Loading AI tools
প্রাক্তন রাজ্য এবং স্বাধীন রাষ্ট্র, বর্তমান একটি ভারতীয় প্রদেশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিকিম রাজ্য (ধ্রুপদী তিব্বতি এবং সিকিমি: འབྲས་ལྗོངས། দ্রেন্জং), পূর্বে যা দ্রেমোশং নামে পরিচিত ছিল (ধ্রুপদী তিব্বতি এবং সিকিমি: འབྲས་མོ་གཤོངས།, ১৮০০ সাল পর্যন্ত সরকারি নাম), পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের একটি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র ছিল। ১৬৪২ থেকে ১৬ মে ১৯৭৫ পর্যন্ত রাজ্যটি টিকে ছিল। রাজ্যটি তিব্বতীয় বৌদ্ধ নামগিয়াল রাজবংশের চোগিয়াল দ্বারা শাসিত হতো।
সিকিম রাজ্য འབྲས་ལྗོངས། (সিক্কিমী) দ্রেন্জং འབྲས་མོ་གཤོངས། (ধ্রুপদী তিব্বতী) দ্রেমোশং ᰕᰚᰬᰯ ᰜᰤᰴ (লেপচা) মায়েলল লিয়াং | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
১৬৪২–১৯৭৫ | |||||||
সিকিমের পতাকা
(১৯৬৭-১৯৭৫) | |||||||
উত্তর-পূর্ব ভারতে সিকিমের ঐতিহাসিক মানচিত্র | |||||||
অবস্থা |
| ||||||
রাজধানী | |||||||
প্রচলিত ভাষা | |||||||
ধর্ম | মহাযান বৌদ্ধ | ||||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | দ্রেনজপ, সিকিমীয় | ||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||
চোগিয়াল | |||||||
• ১৬৪২–১৬৭০ (প্রথম) | ফুন্টসোগ নামগিয়াল | ||||||
• ১৯৬৩–১৯৭৫ (শেষ) | পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল | ||||||
আইন-সভা | সিকিম রাজ্য কাউন্সিল | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১৬৪২ | ||||||
• তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত | ১৮১৭ | ||||||
১৮৩৫ | |||||||
• পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন | ১৯৭৫ | ||||||
• ভারতের সাথে একীভূত | ১৬ মে ১৯৭৫ | ||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | ভারত |
আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে সিকিম নেপালি (তৎকালীন গোর্খা রাজ্য) আগ্রাসনের শিকার হয়। এর ফলে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিকিম রাজ্য গোর্খা শাসনে ছিল। ১৭৭৫ সাল থেকে ১৮১৫ সালের মধ্যে পূর্ব ও মধ্য নেপাল থেকে প্রায় ১,৮০,০০০ জাতিগত নেপালি সিকিমে চলে এসেছিল। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কালে নেপালি গোর্গারা ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও আক্রমণ করত। এর ফলে ব্রিটিশ ও সিকিম রাজ্যের সাধারণ শত্রু ছিল নেপালি গোর্খারা। তাই ব্রিটিশ ভারতের সাথে সিকিমের মিত্রতা গড়ে ওঠে। ফলে ক্ষুব্ধ নেপালিরা প্রতিশোধ নিতে সিকিম আক্রমণ করে সিকিমের তরাই সহ বেশিরভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। নেপালি গোর্খাদের এই আগ্রাসী আচরণ ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নেপাল আক্রমণ করতে প্ররোচিত করে, যার ফলে ইঙ্গ-নেপালি যুদ্ধ হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নেপালের মধ্যে সুগৌলি চুক্তি হয়। চুক্তির ফলে নেপাল পৃথিবীর উপর তাদের আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করে সিকিমের অধিকৃত এলাকাগুলো ফিরিয়ে দেয়। এভাবে সিকিমে উপর নেপালি আধিপত্যের অবসান ঘটে।
কিন্তু এর ফলে সিকিমে ব্রিটিশদের আধিপত্য বাড়তে থাকে। একসময় ব্রিটিশরা চাপে ফেলে সিকিমের কাছ থেকে দার্জিলিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও ব্রিটিশরা দার্জিলিংয়ের জন্য সিকিমকে নামেমাত্র কর দিত, তবুও এর ফলে সিকিমের সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। আবার সিকিমের অনেক মানুষ উন্নত জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে সিকিম পার হয়ে ব্রিটিশ ভারতের অংশের জীবন যাপন করতে শুরু করে। কিন্তু সিকিমের রাজা এতে অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা করলে ব্রিটিশদের সাথে তাদের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। ১৮৪৯ সালে দুজন উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তা সিকিমে গেলে সিকিম প্রশাসন তাদের বন্দি করে রাখে। এই ঘটনা সহ আরো ঘটনার জের ধরে ব্রিটিশরা আবার দার্জিলিং সহ সিকিমের অনেকাংশ দখল করে নেয়। বিপর্যয় সামাল দিতে সিকিম রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাথে তিতালিয়া চুক্তি করে। চুক্তির পর ব্রিটিশরা সিকিমকে তাদের এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয়। তবে সিকিম এক্ষেত্রে অনেকটা স্বাধীন থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতেই ছিল। অর্থাৎ এই চুক্তির ফলে সিকিম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। [3] ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সিকিম ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে রয়ে যায়।
ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সময় তথা ভারত ভাগের সময় দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিজস্ব সিদ্ধান্তে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগদান কিংবা স্বাধীন থাকার সুযোগ দিয়েছিল। ফলে বেশিরভাগ রাজ্য ভারতে এবং কিছু পাকিস্তানে যোগ দিলেও হায়দ্রাবাদ, জম্মু ও কাশ্মীর (পরবর্তীতে ভারতে আত্মীকৃত হয়) এবং সিকিম স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে সিকিম একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
কিন্তু সেসময় ‘সিকিম স্টেট কংগ্রেস’ নামক ভারত-পন্থী একটি রাজনৈতিক দল তখন সিকিমে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সিকিমের নেপালি বংশোদ্ভূত হিন্দুরা এই আন্দোলনে ব্যপকভাবে জড়িয়ে যায়। তাদের প্রবল চাপের মুখে ১৯৫০ সালে সিকিমের ১১তম চোগিয়াল (সিকিম ও লাদাখের রাজাদের উপাধি ছিল চোগিয়াল) থাসি নামগিয়াল ভারতের সাথে তখন একটি চুক্তি করতে বাধ্য হন। এই চুক্তির ফলে স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্র ভারতের একটি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। [4]
১৯৫০ সালে সিকিম ভারতের আশ্রিত রাজ্য হওয়ার ফলে ফলে ভারতের হাতে সিকিমের পররাষ্ট্র, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ এসে যায়। [5] কিন্তু সিকিমের সব ধরনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এটি ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে ভারততের একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।
চোগিয়ালের অধীনে সাংবিধানিক সরকার গঠনের জন্য ১৯৫৩ সালে একটি রাজ্য কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরিবর্তীতে চোগিয়াল থাসি নামগিয়ালের পুত্র পালডেন থন্ডুপ নামগিয়ালের আমলে তিনি সিকিমের স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করতে এবং একটি "মডেল এশীয় রাষ্ট্র" গঠনে সক্ষম হন। সেখানে শিক্ষার হার এবং মাথাপিছু আয় প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান এবং ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। [6]
সিকিমের একজন প্রভাবশালী নেতা কাজী লেন্দুপ দর্জি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে 'সিকিম প্রজামন্ডল' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। এছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে সে 'সিকিম স্টেট কংগ্রেস'-এর সভাপতি ছিল। ১৯৬২ সালে লেন্দুপ এই দল সহ সিকিমের কয়েকটি সমমনা দলকে একই ছত্রছায়ায় এনে রাজতন্ত্র-বিরোধী ‘সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস’ গঠন করে। [7]
এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৬৩ সালে সিকিমের তৎকালীন চোগিয়াল থাশি নামগিয়াল মৃত্যুবরণ করেন। পরের বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মারা গেলে সিকিমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়। মূলত সিকিম দখলের মানসিকতা থাকলেও নেহেরুর জোরপূর্বক সিকিম দখলের ইচ্ছা ছিল না। তবে তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল খুব প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন।
ভারত সেসময় সিকিম দখলের জন্য লেন্দুপ দর্জিকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' সেসময় লেন্দুপ দর্জিকে সব রকম সহায়তা করতে শুরু করে। লেন্দুপ দর্জির দল 'সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস'-এর মাধ্যমে তারা সেখানে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। আবার তারা সেখানকার নেপালি বংশোদ্ভূত হিন্দুদের বৌদ্ধ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে থাকে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সমর্থনে ক্রমে-ক্রমে সিকিমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। [8]
