স্ট্রোক
From Wikipedia, the free encyclopedia
স্ট্রোক হলো একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য কোষের মৃত্যু ঘটে।[5] প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে: মস্তিষ্কের রক্তসংরোধজনিত ও অন্তকরোটি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক।[5] উভয় কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।[5] স্ট্রোকের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্ধ-পক্ষাঘাত বা শরীরের একপাশ নড়াতে অক্ষম হওয়া বা অনুভূতিহীন হওয়া, কথা বুঝতে বা বলতে না পারা, মাথা বা গা ঝিমঝিম করা, একপাশের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া।[2][3] স্ট্রোক ঘটার পরপরই সাধারণত উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।[3] যদি উপসর্গ এক বা দুই ঘন্টার কম থাকে তাহলে একে ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ (TIA) বলে যা ছোট স্ট্রোক নামেও পরিচিত।[3] রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বিশেষ করে উপ-অ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণে তীব্র মাথাব্যথা হয়।[3] স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ স্থায়ী হয়।[5] দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে অন্যতম হলো নিউমোনিয়া ও মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ হারানো।[3]
স্ট্রোক | |
---|---|
প্রতিশব্দ | সেরিব্রোভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট (CVA), সেরিব্রোভাস্কুলার ইনসাল্ট (CVI), ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ |
মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে যে একটি ধমনির অবরুদ্ধ অবস্থার জন্য ডান পাশে রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয়েছে। সিটি স্ক্যানের পরিবর্তনগুলো শুরুর দিকে দৃশ্যমান নাও হতে পারে।[1] | |
বিশেষত্ব | স্নায়ুবিদ্যা, স্ট্রোক মেডিসিন |
লক্ষণ | অর্ধ-পক্ষাঘাত বা শরীরের একপাশ নড়াতে অক্ষম হওয়া বা অনুভূতিহীন হওয়া, কথা বুঝতে বা বলতে না পারা, মাথা বা গা ঝিমঝিম করা, একপাশের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া।[2][3] |
জটিলতা | অনড় বোধশক্তিহীন অবস্থা[4] |
কারণ | মস্তিষ্কের রক্তসংরোধ ও অন্তকরোটি রক্তক্ষরণ।[5] |
ঝুঁকির কারণ | উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অতিস্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, বহুমূত্র, পূর্বের ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ, শেষ পর্যায়ের বৃক্কীয় রোগ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন।[2][6][7] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে ও মেডিকেল চিত্রের সাহায্যে যা সাধারণত রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না তা জানার জন্য করা হয়।[8][9] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | রক্তে শর্করা কম হওয়া[8] |
চিকিৎসা | ধরনের ওপর ভিত্তি করে।[2] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | গড় আয়ু ১ বছর[2] |
সংঘটনের হার | ৪ কোটি ২৪ লাখ (২০১৫)[10] |
মৃতের সংখ্যা | ৬৩ লাখ (২০১৫)[11] |
উচ্চ রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।[6] অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান, অতিস্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, বহুমূত্র, পূর্বের ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ, শেষ পর্যায়ের বৃক্কীয় রোগ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন।[2][6][7] ইস্কিমিক বা রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয় প্রধানত একটি রক্তবাহের সংরোধের ফলে, যদিও এর আরও অপেক্ষাকৃত কম প্রধান কারণও আছে।[12][13][14] হিমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক ঘটে হয় অন্তকরোটি রক্তক্ষরণ অথবা উপ-অ্যারাকনয়েড স্থানে রক্তক্ষরণের ফলে।[12][15] মস্তিষ্কের রক্তবাহের অ্যানিউরিজম বিদারণের ফলে রক্তক্ষরণ হয়।[12] মূলত শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং সহায়ক হিসেবে সিটি স্ক্যান ও এম আর আই স্ক্যান করা হয়।[8] সিটি স্ক্যানের সাহায্যে রক্তপাত হয়েছে কি না তা বুঝা যায় তবে রক্তসংরোধ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না কারণ শুরুর দিকে সিটি স্ক্যানে রক্তসংরোধের লক্ষণ সাধারণত দৃশ্যমান হয় না।[9] অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করা হয় ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান ও অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার জন্য।[8] রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলেও একই রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়।[8]
প্রতিরোধ করার উপায়সমূহ হলো ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানসমূহ কমিয়ে আনা, যাদের ক্যারোডিট ধমনির সংকোচনজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে ধমনি উন্মুক্ত করা ও অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন থাকলে ওয়ারফারিন সেবন করা।[2] প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকগণ অ্যাসপিরিন অথবা স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন।[2] স্ট্রোক বা TIA এর ক্ষেত্রে প্রায়শই জরুরি সেবার প্রয়োজন হয়।[5] রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক যদি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে নির্ণয় করা যায় তবে থ্রম্বোলিটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব যা রক্তপিণ্ডকে ভেঙে দিবে।[2] কিছু রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে স্নায়ুশল্য চিকিৎসার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়।[2] স্ট্রোকের চিকিৎসার অন্যতম একটি দিক হলো স্ট্রোক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হারানো কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা; তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সুবিধাটি নেই।[2]
২০১৩ সালে প্রায় ৬৯ লাখ লোকের রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক ও ৩৪ লাখ লোকের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়েছিল।[16] ২০১৫ সালে প্রায় ৪ কোটি ২৪ লাখ মানুষ ছিল যাদের পূর্বে একবার স্ট্রোক হয়েছিল এবং তখনও জীবিত ছিল।[10] ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতি বছর স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বে ১০% হ্রাস পেয়েছিল এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে ১০% বৃদ্ধি পেয়েছিল [17] ২০১৫ সালে মৃত্যুর কারণের দিক থেকে করোনারি ধমনি রোগের পর স্ট্রোকের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেবছর স্ট্রোকে মারা গিয়েছিল ৬৩ লাখ মানুষ যা মোট মৃত্যুর প্রায় ১১%। [11] প্রায় ৩০ লাখ মৃত্যু ঘটেছিল রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকে যেখানে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে মারা গিয়েছিল ৩৩ লাখ লোক।[11] স্ট্রোকে আক্রান্ত মোট লোকের প্রায় অর্ধেকই এক বছরের কম সময় বাঁচে।[2] সার্বিকভাবে, প্রায় দুই তৃতীয়াংশ স্ট্রোক রোগীর বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি।[17]