Loading AI tools
ইংরেজ ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রয় কিলনার (ইংরেজি: Roy Kilner; জন্ম: ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০ - মৃত্যু: ৫ এপ্রিল, ১৯২৮) ইয়র্কশায়ারের উম্বওয়েলে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ পেশাদার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। অল-রাউন্ডার হিসেবে ১৯১১ থেকে ১৯২৭ সময়কালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন রয় কিলনার। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩০.০১ গড়ে ১৪,৭০৭ রান ও ১৮.৪৫ গড়ে ১,০০৩ উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। দশবার এক মৌসুমে সহস্রাধিক রান ও পাঁচবার শত উইকেট লাভ করেছেন। চারবার একই মৌসুমে সহস্রাধিক রান ও শত উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল পেয়েছেন যা আদর্শ অল-রাউন্ডারের গুণাবলীর পর্যায়ে পড়ে।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | রয় কিলনার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | উম্বওয়েল, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | ১৭ অক্টোবর ১৮৯০|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৫ এপ্রিল ১৯২৮ ৩৭) কেনড্রে, বার্নস্লে, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২১৪) | ১৪ জুন ১৯২৪ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৭ জুলাই ১৯২৬ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১১-১৯২৭ | ইয়র্কশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত ইয়র্কশায়ারের পক্ষে ব্যাটসম্যান হিসেবে অংশ নিতেন। এ সময়ে তিনি দলে নিয়মিত সদস্যরূপে খেলতেন। যুদ্ধে তিনি আহত হন। ১৯১৯ সালে খেলার জগতে ফিরে আসেন। এ এসময়ে ইয়র্কশায়ারের বোলিং সঙ্কট চলছিল। ফলশ্রুতিতে কিলনার বোলিংয়ে অনুশীলন চালাতে থাকেন ও স্লো বামহাতি বোলার হিসেবে স্বীকৃতি পান। তার আক্রমণধর্মী ব্যাটিং ও তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্বের কারণে ক্রিকেটার ও দর্শক - উভয় মহলের কাছেই তাকে জনপ্রিয় খেলোয়াড়ে পরিণত করে। তার উঁচুমানের খেলা দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ও ১৯২৪-২৫ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাশেজ সিরিজের জন্য মনোনীত করা হয়। সফরে দ্বিতীয় সফলতম বোলারের মর্যাদা পেলেও তার বোলিংয়ের উপযোগিতা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। পিচের সুবিধাদি থাকা স্বত্ত্বেও ব্যাটসম্যানদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে পারেননি। ১৯২৬ সালের অ্যাশেজ সিরিজে অংশ নিলেও চূড়ান্ত টেস্টে বাদ পড়েন। ইংরেজ শীত মৌসুমে বেশ কয়েকবার ভারত সফরে যান। ১৯২৮ সালে অসুস্থ থাকাবস্থায়ও ভারতে যান ও ইংল্যান্ডে ফিরে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে। তার শবযাত্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে ও তার মৃত্যুতে ক্রিকেট বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। রয় কিলনারের মৃত্যুতে ইয়র্কশায়ারের বোলিং আক্রমণভাগ অনেকাংশেই হ্রাস পায় ও মরিস লেল্যান্ডকে নিয়মিতভাবে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিতে হয়।
ইয়র্কশায়ারের বার্নসি এলাকার উম্বওয়েলে ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০ তারিখে কিলনারের জন্ম। সেথ কিলনার ও মেরি অ্যালাইস ওয়াশিংটন দম্পতির এগারো সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় পুত্র সন্তান ছিলেন।[1] তার ভাই নরম্যান কিলনার ইয়র্কশায়ার ও ওয়ারউইশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[2] কিলনার উম্বওয়েল প্যারিশ চার্চে ভর্তি হন ও চার্চ ল্যাডস ব্রিগেডের সদস্য ছিলেন।[2] তার বাবা ও কাকা সাবেক ইয়র্কশায়ারের খেলোয়াড় আরভিং ওয়াশিংটন শৈশবেই ক্রিকেট খেলতে উদ্বুদ্ধ করতেন। স্থানীয় মিচেল মেইনে তিনি তার দক্ষতা প্রদর্শন করেন।[2]