অন্যদিকে ভারত সিকিমের গান্ধী ও নেহেরু ভক্ত রাজা পালডেন নামগিয়ালকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নানাভাবে সাহায্য করার কথা বলে ভারতের প্রতি রাজার সন্দেহের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। চীন তা বুঝতে পেরে ভারতের ব্যপারে রাজাকে সতর্ক করলেও তিনি সরলমনে ভারতকে বিশ্বাস করেন।
কয়েক বছর পর ১৯৭০ সালে লেন্দুপ দর্জির দল সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দেশে একটি সধারণ নির্বাচন দাবি করে। ভারতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে তারা নেপালি বংশোদ্ভূত হিন্দুদের অধিক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করার জোর দাবি তোলে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে দেশে নির্বাচিন অনুষ্ঠিত হলে রাজপরিবার বিপুল ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পায়। কিন্তু ভারতের সমর্থনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আরো কয়েকটি দলের সাথে মিলে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ক্রমেই তা পরিণত হয় রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনে।
এসময় ভারতকে মিত্র মনে করে চোগিয়াল পালডেন নামগিয়াল ভারতের কাছে সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু ভারত প্রশাসন তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চাপে ফেলে সিকিমের নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। ঐ সংবিধানে চোগিয়ালের (রাজার) ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে খর্ব করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী সিকিমের মূল ক্ষমতা চলে যায় নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে।
এর মাঝে ১৯৭৪ সালে সিকিমে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে কাজী লেন্দুপ দর্জির দল অস্বাভাবিক ব্যবধানে জয় লাভ করে। লেন্দুপের দল সিকিমের মোট ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টি আসন লাভ করে। এই ফলাফলের পেছনে রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হয়। কিন্তু ভারতের প্রণিত নতুন সংবিধান অনুযায়ী রাজা ছিলেন সিকিমের সাংবিধানিক প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৭৫ সালে লেন্দুপ দর্জি সিকিমকে ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত করার জন্য ভারতীয় সংসদে আবেদন করে। এরই মধ্যে ভারতীয় উস্কানির ফলে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে সিকিমের নেপালি হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগের কারণে চোগিয়ালের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। [9][10] এই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ওই বছরের এপ্রিলে ভারতীয় সেনাবাহিনী সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহর দখল করে এবং ৬ এপ্রিল সকালে সেনাবাহিনীর পাঁচ হাজার সৈন্য চোগিয়ালের মাত্র ২৪৩জন প্রাসাদরক্ষীদের নিরস্ত্র করে ফেলে। [4] ফলে চোগিয়াল (রাজা) পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন।
এরপরে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিকিমে একটি বিতর্কিত 'গণভোট' অনুষ্ঠিত হয়। সেই গণভোটে ৯৫.৫ শতাংশ 'ভোটার' রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে 'রায় দেয়'। এই 'গণভোট'-এর সবচেয়ে অস্বাভাবিক বিষয় ছিল, 'গণভোট' চলাকালীন মাত্র ২,০০,০০০ জনসংখ্যার দেশ সিকিমে ২০,০০০-৪০,০০০ ভারতীয় সেনা অবস্থান করছিল। [11] তারপর লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বে সিকিমের নতুন সংসদ সিকিমকে একটি ভারতীয় প্রদেশ (রাজ্য) হওয়ার জন্য একটি বিল প্রস্তাব করে যা তাৎক্ষণিকভাবে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। [4][12]
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১ মে স্বাধীন সিকিম পরাধীন হয়ে ভারত প্রজাতন্ত্রের ২২তম রাজ্যে পরিণত হয় এবং সিকিমের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। [13]
