Loading AI tools
ভারতীয় রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অমিত অনিলচন্দ্র শাহ (গুজরাটি: અમિત શાહ; জন্ম ২২ অক্টোবর ১৯৬৪) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ যিনি ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে গান্ধীনগরের লোকসভা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৭ সাল পর্যন্ত গুজরাতের রাজ্যসভা সদস্য ছিলেন। অমিত শাহকে বিজেপির প্রধান কৌশলী ও নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[5][6]
অমিত শাহ | |
---|---|
৩১তম ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৩০ মে ২০১৯ | |
প্রধানমন্ত্রী | নরেন্দ্র মোদি |
পূর্বসূরী | রাজনাথ সিং |
জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৯ জুলাই ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | লালকৃষ্ণ আদভানি |
১০ম ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ৯ জুলাই ২০১৪ – ২০ জানুয়ারি ২০২০ | |
পূর্বসূরী | রাজনাথ সিং |
উত্তরসূরী | জগৎ প্রকাশ নাড্ডা |
সংসদ সদস্য, লোকসভা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২৩ মে ২০১৯ | |
পূর্বসূরী | লালকৃষ্ণ আদভানি |
সংসদীয় এলাকা | গান্ধীনগর |
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা | |
কাজের মেয়াদ ১৯ আগস্ট ২০১৭ – ২৯ মে ২০১৯ | |
পূর্বসূরী | দিলীপ পান্ডিয়া |
উত্তরসূরী | সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর |
সংসদীয় এলাকা | গুজরাত |
গুজরাত বিধানসভার সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২০১২ – ২০১৭ | |
সংসদীয় এলাকা | নারানপুরা |
কাজের মেয়াদ ১৯৯৭ – ২০১২ | |
পূর্বসূরী | হরিশচন্দ্র লাভজিভাই প্যাটেল |
সংসদীয় এলাকা | সারখেজ |
গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২০০২ – ২০১৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [1] মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | ২২ অক্টোবর ১৯৬৪
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনতা পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | সোনাল শাহ |
সন্তান | জয় শাহ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় |
ওয়েবসাইট | www |
ডাকনাম | ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য[2][3][4] |
কলেজে থাকাকালীন সময়ে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৮ বছর বয়সে ছাত্র সংগঠনটিতে নিজের একটা স্থান করে নেন। নিরলসভাবে কাজ করার পর ১৯৮৭ সালে তাকে বিজেপিতে পাঠানো হয়।
১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে তিনি সারখেজ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন যার কিছু অংশ আহমেদাবাদে পড়েছিল। তিনি ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনেও সেখান থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আসনটি বিলুপ্ত হলে তিনি এর অদূরে অবস্থিত নারানপুরা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন ও ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেখানকার বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি মোদির মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অমিত শাহ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে বড় ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচনে বিজেপি ও এর জোটসঙ্গীরা অভাবনীয় ফলাফল করে ও প্রদেশের ৮০ টি আসনের ৭৩ টি জয়লাভ করে, যেটি ছিল তাদের সেরা ফলাফল। এর দরুন অমিত শাহ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব লাভ করেন ও ২০১৪ সালের জুন মাসে দলটির জাতীয় কমিটির সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন।[7]
তিনি ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে সাংগঠনিক ও প্রচারাভিযান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তার মেয়াদকালের প্রথম দুই বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ড, ২০১৬ সালে আসামে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় কিন্তু ২০১৫ সালে হেরে যায় দিল্লি ও পূর্বাঞ্চলীয় বড় রাজ্য বিহারে।
২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও দলের আধুনিক ঘাঁটি গুজরাতে বিজেপির জয়ের কারিগর হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।[8] সে বছরে বিজেপি তুলনামূলকভাবে ছোট রাজ্য মনিপুরের বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথমবারের মত মনিপুরের মসনদে বসতে সক্ষম হলেও অকালী-বিজেপি জোট তুলনামূলকভাবে বড় রাজ্য পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ হারায়।[9] ২০১৮ সালে দলটি ছত্তিসগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়। এর পরের বছর সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ৩০৩ টি আসনে বিজয়ী হয়, যা অমিত শাহকে দলটির সবচেয়ে সফল সভাপতির খেতাব এনে দেয়।[10]
