Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ল্য রেইন আনিমাল (আক্ষ. 'প্রাণীরাজ্য') ফরাসি প্রকৃতিবিদ জর্জেস কুভিয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত লেখনী। এই বইটি প্রাকৃতিক ইতিহাস ও তুলনামূলক শারীরস্থানের উপর ভিত্তি করে সমগ্র প্রাণীজগতের প্রাকৃতিক গঠন বর্ণনা করেছে। কুভিয়ে সকল প্রাণীর প্রজাতিকে চারটি শাখায় (যা বর্তমান প্রাণী শ্রেণিবিন্যাসের ধাঁচে "পর্বের" সাথে সম্পর্কিত) বিভক্ত করেছেন, যথা মেরুদণ্ডী প্রাণী, মোলাস্কা, সংযোগবিশিষ্ট প্রাণী (আর্থোপোড এবং অ্যানিলিডস) এবং জুফাইটস (নিডারিয়া এবং অন্যান্য পর্ব)।
লেখক | জর্জেস কুভিয়ে |
---|---|
দেশ | ফ্রান্স |
বিষয় | প্রাণিবিজ্ঞান |
প্রকাশনার তারিখ | ১৮১৬ (৪ খণ্ড) ১৮২৯-১৮৩০ (৫ খণ্ড) |
১৮১৬ এর ডিসেম্বরে চারটি আট খন্ডের ভলিউমে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় (যদিও সবগুলোর শিরোনাম পাতায় ১৮১৭ লেখা ছিলো); পাঁচ ভলিউমের দ্বিতীয় একটি সংস্করণ বের হয়েছিলো ১৮২৯-১৮৩০ সালে এবং কুভিয়ের "বারোজন ছাত্রের" লেখা একটি তৃতীয় সংস্করণ বের হয় ১৮৩৬-১৮৪৯ সালের মধ্যে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই কাজে কুভিয়ের জীবীত ও জীবাশ্ম হিসেবে প্রাপ্ত সকল প্রাণীর গঠন নিয়ে তাঁর সারা জীবনের গবষেণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন। পুরো লেখনীটাই ছিলো তাঁর নিজের, কেবলমাত্র পতঙ্গ নিয়ে আলোচ্য অংশটুকু ব্যতিরেকে, যেটুকু লেখার জন্য তাকে সাহায্য করেন বন্ধু পিয়েরে আন্দ্রে ল্যাট্রেইল। ইংরেজিতে একাধিকবার লেখাটি অনূদিত হয়, নতুন আবিষ্কৃত তথ্যাদি দিয়ে বইটি হালনাগাদ করার জন্য প্রায়ই এরূপ অনুবাদে বিস্তর টীকা ও সম্পূরক লেখালেখি যোগ করা হয়েছে। জার্মান, ইতালীয় এবং অন্যান্য ভাষাতেও এটির অনুবাদ হয়, এবং শিশুদের জন্য উপযোগী করে একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণও প্রকাশ করা হয়।
ল্য রেইন আনিমাল যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠতে সক্ষম হয় ব্যাপকভাবে পঠিত হবার দরুণ, উপরন্তু এতে ছিলো পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত প্রাণীগোষ্ঠীর নির্ভুল বর্ণনা, উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে বিদ্যমান হাতি এবং বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ম্যামথ যা বৈবর্তনিক পরিবর্তনের সপক্ষে দৃঢ় প্রমাণ সরবরাহ করে পাঠকদের মাঝে, যাদের মধ্যে চার্লস ডারউইনও ছিলেন। যদিও কুভিয়ে নিজে বিবর্তন সংঘটিত হবার সম্ভবনাকে প্রত্যাখান করেন।
