অবলিখন (ইংরেজি: Underwriting, প্রতিবর্ণীকৃত: আন্ডাররাইটিং) হল বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, বীমা বা ইনভেস্টমেন্ট হাউজ কর্তৃক প্রদত্ত এক ধরনের পরিষেবা, যার মাধ্যমে ঐ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের ক্ষতি বা আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা দেয় এবং আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করে। এর বিনিময়ে গ্রাহকের কাছ থেকে তারা প্রিমিয়াম গ্রহণ করে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট প্রাপ্তির বিপরীতে ঝুঁকি গ্রহণের কাজই হল অবলিখন। বেশ কিছু পরিস্থিতিতে অবলিখন করা হয়ে থাকে। যেমন: বীমা, পাবলিক অফারিং, ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের জন্য সংস্থার ন্যূনতম সংখ্যক সিকিউরিটি বিক্রি করতে রাজি হয় তাকে অবলেখক (ইংরেজি: Underwriter) বলা হয়।

ইতিহাস

আনুমানিক ১৬৮৯ সালে লন্ডনে অবলিখন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। তখন, সমুদ্র পথে জাহাজে করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আদান-প্রদান হতো। এই সমুদ্রগামী জাহাজের বীমা পদ্ধতির মাধ্যমেই অবলিখন প্রক্রিয়া চালু হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো নতুন শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে শুরু করে। ১৮৪৪ সালে ব্রিটিশ আইনসভায় প্রথম কোম্পানি আইন পাশ হয়। তখন অবলিখন বলতে কোম্পানির শেয়ার ইস্যুর ঝুঁকি স্থানান্তর ও গ্রহণের কাজকেই বোঝানো হতো।[1]

ইংরেজি "আন্ডার রাইটিং" নামটি আসলে লয়েড'স অব লন্ডনের বীমা বাজার থেকে নেওয়া। সেখানে, যেসব ব্যাংকার একটি নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে গ্রাহকের কোনো উদ্যোগের ঝুঁকি গ্রহণ করত, তাদের নাম লয়েডের স্লিপে লিখে রাখতে হত। এই লিখে রাখার বিষয়টি থেকেই আন্ডার রাইটিং বা অবলিখন নামের উদ্ভব।[2]

পদ্ধতি

অবলেখকরা বিভিন্ন পদ্ধতি বা ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার বা ডিবেঞ্চার কিনে থাকে। এই ব্যবস্থাগুলো হল:

  • নিশ্চিত অঙ্গীকার (firm commitment)
  • সর্বোত্তম প্রচেষ্টা (best effort)
  • সব অথবা মোটেই-না (all or none)

নিশ্চিত অঙ্গীকার পদ্ধতিতে অবলিখনকারীরা সিকিউরিটিজ ইস্যুকারী কোম্পানিকে অবলিখনকৃত সব সিকিউরিটিজ (শেয়ার বা ডিবেঞ্চার) বিক্রি করে দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে। এর পরও তারা যদি সেই সিকিউরিটিজের কোনো অংশ বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারাই নির্ধারিত মূল্যে সেগুলো কিনে নেয়।[1]

সর্বোত্তম প্রচেষ্টা পদ্ধতিতে অবলেখক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত দামে নিজে সকল শেয়ার বিক্রির জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করার নিশ্চয়তা দেয়। তবে, এক্ষেত্রে তারা সব সিকিউরিটিজ বিক্রি করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। তাই, সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর পরও যদি কোনো শেয়ার বা ডিবেঞ্চার বিক্রি না হয়, তখন অবলেখক সেগুলো উক্ত কোম্পানিকে ফেরত দিয়ে দেয়; নিজেরা সেগুলো কিনে নেয় না। ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানটি যদি যথেষ্ট সুপরিচিত ও স্বনামধন্য না হয়, তাহলে অবলেখকরা সাধারণত সম্পূর্ণ ঝুঁকি গ্রহণ করতে রাজি হন না। সে ক্ষেত্রে ইস্যুকারী ও অবলেখকের মধ্যে ঝুঁকি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চুক্তি সম্পাদন করা হয়।[1]

সিকিউরিটিজ অবলিখন

সিকিউরিটিজ অবলিখন হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলো সিকিউরিটি (ইক্যুইটি এবং ঋণ মূলধন উভয়) সরবরাহকারী কর্পোরেশন এবং সরকারের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের মূলধন সংগ্রহ করে। অবলেখকদের পরিষেবাগুলো সাধারণত প্রাথমিক বাজারে পাবলিক অফারিং-এর অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