অমিত শাহ ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[11] তিনি জন্মেছিলেন এক গুজরাতি হিন্দু বেনিয়া পরিবারে।[12][13][14] তার পরদাদা মনসা রাজ্যের নগরশেঠ ছিলেন।[15] তার বাবা অনিল চন্দ্র শাহ মানসার একজন ব্যবসায়ী ছিলেন ও পিভিসি পাইপের ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।[16] তিনি মেহসানার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও তিনি সি ইউ শাহ বিজ্ঞান কলেজে প্রাণ রসায়ন নিয়ে পড়ার জন্য আহমেদাবাদ গমন করেন। তিনি প্রাণ রসায়নে স্নাতক হবার পর বাবার ব্যবসায় কাজ শুরু করেন।[16] তিনি আহমেদাবাদে শেয়ার বাজারের পরামর্শক হিসেবে ও সেখানকার সমবায়ী ব্যাংকে কাজ করেছেন।[17]
তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথে বাল্যকাল থেকেই যুক্ত ছিলেন। তিনি এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাথে বালক অবস্থা থেকেই যুক্ত ছিলেন। তিনি আহমেদাবাদে কলেজে পড়াকালীন সময়ে এর "স্বয়ংসেবক" (স্বেচ্ছাসেবক) হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন।[12] রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে নরেন্দ্র মোদির সাথে পরিচয় ঘটে তার।[12] তখন মোদি আরএসএসের "প্রচারক" ছিলেন ও এর নগর শাখার যুব কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন।[16]
১৯৮৩ সালে অমিত শাহ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।[12][18] মোদির বিজেপি যোগদানের এক বছর পর ১৯৮৭ সালে তিনি যোগদান করেন দলটিতে।[16] ১৯৮৭ সালে তিনি দলটির যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কর্মী ছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সাংগঠনিক কাঠামোর ওপরের দিকে উঠতে থাকে। তিনি সংগঠনটির ওয়ার্ড সম্পাদক, থানা সম্পাদক, রাজ্য সম্পাদক, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[12] তিনি ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে গান্ধীনগরে লাল কৃষ্ণ আদভানির প্রচারাভিযান চালানোর সময় প্রচারাভিযান পরিচালনা করেছিলেন। তার দুর্দান্ত পরিচালনার জন্য তিনি প্রচারের আলোয় আসেন।[1][19]
১৯৯৫ সালে বিজেপি প্রথমবারের মত কেশুভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে গুজরাতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সে সময়ে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গুজরাতের গ্রামাঞ্চলে শক্ত অবস্থায় ছিল। মোদি ও শাহ গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের ক্ষমতা খর্ব করার জ্জ্য কাজ করেছিলেন। তাদের নীতি ছিল গ্রামের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি খুঁজে বের করা ও তাকে বিজেপিতে যোগদান করানো। তারা এর মাধ্যমে ৮,০০০ মানুষকে তাদের দলে যুক্ত করেন যারা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামপ্রধান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিল।[12]
মোদি ও শাহ একই পদ্ধতিতে রাজ্যের শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কংগ্রেসের প্রভাব কমাতে সমর্থ হন, যেগুলো রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। ১৯৯৯ সালে অমিত শাহ আহমেদাবাদ জেলা সমবায় ব্যাংকের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন, যেটি ভারতের সবচেয়ে বড় সমবায় ব্যাংক। গুজরাতে এই ধরনের নির্বাচনে বর্ণপ্রথা ভূমিকা পালন করত।সমবায় ব্যাংকগুলো সাধারণত প্যাটেল, গাদেরিয়া ও ক্ষত্রিয়রা নিয়ন্ত্রণ করত। এসবের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও অমিত শাহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। তখন ব্যাংকটি ২৭ কোটি রুপির ক্ষতি নিয়ে দেউলিয়া হবার পথে ছিল। অমিত শাহের আমলে এক বছরের ব্যাংকের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। মাত্র এক বছরে ব্যাংকটি ২৭ কোটি রুপি লাভ করে। ২০১৪ সালে ব্যাংকটির লাভ দাঁড়ায় ২৫০ কোটির কাছাকাছি।[12] তখন ব্যাংকের ২২ জন পরিচালকের ১১ জনই ছিলেন বিজেপিমনা।[16]
