শ্রীমঙ্গল উপজেলা
মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী নামে খ্যাত। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি উপজেলা যা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের অন্তর্গত হাইল-হাওরের পাশে ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান করছে।[1][4][5][6][7][8] শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪৩.৩৪% জায়গা জুড়ে রয়েছে চা বাগান। ১৯৮১ সালের ১৮ জুলাই ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে, যা দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
শ্রীমঙ্গল | |
---|---|
উপজেলা | |
ডাকনাম: চায়ের রাজধানী, শীতের শহর, বৃষ্টিপাতের অঞ্চল, পর্যটন শহর | |
স্থানাঙ্ক: ২৪.৩০৯২° উত্তর ৯১.৭৩১৪° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | মৌলভীবাজার জেলা |
ইউনিয়ন | ৯ টি |
পাকিস্তানের দখল মুক্ত হয় | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১[1] |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে (শ্রীমঙ্গল থানা) |
উপজেলায় রূপান্তর | ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ |
পৌরসভা গঠন | ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ |
সরকার | |
• ধরন | সংসদীয় আসন |
• শাসক | (মৌলভীবাজার-৪) |
• সংসদ সদস্য | মোঃ আব্দুস শহীদ |
আয়তন | |
• মোট | ৪২৫.১৫ বর্গকিমি (১৬৪.১৫ বর্গমাইল) |
• চা বাগান | (৪৩.৩৪%) ১৮৪.২৯ বর্গকিমি (৭১.১৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[2][3] | |
• মোট | ৩,১৮,০২৫ |
• জনঘনত্ব | ৭৪৮/বর্গকিমি (১,৯৩৭.৪/বর্গমাইল) |
বিশেষণ | শ্রীমঙ্গলি |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ মান সময় (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩২১০-১৪ |
দেশের টেলিফোন কোড | +৮৮০ |
ওয়েবসাইট | sreemangal |
শ্রীমঙ্গলের ১৮৪.২৯ বর্গকিলোমিটার (৭১.১৫ বর্গমাইল) অঞ্চল অর্থাৎ ৪৩.৩৪% ই চা-বাগান অধ্যুষিত অঞ্চল। পাহাড়, রেইন ফরেস্ট, হাওর আর সবুজ চা বাগান রয়েছে এ অঞ্চলে। এজন্য এ স্থানে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগম থাকে। আর এ কারণে শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠেছে পাঁচ তারকা হোটেলসহ অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান। দেশের ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে এ উপজেলায় রয়েছে ৪০ টি চা বাগান।[9][10]
তাছাড়াও রাবার, লেবু ও আনারসের চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে।[8][10][11] শ্রীমঙ্গলের পাশে অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত হাইল হাওরের বাইক্কা বিল দেশের বৃহৎ মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোর মধ্যে একটি। পাহাড়ি ও ঘন বনাঞ্চল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয় আর পাহাড় ও ঘন বনাঞ্চল থাকায় শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা এলাকার তালিকাভুক্ত।[12][13][14][15]
এত বৃষ্টিপাতের পরেও শ্রীমঙ্গলে বন্যা না হওয়ার কারণ কাছাকাছি অবস্থিত (২০ কিলোমিটার দূরে) বড় নদী মনু থেকে শ্রীমঙ্গলে আসার পথে অনেক নিচুভূমি, শ্রীমঙ্গল শহরের গড় উচ্চতা আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি। শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে কালাপুর ইউনিয়নের গ্যাসক্ষেত্র। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলের বালিতে খনিজ পদার্থ জাতীয় সিলিকা বালি পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো হলো: নির্মাই শিববাড়ি (১৪৫৪), কালাপুর গ্রামে প্রাপ্ত একাদশ শতাব্দীর (১০০০-১১০০ খ্রিষ্টাব্দ) রাজা মরুন্ডনাথের তাম্রশাসন ও লামুয়া গ্রামের মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত অনন্ত নারায়ণ দেবতার বিগ্রহ ইত্যাদি প্রাচীন যুগের নিদর্শন শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন রূপকে পরিস্ফুটিত করতে অনেকটাই সক্ষম।[6][8][10][11][16]