নতুন জারি করা সিকিউরিটিজ যেমন স্টক বা বন্ড বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিতরণ করার জন্য অবলিখন একটি জনপ্রিয় উপায়। ব্যাংকগুলোর একটি সিন্ডিকেট (লিড ম্যানেজার) লেনদেনকে অবলিখন করে। এর অর্থ, তারা সিকিউরিটিগুলো বিতরণ করার ঝুঁকি গ্রহণ করল। যদি তারা পর্যাপ্ত বিনিয়োগকারী খুঁজে না পায় তবে তাদের কিছু সিকিউরিটি নিজেদের হাতে রাখতে হয়। অবলেখকরা ইস্যুকারীকে যে দাম দেয় এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বা অফারের অংশ কেনা ব্রোকার-ডিলারের কাছ থেকে যে দাম নেয় তার পার্থক্যই (আন্ডারাইটিং স্প্রেড) হল অবলেখকের আয়।

ঝুঁকি, অনন্যতা এবং পুরস্কার

একবার অবলিখন চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেলে, অবলেখক সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে না পারার ঝুঁকি বহন করে এবং যে পর্যন্ত তারা লাভজনকভাবে তা বিক্রি হতে পারে সে পর্যন্ত এগুলোর খরচও বহন করে।

যদি উপকরণটি কাঙ্ক্ষিত হয় তবে অবলেখক এবং সিকিওরিটিজ ইস্যুকারী একটি বিশেষ চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন। ইস্যুকারীকে অধিক দাম প্রদান বা অন্যান্য অনুকূল শর্তাদির বিনিময়ে ইস্যুকারী সিকিওরিটি ইন্সট্রুমেন্টের প্রাথমিক বিক্রয়ের জন্য অবলেখককে একচেটিয়া এজেন্ট হিসাবে নিতে সম্মত হতে পারে। এটি ঘটলে, তৃতীয় পক্ষের ক্রেতারা সরাসরি কেনার জন্য ইস্যুকারীর কাছে গেলেও ইস্যুকারী শুধু অবলেখকের মাধ্যমেই তা বিক্রয় করতে সম্মতি দেন।

সংক্ষেপে, অবলিখনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ-ইস্যুকারী নগদ টাকা পান, অবলেখকের যোগাযোগ এবং বিক্রয়ের মাধ্যমগুলোতে প্রবেশাধিকার পান এবং ভাল দামে সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে না পারার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকেন। অন্যদিকে, অবলেখক মার্কআপ থেকে লাভ করেন এবং একচেটিয়া বিক্রয় চুক্তি করতে চেষ্টা করেন।

এছাড়াও যদি সিকিউরিটিগুলোর দাম বাজার মূল্যের তুলনায় কম নির্ধারণ করা হয়, তবে অবলেখক গ্রাহকদের কাছে তাৎক্ষণিক মুনাফা প্রদান করে। এভাবে লাভ করার বিষয়টি বাজারের ঝুঁকি গ্রহণের জন্য অবলেখকের পুরস্কার হিসাবে ন্যায়সঙ্গত মনে করা হলেও অনেকে এটিকে অনৈতিক বলে সমালোচনা করে থাকেন। যেমন: ফ্র্যাঙ্ক কোয়াট্রন ডট কম বাবল চলাকালীন হট আইপিও স্টক ডল করার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত আচরণ করেছিল।

ব্যাংক অবলিখন

ব্যাংকিং খাতে অবলিখন বলতে ঋণ প্রদানের আগে ঋণগ্রহীতার প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিস্তারিত ক্রেডিট বিশ্লেষণ করাকে বুঝায়। এ ধরনের অবলিখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন:

  • গ্রাহক ঋণ অবলিখন: এতে ঋণ-গ্রহীতার চাকরির তথ্য, বেতন, আর্থিক প্রতিবেদন এবং সর্বজনীনভাবে উপলভ্য তথ্য যেমন ক্রেডিট প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ ঋণ গ্রহীতার ঋণের ইতিহাস ইত্যাদি যাচাইকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়া, ঋণদাতা গ্রহীতার ঋণের প্রয়োজনীয়তা এবং ফেরত প্রদানের সক্ষমতার মূল্যায়ন করে থাকে। উদাহরণ: মর্টগেজ আন্ডাররাইটিং।
  • বাণিজ্যিক অবলিখন: এতে ক্ষুদ্র ব্যবসার ব্যালান্স শিট বিশ্লেষণ, সম্পত্তির মূল্য বিশ্লেষণ, ঋণের অনুপাতের মূল্য (উত্তোলন) এবং উপলভ্য তারল্য (বর্তমান অনুপাত) সহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ির দেওয়া আর্থিক তথ্যের মূল্যায়ন থাকে। আয়ের বিবরণীর বিশ্লেষণে সাধারণত রাজস্বের প্রবণতা, স্থূল মার্জিন, লাভজনকতা এবং ঋণ পরিষেবা কভারেজ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক বা ডিলার ব্যাংক তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টের জন্য অথবা বিনিয়োগকারীদের পুনরায় বিক্রয়ের জন্য কর্পোরেট বন্ড, বাণিজ্যিক কাগজপত্র, সরকারী সিকিউরিটিজ, পৌরসভার জেনারেল-অবলিগেশন বন্ড কেনার বিষয়েও অবলিখনে উল্লেখ করতে পারে। কর্পোরেট সিকিউরিটির ব্যাংক অবলিখন পৃথক হোল্ডিং-সংস্থার অধীনে অধীভুক্ত; যা সিকিউরিটিজ অ্যাফিলিয়েটস বা সেকশন ২০ অ্যাফিলিয়েটস নামে পরিচিত।

