Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উদ্ভিদবিদ্যায় জাইলেম হল এক ধরনের জটিল স্থায়ী কলা যার মাধ্যমে মূল থেকে শোষিত জল ও জলে দ্রবণীয় খনিজ লবণ উদ্ভিদের পাতা পর্যন্ত পরিবাহিত হয়।[1][2] xylem শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ξύλον (xylon) থেকে সৃষ্ট, যার অর্থ "wood"।[3] ১৮৫৮ সালে কার্ল নাগেলি সর্বপ্রথম এই শব্দটি চালু করেন।[4][5]
উদ্ভিদ দেহে প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় প্রোক্যাম্বিয়াম নামক ভাজক কলা থেকে যে জাইলেম সৃষ্টি হয়, তাকে প্রাথমিক জাইলেম এবং ব্যক্তবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে গৌণ বৃদ্ধির সময় ক্যাম্বিয়াম নামক গৌণ ভাজক কলা থেকে যে জাইলেম সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জাইলেম বলে।
প্রোক্যাম্বিয়াম থেকে প্রারম্ভিক দশায় গঠিত প্রাথমিক জাইলেমকে প্রোটোজাইলেম এবং পৃথকীকরণ এর মাধ্যমে প্রোটোজাইলেমের পর যে জাইলেমের আবির্ভাব ঘটে তাকে মেটাজাইলেম বলে। প্রোটোজাইলেম উপাদান গুলি আকৃতিতে ছোট ও স্বল্প ব্যাস যুক্ত হয় এবং মেটাজাইলেম উপাদানগুলি অপেক্ষাকৃত বড় ও অধিক ব্যাস যুক্ত হয়।
মূলত ট্র্যাকিড ও ট্রাকিয়াই জল ও জলীয় রস সংবহনে সাহায্য করে।
পুরু কোষপ্রাচীর যুক্ত, লম্বা, সূঁচাকৃতি প্রান্তবিশিষ্ট, মৃত জাইলেম কোষ ট্র্যাকিড নামে পরিচিত।
প্রান্তপ্রাচীর বিহীন, নলাকার, মৃত জাইলেম কোষগুলিকে ট্রাকিয়া বলে।
জাইলেম কলার অন্তর্গত পাতলা প্রাচীর যুক্ত সজীব প্যারেনকাইমা কোষকে জাইলেম প্যারেনকাইমা বলে। বিভিন্ন খাদ্যবস্তু নানান রেচন পদার্থ সঞ্চয় করে।
জাইলেম কলায় অবস্থিত মোটা প্রাচীর বিশিষ্ট লম্বাটে মৃত স্ক্লেরেনকাইমা তন্তুকে জাইলেম তন্তু বা কাষ্ঠল তন্তু বলে। এটি দুই প্রকারের হয় যথাক্রমে, ট্র্যাকিড তন্তু এবং লিব্রিফর্ম তন্তু।
যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শোষিত জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ অভিকর্ষের বিপরীতে জাইলেম বাহিকা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌঁছায় তাকে রসের উৎস্রোত (Ascent of Sap) বলে।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ডেসমোডিয়াম নামক উদ্ভিদের পর্যবেক্ষণ করেন যে মূলের অন্তঃস্থ কর্টেক্স, জাইলেম বহিস্থ কর্টেক্স ইত্যাদি পালস সৃষ্টিকারী ক্রিয়াশীলতার মাধ্যমে জলের উর্ধ্বমুখী পরিবহন ঘটে।
কিন্তু বিষ প্রয়োগে মৃত বা তাপে মৃত কোন কোষে ও রসের উৎস্রোত দেখা যায়। তাই এই তত্ত্ব খারিজ করা হয়।
মূলরোম দ্বারা শোষিত জল কোষান্তর অভিস্রবণের মাধ্যমে বহিস্তরের বাইরের থেকে ভিতরের দিকে প্রবেশ করে। বহিস্তরের পূর্ণ রসস্ফীত কোষগুলি মৃত জাইলেম বাহিকার মধ্যে যে উর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করে জলের উৎস্রোত ঘটায়, তাকে মূলজ চাপ বলে। জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ মূলের জাইলেম বাহিকার মধ্যে দিয়ে উর্ধ্বমুখে সংবাহিত হয়।
এই চাপের মাত্রা প্রায় দুই বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়, যা উঁচু গাছের অগ্রভাগে জলস্তম্ভকে ঠেলে তুলতে পারে না। যেমন, ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের মূলজ চাপ কম বা থাকে না বললেই চলে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মূলজ চাপের মান বিভিন্ন থাকে।
উদ্ভিদের মাটি থেকে শোষিত অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় পত্ররন্ধ্র দিয়ে বাষ্প আকারে নির্গত হয় এবং এর ফলে জল ও রসের স্তরটি দৈর্ঘ্যটানের বশবর্তী হয়ে উপরের দিকে বাহিত হয়, এই টানকেই বাষ্পমোচন টান বলে।
যেহেতু জল বাষ্পাকারে নির্গত হয়ে যাওয়ার জন্য শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়, তাই এটি ঋণাত্মক চাপ নামেও পরিচিত। জল বেরিয়ে যাওয়ার ফলে পাতার মেসোফিল কোষগুলিতে জল বিভব (Water potential) অনেক কমে যায়। ফলে সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য জাইলেম বাহিকা থেকে জল শোষিত হতে থাকে এবং জাইলেম বাহিকায় একটি চোষন চাপ (Suction pressure) সৃষ্টি হয়। এই চাপের ফলেই জল জাইলেম এর মধ্যে দিয়ে ঊর্ধ্বমুখে প্রবাহিত হতে থাকে।
বিজ্ঞানী ডিক্সন এবং জলি এই মতবাদের প্রবক্তা। তারা বলেন যে দুটি বলের প্রভাবে রসের উৎস ঘটে, সেই দুটি হল সংসক্তি (Cohesion) এবং আসঞ্জন (Adhesion)।
সদৃশ অণুগুলির পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকার ক্ষমতা কে সংশক্তি বলে। অপরদিকে ভিন্ন রাসায়নিক যৌগ গুলির মধ্যে যে আকর্ষণ বল তাকে আসঞ্জন বলে। জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে জল ঊর্ধ্বমুখে পরিবাহিত হওয়ার সময় জলের অণুগুলি সংশক্তি ধর্মের ফলে পরস্পরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে, অপরদিকে জাইলেম বাহিকার কোষপ্রাচীরের লিগনিন বা সেলুলোজ জাতীয় যৌগের সঙ্গে জলের অণু আসঞ্জন ধর্মের ফলে সংযুক্ত হয়ে থাকে। দেখা গেছে যে জাইলেম বাহিকায় জল কণাগুলোর সংসক্তি অধিকাংশ উদ্ভিদে ১০০ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের বেশি হয়। এইটা জাইলেম বাহিকায় দীর্ঘ জলস্তম্ভকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.