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কি.মি. দূরত্বে ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা, ২০৫ টি গ্রামসহ ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান করছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা।[4][6][7][9][11] এ উপজেলার উত্তরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা ও বাহুবল উপজেলা।[4][6][7][8][9][10][11] এ অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের পরেও বন্যা না হওয়ার কারণ এখানে যেসকল ছোটছোট উপনদী (বিলাস নদী, গোপলা নদী) রয়েছে তা বন্যায় ভাসানোর জন্য যথেষ্ট নয় আর কাছাকাছি অবস্থিত (২০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়) বড় নদী মনু থেকে শ্রীমঙ্গলে আসার পথে অনেক নিচুভূমি, শ্রীমঙ্গল শহরের গড় উচ্চতা আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য অঞ্চল(মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, রাজনগর উপজেলা) থেকে বেশি।
শ্রীমঙ্গল শহরের নাম থেকেই শ্রীমঙ্গলের নামকরণ হয়েছে। দু’শ বছরের প্রাচীন শ্রীমঙ্গল শহরের নামকরণ নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন কাহিনী শোনা গেলেও রেকর্ডপত্রে লিপিবদ্ধ আছে- ‘শ্রীদাস’ ও ‘মঙ্গলদাস’ নামে দু’জন প্রথমে এসে এখানে হাইল-হাওরের তীরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এ দু’ভাইয়ের নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয় এ জনবসতির। আরেক মহল থেকে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ‘মঙ্গলচন্ডী’ দেবতার একটি স্থলী ছিল। তার নামানুসারে ‘শ্রীমঙ্গল’ নামকরণ করা হয়েছে। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২শ’ কি.মি. দূরত্বে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রকৃতির আদুরেকন্যা, সুবিশাল পাহাড়ের পাদদেশে আর হাইল-হাওরের পিঠে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ উপজেলা শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের আয়তন ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার। পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা বাগানের পর চা বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইনফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণা কেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট, ভাড়াউড়া লেক, পাহাড়ি ঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য আর হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি। শ্রীমঙ্গলের পাদদেশে অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত ‘হাইল-হাওর’ এবং শীতের শুরুতে সাত-সমুদ্র-তেরো-নদী পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা শীতের পাখি। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, ত্রিপুরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। সম্পর্কে বিভিন্ন মত ও জনশ্রুতি শোনা যায়। তবে এদের বেশিরভাগই গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে দূর্বল।
যেমন: ‘শ্রীদাস’ ও ‘মঙ্গলদাস’ নামে প্রতাপশালী বিত্তবান দুই ভাই প্রথমে এসে এখানে হাইল-হাওরের তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে শ্রীদাস, মঙ্গলদাসের এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং এক সময় এ দু’ভাইয়ের নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয় এ এলাকার।[4][17][18]
শ্রীমঙ্গলের নামকরণ সম্পর্কে সবথেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ধরা হয় বাবু প্রকৃত রঞ্জন দত্ত (এডভোকেট হাই কোর্ট ডিভিশন সিলেট) বিরচিত ‘সাতগাঁও এর ইতিহাস’ নিবন্ধ। এতে বিভিন্ন লেখকের মত ও সূত্রের উদ্ধৃতিসহ বর্ণনা করেছেন যে, সাতগাঁও এর পাহাড়ে অধিষ্ঠিত শ্রীমঙ্গল চন্ডি মন্দিরকে কেন্দ্র করে এককালে মঙ্গল চন্ডির হাটের প্রতিষ্ঠা হয়। সেই মঙ্গল চন্ডির হাটই পরবর্তী কালে শ্রীমঙ্গল বাজারে রূপান্তরিত হওয়ার পর এ অঞ্চলে অধিক লোক সমাগম ঘটে এবং লোকমুখে শ্রীমঙ্গল বাজার হিসেবে এ অঞ্চল পরিচিতি লাভ করে। এখানে উল্লেখ যোগ্য যে, শ্রীমঙ্গল চন্ডির মন্দিরের বিলুপ্ত প্রায় ধ্বংসাবশেষ রয়েছে বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌরসভা হতে কয়েক ক্রোশ উত্তর পশ্চিমে।[4][17][18]
শ্রীমঙ্গলের ইতিহাস কয়েকটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে; যেমন; প্রাচীন রাজ্য সমুহ, আর্য যুগ, মুসলিম শাসিত আমল, মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানে অর্ন্তভুক্তি, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ।