মেশিন লার্নিংয়ের আবির্ভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত অবলিখনের ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলোর ফলে অবলিখন লিপিবদ্ধ করার প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র মানুষ অবলেখকদের স্থান দখল করে নিচ্ছে। যন্ত্রের প্রাকৃতিক ভাষা বোঝার কারণে এখন আগের চেয়ে বেশি তথ্যের উৎসের ঝুঁকি বিবেচনা করা যায়।[3] এই অ্যালগরিদমগুলো ব্যাংকিং-এর তথ্য, অবস্থানের উপাত্ত ইত্যাদি সাধারণত তথ্যের আধুনিক উৎস যেমন এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এবং এর সাহায্যে ঠিকানা যাচাই সহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। বেশ কয়েকটি সংস্থা এমন মডেল তৈরির চেষ্টা করছে যা গ্রাহককে প্রাকৃতিক ভাষা বোঝার অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগের তথ্য ব্যবহার করে অর্থ প্রদানের উপযুক্ততা অনুমান করতে পারবে। এটি মূলত কোনও ব্যক্তির জনপ্রিয়তা বিশ্লেষণ এবং পরিমাণ নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। এতে যারা উচ্চতর স্কোর করে তাদের ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

বীমা অবলিখন

বীমা অবলেখকরা সম্ভাব্য গ্রাহকদের ঝুঁকি এবং এক্সপোজারকে মূল্যায়ন করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে ক্লায়েন্টের কত কভারেজ পাওয়া উচিত, তার জন্য তাদের কতটা অর্থ প্রদান করা উচিত বা তাদের ঝুঁকি গ্রহণ করা এবং তাদের বীমা করা আদৌ উচিত কিনা। অবলিখনে এক্সপোজারেল ঝুঁকি পরিমাপ করা হয় এবং সেই ঝুঁকির উপর ভিত্তি করেই বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। অবলেখকের কাজ হল কোম্পানিকে ব্যবসায়ীক ক্ষতির ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা এবং বিনিময়ে বীমা নীতিমালা অনুসারে ঝুঁকির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রিমিয়াম গ্রহণ করা।

প্রত্যেক বীমা সংস্থার অবলিখন সংক্রান্ত নির্দেশিকার একটি নিজস্ব সেট রয়েছে, যা অবলেখকের এই ঝুঁকিটি গ্রহণ করা উচিত কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। বীমার জন্য একজন আবেদনকারীর ঝুঁকি মূল্যায়নে ব্যবহৃত তথ্যগুলো কভারেজের ধরনের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, অবলিখন অটোমোবাইল কভারেজ কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং রেকর্ড মূল্যায়ন করে। তবে অটোমোবাইলের ধরনটি আসলে অনেক বেশি সংকটপূর্ণ। জীবন বীমা বা স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে অবলিখন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে আবেদনকারীর স্বাস্থ্যের অবস্থা পরীক্ষা করা যেতে পারে (অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন বয়স এবং পেশাও বিবেচিত হতে পারে)। বীমাকারীরা ঝুঁকিগুলত শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য যেসব ফ্যাক্টর ব্যবহার করে সেগুলো সাধারণত উদ্দেশ্যমূলক, কভারেজ সরবরাহের সম্ভাব্য ব্যয়ের সাথে স্পষ্টভাবে সম্পর্কিত, প্রয়োগের জন্য ব্যবহারিক, প্রযোজ্য আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বীমা প্রোগ্রামের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকরতা রক্ষার জন্য নকশা করা।[4]

