Remove ads
ইসলামে ইবাদত করার জন্য শরীরের কিছু অঙ্গ ধৌতকরণের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। কুরআনে আছে, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (আল কুরআন ২:২২২)"[1] [2]।
কুরআন পড়তে ও স্পর্শ করতেও অযু করতে হয়। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। কুরআনে বর্ণিত আছে, "যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।"[1](সূরা ওয়াক্কিয়াহ্, আয়াত:৭৯)। এখানে পাক পবিত্র বলতে দৈহিক পবিত্রতা নয় বরং আত্মিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা অর্জনকে আরবিতে বলে তাহারাত্। অযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্ আর্জন করা যায়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক"। (সহীহ মুসলিম)।[3]
সুন্নি মুসলমানরা নিম্নলিখিতগুলি কার্য সম্পাদন করেন:
কুরআনে বর্নিত আছে, "হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।"[1](সূরা মায়িদা, আয়াত:৬)। অযুর করার সময় কিছু কাজ মুহাম্মাদ অভ্যাসবশত করতেন যা অযুর সুন্নতের (ঐচ্ছিক কাজ) অন্তর্ভুক্ত। যেমন:
শিয়া মুসলমানরা নিম্নলিখিতগুলি কার্য সম্পাদন করেন:
অযুর কিছু মুস্তাহাব কাজ (করা উত্তম তবে না করলেও অযু হবে)
ডান থেকে বামে ধারাবাহিকতা রেখে অযু করা।
কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত অযুর সঠিক নিয়ম।
১. মনে মনে অযু করার নিয়ত বা সংকল্প করবে। [4]
২. তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। [5]
৩. ডান হাতে পানি নিয়ে[6] দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে।[7] সেই সাথে হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে।[8] আংটি থাকলে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।[9]
৪. ডান হাতে পানি নিয়ে গড়গড়িয়ে কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিবে ও নাক ঝাড়বে। [10]
৫. কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতীসহ থুৎনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে। [11] তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নিচে দিয়ে দাড়ি খিলাল করবে।[12]
৬. অতঃপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। [13]
৭. এরপর নতুন পানি নিয়ে [14] দুই হাত দ্বারা মাথার সম্মুখ হতে পিছনে ও পিছন হতে সম্মুখে নিয়ে গিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে।[15] একই সঙ্গে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা কানের পিঠ মাসাহ করবে।[16]
৮. অতঃপর ডান ও বাম পায়ের টাখনুসহ ভালভাবে ধৌত করবে।[15] এ সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আংগুল দ্বারা পায়ের আংগুল সমূহ খিলাল করবে।[17]
৯. ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিবে। [18]
১০. অতঃপর দু‘আ পাঠ করবে। উল্লেখ্য যে, ওযূর অঙ্গগুলো এক, দুই ও তিনবার ধোয়া যায়। (তিনবার ধোয়া সুন্নত, এর অধিক ধোয়া পানির অপচয়ের কারণ এবং সুন্নতের খেলাফ, তবে অযু সমন্ধনীয় সব অঙ্গ ভালোভাবে ভিজানো জরুরি)। [19]
অযুর চারটি ফরজ কাজ। এর যে কোন একটি বাদ গেলে অযু হয় না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার সাথে ফরজ কাজ পুনরায় করে অযু শুদ্ধ করে নিতে হয়। কোন ব্যক্তি অযু করার পর কিছু নির্দিষ্ট কাজ না করলে তার অযু অবিরত বলবৎ থাকে। ঐ কাজগুলো করার মাধ্যমে অযু অকার্যকর হয় যা অযু ভঙ্গ হওয়াও বলে। কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে অযু ভঙ্গের কারণ:
১. পায়খানা-পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া।
২. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
৩. পাগল, মাতাল বা অচেতন হওয়া।
৪. নামাযে উচ্চ আওয়াজে হাসা।
৫. দেহের কোনো অংশ থেকে রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
৬. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে।
৭. নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে।
৮. ঘুমানো- চিৎ হয়ে, কাত হয়ে, হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে।
৯. অজ্ঞান হওয়ার পর; এমন অজ্ঞান যাতে বোধ শক্তি লোপ পায়।
১০. অপ্রকৃতিস্থতা। যা ঘুম বা নিদ্রার চেয়েও প্রবল।
১১. রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্ট হাসি; তবে জানাজা নামাজে, তিলাওয়াতে সিজদায় এবং নামাজের বাইরে হাসলে অযু নষ্ট হবে না।
১২. ফোঁড়া বা ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে যদি পানি বা পুঁজ বের হয়ে ফোঁড়া বা ফোস্কার মুখ অতিক্রম করে তাহলে পবিত্র নষ্ট হবে।
১. প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যয় করা।
২. প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি ব্যয় করা।
৩. মুখমণ্ডলে এমনভাবে পানি নিক্ষেপ করা যে, পানির ছিঁটা অন্যত্র পড়ে।
৪. ওজুর সময় অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা।
৫. ওজুর সময় বিনা ওজরে অন্যের সাহায্য নেয়া।
৬. নতুন পানি নিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ করা।
তায়াম্মুম অযুর বিকল্প যখন পানি আদৌ লভ্য নয়। তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র মাটির ওপর থাপড়াতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধুলা লেগে যায়। অতঃপর উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার মাটিতে হাত থাপড়িয়ে ধুলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।
ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এক সফরে ছিলেন তখন আয়িশা বিনতে আবু বকর-এর গলার হার হারিয়ে যায় এবং তা খুঁজতে গিয়ে মরুভূমিতে এমন স্থানে কাফেলা উপনীত হয় যেখানে পানি ছিল না। এমন সময় অযু-গোছলের বিষয় সংবলিত ওহি নাজেল হয় যাতে তায়াম্মুমের কথা বর্ণিত ছিল। আয়াতটি এরকম:
“ |
হে মুমিনরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য ওঠো, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিঁটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও অথবা প্রবাসে থাক বা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল।[20] |
” |
“ |
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত — নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি সালাতে দাড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযু করবে। তারপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ’ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে। (শব্দ বিন্যাস বুখারীর এবং ইবনু মাজাহতে মুসলিমের সানাদে রয়েছে যার অর্থও হচ্ছে ধীর-স্থির হয়ে দাড়াবে।' আর আহমদে রয়েছে, তুমি তোমার পিঠকে এমনভাবে সোজা করবে যেন সকল হাড় যার যার স্থানে পৌছে যায়।) |
” |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.