বর্ণিত আছে যে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল , পৌরাণিক যুগে প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঐ যুগে সিলেটের লাউড় পর্বতে কামরূপ রাজ্যের উপরাজধানী ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। দশম শতাব্দিতে এ অঞ্চলের কিছু অংশ বিক্রমপুরের চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হয় বলে জানা যায়। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল মুসলমানদের দ্বারা অধিকৃত হয় এবং ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে আউলিয়া শাহ জালাল (রহ:) দ্বারা গৌড় রাজ্য বিজিত হলে, দিল্লীর সুলতানদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দিতে বালিশিরা (শ্রীমঙ্গল) অঞ্চলের ত্রিপুরার মহারাজা রাজত্ব করতেন।[6][8][10][11] অর্থাৎ ঐ সময় শ্রীমঙ্গল ছিলো ত্রিপুরার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রবল শক্তিশালী এ রাজার বিরুদ্ধে কুকি সামন্ত রাজা প্রায়ই বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন। এরকম এক যুদ্ধে ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনার শংকরসেনা গ্রামে মহারাজের প্রধান সেনাপতি (মহারাজের দামান) নিহত হলে মহারাজের মেয়ে সতীদাহে রাজি না হয়ে আরাধনা শুরু করেন। ঐ যুদ্ধের স্থানেই নিম্মাই শিববাড়ি নির্মিত হয়।[6][8][10][11] উল্লেখ্য বর্তমানে নিম্মাই শিববাড়ি শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনার শংকরসেনা গ্রামে রয়েছে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে মনিপুর রাজপুরুষ মোয়ারাংথেম গোবিন্দের নেত্বত্বে একদল মণিপুরী মণিপুর রাজ্য ছেড়ে শ্রীমঙ্গলের খাসপুরে এসে আবাস গড়েন। এই খাসপুরে রয়েছে মোয়ারাংথেম গোবিন্দের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ ।[6][8][10][11]
১৮৫৪ সালে সিলেট শহরের মালনিছড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম চা-বাগান।[8] এরপর শ্রীমঙ্গলে বিপুল পরিমানে চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে বৃহত্তর সিলেট ও চট্রগ্রাম এলাকায় বিস্তৃত হয় চায়ের ভূবন। ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে বৃহত্তর সিলেট জেলা সহ শ্রীমঙ্গল ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চল ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেট জেলাকে আবার ঢাকা বিভাগের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর পুনরায় বৃহত্তর সিলেটসহ শ্রীমঙ্গল আসামের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ টানা দুইবার ঢাকা বিভাগ ও দুইবার আসামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮২ সালে মৌলভীবাজারকে সাউথ সিলেট মহকুমা ঘোষণা করা হয় এবং ১৯১২ সালে শ্রীমঙ্গলকে থানা ঘোষণা করা হয়।[17] ১৯১৫ সালে আসাম সরকারের এক নির্দেশে লোকাল বোর্ড চালু হলে শ্রীমঙ্গলকে মৌলভীবাজার লোকাল বোর্ড এর অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। এই এলাকায় চা-চাষের উপযোগী ভূমি থাকায় এখানে চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। চা-পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এই অঞ্চলে রেল লাইন স্থাপিত হয়। প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দিয়ে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের গোড়াপত্তন করা হয়। শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে থানা সদর দপ্তর শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তরিত হয়।১৯২৯ সালে শ্রীমঙ্গল বাজার এলাকাকে আরবান এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৫ সালের ১ লা অক্টোবর, ১৯২৩ এর আসাম মিউনিসিপ্যাল এ্যাক্ট এর বিধান মূলে ১৯২৯ সালে ঘোষিত আরবান এলাকা নিয়ে ‘শ্রীমঙ্গল স্মল টাউন কমিটি’ গঠিত হওয়ার মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার আত্নপ্রকাশ ঘটে। ১৯৬০ সালে এটি ‘মিউনিসিপ্যালিটিতে’ রূপান্তরিত হয়। [17]
১৯৬৩ সালে বালিশিরা কৃষক বিদ্রোহ চলাকালে পুলিশের গুলিতে উপজেলার ২ জন কৃষক নিহত হন। [19] ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাকিস্তান হানাদারবাহিনী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল ৫০ এরও অধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষদের।[20] শ্রীমঙ্গলের ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা-শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী।[1][20] তারপর থেকে শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পসহ অফিস আদালতে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। ভাড়াউড়া চা বাগানে কলেজ রোডের পাশে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ এখও সেই করুন ইতিহাস নিয়ে দন্ডায়মান রয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুকিত লস্কর। এরপর একে একে শহীদ আনিস মিয়া (রিক্সা চালক), ছাত্রলীগ নেতা শহীদ মইনউদ্দিন, শহীদ শম্ভু ভূমিজ, শহীদ সমীর সোম, শহীদ আব্দুস শহীদ, শহীদ সুখময় পাল, শহীদ সুদর্শন, শহীদ আলতাফুর রহমান আরোও অনেকেই ।[20] এছাড়া পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের শেষ নির্যাতনের শিকার হন চা-শ্রমিক নেতা ও চা-শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট পবন কুমার তাঁতী। পাক-হানাদার বাহিনী পবনকে হত্যা করে ওয়াবদার পাশে ভুরভুরিয়া ছড়ায় তার লাশ ফেলে যায়।[20] এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াবদার অফিসের পিছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নাম : বধ্যভূমি-৭১) বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নিকুঞ্জ সেন, সমীর সোম ও অর্জুন দাসসহ বহু বীরসেনানীকে। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরনপন লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থার বেগতিক দেখে ৬ ডিসেন্বর ভোরবেলা তারা পালিয়ে মৌলভীবাজরে আশ্রয় গ্রহণ করে। এর মাধ্যমেই মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহর।[1]
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে সাধু বাবার বটতলার পাশে (বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি-৭১ নামের একটি স্মৃতিস্তম্ভ। [1] ১৯৭২ সালের ৫ মে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির ঘোষণা বলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই পৌরসভাটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ২০০২ সালের ১ জুলাই প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়
বাংলাদেশের বর্তমান ভৌগোলিক সীমানায় চায়ের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয় আজ থেকে ১৫০ বছর আগে। ১৮৫৪ সালে সিলেট শহরের মালনিছড়ায় বাংলাদেশের প্রথম চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় ।[8] তারপর শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা বাগান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ধীরে ধীরে বৃহত্তর সিলেট ও চট্রগ্রাম এলাকায় বিস্তৃত হয় চায়ের ভূবন। একশত বছরেরও পুরোন এই চা শিল্পকে বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থন দেয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পিটিআরএস) স্থাপন করে।[8] তবে তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি। প্রতিষ্ঠার সময়কালে শীর্ণকায় এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অফিসার ও সাধারণ কর্মচারীদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত সীমিত। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পূর্বকালে ৪২৬৮৮ হেক্টর জমি চা আবাদী এলাকার আওতায় চলে আসে।[8]
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন হওয়ার প্রায় দেড় বছরের মধ্যে রাষ্ট্রের চা শিল্পকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনষ্টিটিউটএ রূপান্তর করে।[8] এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই)।[11]বিটিআরআই এর মাধ্যমে অধিক ফলন ও মানসম্মত চা পাওয়ার লক্ষ্যে ছাঁটাই, চয়ন, রোপণ দূরত্ব ইত্যাদির উন্নতকরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়া চা প্রক্রিয়াজাত করণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন, চায়ের বিকল্প ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে এখানে পবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত এই বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে প্রস্তুত চায়ে বালাইনাশক বা অন্য কোন ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি নিরূপণের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে রেসিডিউ এনালাইটিক্যাল গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যাতে নতুন প্রজন্ম ধরে রাখতে পারে সে লক্ষ্যে টি মিউজিয়াম বা চা জাদুঘর স্থাপন করেছে চা বোর্ড। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ এ বাংলাদেশ চা বোর্ড এই চা জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। [8][21] ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানগুলোতে ব্যবহূত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এ শিল্পের ঐতিহ্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত হয়েছে চা জাদুঘর। জাদুঘরের জন্য এ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত প্রায় শতাধিক আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার আগে চা বোর্ডের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিলও। এখনে থাকবে চায়ের উপকারিতা, চায়ের আবিষ্কার কাহিনীসহ চায়ের এ পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত সকল প্রকার বিটি ক্লোনের উপস্থিতি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার টি রিসোর্টের তিনটি কক্ষে এখন চা জাদুঘর করা হয়েছে। প্রথম দিকে রিসোর্টের একটি ভবনের তিনটি ঘর নির্ধারণ করে সে ঘরগুলোয় সংগৃহীত প্রাচীন এসব জিনিসপত্র আনার কাজ চলে। পরবর্তীতে চা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, ঘড়ি, ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সেই সুবাদে তিনি এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলের নন্দবানী চা বাগানে।[21] তৎকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ার ও টেবিল[21], পাথর হয়ে যাওয়া আওয়াল গাছের খণ্ড, ব্রিটিশ আমলের ফিলটার, ফসিল, কম্পাস, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, তীর-ধনুকসহ নাম না-জানা আরও কিছু সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এখনো সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়নি। এই অঞ্চলের গৌরবান্বিত চা শিল্পের ইতিহাস ধরে রাখার জন্যই এত সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কারণ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চা উৎপাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে ।[8][21]
বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৪০ টি চা-বাগান। যা ৪৫,৫৩৮ একর ( ১৮৪.২৯ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। [18]
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সবথেকে শীতল ও বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।[12][13][14][15] এরপরও এ অঞ্চল শীতকাল ছাড়া সারা বছরই নাতিশীতোষ্ণ থাকে। শ্রীমঙ্গলে শীত মৌসুম (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) খুবই শুষ্ক থাকে। এসময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাৎসরিক সর্বমোট বৃষ্টিপাতের ৪ শতাংশেরও নিচে থাকে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা পশ্চিমা বায়ু শীত মৌসুমে বাংলাদেশের এই অঞ্চলে ৪০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে।[16] নভেম্বরের শুরুর দিকে শীতের এ আগমনের সঙ্গে অঞ্চলজুড়ে আসতে থাকে হাজার-হাজার পরিযায়ী পাখি।[22] এখানকার বাইক্কা বিলের মৎস্য অভয়ারণ্যে সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, ইউরোপ অঞ্চলসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে।[22] এদের মধ্যে রয়েছে উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, বেগুনি কালেম, পাতি সরালি ইত্যাদি।[22]
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত আরহাওয়ার রেকর্ড রয়েছে।[23] তারমধ্যে ২০১৮ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।[15][23] যা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। যদিও বাংলাদেশে বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সংঘটিত হয় বর্ষা মৌসুমে (জুন থেকে অক্টোবর)।[16] তবে শ্রীমঙ্গলে মার্চ এর মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ শীতকাল বাদে সারাবছরই বৃষ্টিপাত হয়। তবে জুন থেকে অক্টোবর মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকে। এ মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাতের মূল কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট দুর্বল নিম্নচাপসমূহ এবং সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অভিমুখী আর্দ্র মৌসুমি বায়ু। বর্ষা মৌসুমেও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (শ্রীমঙ্গল এই অবস্থানে) অধিক মাত্রায় বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে মেঘালয় পর্বতের প্রভাব রয়েছে। সাধারণত মধ্য অক্টোবরের পর আর্দ্র মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ স্তিমিত হয়ে গেলে দ্রুত বৃষ্টিপাত হ্রাস পেতে থাকে।[16]
২০১৭ এর এপ্রিল মাসে যখন বাংলাদেশে ১১৯.৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল তখন শ্রীমঙ্গলে অস্বাভাবিক ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়।[12][24] যা এর আগের ৩৪ বছরে দেখা যায়নি।[12][24]
শ্রীমঙ্গল-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৫.৯ (৭৮.৬) |
২৭.৯ (৮২.২) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
৩৩.৩ (৯১.৯) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৩১.৯ (৮৯.৪) |
৩১.৮ (৮৯.২) |
৩১.৮ (৮৯.২) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৯.১ (৮৪.৪) |
২৬.৬ (৭৯.৯) |
৩০.৫ (৮৬.৯) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ৮.৯ (৪৮.০) |
১১.৪ (৫২.৫) |
১৬.৯ (৬২.৪) |
২১.১ (৭০.০) |
২৩.২ (৭৩.৮) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.৯ (৭৬.৮) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২১.৮ (৭১.২) |
১৫.৮ (৬০.৪) |
১০.৭ (৫১.৩) |
১৯.০ (৬৬.৩) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১২ (০.৫) |
২৮ (১.১) |
৯৩ (৩.৭) |
২১৯ (৮.৬) |
৩৬৬ (১৪.৪) |
৪৯৮ (১৯.৬) |
৩৮০ (১৫.০) |
৩৩১ (১৩.০) |
২৬০ (১০.২) |
১৯২ (৭.৬) |
৩৫ (১.৪) |
৬ (০.২) |
২,৪২০ (৯৫.৩) |
উৎস: Climate-data.org |
৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১ টি পৌরসভা, ৯ টি ইউনিয়ন, ১১০ টি মৌজা, ২০৫ টি গ্রাম নিয়ে এই উপজেলা গঠিত।[6][17][18]
সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শ্রীমঙ্গল থানার আওতাধীন।[25]
শ্রীমঙ্গলের অধিবাসী জনগোষ্ঠী মিশ্র প্রকৃতির।[6][9][11] যার অধিকাংশই জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলি। আবার জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলিদের বড় একটা অংশ প্রবাসী। সেই সুবাদে শ্রীমঙ্গলে চাকরির আসন খালি থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে পাড়ি জমিয়েছে। তাছাড়া ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে আশ্রয় নিয়েছে।[11] ২০১১ সালের আদমশুমার প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রীমঙ্গলের জনসংখ্যা ৩,২৪,৫৯৬জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে৭৪৮ জন (১৯৩৭.৪/বর্গমাইল)। [3] সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৫৮৯৪৮জন। যার ৭৭.৩৪ ভাগ দম্পত্তিই গ্রহণ করছেন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।[3] তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত উচ্চ। শ্রীমঙ্গলে প্রতিবছর বাড়ছে ২.১৭% হারে।[3] কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ উচ্চহারের অন্যতম কারণ শ্রীমঙ্গলে প্রতিনিয়তই দেশের অনান্য জেলা ও উপজেলা থেকে নতুন নতুন অধিবাসীরা জীবিকা অন্বেষণে বা অন্যান্য কারণে স্থায়ী আবাসন গড়ে তুলেন।[3]
২০০১ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৭৮৩২৩ জন। যার মধ্যে ১৪৩০৩৩ জন পুরুষ ও ১৩৫১৯৯ জন নারী।[26] শ্রীমঙ্গলের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান। এই সকল চা বাগানে শ্রীমঙ্গলের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ কাজ করছে। তবে চা বাগানের কর্মচারীদের বেশিরভাগই অবাঙালি। ব্রিটিশ আমলে চা উৎপাদনের জন্য তাদেরকে মধ্য ভারত থেকে বাংলার ভূখণ্ডে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশের চা বাগানে ৩,০০,০০০ অধিক বাগানি কর্মরত আছে। যার ৭৫% নারী।[27] অনেক শ্রমিকই উপজাতি বাসিন্দা যাদের ব্রিটিশ শাসনামলে মধ্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।[28] শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সাধারণ বাঙালীর থেকে ভিন্ন। আবার ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে মনিপুর রাজপুরুষ মোয়রাং থেম গোবিন্দের নেতৃত্বে একদল মনিপুরী মনিপুর রাজ্য ছেড়ে শ্রীমঙ্গলের খাসগাওয়ের রামনগরে এসে আবাস গড়েন।[6][11] খাসগাওয়ে রয়েছে মোয়রাং থেম গোবিন্দের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ, যা একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রয়েছে স্বতন্ত্র কৃষ্টি, সভ্যতা, ভাষা-সংস্কৃতি, আচার-আচরণ।[9] তাছাড়া শ্রীমঙ্গল খাসিয়া নামক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরও আবাস্থল। শ্রীমঙ্গলের মাগুরছড়ায় পাহাড়ের ওপর বিশেষভাবে নির্মিত ঘরে তারা দলবদ্ধভাবে বাস করছে।[6][11]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনেক আগেই এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীমঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত হয় ডোবারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।[19] ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দশরথ বহুপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়। তারপর ১৯২৪ সালে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।[19] কিন্তু কয়েক দশক যাবৎ শ্রীমঙ্গলের শিক্ষার হার বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিলো।[29] এর প্রধান কারণ শ্রীমঙ্গলের ভু-খন্ডের অর্ধেকই চা বাগান অধ্যুষিত অন্যদিকে হাওর পাড়ে বিশাল এক জনগোষ্ঠী বরাবরই ছিল অবহেলিত।[29] তাদের প্রধান অন্তরায় ছিল বিদ্যালয় সংকট, অনুন্নত রাস্তাঘাট। বংশ পরম্পরায় তারা ছিল শিক্ষাবঞ্চিত।[29] এগুলোই মূলত চা বাগান ও চা বাগান বহির্ভূত অঞ্চলের শিক্ষার হাড়ের তারতম্যের কারণ। ২০০১ সালে চা বাগান ও হাওর অঞ্চলের নগনসহ শ্রীমঙ্গলের শিক্ষার হার ছিলো ৩৯.৬%; পুরুষ ৪৪.৩%, মহিলা ৩৪.৬%।[19] শ্রীমঙ্গলে কলেজ সংখ্যা ৪ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০ টি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১ টি ও মাদ্রাসা ৭ টি ছিলো।[19]
২০১০ সালেও শ্রীমঙ্গলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৬৬টি। আর ২০১৩- সালে এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৩৮টি।[29] ২০১০ সালে শ্রীমঙ্গলে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১৩ জন, যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পেতো। ঐ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারের নিচে আর ২০১৩ সাল নাগাদ বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ হাজারের উপরে।[29] আর ২০১০ সালের দিকে সরকারি শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩শ থেকে দিগুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৬ সালে সরকারি শিক্ষকের সংখ্যা ৭০৪ জন।[29] এরপর ২০১৬ সালে শ্রীমঙ্গলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৯.২৯%।[29] বর্তমানে (২০১৮ খ্রি.) শ্রীমঙ্গলে স্কুলগামী ছাত্রের সংখ্যা প্রায় শতভাগ।[29] বর্তমানে পাশের হার ও এ প্লাস পাওয়ার দিক থেকে শ্রীমঙ্গলের স্কুল কলেজগুলো সিলেট শিক্ষা বোর্ডের শির্ষস্থানিয় অবস্থানে রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ,উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ কলেজ,মতিগঞ্জ, দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৪), চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৪), শ্রীমঙ্গল আনওয়ারুল উলুম ফাদ্বিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), দশরথ বহুপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬),আছিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয় ভুজপুর (১৯৩৬) * সামাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সাতগাঁও(১৯৬৩)। ডোবারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮২), শ্রীমঙ্গল কাদিরিয়া লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, উত্তরসুর কুলচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।[19] মাজার :
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি ৩০.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ২০.১৬%, ব্যবসা ১৪.৭২%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৯৪%, চাকরি ১০.০৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেমিটেন্স এবং অন্যান্য ১৬.২৫% এবং আরও অনেক ছোট-ছোট খাত রয়েছে। চায়ের রাজধানী হিসেবে শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির বড় একটা অংশ হলো চা শিল্প। বাংলাদেশের ১৬৩ টি চা বাগানের মধ্যে ৪০ টি চা বাগানই শ্রীমঙ্গলে রয়েছে। ফিনলে, ইস্পাহানী, জাকছড়া চা বাগানসহ ৪০ টি চা বাগান থেকে বার্ষিক চা উৎপাদন হয় ৩,২০,৫১,৫০০ কেজি।[30] এই উৎপাদিত চা বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা হয় এবং বিশ্বের ২৫টি দেশে চা রপ্তানী করা হয়। তাই চা শিল্পই শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির সবথেকে বড় স্থান দখল করে আছে। শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতিতে চা এর পরেই লেবুর অবস্থান। শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের এলাকায় ২ হাজারেরও বেশি লেবু বাগানের উৎপাদিত কাগজীলেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে বেচা-কেনা হয়।[31][32] বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ভূমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে, তবে প্রতি বছর লেবু বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের লেবুর চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবুর বাগান থেকে।[31][32] এখানকার উৎপাদিত লেবু ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের যায়।
শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত লেবুর জাতের মধ্যে রয়েছে কাগজী লেবু, উন্নত মানের চায়না, জারা, এলাচি, সিডলেস লেবু, আদা লেবু উৎপাদন হয়। প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের হাটে।[31][32] বছরে ৩‘শ কোটি টাকার অধিক মূল্যের কাগজী লেবু দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।[31][32] গত দুই দশক ধরে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন বাগান থেকে সংগৃহীত এলাচি লেবু, আদা লেবু, কাগজি লেবু, জারা লেবু সহ লেবু জাতীয় নানারকম ফল যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে।[33][34] কিন্তু ২০০৮ সালে জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনভারয়নমেন্ট ফুড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডেফরা) হিথ্রো বিমানবন্দরে লেবু জাতীয় ফলের কোটি টাকার চালান আটকে দেয়। তাদের দাবি আমদানিকৃত ফলে ‘ক্যাংকার্স’ নামক ভাইরাস আছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।[33][34] বর্তমানে (২০১৮ সালে) প্রতি মাসে প্রায় আট কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ টন শ্রীমঙ্গলের উৎপাদিত লেবু যুক্তরাজ্যে পাঠাচ্ছেন এখানকার রপ্তানিকারকরা।[33][34] তাছাড়া কমলা, আনারস, রাবার ও পর্যটন শিল্প শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মোহাজেরাবাদ, বিষামণি, হোসেনাবাদ, বালিশিরা, ডলুছড়া, সাতগাঁও, নন্দরানী ও মাইজদীর পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৩০৪ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে।[35][36][37][38] এখানকার জলঢুপি আনারস সারা বাংলাদেশেই আনারস প্রীয়দের কাছে প্রসিদ্ধ।[35][36][37][38] শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেট বিভাগে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ কমলার চাষ হয়।[39] বাংলাদেশের ১৭ টি রাবার বাগানের মধ্যে শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওএ ১৭৪৪.০০ একর জায়গা নিয়ে ১ টি রাবার বাগান রয়েছে যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি কষ আহরণ করা হয়ে থাকে।[40] আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থান হিসেবে শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিনই অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক জোটে।[41] তাই পর্যটন শ্রীমঙ্গলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।[42] পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বেসরকারি উদ্যােগে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, বাংলো ও কটেজ। যা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।[42] বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটা অংশ বৃহত্তর সিলেটের রেমিটেন্স এর মাধ্যমে আসে। শ্রীমঙ্গলও সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর বড় একটা অংশ প্রবাসী। যাদের রেমিটেন্সের টাকা এ অঞ্চলের অর্থনীতি সহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।
শ্রীমঙ্গল ও এর সংলগ্ন উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি-৭১, চা বাগান, টি রিসোর্ট, মোহাজেরাবাদ লেবু বাগান, আনারস বাগান, শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর, ডিনস্টন সিমেট্রি, চাকন্যা ভাস্কর্য, নির্মাই শিববাড়ি, শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালী বাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন, খাসিয়াপুঞ্জি, টিপরা পল্লি, মণিপুরী পাড়া, গারো পল্লি, নীলকণ্ঠ টি কেবিন, বার্নিস টিলা, গলফ কোর্স, পাখি বাড়ি, বাদুর বাড়ি, লালমাটি পাহাড়, রাবার বাগান, মাধবপুর লেক, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল।[43]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.