অবলেখকরা ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে বা এমন একটি পরামর্শ প্রদান করতে পারে যার ফলে প্রিমিয়াম লোড হয়ে যাবে (ব্যয় নির্বাহের পর মুনাফা লাভ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ সহ)। বীমা পণ্যের ধরনের উপর নির্ভর করে বীমা সংস্থাগুলো এই বিধিসমূহ এনকোড করার জন্য স্বয়ংক্রিয় অবলিখন সিস্টেম ব্যবহার করে এবং উদ্ধৃতি ও নীতিমালা জারিকরণের প্রক্রিয়ায় ম্যানুয়াল কাজের পরিমাণ হ্রাস করে। এটি কিছু সাধারণ জীবন বীমা বা ব্যক্তিগত সম্পদের[5] বীমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিছু বীমা সংস্থা অবশ্য তাদের অবলিখন করতে এজেন্টদের উপর নির্ভর করে। এই ব্যবস্থাটি কোনও বীমাকারীকে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই তার ক্লায়েন্টদের সাথে বীমা বাজারে কাজ করার সুযোগ দেয়।

বীমা অবলিখনে বাতিল হওয়ার দুটি প্রধান কারণ হল নৈতিক বিপত্তি এবং কোরিলেটেড লস।[6] নৈতিক বিপত্তি নিয়েও গ্রাহকের বীমা করা হলে গ্রাহকের ব্যয়বহুল পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ: বেডব্যাগ সাধারণত ব্যবহৃত গদি আনার কারণে অর্থ প্রদান এড়াতে বাড়ির মালিকদের বীমা থেকে বাদ দেওয়া হয়।[6] বীমায় সেইসব ঘটনাতেই অর্থ দেওয়া হয় যেগুলো সাধারণত গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। উদাহরণস্বরূপ: (জীবন বীমাতে সাধারণত) সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে অর্থ প্রদান করা হলেও আত্মহত্যার দ্বারা মৃত্যুর ঘটনায় অর্থ প্রদান করা হয়না। কোরিলেটেড লস হল একই সময়ে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যা পূরণ করতে বীমা সংস্থাগুলি দেউলিয়া হয়ে যায়। এ কারণেই সাধারণত বাড়ির বীমা নীতিমালায় আগুন বা পতিত গাছ (যা সাধারণত একটি পৃথক বাড়িকে প্রভাবিত করে) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়; তবে বন্যা বা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে (যা একই সাথে অনেকগুলি ঘরকে প্রভাবিত করে) দেওয়া হয় না।[6]

অবলিখনের অন্যান্য রূপ

রিয়েল এস্টেট অবলিখন

রিয়েল এস্টেট ঋণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতাকে যাচাই করার পাশাপাশি সম্পত্তিটিও যাচাই করা হয়। অবলেখকরা সম্পত্তি ঋণ-পরিষেবা কভারেজ অনুপাত (Debt service coverage ratio)- ডিএসসিআর ব্যবহার করে সম্পত্তিটির মূল্যমান ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম কিনা তা যাচাই করে দেখেন।

ফরেনসিক অবলিখন

বন্ধক নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে তা নির্ধারণ করতে ঋণদানকারী কর্তৃক "ঘটনা-পরবর্তী" যে প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় তাই হল ফরেনসিক অবলিখন।[7] ফরেনসিক অবলিখন ঋণ গ্রহীতাকে তাদের বর্তমান পাওনাদারের সাথে পরিবর্তনের দৃশ্যে কাজ করার ক্ষমতা দেয়। তবে, এটি ঋণ গ্রহীতাকে নতুন ঋণ গ্রহণ বা পুনঃতফসিলের যোগ্যতা দেয় না। এ ধরনের অবলিখন সাধারণত রিয়েল এস্টেটের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো দলের সাথে যুক্ত একজন অবলেখক দ্বারাই সম্পন্ন করা হয়।

পৃষ্ঠপোষকত্বের অবলিখন

অবলিখন শব্দ দিয়ে কোনো উদ্যোগের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতাকেও বোঝানো হতে পারে। আবার, গণমাধ্যমে (টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও উভয়ই) কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা পরিষেবাগুলোর বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে সেই প্রতিষ্ঠান যদি গণমাধ্যমটির অনুষ্ঠানের জন্য অর্থ প্রদান করে তবে তাকেও পৃষ্ঠপোষকত্বের অবলিখন বলা যায়।

থমসন আর্থিক লীগ টেবিল

সংযুক্তি এবং অধিগ্রহণ, ইক্যুইটি জারি, ঋণ প্রদান, সিন্ডিকেট ঋণ এবং মার্কিন পৌর বন্ড বাজারের অবলিখন সংক্রান্ত কার্যক্রম থমসন অর্থনৈতিক লীগ টেবিলের অন্তর্গত।[8]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.