নালন্দা
প্রাচীন ভারতীয় উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র / From Wikipedia, the free encyclopedia
নালন্দা (সংস্কৃত: नालन्दा; পালি: Nālandā; /naːlən̪d̪aː/) ছিল প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে (অধুনা ভারতের বিহার রাজ্য) অবস্থিত একটি খ্যাতনামা মহাবিহার। এটি বিহারের রাজধানী পাটনা শহরের ৯৫ কিলোমিটার (৫৯ মা) দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী থেকে আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নালন্দা মহাবিহার ছিল ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।[4]:১৪৯ এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ইতিহাসবিদগণ বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন।[5]:১৪৮[6]:১৭৪[7][8]:৪৩[9]:১১৯ বর্তমানে এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।[10][11]
नालन्दा | |
অবস্থান | নালন্দা জেলা, বিহার, ভারত |
---|---|
অঞ্চল | মগধ |
ধরন | শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় |
দৈর্ঘ্য | ৮০০ ফু (২৪০ মি) |
প্রস্থ | ১,৬০০ ফু (৪৯০ মি) |
এলাকা | ১২ হেক্টর (৩০ একর) |
ইতিহাস | |
নির্মাতা | প্রথম কুমারগুপ্ত |
প্রতিষ্ঠিত | খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী |
পরিত্যক্ত | খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী |
ঘটনাবলি | ১২০০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি কর্তৃক লুণ্ঠন ও ধ্বংস |
স্থান নোটসমূহ | |
খননের তারিখ | ১৯১৫–১৯৩৭, ১৯৭৪–১৯৮২[1] |
প্রত্নতত্ত্ববিদ | ডেভিড বি. স্পুনার, হীরানন্দ শাস্ত্রী, পলক শাহ, জে. এ. পেজ, এম. কুরাইশি, জি. সি. চন্দ্র, এন. নাজিম, অমলানন্দ ঘোষ[2]:৫৯ |
অবস্থা | সংরক্ষিত |
মালিকানা | ভারত সরকার |
ব্যবস্থাপনা | ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ |
জনসাধারণের প্রবেশাধিকার | আছে |
ওয়েবসাইট | ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | নালন্দা মহাবিহার প্রত্নস্থল (নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়), নালন্দা, বিহার |
ধরন | সাংস্কৃতিক |
মানক | iv, vi |
অন্তর্ভুক্তির তারিখ | ২০১৬ (৪০তম অধিবেশন) |
রেফারেন্স নং | ১৫০২ |
স্টেট পার্টি | ভারত |
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ নং এন-বিআর-৪৩[3] |
প্রাচীন ভারতে বৈদিক শিক্ষার উৎকর্ষ তক্ষশীলা, নালন্দা, বিক্রমশিলা প্রভৃতি বৃহদায়তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।[12] নালন্দা মহাবিহারের বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টীয় ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত সম্রাটগণের এবং পরবর্তীকালে কনৌজের সম্রাট হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষকতায়।[13]:৩২৯ গুপ্ত যুগের উদার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ফলশ্রুতিতে খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত ভারতে এক বিকাশ ও সমৃদ্ধির যুগ চলেছিল। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে অবশ্য সেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সেই সময় পূর্ব ভারতে পাল শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের তান্ত্রিক বিকাশ ছিল ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।[13]:৩৪৪
খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন নালন্দায় ভারত ছাড়াও তিব্বত, চীন, কোরিয়া ও মধ্য এশিয়ার পণ্ডিত ও ছাত্ররা অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করতে আসতেন।[14]:১৬৯ ইন্দোনেশিয়ার শৈলেন্দ্র রাজবংশও যে এই মহাবিহারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিল, তাও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে স্পষ্ট।
বর্তমান কালে নালন্দা মহাবিহার সম্পর্কে জানা যায় মূলত হিউয়েন সাং ও ই ৎসিং প্রমুখ পূর্ব এশীয় তীর্থযাত্রী ভিক্ষুদের ভ্রমণ-বিবরণী থেকে। এঁরা খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে নালন্দায় এসেছিলেন। ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথ মনে করেন যে, নালন্দার ইতিহাস হল মহাযান বৌদ্ধধর্মেরই ইতিহাস। হিউয়েন সাং তাঁর ভ্রমণ-বিবরণীতে নালন্দার অবদান হিসেবে যে সকল পণ্ডিতের নাম করেছেন, তাঁদের অনেকেই মহাযান দর্শনের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[13]:৩৩৪ নালন্দায় সকল ছাত্রই মহাযান এবং বৌদ্ধধর্মের আঠারোটি (হীনযান) সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থাদি অধ্যয়ন করতেন। সেই সঙ্গে বেদ, ন্যায়শাস্ত্র, সংস্কৃত ব্যাকরণ, ভেষজবিদ্যা ও সাংখ্য দর্শনও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।[12][13]:৩৩২–৩৩৩[15][16]
আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বখতিয়ার খিলজির এই মহাবিহার ধ্বংস করেন।[17] পরে ১৯শ শতাব্দীতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ প্রাথমিকভাবে এই প্রত্নস্থলে খননকার্য চালায়। ১৯১৫ সালে প্রথম এখানে নিয়মমাফিক খননকার্য শুরু হয় এবং ১২ হেক্টর জমিতে সুবিন্যস্ত এগারোটি মঠ ও ইঁটের তৈরি ছয়টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে প্রচুর ভাস্কর্য, মুদ্রা, সিলমোহর ও উৎকীর্ণ লিপিও আবিষ্কৃত হয়। এগুলির কয়েকটি নিকটবর্তী নালন্দা পুরাতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে রক্ষিত আছে।
২০১০ সালে ভারত সরকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে এবং রাজগীরে একটি সমসাময়িক ইনস্টিটিউট নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।[18] এটি "জাতীয় গুরুত্বের ইনস্টিটিউট" হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।[19]