সাংবিধানিক ভাবে নতুন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি সক্ষম করতে, ভারতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধন করে। প্রথমত ভারত তাদের সংবিধানে ৩৫ তম সংশোধনীতে এমন কিছু শর্তাবলীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল যার ফলে সিকিম ভারত প্রজাতন্ত্রের "সহযোগী রাজ্য"-এ পরিণত হয়। এটা একটি বিশেষ মর্যাদা যা অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো না। কিন্তু এক মাস পরেই ভারত সংবিধানের ৩৫ তম সংশোধনী বাতিল করে সিকিমকে একটি পূর্ণ রাজ্যে পরিণত করে এর নাম সংবিধানের প্রথম তফসিলে যুক্ত করে। [14]
সিকিমের ধর্ম ও সংস্কৃতির দিক থেকে তিব্বত ও ভূটানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত। কারণ সিকিমের প্রথম রাজা তিব্বত থেকে সিকিমে স্থানান্তরিত হয়েছিল। আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটানের সাথে সিকিম রাজ্যের ছিল গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত। এছাড়াও প্রধানত পূর্ব ও মধ্য নেপাল থেকে আসা একটি নেপালি জাতিগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের উপস্থিতির ফলে সিকিমের সংস্কৃতিতে নেপালি সংস্কৃতিরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল।
ক্রমিক নং | রাজত্বকাল | প্রতিকৃতি | চোগিয়াল (জীবনকাল) |
ঘটনা |
---|---|---|---|---|
১ | ১৬৪২–১৬৭০ | ফুন্টসোগ নামগিয়াল (১৬০৪–১৬৭০) |
সিকিমের সিংহাসনে আরোহনের মাধ্যমে তিনি সিকিমের প্রথম চোগিয়াল হন। ইউকসোম শহরকে রাজধানীতে পরিণত করেন। | |
২ | ১৬৭০–১৭০০ | তেনসুং নামগিয়াল (১৬৪৪–১৭০০) |
ইউকসোম থেকে রাবডেন্টসেতে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। | |
৩ | ১৭০০–১৭১৭ | চাকদোর নামগিয়াল (১৬৮৬–১৭১৭) |
তার অর্ধ-বোন পেন্দিওঙ্গমু চাকদোরকে সিংহাসনচ্যুত করার চেষ্টা করেছিল। ফলে সিংহাসনচ্যুত হয়ে চোগিয়াল (রাজা) লাসাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিব্বতি জনগণের সাহায্যে রাজা সিংহাসন ফিরে পান। | |
৪ | ১৭১৭–১৭৩৩ | গ্যুরমেফ নামগিয়াল (১৭০৭–১৭৩৩) |
নেপাল সিকিম আক্রমণ করে | |
৫ | ১৭৩৩–১৭৮০ | ২য় ফুন্টসোগ নামগিয়াল (১৭৩৩–১৭৮০) |
নেপালিরা সিকিমের রাজধানী রাবডেন্টসে হামলা চালায়। | |
৬ | ১৭৮০–১৭৯৩ | তেনজিং নামগিয়াল (১৭৬৯–১৭৯৩) |
চোগিয়াল তিব্বতে পালিয়ে যান এবং পরে নির্বাসবে থাকা অবস্থায় মারা যান। | |
৭ | ১৭৯৩–১৮৬৩ | সুগফুদ নামগিয়াল (১৭৮৫–১৮৬৩) |
সিকিমের দীর্ঘস্থায়ী চোগিয়াল। রাবডেন্টসে থেকে তুমলংয়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ১৮৭১ সালে সিকিম ও ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যারফলে নেপালের কাছে হারানো অঞ্চলগুলি সিকিম ফিরে পায়। ১৮৩৫ সালে তিনি দার্জিলিংকে ব্রিটিশ ভারতকে উপহার দেন। দুই ব্রিটিশ ডাঃ আর্কিবাল্ড ক্যাম্পবেল এবং ডাঃ জোসেফ ডাল্টন হুকার ১৮৪৯ সালে সিকিমিদের দ্বারা বন্দী হন। ব্রিটিশ ভারত ও সিকিমের মধ্যে বৈরিতা অব্যাহত থাকে এবং সবশেষে সিকিম ও ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ ভারতকে পুরোপুরিভাবে দার্জিলিং দিয়ে দেওয়া হয়। | |
৮ | ১৮৬৩–১৮৭৪ | সিদকেওং নামগিয়াল (১৮১৯–১৮৭৪) |
||
৯ | ১৮৭৪–১৯১৪ | থুতোব নামগিয়াল (১৮৬০–১৯১৪) |
1৮৮ সালে জন ক্লাউড হোয়াইট সিকিমের প্রথম রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৯৪ সালে তুমলং থেকে [[গ্যাংটক|গ্যাংটকে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। | |
১০ | ১৯১৪ | সিদকেওং তুল্কো নামগিয়াল (১৮৭৯–১৯১৪) |
সিকিমের সংক্ষিপ্ততম চোগিয়াল; ১৯১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি শাসন করেছিলেন। তিনি সন্দেহজনক ভাবে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। | |
১১ | ১৯১৪–১৯৬৩ | থাসি নামগিয়াল (১৮৯৩–১৯৬৩) |
১৯৫০ সালে ভারত ও সিকিমের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে সিকিম ভারতের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। | |
১২ | ১৯৬৩–১৯৭৫ | পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল (১৯২১–১৯৮২) |
সিকিমের সর্বশেষ চোগিয়াল। ১৯৭৫ সালের নামেমাত্র গণভোটের পর দেশটি ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। |
পালডেন থন্দুপ নামগিয়ালের পুত্র ওয়াংচুক নামগিয়ালল (জন্ম ১ এপ্রিল ১৯৫৩) ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি তার পিতার মৃত্যুর পর ১৩তম চোগিয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার উপাধিটির আর কোন সরকারি স্বীকৃতি ছিল না।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.