মোদি ও শাহ রাজ্যের ক্রীড়াঙ্গনেও কংগ্রেসের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইলেন।[12] অমিত শাহ গুজরাত রাজ্য দাবা ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[18] ২০০৯ সালে তিনি আর্থিকভাবে ধনী গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন, যখন নরেন্দ্র মোদি সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন।[16] ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার পর অমিত শাহ গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে মোদি দলের প্রাদেশিক শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হবার পর তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে অমিত শাহকে বড় দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি কেশুভাই প্যাটেলকে অনুরোধ করে অমিত শাহকে গুজরাত রাজ্য আর্থিক সংঘের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করান।শঙ্করসিনহ ভাঘেলা ও অন্যান্য নেতা গুজরাত সরকারে মোদির প্রভাব নিয়ে অভিযোগ করলে দলের নেতৃত্ব তাকে গুজরাত থেকে বের করে দলের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এই সময়ে (১৯৯৫-২০০১) অমিত শাহ গুজরাতে মোদির সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন।[16]
১৯৯৭ সালে মোদি অমিত শাহকে গুজরাত বিধানসভা উপনির্বাচনে সারখেজ থেকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পক্ষে চেষ্টা চালান।[20] ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অমিত শাহ উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক পদে অধিষ্ঠিত হন।[21] ১৯৯৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পুনরায় সারখেজের বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন।[22]
২০০১ সালের অক্টোবর মাসে বিজেপি কেশুভাই প্যাটেলকে শাসনব্যবস্থার অবনতির জন্য অপসারণ করে নরেন্দ্র মোদিকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করে। এর কয়েক বছরের মাঝে মোদি ও শাহ ধীরে ধীরে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আড়ালে নিয়ে যান।[16]
অমিত শাহ ২০০২ সালের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে আহমেদাবাদের সারখেজ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১,৫৮,০৩৬ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন, যা ছিল নির্বাচিত বিধায়কদের মাঝে সর্বোচ্চ। ২০০৭ সালের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি আবারো সারখেজ থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন; এবারো ভোটের ব্যবধান বাড়ে তার।[18]
নরেন্দ্র মোদির ১২ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে তিনি গুজরাতের অন্যতম প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। ২০০২ সালের নির্বাচনে জেতার পর তিনি রাজ্য সরকারের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পণ করা হউ তার ওপর।[1] এক সময়ে তিনি ১২টি বিষয়ের দায়িত্বে ছিলেন: স্বরাষ্ট্র, আইন ও বিচাত, কারাগার, সীমান্ত নিরাপত্তা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা, আবগারি শুল্ক, পরিবহন, মদ্যপাননিরোধ, রাজ্যরক্ষক বাহিনী, গ্রাম রক্ষক ফল ও বিধানসভা ও সংসদ সংক্রান্ত বিষয়।[16]
২০০৪ সাল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের অপপ্রয়োগের অভিযোগ এনে এটি বাতিল করার ঘোষণা দেয়। অমিত শাহের তত্ত্বাবধায়নে গুজরাত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ (সংশোধিত) বিল পাস হয়। বিলটি পাসের সময় গুজরাত বিধানসভার বিরোধীকক্ষ বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেছিল।[23]
অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে গুজরাত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিল পাস করান সেটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ গুজরাতে ধর্মান্তরকে কঠিন করে দেয়। তার বিরোধীরা এউ আইনটিকে ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বিরোধী বললেও অমিত শাহ এর বিরোধিতা করেন ও এটিকে বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ বিরোধী বিধান বলে অভিহিত করেন। বিলটি পাস করানোর ক্ষেত্রে তার উদ্যোগ আরএসএসের প্রবীণ নেতাদের অভিভূত করেছিল।[12]
২০১০ সালে অমিত শাহকে অপরাধী সোহরাবুদ্দিন শেখ, তার স্ত্রী কাউসের বি ও তাদের সহযোগী তুলসীরাম প্রজাপতির বিচার শেষ না করার পরিবর্তে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে হত্যা করার সিদ্ধান্তে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।[24] সিবিআইয়ের মতে সোহরাবুদ্দিন রাজস্থানের কিছু মার্বেল ব্যবসায়ীর নিকট মোটা অঙ্কের অর্থ চাঁদা হিসেবে দাবি করে আসছিল। সিবিআই দাবি করে যে, এই মার্বেল ব্যবসায়ীদের মাঝে দুজন সোহরাবুদ্দিনকে হত্যা করতে অমিত শাহ, ডিআইজি ডি. জি. ভ্যাঞ্জারা ও এসপি রাজকুমার পান্ডিয়ানকে অর্থ প্রদান করেছিল। ২০০৪ সালে ডিসিপি অভয় ছুদাসামা রমণ প্যাটেল ও দশরথ প্যাটেল নামের দুই বিল্ডার ভাইয়ের অফিসে গুলি করতে নির্দেশ প্রদাব করে।