চৌদ্দ বছর বয়সে ১৯০৪ সালে কিলনার মিচেল মেইনে প্রথম একাদশের সদস্য মনোনীত হন।[2] ১৯০৫ সাল থেকে দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেললেও ব্যাট হাতে সফলকাম হননি। আগ্রাসী ভূমিকায় ব্যাটিং চালাতেন ও প্রায়শঃই বিপজ্জ্বনক শটে খেলতে গিয়ে উইকেট হারাতেন। তবে তার বোলিংশৈলী অধিকতর কার্যকর হলেও অনিয়মিত ছিল।[3] ১৯০৯ সালের মধ্যে তার ব্যাটিংয়ের উত্তরণ ঘটে। দলের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন ও ধারাবাহিকভাবে রান সংগ্রহ করতেন। ফলশ্রুতিতে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণের সক্ষমতা দেখান।[4]
১৯১০ মৌসুমের শুরুতে মিচেল মেইনের পক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার পর কিলনারকে ইয়র্কশায়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত করা হয়। প্রথম মৌসুমেই তিনি তিন উইকেট ও ১২.৫০ গড়ে রান তুলেন।[5] তবে, মিচেল মেইনের পক্ষে ভালো করতে থাকেন। ১৯১১ সালে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ কিলনারকে মিচেল মেইনের তুলনায় উচ্চমানের ক্রিকেট ক্লাব হ্যারোগেট ক্রিকেট ক্লাবে খেলার জন্য প্রেরণ করা হয়। কাউন্টি দলটি উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড়দেরকে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় আরও অভিজ্ঞতা লাভের জন্য স্থানীয় ক্লাবে প্রেরণ করে থাকে।[6] কিলনার ভালোমানের ব্যাটিং ও বোলিংশৈলীর রেকর্ড গড়তে শুরু করেন। তবে, ইয়র্কশায়ার দ্বিতীয় একাদশে তার অবস্থান আরও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েন। ঐ মৌসুমে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে সমারসেটের বিপক্ষে খেলার জন্য ইয়র্কশায়ার দলে তার প্রথম-শ্রেণীর অভিষেক ঘটে। ০ ও ১৪ রান করেন এবং বোলিংয়ে অগ্রসর হননি তিনি।[7] ১৯১১ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে আরও ছয়টি খেলায় অংশ নেন। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ১৮ রানের। ব্যাট হাতে তার গড় ছিল দশ ইনিংসে মাত্র ৬.৬৬ ও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি তিনি।[8][9] হ্যারোগেটের পক্ষে অধিকতর সফলতা দেখান। ৫১৯ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ২৮ উইকেট পান।[10]
৪ আগস্ট, ১৯১৪ তারিখে যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ঐ মৌসুমের ওল্ড ট্রাফোর্ডের গোলাপের খেলায় অংশগ্রহণ করেন কিলনার।[11] শুরুতে সরকারের তরফ থেকে খেলা চালিয়ে যাবার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে, সামরিকবাহিনীর সাথে জড়িত কয়েকজন খেলোয়াড়ের আপত্তি ও ইয়র্কশায়ারের অধিনায়ক স্যার আর্চিবল্ড হোয়াইটের বাঁধার মুখে খুব দ্রুত খেলা বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু হলে ও ক্ষয়-ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে থাকলে মৌসুমের খেলা চালিয়ে যাবার বিরুদ্ধে চলে যায়। হোভে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে সাসেক্সের খেলাটির ১ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। ১৯১৯ সালের পূর্ব-পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে। ‘ক্রিকেট’ সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, দর্শকদের মন খেলা থেকে দূরে রাখে। চা-বিরতিতে খেলাকে ড্র ঘোষণা করা হয়।[12][13] রুদ্ধশ্বাস চ্যাম্পিয়নশীপে কিলনার নিজ কাউন্টির দলীয় সঙ্গী আর্থার ডলফিন ও মেজর বুথ একত্রে সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত হন। তারা ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন লিডস ও ব্রাডফোর্ড পালসে যোগ দেন।[14] উত্তর ইয়র্কশায়ারের কলস্টারডেলে কর্পোরাল হিসেবে যোগদানের পূর্বে মেকানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।