জর্জেস কুভিয়ে (১৭৬৯-১৮৩২) তাঁর বাল্যকালেই পড়ে শেষ করেছিলেন পূর্ববর্তী শতাব্দীতে জর্জ-লুই ল্যক্লের, কোঁত দ্য বুফোঁর লেখা হিস্টোয়ার ন্যাচেরেল, পাশাপাশি পড়েছিলেন কার্ল লিনিয়াস এবং ইয়োহান ফ্যাব্রিকাসের লেখালেখি।[1] ফরাসি বিপ্লবের অল্পসময় পরেই, ১৭৯৫ সালে তাকে প্যারিসে নিয়ে আসেন ইতিয়েন জিওফ্রয় সেন্ট-হিলেয়ার। দ্রুতই তিনি প্রাণী শারীরবিদ্যার অধ্যাপক নিযুক্ত হন মিউজি ন্যাশনাল দ'হিস্তোয়ার ন্যাচারেলেতে, সেখানে তিনি নেপোলিয়ন কর্তৃক সরকারব্যবস্থায় নানান পরিবর্তন - বিপ্লবী থেকে নেপোলিয়নিক থেকে রাজতন্ত্র - ইত্যাদির মধ্যেও টিকে থাকেন। তিনি নিজেই মূলত মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ্যা নামক পাঠ্যবিষয় এবং এর সাথে সম্পর্কিত একটি তুলনামূলক পদ্ধতি তৈরি করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন যে কিছু কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। [2]
প্রাণীদের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি উন্নত করার একটি পূর্বপ্রয়াসে কুভিয়ে আন্তোইন-লরেন্ট দে জুসিউ'র (১৭৪৮-১৮৩৬) থেকে প্রাকৃতিক শ্রেণিবিভাগের ধারণাগুলি উদ্ভিদবিদ্যা থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্থানান্তর করেন, যা ১৭৮৯ সালে জেনারা প্লান্টারাম বইয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। ১৭৯৫ সালে, একটি "স্থিরবাদী" দৃষ্টিকোণ থেকে (যা বিবর্তন হয় এমন সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে) কুভিয়ে লিনিয়াসের চিহ্নিত দুটি 'অবাঞ্ছিত শ্রেণীকে" ("পতঙ্গ" এবং "কীট") ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেন "সাদা-রক্তের প্রাণী" বা অমেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে: মোলাস্কস, ক্রাস্টেসিয়ানস, পতঙ্গ এবং কীট (যেগুলো তখন ভিন্নভাবে বোঝা হতো), একাইনোডার্ম এবং জুফাইট। [3] কুভিয়ে মোলাস্ককে তিনটি ক্রমে বিভক্ত করেছেন: সেফালোপডস, গ্যাস্ট্রোপডস এবং এ্যাসেফালা। [4] এটুকুতেও সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি প্রাণী শ্রেণিবিভাগের উপর কাজ চালিয়ে যান, যা বিশ বছর পরে রেইন আনিমালে পরিণত হয়।
নিজস্ব পর্যবেক্ষণসহ[5] তুলনামূলক শারীরস্থান এবং জীবাশ্মবিদ্যা থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ ব্যবহার করে কুভিয়ার তাঁররেইন আনিমালে প্রাণীজগতকে চারটি প্রধান দৈহিক নকশায় বিভক্ত করেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে একটি প্রাণীর প্রধান অঙ্গ সিস্টেম হিসাবে ধরে নিয়ে, যা দেহের অন্যান্য সমস্ত অঙ্গ ব্যবস্থা যেমন সংবহন এবং পাচনতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, কুভিয়ে একটি প্রাণীর দেহ সম্ভাব্য চার ধরণের গঠনব্যবস্থাকে আলাদা করেছেন: [6]
প্রাণীদেহকে এভাবে দৈহিক নকশা অনুসারে গোষ্ঠীবদ্ধ করার ফলস্বরূপ চারটি শাখা তৈরি হয় (মেরুদণ্ডী, মোলাস্কস, খণ্ডিত প্রাণী যেটাকে তিনি প্রাকৃতিক দাবি করেন (সপক্ষে যুক্তি দেখান যে পতঙ্গ ও অ্যানেলিড পর্বের জীবগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত) এবং জুওফাইট (রেডিয়াটা))। এটা মধ্যযুগীয় গ্রেট চেইন অফ বিইং ধারণামতে জীবজগতের ধারাবাহিকতার অনুমানকে ভেঙে দেয়। সেইন্ট হিলাইয়ার এবং জঁ-বাতিস্ত লামার্ক দুুইজনই এক্ষেত্রে কুভিয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ল্যামার্ক দাবি করেন যে প্রজাতিসমূহ পরিবর্তিত হয় বাহ্যিক পরিবেশ কর্তৃক প্রদত্ত চাপের কারণে, এবং ১৮২০ সালে সেইন্ট হিলাইয়ার বলেন যে কুভিয়ের প্রদত্ত দুইটি শাখা, মোলাস্ক এবং রেডিয়াটা, আদতে কিছু বৈশিষ্টের ওপর গুরুত্ব দিয়ে একীভূতকরণ করা সম্ভব, এবং অপরদিকে অন্য দুই শাখার, খণ্ডিত প্রাণী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীর, মধ্যেও একে অপরের সাথে যথেষ্ট মিল ছিলো। আবার ১৮৩০ সালে, সেইন্ট হিলাইয়ার যুক্তি যেখান যে এই দুই গোষ্ঠীও আবার সম্পর্কিত হতে পারে, তিনি ইঙ্গিত দেন এমন এক প্রাণীর দিকে যেটা থেকে অন্য সকল প্রাণের বিবর্তন ঘটেছে, যার কারণে কুভিয়ের চার শাখার দৈহিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি শ্রেণিবিন্যাস মৌলিক নয়। [7]
বারোজন "ছাত্র" যারা বইটির তৃতীয় সংস্করণে অবদান রেখেছিলেন তারা হলেন জঁ ভিক্টর অডুইন (পতঙ্গ), জেরার্ড পল দেশায়েস (মোলাস্ক), অ্যালসাইড দ'অরবিনি (পাখি), অ্যান্টোয়া লুই ডুগে (আরাকনিডস), জর্জেস লুই ডুভানয় (সরীসৃপ), চার্লস লিওপোল্ড লরিলার্ড (আংশিকভাবে স্তন্যপায়ী প্রাণী), হেনরি মিলেন এডওয়ার্ডস (আংশিকভাবে ক্রাস্টেসিয়ান, অ্যানিলিড, জুফাইট এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী), ফ্রাঁসোয়া ডিজায়ার রুলিন (আংশিকভাবে স্তন্যপায়ী প্রাণী), অ্যাচিল ভ্যালেনসিয়েনস (মাছ), লুই মিশেল ফ্রাঁসোয়া ডয়েরে (পতঙ্গ), চার্লস এমিল ব্লানশার্ড (পতঙ্গ, জুফাইটস) এবং জিন লুই আরমান্ড ডি কোয়াট্রেফেজেস ডি ব্রেউ (অ্যানেলিডস, আরাকনিডস ইত্যাদি)। [10]
বইটি চিত্রিত করা হয়েছিলো টেবিল এবং প্লেট (চতুর্থ খণ্ডের শেষে) উল্লেখিত প্রজাতিগুলো মাত্র কয়েকটিকে অন্তর্ভুক্ত করে। চিত্রিত প্রাণীদের অনেক বড় একটি সংকলন, যেটা নিয়ে কুভিয়ে বলেছিলেন "সেগুলো ছিলো যেমন মার্জিত তেমন নির্ভুল", প্রকাশিত হয়েছিলো কীটতত্ত্ববিদ ফেলিক্স এডুয়ার্ড গুয়েরিন-মেনেভিল দ্বারা, তাঁরআইকনোগ্রাফি ডু রেগেন অ্যানিমাল দে জি কুভিয়ের মাধ্যমে। যেটির নয়টি খণ্ড ১৮২৯ এবং ১৮৪৪ সালের মধ্যে বের করা হয় হয়েছিল। ক্রিস্টোফ অ্যানেডুশ, ক্যানু, ইউজিন জিরাউড, লাগেসে, লেব্রুন, ভিট্টোর পেড্রেটি, প্লী এবং স্মিথ মিলে ৪৪৮টি কোয়ার্টো প্লেট দিয়ে প্রায় ৬২০০টি প্রাণী চিত্রিত করেন। [11] [12]
ল্য রেইন আনিমাল ইংরেজি, জার্মান এবং ইতালিয়ান সহ বেশ কিছু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বইটির অনেকগুলো ইংরেজি অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশিত ও পুনর্মুদ্রিত হয়; ল্য রেইন আনিমালের প্রকাশনার ইতিহাস যথেষ্ট ঘোলাটে হবার কারণ অনেক সময়েই পুরো বই নাকি কোনো এক খণ্ড অনূদিত করা হয়েছে সেটা স্পষ্ট করে লিপিবদ্ধ করা হয় না, সেগুলোতে আবার তারিখ ঠিকমতো যুক্ত করা হতো না, উপরন্তু পুরাতন অনুবাদগুলোকে "নতুন" সংস্করণ বলে চালিয়ে দিতেন অনেক প্রকাশক। এডওয়ার্ড গ্রিফিথের করা (কিছু খণ্ডের জন্য এডওয়ার্ড পিজিয়ন এবং কয়েকটির জন্য অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্যসমেত) একটি অনুবাদ জি.বি হুইটেকার ও অংশীদারেরা প্রকাশ করেছিলেন মোট ৪৪টি খণ্ডে, ১৮২৪ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্যেবর্তী সময়ে যা বহুবার পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে (২০১২ সাল পর্যন্ত, ই-বুক আকারে); ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৭ এর মধ্যে আরেকটি অনুবাদ করেন জি. হেন্ডারসন। পক্ষীবিদ উইলিয়াম ম্যাকগিলিভ্রে এডিনবার্গে বসে আরেকটি অনুবাদ প্রকাশ করেন ১৮৩৯-১৮৪০ সালে। আরেকটি সংস্করণ প্রকাশ করেন উইলিয়াম এস. অর এবং কো. ১৮৪০ সালে যেটা অনুবাদ করেছিলেন এডওয়ার্ড ব্লিথ এবং অন্যান্য। সংক্ষিপ্ত একটি সংস্করণ করেছিলেন একজন "অভিজ্ঞ শিক্ষক" যেটা ১৮৪৪ সালে লন্ডন শহরে প্রকাশ করে লংম্যান, ব্রাউন, গ্রিন ও লংম্যান এবং স্টিফেন ন্যাপ সেটা প্রকাশ করেন কোভেন্ট্রি শহরে। ১৯৬৯ সালে নিউ ইয়র্কে একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় ক্রাউসের দ্বারা। অন্য বেশ কিছু সংস্করণ বের করেন এইচ. জি বোন ১৮৫১ সালে এবং ডাব্লিউ. অর ১৮৫৪ সালে। এ্যানি রবার্টস "প্রাণীজগত অধ্যয়নের সহজ পরিচিতি: কুভিয়ের প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণে" শিরোনামে একটি বই এবং প্রতিটি অধ্যায়েপরীক্ষামূলক প্রশ্ন সংবলিত একটি সংস্করণ লেখেন, যা থমাস ভার্টি প্রকাশ করেন ১৮৫০ এর দশকে। [13]
১৮২১-১৮২৫ সালে জে.এস কোটা দ্বারা এইচ.আর.শিনজের করা একটি জার্মান অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল; আরেকটি তৈরি করেছিলেন ফ্রেডরিখ সিগমুন্ড ভয়েট এবং প্রকাশ করেছিলেন ব্রকহাউস। [14]
জি ডি ক্রিস্টোফোরির একটি ইতালীয় অনুবাদ স্ট্যাম্পেরিয়া কারমিগনানি ১৮৩২ সালে প্রকাশ করেছিলেন [15]
১৮৪১ সালে পিটার ভাজদার করা একটি হাঙ্গেরিয়ান অনুবাদ প্রকাশিত হয়[16]
বইয়ের প্রতিটি অংশ, যেমন সরীসৃপ নিয়ে লেখা দ্বিতীয় খন্ড (এবং সম্পূর্ণ বই-ই), শুরু করা হয়েছে ওই অংশে আলোচ্য প্রাণীদের স্বতন্ত্র কিছু বিষয় নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধ দিয়ে। সরীসৃপদের ক্ষেত্রে, প্রবন্ধটি এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে শুরু হয় যে তাদের রক্ত সঞ্চালন এমনভাবে হয়ে থাকে যেন হৃৎপিণ্ড দ্বারা পাম্প করা রক্তের মাত্র কিছু অংশই ফুসফুসের মধ্য দিয়ে যায়; কুভিয়ে এইরূপ গঠনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন, আরো লক্ষ্য করেন যে স্তন্যপায়ী ও পাখিদের থেকে সরিসৃপদের মস্তিষ্কের আকার তুলনামূলক ছোট, এবং তারা নিজেদের ডিমে তা দেয় না।
এরপরে কুভিয়ে আলোচ্য গোষ্ঠীর শ্রেণিবিভাগ চিহ্নিত করেন, এই ক্ষেত্রে যেগুলো হলো সরীসৃপের চারটি ক্রম, চেলোনিয়ান (কচ্ছপ এবং সামুদ্রিক কচ্ছপ), সৌরিয়ান (টিকটিকি), অফিডিয়ান (সাপ) এবং ব্যাট্রাসিয়ান (উভচর, যাদেরকে এখন বিবেচনা করা হয় মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি পৃথক অংশ হিসাবে), এবং প্রতিটি গোষ্ঠীর বর্ণণা দেন একটি বাক্যে। এইভাবে বর্ণনা করা হয় যে ব্যাট্রাসিয়ানদের একটি একক অলিন্দসহ একটি হৃদপিণ্ড আছে, তাদের দেহ নগ্ন (আঁশবিহীন) এবং সময়ের সাথে তারা মাছের মতো আকার-আকৃতি থেকে চতুর্পদী বা দ্বিপদী আকার ধারণ করে।
তারপরে একটি উপশিরোনাম রয়েছে, যেটা এই ক্ষেত্রে হচ্ছে "সরীসৃপদের প্রথম ক্রম, কিংবা চেলোনিয়ানস", তারপরে শুধু তাদের প্রাণিবিদ্যার ওপরই তিন পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ রয়েছে, যেটা শুরু হয়েছে এই বিবৃতি দিয়ে যে তাদের হৃদয়ে দুটি অলিন্দ রয়েছে। তারপরে এই কাঠামোটি শ্রেণিবিন্যাসের একটি নিম্নতর স্তরে পুনরাবৃত্তি হয়, যেটাকে কুভিয়ে চিহ্নিত করে লিনিয়াসের একটি জেনেরা, টেস্টুডো বা কচ্ছপ হিসেবে, যেটির আবার পাঁচটি উপ-জেনেরা রয়েছে। প্রথম উপ-জেনেরা হলো ভূমিতে বিচরণ করে এমন কাছিম; যাদের প্রাণীবিদ্যা একটি অনুচ্ছেদে সংক্ষিপ্ত করে পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয়েছে যে তাদের একটি গম্বুজের ন্যায় ক্যারাপেস রয়েছে, যার একটি শক্ত হাড়ের ভিত রয়েছে (একে "শারপেনটে" নামে উল্লেখ করা হয়, যা সাধারণত কাঠের বিমের কাঠামোতে ব্যবহৃত হয় ছাদকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য)। তিনি এখানে লিপিবদ্ধ করেছেন যে এদের পাগুলি মোটা, যেটার প্রায় সবটা জুড়েই আছে তাদের খাটো আঙুলগুলি, সামনের পায়ে পাঁচটি, পিছনের পায়ে চারটি।
তারপরে (নবম পৃষ্ঠায় এসে) তিনি এই খণ্ডের প্রথম প্রজাতি, গ্রীক কাছিম, টেস্টুডো গ্রেকা নিয়ে আলোচনা করেন। একটি অনুচ্ছেদের মধ্যেই এটির ব্যাখা করা হয়েছে, সেখানে কুভিয়ার উল্লেখ করেছেন যে এটি ইউরোপে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন কচ্ছপ, গ্রীস, ইতালি, সার্ডিনিয়া এবং (তিনি লিখেছেন) দৃশ্যত ভূমধ্যসাগরের চারপাশে এধরণের কচ্ছপের বসবাস। তারপরে তিনি এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্টগুলো তুলে ধরেন, একটি উচ্চ গম্বুজের ন্যায় ক্যারাপেস, দেহভর্তি আঁশ যেগুলো কালো এবং হলুদ রঙের ছটায় গাঢ় করে চিহ্নিত আছে এবং পশ্চাৎপ্রান্তে লেজের উপরে একধরণের স্ফীতি রয়েছে। তিনি এর আকারের বর্ণনা দেন - কদাচিৎ এটি দৈর্ঘ্যে এক ফুট পর্যন্ত পৌঁছায়; উল্লেখ্য যে এটি পাতা, ফল, পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে; শীতকাল অতিক্রম করার জন্য একটি গর্ত খনন করে; বসন্তে সঙ্গী খুঁজে নেয়, এবং কবুতরের মতো ৪ বা ৫টি ডিম পাড়ে। দুটি প্লেট দিয়ে এই প্রজাতিটিকে চিত্রিত করা হয়।
জীবন্ত এবং জীবাশ্ম উভয় ধরণের প্রাণীজগতের প্রাকৃতিক কাঠামোকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য কুভিয়ের দ্বারা গৃহীত শ্রেণিবিন্যাসটি [17] ছিলো নিম্নরূপ, প্রদত্ত তালিকাটি রেইন আনিমালের সকল বিষয়বস্তুর অবয়ব তুলে ধরে। যেখানে কুভিয়ের দেওয়া গোষ্ঠীর নামগুলি আধুনিক ট্যাক্সার সাথে মিলে যায় (বা কাছাকাছি হয়) সেখানে এই নামগুলি যদি সম্ভব হয় তাহলে পরিভাষায় রূপান্তর করে বন্ধনীতে রাখা হয়েছে। ১৮২৮ সালের পেনি সাইক্লোপিডিয়াতে প্রাপ্ত সারণীটি এমন প্রজাতিগুলোকে নির্দেশ করে যেগুলি কুভিয়ের শ্রেণিবিন্যাসে এক একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে মনে করা হয়েছিল। চারটি প্রধান বিভাগ "শাখা" নামে পরিচিত ছিল।
কীটতত্ত্ববিদ উইলিয়াম শার্প ম্যাকলে তাঁর ১৮২১ সালের বই Horae Entomologicae-তে, যেখানে তিনি স্বল্পস্থায়ী "কুইনারিয়ান" ধাঁচে ৫টি দলে এবং প্রতি দলের অভ্যন্তরে ৫টি উপদলে ইত্যাদি এইরূপ প্রাণী শ্রেণিবিভাগের পদ্ধতির অবতরণা করেন, উল্লেখ করেছিলেন যে রেইন আনিমালে "প্রাণী শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য সঠিক এবং স্বজ্ঞাত সাধারণীকরণের ক্ষমতার দারুণ অভাব দেখা যায় কুভিয়ের মধ্যে।"[1] প্রাণিবিজ্ঞানী উইলিয়াম জন সোয়াইনসন, যিনিও একজন কুইনারিয়ান, যোগ করেন যে "কুভিয়েরের মতো এমন অতীন্দ্রিয় প্রতিভা এবং বুদ্ধিবৃত্তির আর কোনো ব্যক্তি প্রাকৃতিক বিন্যাস নিয়ে তার পর্যবেক্ষণের এতটা অনর্থক ব্যবহার কখনো করেনি।"[1]
১৮২৯ সালের ম্যাগাজিন অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি এই বইয়ের প্রথম এবং দ্বিতীয় সংস্করণের মধ্যে দীর্ঘ সময় ব্যবধান ঘটায় বিস্ময় প্রকাশ করে, এই থেকে তারা অনুমান করে যে কেবল প্যারিস শহর ব্যতীত গোটা ফ্রান্সে খুব কমই বৈজ্ঞানিক পাঠক ছিল; ম্যাগাজিনে উল্লেখ করা হয় যে বইটির প্রথম খণ্ডে যদিওবা সামান্যই পরিবর্তন সাধন হয়েছে, দ্বিতীয় খণ্ডে জলজ প্রাণী নিয়ে যথেষ্টরূপে পরিবর্তিত আলাপ আছে, এবং খণ্ডিত প্রাণীর অংশটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে (দুটি খণ্ডে, ৪ এবং ৫) যেটা এম. ল্যাট্রেইল লিখেছেন। টমাস বেউইক (এ হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ বার্ডস, ১৭৯৭-১৮০৪) এবং জর্জ মন্টাগুর (অর্নিথোলজিক্যাল ডিকশনারী, ১৮০২) গবেষণামূলক লেখালেখির ফলে ইংল্যান্ডে প্রাকৃতিক ইতিহাসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা হয় যে কুভিয়ের মতো একটি কাজ ইংরেজি ভাষাতেও করা হবে। এই একই পর্যালোচনায় ফেলিক্স এডুয়ার্ড গুয়েরিন-মেনেভিলের আইকনোগ্রাফি ডু রেইন আনিমাল দে এম. লে ব্যারন কুভিয়ে নিয়েও আলাপ করে করে, যা কুভিয়ের আলোচ্য সকল জেনেরার চিত্রণ তুলে ধরেছিল (পাখি ব্যতীত)। [20]
১৮৩০ সালেফরেন রিভিউ কুভিয়ের লেখা বইটির ব্যাপক প্রশংসা করলেও তিনি যেভাবে শ্রেণিবিভাগ করেছিলেন সেটার সঙ্গে তারা একমত ছিল না। তারা এরকম মন্তব্য করে যে "সকল বিদ্যমান এবং বিলুপ্ত প্রাণীর গঠন এবং ইতিহাসকে সমানভাবে উপস্থাপন করে লেখা ল্য রেইনের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য এই কাজটিকে কুভিয়ের প্রাণিবিদ্যাগত প্রচেষ্টার একটি প্রতীক হিসাবে দেখা যেতে পারে; এবং এটি যে কোনো ভাষায় বিদ্যমান প্রাণীবিজ্ঞান এবং তুলনামূলক শারীরস্থানের নিয়ে গবেষণার বর্তমান অবস্থার সেরা রূপরেখা তুলে ধরে।" [21] কিন্তু এর পরেই পর্যালোচনাটি কিছুটা সমালোচনার সুরে উল্লেখ করে "আমরা এটা না বলে পারছি না যে তুলনামূলক শারীরবিজ্ঞান এখন এতদূর উন্নত হয়েছে যে সেটা সমগ্র প্রাণীকূলকে কিছু অভিন্ন এবং দার্শনিক নীতির উপর ভিত্তি করে ভাগ করার সক্ষমতা রাখে-যেমন প্রাণীদের সবচেয়ে সাধারণ যেসকল তন্ত্র বা ক্রিয়াকলাপগুলি বিদ্যমান সেগুলোর মাঝে পাওয়া পারস্পারিক পার্থক্যের ভিত্তিতে।" [21] পর্যালোচনায় যুক্তি দেওয়া হয় যে গোটা মেরুদণ্ডী শ্রেণী একটি মেরুদণ্ডীয় কলামের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে সৃষ্টি, যা সম্পর্কে তারা মন্তব্য করে যে এটি "দৈহিক কাঠামোর ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ"; মোলাস্কা শ্রেণীর জন্য প্রযোজ্য এরূপ পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করে যে সেটা "দৈহিক কোমলতা" ব্যতীত অন্য কিছু নয়; তৃতীয় অংশে খণ্ডিত প্রাণীদের নিয়ে তৈরি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তিও যৌক্তিক ঠেকেনি তাদের কাছে, এবং সবিশেষ চতুর্থাংশ নিয়ে তারা বলে যদিওবা একাইনোডার্মদের এই পর্বে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এখানে "বিদ্যমান শর্তগুলো এন্টোজোয়া, জুওফাইটা এবং ইনফিউসোরিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যারা এই অংশের সিংহভাগে আলোচিত।" [21] তবে পর্যালোচনাটি এটাও উল্লেখ করে যে "এই লেখায় কুভিয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রাণী রাজ্যের সাধারণ বণ্টনের মূলভিত্তি হলো প্রাণীদের দৈহিক গঠনের একটি বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ যেমনটা আগে আর কখনো করা হয়নি, এবং একেকটি গোত্র ও বর্গের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যসমূহ একান্তই কুভিয়ের নিজস্ব গবেষণার ফল।" [21]
১৮৩৪ সালের মান্থলি রিভিউতে প্রাক-ডারউইনীয় বিবর্তনবাদী সার্জন স্যার উইলিয়াম লরেন্স মন্তব্য করেছিলেন যে "কুভিয়ের রেইনে আনিমাল সমগ্র (প্রাণী)বিজ্ঞানের একটি সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি। তিনি তার প্রাণিবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা হতে প্রাপ্ত আলো নিয়ে গিয়েছিলেন প্রকৃতির সংশ্লিষ্ট অথচ অন্ধকার অংশে।" [22] লরেন্স এই কাজটিকে অভিহিত করেন এইভাবে -"এটি প্রাণীরাজ্যের এমন এক বিন্যাস যা পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; আর এমন সব নীতির উপর ভিত্তি করে বর্ণিত যেগুলো নির্ভুল, ইতিমধ্যেই এই রেখাচিত্রে অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রাণী ছকের যে স্থানটি দখল করে সেটি তার গঠন, শারীরবৃ্ত্ত এবং অভ্যাসের মূল পরিস্থিতিগুলো নির্দেশ করে। "[22]
কুভিয়ের এই বইটি চার্লস ডারউইনের সমুদ্রযাত্রার সময় এইচএমএস বিগল জাহাজের লাইব্রেরিতে ছিল।[23]অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস (১৮৫৯) বইয়ের একটি অধ্যায়ে নিজের তত্ত্বে সম্ভাব্য সমস্যা নিয়ে আলোচনাকালীন ডারউইন বলেন যে "প্রসিদ্ধ কুভিয়ে প্রাণী অস্তিত্বের শর্তসমূহের যে অভিব্যক্তির [lower-alpha 2] ওপর জোর দিয়েছেন সেটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতিতে সম্পূর্ণরূপে গ্রাহ্য।" কুভিয়ের প্রাণী অস্তিত্বের শর্ত এবং এই কুভিয়েরিয়ান শর্তের কারণে প্রাণীদের নতুন বৈশিষ্ট উদ্ভাবণ সম্পর্কে জঁ-বাতিস্ত লামার্কের তত্ত্ব উভয়ের প্রতিফলন ঘটিয়ে ডারউইন আরো বলেন "প্রাকৃতিক নির্বাচন হয়ে থাকে প্রাণীদেহের কোনো এক বা একাধিক অংশকে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের জৈব ও অজৈব শর্তসাপেক্ষে অভিযোজিত করার ফলে; কিংবা অতীতে দীর্ঘসময় ধরে পরিবর্তীত হবার ফলে: এই অভিযোজনগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে (পরিবেশের) বাহ্যিক শর্তসমূহ দ্বারা কিছুটা হলেও প্রভাবিত হবার মাধ্যমে ল্যামার্কিজমে বর্ণিত ব্যবহার ও অপব্যবহারের নীতি কর্তৃক তরান্বিত হয় এবং সকল ক্ষেত্রেই প্রজাতিগত প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন তত্ত্বের প্রভাবে হয়ে থাকে। তাই, প্রকৃতপক্ষে, অস্তিত্বের শর্তের আইন হলো একটি উচ্চতর আইন; কেননাএটি পূর্ব অভিযোজনের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্তির দ্বারা অন্তর্ভুক্ত করে প্রকারভেদের একতাকে:"[24]
জীবাশ্মবিদ ফিলিপ ট্যাকেট লিখেছেন যে "রেইন আনিমাল ছিল প্রাণীজগতের একটি সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করার এবং 'দেহাংশের পারস্পরিক সম্পর্ক' নীতির ভিত্তিতে একটি প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করার প্রয়াস..." তিনি এটাও বলেন যে এই বইতে "প্রাণীদের শ্রেণিবিভাগ সঠিকভাবে পুনরুৎপাদন করে কুভিয়ে প্রাকৃতিক ইতিহাসে স্পষ্টতা এনেছেন।" ট্যাকেট আরো তুলে ধরেন যে যদিও কুভিয়ে বিবর্তনের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন, কিছুটা আপাতবিরোধীভাবেই তার "তার শারীরবৃত্তীয় বর্ণনার নির্ভুলতা এবং জীবাশ্ম হাড়ের উপর তার গবেষণার গুরুত্ব" (যেগুলো দেখাতে সমর্থ হয় যে ম্যামথরা আদতে বিলুপ্ত হাতি) দ্বারা ডারউইনের মতো প্রকৃতিবিদরা সফলতার সাথে প্রমাণ করতে পেরেছিলো যে প্রাণের বিবর্তন হয়। [25]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.