I[25] এটি করার উদ্দেশ্য ছিল সোহরাবুদ্দিন ও তুলসীরামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা। এর পরের বছর পুলিশ সোহরাবুদ্দিন, কাউসের বি ও তুলসীরামকে আহমেদাবাদের নিকটে এক খামারে তুলে নিয়ে যায়। এক সাজানো আক্রমণে সোহরাবুদ্দিনকে খুন করা হয়। ভ্যাঞ্জারা দাবি করেন যে, সে লস্কর-ই-তৈয়বার সাথে যুক্ত ছিল। কাউসের বিকেও প্রত্যক্ষদর্শী হবার দরুন খুন করা হয় ও তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্যাঞ্জারার চর হবার দরুন তুলসীরামকেও তখন যেতে দেয়া হয়। এক সাংবাদিক কর্তৃক সোহরাবুদ্দিন হত্যাকাণ্ডকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে সংঘটিত হবার কাহিনি ফাঁস হবায় পরে তাকেও খুন করা হয়। সিবিআই দাবি করে যে, অমিত শাহ ভ্যাঞ্জারাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেছিলেন এই হত্যাকাণ্ডগুলো সহজে সম্পন্ন করার জন্য।[26][27]
ভ্যাঞ্জারা ও অন্যান্য কর্মকর্তাকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় অমিত শাহের যুক্ত থাকার প্রমাণ হিসেবে সিবিআই ফোন কলের রেকর্ড উপস্থাপন করে। এতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে অমিত শাহের যোগাযোগের কথা জানা যায় যখন ভুক্তভোগীদের অবৈধ কাস্টডিতে রাখা হয়েছিল। সিবিআই আহমেদাবাদ জেলা সমবায় ব্যাংকে অমিত শাহের দুই সহযোগীর সাথে প্যাটেল ভাইদের কথোপকথনের ভিডিওটেপ উপস্থাপন করেছিল। এতে ব্যাংক পরিচালক যশপাল ছুদাসামা ও এর সভাপতি অজয় প্যাটেলকে প্যাটেল ভাইদের অমিত শাহের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করার কথা বলতে দেখা যায়। যশপাল ছুদাসামা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা অভয় ছুদাসামার ভাই। সিবিআইয়ের মতে, অভয় সোহরাবুদ্দিনকে নিজের ডানহাত হিসেবে ব্যবহার করে চাঁদাবাজ চক্র চালাতো।[28] বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত প্যাটেল ভাইয়েরা অমিত শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তারা দাবি করে যে, পুলিশ তাদের নিকট থেকে চাঁদাবাজি করার জন্য ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মামলা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা আরাও দাবি করে যে, ভ্যাঞ্জারা তাদের অমিত শাহের সাথে ফোনে কথা বলতে বলেছিল এবং তাদের সোহরাবুদ্দিন ও তুলসীরামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা নিয়ে হুমকি প্রদান করেছিলেন অমিত শাহ। তারা আরো দাবি করে যে, অজয় প্যাটেল ও অভয় ছুদাসামা তাদেরকে ২০০৬ সালের নিকট নির্দিষ্ট জবানবন্দি দিতে বলেছিল।[29]
অমিত শাহ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ও এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে গুজরাত দেশের রাজ্যগুলোর মাঝে অন্যতম সর্বনিম্ন এনকাউন্টার হওয়া রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন যে, তার পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ফোনে কথা বলার ঘটনা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নৈমিত্তিক দায়িত্বের অন্তর্গত।[30] তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিবিআইকে অপব্যবহারের অভিযোগ আনেন ও দাবি করেন যে, দেশজুড়ে একই সময়ে ১,৫০০ এর কাছাকাছি এনকাউন্টার ঘটলেও শুধু গুজরাতের এনকাউন্টার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।[31] তিনি বলেন যে, যদি তার বিরুদ্ধে পোক্ত প্রমাণ থাকেয তবে সিবিআই তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারে।[16] ২০১০ সালে এই মামলার প্রথম তদন্তকারী পুলিশ কমিশনার গীতা জোহরি দাবি করেন যে, সোহরাবুদ্দিন মামলার তদন্ত চলাকালে সিবিআই তাকে বেআইনিভাবে অমিত শাহকে মামলায় অভিযুক্ত করার বিষয়ে চাপ প্রদান করেছিল।[32]
ডি. জি. ভ্যাঞ্জারা ইশরাত জাহান এনকাউন্টার মামলার সাথেও যুক্ত ছিলেন। কিন্তু, সিবিআই এক্ষেত্রে অমিত শাহকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে।[33]
২০১০ সালের ২৫ জুলাই অমিত শাহ সোহরাবুদ্দিন মামলায় গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়। একসময়, অমিত শাহকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন হিসেবে মনে করা হত। যাই হোক, গ্রেফতারের দরুন তার রাজনৈতিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুজরাত সরকারের অনেক মন্ত্রী তার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন। গুজরাত সরকারের মন্ত্রীরা তাকে স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেন যার কখনো তার সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল না।[18]
অমিত শাহ জামিনের জন্য আবেদন করলে সিবিআই উদ্বেগ করে যে, তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এই মামলার ন্যায়বিচারকে প্রভাবান্বিত করতে পারেন।[16] তাকে গ্রেফতারে পর ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবর, শুক্রবারে তাকে তিন মাসের জন্য জামিন প্রদান করে গুজরাত হাইকোর্ট। এর পরদিন, বিচারপতি আফতাব আলম একটি পিটিশন নিয়ে তার বাড়ি যান যাতে তার গুজরাত প্রবেশ না করার কথা উল্লেখ ছিল।[12] এভাবে অমিত শাহকে বলপূর্বক গুজরাত ত্যাগ করে ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাইরের রাজ্যে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।[16] তিনি ও তার স্ত্রী দিল্লির গুজরাত ভবনের এক রুমে গিয়ে ওঠেন।[12] এরপর, সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই এর অনুরোধে তার জামিন বাতিল করে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন ও গুজরাত প্রবেশের প্রদান করে। এরপর তিনি ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারানপুরা (সারখেজ বিধানসভা কেন্দ্র তখন সরকারি আদেশে অবলুপ্ত) থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন।[18]
অমিত শাহ ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা ও ভুয়া এনকাউন্টারের বিরুদ্ধে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের হয়রানির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত ডিজিপি আর. বি. শ্রীকুমার যিনি নানাবতী-শাহ কমিশনের নিকট গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কিত প্রমাণ জমা দিয়েছিলেন, তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। রাহুল শর্মা, যিনি পুলিশ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যকার ফোন কলের কথোপকথনের রেকর্ড এনকাউন্টার সংক্রান্ত কমিশনের নিকট জমা দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ ভঙ্গের অভিযোগ আনাভ হয়। অতিরিক্ত ডিজিপি কুলদীপ শর্মা অভিযোগ করেন যে, অমিত শাহকে এক প্রতারকের নিকট থেকে আড়াই কোটি রুপি নিয়ে নিয়ে তাকে জামিন প্রদানের দায়ে অভিযুক্ত করার জন্য তাকে পুলিশ বিভাগ থেকে গুজরাত রাজ্য ভেড়া ও উল উন্নয়ন বিভাগে বদলি করা হয়েছে। ঐ প্রতারক মাধবপুরা বাণিজ্যিক সমবায় ব্যাংক থেকে ১,৬০০ কোটি রুপি জালিয়াতির সাথে যুক্ত ছিল। কুলদীপ শর্মা পরবর্তীতে কংগ্রেস সরকার কর্তৃক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। তার ভাই প্রদীপ শর্মা ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুর্নীতির দায়ে জেল খাটেন। শর্মা ভাইয়েরা অভিযোগ করেন যে, গুজরাত সরকার তাদের হয়রানি করছে।[16] নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিধানসভা কেন্দ্র অবলুপ্তকরণের মাধ্যমে গুজরাতে বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেবার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।[20]
২০১৩ সালে অমিত শাহের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সময়ে এক মহিলার প্রতি অবৈধ নজরদারি করার আদেশ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট কোবরাপোস্ট ও গুলাইল অমিত শাহ ও জি. এল. সিংহালের অনেকগুলো অডিও কথোপকথন ফাঁস করে। এই অডিও টেপগুলো সিবিআইয়ের নিকট প্রদান করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে এই পোর্টালগুলোতে ফাঁস হয়েছিল। এই কথোপকথনগুলোতে রাজ্য প্রশাসন ব্যবহার করে এক মহিলা ও আইএএস কর্মকর্তা প্রদীপ শর্মার (যিনি পরবর্তীতে গুজরাত সরকার কর্তৃক চাকরিচ্যুত হন) উপর নজরদারি চালানোর কথা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছিল। সিংহাল ও শাহ বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে "সাহেব" বলে অভিহিত করছিলেন। ধারণা করা হয়, তারা শব্দটির মাধ্যমে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বুঝিয়েছিলেন।[34] অমিত শাহ তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন ও এগুলোকে রাজনৈতিক অপপ্রচার বলে অভিহিত করেন।[16] বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই "স্নুপগেট" ঘটনার সূক্ষ্ম তদন্ত দাবি করে। যাই হোক, ২০১৪ সালের মে মাসে ঐ মহিলা সুপ্রিম কোর্টে যেয়ে বলেন যে, তার উপরে হওয়া গোপন নজরদারি হয়েছিল "ব্যক্তিগত অনুরোধ" এর ওপর ভিত্তি করে এবং তিনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গুজরাত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে এমন আশঙ্কায় তিনি আদালতকে সব ধরনের তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে অনুরোধ করেন।[35]
নরেন্দ্র মোদিকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর দলটিতে অমিত শাহের প্রভাব বাড়তে থাকে। মোদি-শাহের বিরুদ্ধে লালকৃষ্ণ আদভানি, সুষমা স্বরাজ, মুরলি মনোহর যোশি ও যশবন্ত সিংয়ের মত বিজেপি নেতাদের আড়াল করার অভিযোগ আছে।[16] এই সময়ে তিনি অসাধারণ নির্বাচনী প্রচারাভিযান পরিচালকের খ্যাতি লাভ করেন ও তাকে "আধুনিক যুগের চাণক্য ও দক্ষ কৌশলী" হিসেবে অভিহিত করা হয়।[36] অমিত শাহ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন ও তাকে উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে এই কাজের জন্য বাছাই করেছিলেন রাজনাথ সিং, মোদি নন। তিনি গুজরাতের বিভিন্ন কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণাধীন সংগঠনে কংগ্রেসের নিকট থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেবার ক্ষেত্রে তার পদক্ষেপে মুগ্ধ হয়েছিলেন।[12] এই সিদ্ধান্ত দলের অনেক নেতা খুশি করতে পারে নি যারা অমিত শাহকে দেখেছিলেন অপরাধে অভিযুক্ত এর রাজনীতিবিদ হিসেবে। শেখর গুপ্তার মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্ধান্তটিকে "মারাত্মক ভুল" বলে অভিহিত করেছিলেন।[37]
২০১০ সালে অমিত শাহ গ্রেফতার হবার পর তার রাজনৈতিক জীবন সংকটের মুখে পড়লেও ২০১৪ সালে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে তা পুনরুজ্জীবিত হয়। অমিত শাহের আওতাভুক্ত উত্তর প্রদেশে বিজেপি ও এর জোটসঙ্গীরা ৮০টির মাঝে ৭৩টি আসন লাভ করে। অমিত শাহকে ২০১৩ সালের ১২ জুন বিজেপির উত্তর প্রদেশ প্রচারাভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যখন নির্বাচন শুরু হতে এক বছরেরও কম সময় বাকি ছিল।[16] ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অমিত শাহ উত্তর প্রদেশে উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন। তিনি ২০১২ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির জয়লাভের কারণ বুঝতে চেষ্টা করেন। তিনি বুঝলেন যে, ভোটাররা সমাজবাদী পার্টির উপরে অখুশি। তাদের মতে রাজ্য সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দলিত শ্রেণীর ভোটারদের সরকারের প্রতি অখুশি হবার বিষয়টি সুযোগ হিসেবে নিলেন। তারা সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় দলিত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত ২৭% কোটায় সরকারের সংখ্যালঘুদের জন্য ৪.৫% কোটা রাখার সিদ্ধান্তে অখুশি ছিল।[16]
অমিত শাহ ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী নির্বাচনে ভূমিকা রাখেন। দল ও দলের আদর্শের প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে প্রার্থীর লোকসভা কেন্দ্রে রাজনৈতিক অবস্থান ও জেতার সামর্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি। তার দল দেখে যে, মাত্র ৩৫% বিজেপি সমর্থক মূলত উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে ভোট দিতে থাকে। এজন্য তিনি প্রত্যেক বুথের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারাভিযান করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি রাজ্যের ১,৪০,০০০ বুথের প্রতিটিতে ৭ থেকে ১০ সদস্যের এক সাংগঠনিক কমিটি গঠন করেন। প্রত্যেক বুথের জন্য কমিটি ভোটারদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ি বাড়ি যেত।[16] তার নির্বাচনী দল ৪৫০টি জিপিএসযুক্ত ভ্রাম্যমাণ যান ("ভিডিও রথ") ব্যবহার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছিল, যেখানে গণমাধ্যমের তেমন প্রবেশ ঘটে নি।[38] তিনি ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের ৭৬টিতে নিজে গিয়েছিলেন। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বারাণসী থেকে লড়তে পরামর্শ দেন।[39]
অমিত শাহ মোদিকে আরএসএসের স্বেচ্ছাসেবকদের তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারাভিযানের কাজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রাজি করান, যা পরবর্তীতে বিজেপির জন্য খুব উপকারী বিষ্য হয়ে দাঁড়ায়।[39] যদিও আরএসএস আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যুক্ত ছিল না, অমিত শাহ আরএসএসের স্বেচ্ছাসেবকদের নির্বাচনী প্রচারাভিযান পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের সাথে যুক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ, আরএসএস স্বেচ্ছাসেবকরা বিজেপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারাভিযান চালানোর ক্ষেত্রে তাদের দাবিকৃত বাড়িসংখ্যার বিষয়টি যাচাই করত।[16] অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদির সমর্থনে হওয়া "বৃহৎ সমাবেশ" এ সহায়তা করেন। অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলের মত নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটারদের পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গ্রামপ্রতি একটি ভ্যানের ব্যবস্থা করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, অন্যান্য দলের মত বিজেপি এই যানবাহন ভাড়া করার ক্ষেত্রে কোনো অর্থ প্রদান করবে না। তিনি ঘোষণা করেন যে, যারা গ্রামের ভোটারদের যানবাহনে করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে, তারা তাদের গ্রামের বিজেপি শাখার নেতা হিসেবে নিযুক্ত হবে। তার এ কৌশল বহু গ্রামনেতাকে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যুক্ত করে, যা বিজেপির বিজয়কে নিশ্চিত করে।[12]