[15][16] নভেম্বর, ১৯১৪ সালে ছুটিতে থাকাকালে উম্বওয়েল প্যারিশ চার্চে জেমস ক্যাম্পবেলজন নামীয় এক প্রকৌশলীর কন্যা অ্যানি ক্যাম্পবেলজনের পাণিগ্রহণ করেন। বুথ সেরা ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করেন।[16] যুদ্ধকালীন অ্যানি রয় জুনিয়র নামের এক সন্তানের জন্ম দেন।[17] মিশরে ব্যাটালিয়নের সাথে যোগ দেন। কিন্তু আঘাতের কারণে অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেশে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। সুস্থ হবার পর ফ্রান্সের পশ্চিম রণাঙ্গনে যোগ দেন তিনি।[17] সোমের যুদ্ধে তার ব্যাটালিয়ন সম্মুখ সমরে জড়িত হবার অল্পসময় পূর্বে তিনি আহত হন। কোমড়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। পরবর্তীকালে ঐ একই যুদ্ধে বুথ নিহত হয়েছিলেন।[17][18] ব্ল্যাকপুলের কাছে এক সামরিক হাসপাতালে নেয়া হলে জনৈক মেকানিক প্রেস্টন গ্যারিসন কর্তৃক তাকে হত্যা করার জন্য মনোনীত করার পূর্বেই তার অবস্থার উত্তরণ ঘটে।[15][17] কিলনার দ্বিতীয়বারের মতো শোকাহত হন যখন ১৯১৭ সালে ওয়াইপ্রেসে তার ভাই নিহত হন।[15][19]
১৯১২-১৩ মৌসুমে মিচেল মেইনের পক্ষে ফুটবল খেলায় অংশ নেন।[20] প্রেস্টন নর্থে এন্ড এফসিতে রাইট-ব্যাকে খেলতেন। এ সময়েই যুদ্ধ বাঁধে।
১৯১৯ সালে বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিকেট খেলা চালু হলে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলা পরীক্ষামূলকভাবে এক মৌসুমের জন্য তিনদিনের পরিবর্তে দুইদিনে আনা হয়। যুদ্ধে মেজর বুথের মৃত্যু, আলোঞ্জো ড্রেকের অসুস্থতার পাশাপাশি বয়সের ভারে ন্যূহ জর্জ হার্স্টের দূর্বলতম বোলিংয়ে ইয়র্কশায়ারের আক্রমণের কার্যকারীতা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে দলের প্রধান বোলার না হওয়া স্বত্ত্বেও কিলনারকে আরও অধিক ওভার বোলিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়।[18][21] তিনি ৪৫ উইকেট দখল করেন যা যুদ্ধের পূর্বেকার সময়ের তুলনায় বেশি। প্রতি উইকেট লাভে ১৮.১২ গড়ে রান দেন তিনি। এরফলে গড়ের দিক দিয়ে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে তৃতীয় স্থান দখল করেন।[9][22] ব্যাট হাতে তিনটি সেঞ্চুরি করেন ও ২৯.১০ গড়ে ১,১৩৫ রান তুলেন।[8] তার এ অসামান্য অবদানের ফলে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার মৌসুমের শেষ খেলায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্কারবোরা উৎসবের ঐ খেলাটিতে তিনি কোন উইকেট কিংবা রান কোনটাই পাননি।[23] কিলনারের ভাই নরম্যানও ১৯১৯ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলেন। ফলশ্রুতিতে দলের স্থায়ী সদস্য হতে পারেননি।[21]
১৯২০ মৌসুমের শুরুতে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে তার প্রথম খেলায় অপরাজিত ২০৬ রানের ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে এটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ইনিংস হিসেবে রয়ে যায়। চারঘণ্টা স্থায়ী এ ইনিংসে ২৪ চার ও দুই ছক্কার মার ছিল।[24] ব্যক্তিগত পঞ্চাশ রানে কট আউট হবার হাত থেকে রক্ষা পান। স্থানীয় সংবাদপত্রে ইনিংসটিকে চমকপ্রদ, বিশেষ করে ড্রাইভ ও পুলের কার্যকরী সমাহাররূপে হিসেবে আখ্যায়িত করে।[25] একটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশ নেন। মৌসুমের শেষদিকে স্কারবোরা উৎসবে শীতকালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অংশ নেয়া মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে সিআই থর্টন একাদশের সদস্যরূপে খেলেন। এমসিসি ইংরেজ ক্রিকেট পরিচালনাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো ও এই নামেই ইংল্যান্ড দল বিদেশ সফরে বের হতো।[26][27] সর্বমোট ১,৩১৬ রান তুলেন ৩৭.০৯ গড়ে যাতে দুইয়ের অধিক সেