুলিকে পালি ত্রিপিটকের নিকায়ের সাথে তুলনা করেছেন।[1] সুত্তপিটকের সাথে আগমগুলোর অস্তিত্ব ও সাদৃশ্যগুলি কখনও কখনও পণ্ডিতদের দ্বারা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয় যে এই শিক্ষাগুলি আদি বৌদ্ধধর্মের ত্রিপিটকের ঐতিহাসিকভাবে প্রামাণিক উপস্থাপনা৷[5] কখনও কখনও তাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি দুটি পুনরাবর্তনের যে কোনও একটিতে সূত্রের গৃহীত অর্থের বিকল্প অর্থের পরামর্শ দিতে ব্যবহৃত হয়।
আগমগুলির চারটি বিদ্যমান সংগ্রহ রয়েছে, এবং একটির জন্য আমাদের কাছে কেবল উল্লেখ এবং খণ্ডাংশ রয়েছে (ক্ষুদ্রকাগম)। বর্তমান চারটি সংকলন তাদের সম্পূর্ণরূপে শুধুমাত্র চীনা অনুবাদে সংরক্ষিত আছে, যদিও চারটির ছোট অংশ সম্প্রতি সংস্কৃত ভাষায় আবিষ্কৃত হয়েছে, এবং পাঁচটি আগমের চারটির অংশ তিব্বতি ভাষায় সংরক্ষিত আছে।[6] আগমগুলো হলো:
- দীর্ঘ আগম: দীর্ঘ আগম থেরবাদ সম্প্রদায়ের দীর্ঘ নিকায়ের সাথে মিলে যায়। ধর্মগুপ্তক সম্প্রদায়ের দীর্ঘ আগমের সম্পূর্ণ সংস্করণ ৪১৩ খ্রিস্টাব্দের শেষের কিন রাজবংশের বুদ্ধয়ষস ও ঝু ফোনিয়ান দ্বারা করা হয়েছিল। এটিতে থেরবাদী দীর্ঘ নিকায় ৩৪টি সূত্রের বিপরীতে ৩০টি সূত্র রয়েছে।সর্বাস্তিবাদী দীর্ঘ আগম "খুবই উল্লেখযোগ্য" অংশ সংস্কৃতে টিকে আছে,[7] এবং কিছু অংশ তিব্বতি অনুবাদে টিকে আছে।
- মধ্যমা আগম: মধ্যমা আগম থেরবাদ সম্প্রদায়ের মজ্ঝিমনিকায়ের সাথে মিলে যায়। সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের মধ্যমা আগমের সম্পূর্ণ অনুবাদ পূর্ব জিন রাজবংশের ৩৯৭-৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘদেব করেছিলেন। সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের মধ্যমা আগমে পালি মজ্ঝিমনিকায়ের ১৫২টি সূত্রের বিপরীতে ২২৩টি সূত্র রয়েছে। সর্বাস্তিবাদ মধ্যমা আগমের কিছু অংশ তিব্বতি অনুবাদেও টিকে আছে।
- সংযুক্ত আগম: সংযুক্ত আগম থেরবাদ সম্প্রদায়ের সংযুত্তনিকায়ের সাথে মিলে যায়। ৪৩৫-৪৪৩ খ্রিস্টাব্দে গান রাজ্যে গুণভদ্র সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ সংযুক্ত আগমের চীনা অনুবাদ করেছিলেন। সর্বাস্তিবাদ সংযুক্ত আগমের কিছু অংশ সংস্কৃত[9] এবং তিব্বতি অনুবাদেও টিকে আছে। ২০১৪ সালে, ওয়াং জিয়ানওয়েই এবং জিন হুই দ্বারা লিখিত সংযুক্ত আগমের সংকলন ও টীকা চীনে প্রকাশিত হয়েছিল।
- একোত্তর আগম: একোত্তর আগম থেরবাদ সম্প্রদায়ের অঙ্গুত্তরনিকায়ের সাথে মিলে যায়। একোত্তর আগমের সম্পূর্ণ সংস্করণ ফু কিন রাজ্যের ধর্মানন্দি দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছিল এবং ৩৯৭-৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে গৌতম সংঘদেব দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল। কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন যে এটি সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায় থেকে এসেছে, কিন্তু অতি সম্প্রতি মহাসাংঘিক শাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে।[10] এ.কে. ওয়ার্ডার এর মতে , একোত্তর আগম সন্ন্যাসীদের জন্য ২৫০ প্রাতিমোক্ষ নিয়ম উল্লেখ করেছেন, যা শুধুমাত্র ধর্মগুপ্তক বিনয়ের সাথে একমত, যা চীনা বৌদ্ধ ত্রিপিটকেও উপস্থিত। তিনি কিছু মতবাদকে মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের বিরোধী মতবাদ হিসেবেও দেখেন এবং বলেন যে তারা বর্তমানে পরিচিত ধর্মগুপ্তক মতের সাথে একমত। তাই তিনি উপসংহারে পৌঁছেছেন যে বর্তমান একোত্তর আগম ধর্মগুপ্তক সম্প্রদায়ের।[11]
- ক্ষুদ্রক আগম বা ক্ষুদ্রক পিটক: ক্ষুদ্রক আগম খুদ্দকনিকায়ের সাথে মিলে যায় এবং কিছু সম্প্রদায়ে বিদ্যমান ছিল। ধর্মগুপ্তকের বিশেষ করে ক্ষুদ্রক আগম ছিল।[12] ধর্মগুপ্তক বিনয়ের চীনা অনুবাদে ক্ষুদ্রক আগমের ধর্মগুপ্তক সংশোধিত সংস্করণ বিষয়বস্তুর সারণী পাওয়া যায় এবং গান্ধারীতে খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে বলে মনে হয়।[13] এই আগমেরর ধরণগুলি তিব্বতি ও চীনা অনুবাদেও টিকে আছে - পরবর্তী ক্ষেত্রে চৌদ্দটি গ্রন্থ।[12][14][15] কিছু সম্প্রদায়, বিশেষ করে সর্বাস্তিবাদ, শুধুমাত্র চারটি আগামাকে স্বীকৃতি দিয়েছে-তাদের একটি "ক্ষুদ্রক" ছিল যাকে তারা "আগম" বলে মনে করত না।[14][16] অন্যগুলো - এমনকি ধর্মগুপ্তক সহ, কিছু সমসাময়িক পণ্ডিতদের মতে - এটিকে "ক্ষুদ্রক পিটক" বলে অভিহিত করতে পছন্দ করেছিলেন। তার পাশী সমকক্ষের মতো, ক্ষুদ্রক আগম বিবিধ ছিল বলে মনে হয়, এবং সম্ভবত অনেক আদি সম্প্রদায়ের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অতিরিক্ত উপকরণ
এছাড়াও, প্রধান সংগ্রহের বাইরে প্রচুর পরিমাণে আগম-শৈলীর গ্রন্থ রয়েছে। এগুলি বিভিন্ন উৎসে পাওয়া যায়:
- চীনা ত্রিপিটকের মধ্যে আংশিক আগম সংগ্রহ এবং স্বাধীন সূত্র।
- তিব্বতি ত্রিপিটকের মধ্যে সূত্রের ছোট দল বা স্বাধীন সূত্র।
- সূত্রগুলি সংস্কৃত, গান্ধারী বা অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় ভাষায় প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে পুনর্গঠিত।
- মহাযান সূত্র, অভিধর্ম গ্রন্থ, পরবর্তী ভাষ্য ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত আগম সূত্রের অনুচ্ছেদ ও উদ্ধৃতি।
- শিলালিপিতে সংরক্ষিত বিচ্ছিন্ন বাক্যাংশ। উদাহরণস্বরূপ, লুম্বিনীর অশোক স্তম্ভটি মহাপরিনির্বাণ সূত্রের উদ্ধৃতি, ইহা বুধে জাতে ঘোষণা করে।
Chizen Akanuma, The Comparative Catalogue of Chinese Āgama & Pali Nikāya, Delhi 1929
The traditional Theravada view regarding the authenticity of the Pali Canon is contested by some modern scholars such as Brough (2001) whose own methodology involves triangulating the texts of the Pali Canon and the āgamas to make inferences about pre-sectarian texts.
Boin-Webb, Sara (tr). Rahula, Walpola (tr). Asanga. Abhidharma Samuccaya: The Compendium of Higher Teaching. 2001. pp. 199-200
Hartmann, Jens-Uwe (2003). "Agamas", in Buswell, Robert E. ed.; Encyclopedia of Buddhism, New York: Macmillan Reference Lib. আইএসবিএন ০০২৮৬৫৭১৮৭. Vol. 1, p. 10.
See, e.g., Norman (1983), Brough (2001) and Ānandajoti (2004) regarding the authenticity of the Pali Canon's Dhammapada, Sutta Nipata and other texts when juxtaposed with other non-Pali early Buddhist texts.
A Dictionary of Buddhism, by Damien Keown, Oxford University Press: 2004
Between the Empires: Society in India 300 BCE to 400 CE by Patrick Olivelle. Oxford University Press, 2006 আইএসবিএন ০-১৯-৫৩০৫৩২-৯ pg 356
Sujato, Bhikkhu। "About the EA"। ekottara.googlepages.com। ২০০৭-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০১।
Warder, A.K. Indian Buddhism. 2000. p. 6
Sean Gaffney। The Pali Nidanakatha and its Tibetan Translation: Its Textual Precursors and Associated Literature।
- Analayo, Bhikkhu (২০১২), Madhyama-āgama Studies (পিডিএফ), Dharma Drum Publishing
- Analayo, Bhikkhu (২০১৩), "Mahāyāna in the Ekottarika-āgama" (পিডিএফ), Singaporean Journal of Buddhist Studies 1: 5–43, ২০১৪-০৩-১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা
- Ānandajoti Bhikkhu (2004). The Uraga Sutta. Retrieved 13 Dec 2008 from "Ancient Buddhist Texts" at http://www.ancient-buddhist-texts.net/Buddhist-Texts/C4-Uraga-Verses/index.htm.
- Bingenheimer, Marcus; Bucknell, Rodney S.; Analayo, Bhikkhu (২০১৩), The Madhyama Agama: Middle-length Discourses: 1 (পিডিএফ), Bukkyo Dendo Kyokai, আইএসবিএন 978-1886439474, ১৩ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২৪
- Brough, John (2001). The Gāndhārī Dharmapada. Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited.
- Monier-Williams, Monier (1899, 1964). A Sanskrit-English Dictionary. London: Oxford University Press. আইএসবিএন ০-১৯-৮৬৪৩০৮-X. Retrieved 12 Dec 2008 from "Cologne University" at http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/scans/MWScan/index.php?sfx=pdf.
- Ichimura, Shohei, trans. (2016-2017). The Canonical Book of the Buddha's Lengthy Discourses ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে, Vol. I, Vol. II, Bukkyo Dendo Kyokai Amerika
- Norman, K.R. (1983). Pali Literature: Including the Canonical Literature in Prakrit and Sanskrit of All the Hinayana Schools of Buddhism. Wiesbaden: Otto Harrassowitz.
- Rhys Davids, T.W. & William Stede (eds.) (1921-5). The Pali Text Society’s Pali–English Dictionary. Chipstead: Pali Text Society. Retrieved 12 Dec 2008 from "U. Chicago" at http://dsal.uchicago.edu/dictionaries/pali/.
- Tripāṭhī, Chandra. (Ed.) (1962). 'Fünfundzwanzig Sūtras Des Nidānasaṃyukta' in Sanskrittexte aus den Turfanfunden (Vol. VIII). Edited by Ernst Waldschmidt. Berlin: Akademie-Verlag, 1962. [Includes translation into German]