সমালোচকরা অমিত শাহকে উত্তর প্রদেশের ভোটারদের ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভাজিত করার দায়ে অভিযুক্ত করেন। অযোধ্যা পরিদর্শনের সময় তিনি দলের স্থানীয় কমিটির এক বৈঠকে রাম জন্মভূমিতে মন্দির নির্মাণের বিষয় তোলেন। বিজেপি এমন তিনজন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করেছিল যাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মুজাফফরনগর দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তার এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছিল। বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে।[16] এক বক্তৃতায় ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে "প্রতিশোধ" গ্রহণের কথা বলার দরুন তার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়।[20] তিনি সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিকে লখনৌয়ে তার প্রচারাভিযানের কাজে লাগান।[40]
অমিত শাহ উত্তর প্রদেশের বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি শক্তিশালী নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এসময়ে বিভিন্ন কৌশলী প্রচারাভিযানে কয়েকবার নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন মোদি তার প্রতিপক্ষ ও সম্ভাব্য নির্বাচনী মিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন তখন তিনি এর বিরোধিতা করেন। তিনি বিজেপিকে "মোদি বনাম সবাই" কৌশল থেকে সরে না আসার পরামর্শ দেন।[39] তিনি পাট্টালি মাক্কাল কাটচির মত আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে বিজেপির নির্বাচনী জোটগঠনে ভূমিকা পালন করেন।[20]
২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিজেপির কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড সর্বসম্মতভাবে অমিত শাহকে বিজেপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে।[41] তিনি পুনরায় ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে বিজেপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।[42]
বিজেপি সভাপতি হবার পর তিনি দলের সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জোরদার কর্মসূচি হাতে নেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিজেপি ১০ কোটি সদস্য তাদের দলে আছে বলে দাবি করে।[43][44]
২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার নেতৃত্বে বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড ও আসামের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে, কিন্তু দিল্লি ও বিহার বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যায়।[45]
তিনি ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারাভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন যা বিজেপিকে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয় এনে দেয়। সে সময় উত্তর প্রদেশের ৪০৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩২৫টিতে জয়লাভ করে যেটি ছিল সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সেরা সাফল্য।[46][47] বিজেপি ২০১৭ সালে মনিপুর বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।[48] তার তত্ত্বাবধায়নে ২০১৭ সালে বিজেপি টানা ষষ্ঠবারের মত গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে ও হিমাচল বিধানসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নিকট থেকে রাজ্যের শাসনভার ছিনিয়ে নেয়। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বিজেপি প্রথম বারের মত বামশাসিত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। বিজেপি নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়েও নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি করে এবং জোটসঙ্গীদের মাধ্যমে রাজ্যের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
২০১৮ সালে অমিত শাহ লাখো "অবৈধ অনুপ্রবেশকারী"রা তার দেশে "ঘুনপোকা"র মত প্রবেশ করেছে বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে এসব লোকদের মূলোৎপাটন করা উচিত। "তাদের ছুঁড়ে ফেলা উচিত কি উচিত নয়? লাখো অনুপ্রবেশকারী আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে ও আমাদের দেশকে উইপোকার মত খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। আমাদের এদের মূলোৎপাটন করা উচিত নয় কি?"[49]
অমিত শাহ বিজেপিকে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী করতে অবদান রাখেন, যা তাকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বিজেপি সভাপতি হবার খেতাব এনে দেয়।[10] নির্বাচনী প্রচারাভিযান চলাকালে তিনি ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মাঝে ৩১২টিতে গিয়েছিলেন, ১৮টি রোডশো, ১৬১টি গণবৈঠক ও ১,৫০০ এরও অধিক বিজেপির রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।[50]
তাকে প্রায়ই আধুনিক যুগের চাণক্য হিসেবে অভিহিত করা হয়।[51] চাণক্য নন্দ সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নামের এক যুবকের দ্বারা। তিনি নিজে চাণক্যর একজন ভক্ত। এক প্রতিবেদকের তার নয়াদিল্লির বাড়িতে চাণক্যের ছবি থাকা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: "[আমি প্রশংসা করি] চাণক্য[কে] কারণ তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান। তার সূত্র হৃদয়গ্রাহীন অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকারি সমস্যার সবাধান সব তার মাঝে আছে।” ভাগবত পুরাণ তার অন্যতম প্রিয় বই যেটি তিনি কারান্তরীণ থাকাকালীন সময়ে পড়েছিলেন।[52]
অমিত শাহ ২০১৯ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৯ সালের ১ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[53] ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট অমিত শাহ ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করতে রাজ্যসভায় এক প্রস্তাব পাস করেন।[54] এর দরুন জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মত একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয় ও লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আলাদা করে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।[55]
২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন যে, গোটা ভারতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী কার্যকর করা হবে।[56]
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ভারতীয় আইনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পেশ করেন, যা পরবর্তীতে আইনে পরিণত হয়। এতে ২০১৫ সালের পূর্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে অবৈধভাবে আসা হিন্দু, খ্রিষ্টান, পার্সি, বৌদ্ধ ও জৈন শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। বিশ্লেষকগণ ও বিরোধী দলগুলো এই আইনটিকে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করে। কিন্তু, শাহ এই আইনটিকে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন নি কেননা, এটি ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্ব হরণ করবে না।[57] এই আইনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৮৯ সাল থেকে অদ্যাবধি অমিত শাহ স্থানীয় সরকারসহ ২৮টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কোনো নির্বাচনে পরাজিত হন নি।
নির্বাচন | বছর | আসন | ফলাফল | ভোট | % ভোট | সূত্র |
---|---|---|---|---|---|---|
গুজরাত বিধানসভা (উপনির্বাচন) | ১৯৯৭ | সারখেজ | বিজয়ী | ৭৬,৮৪৯ | ৫৬.১০% | [58] |
গুজরাত বিধানসভা | ১৯৯৮ | সারখেজ | বিজয়ী | ১,৯৩,৩৭৩ | ৬৯.৮১% | [22] |
গুজরাত বিধানসভা | ২০০২ | সারখেজ | বিজয়ী | ২,৮৮,৩২৭ | ৬৯.৯৮% | [59] |
গুজরাত বিধানসভা | ২০০৭ | সারখেজ | বিজয়ী | ৪,০৭,৬৫৯ | ৬৮.০০% | [60] |
গুজরাত বিধানসভা | ২০১২ | নারানপুরা | বিজয়ী | ১,০৩,৯৮৮ | ৬৯.১৯% | [61] |
সাধারণ নির্বাচন | ২০১৯ | গান্ধীনগর | বিজয়ী | ৮,৮৮,২১০ | ৬৯.৭৬% | |
সাধারণ নির্বাচন | ২০২৪ | গান্ধীনগর | বিজয়ী | ১০,১০,৯৭২ | ৭৬.৫ | [62] |
অমিত শাহ সোনাল শাহের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের জয় শাহ নামে এক পুত্রসন্তান আছে। অমিত শাহ তার মায়ের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন যিনি অসুস্থতাজনিত কারণে ২০১০ সালের ৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।[12][16] অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা তাকে সামাজিকীকরণ করতে অপ্রিয় এমন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন।[63] অমিত শাহের ছয় বোন আছে এবং তাদের দুইজন শিকাগোর অধিবাসী।[64][65]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.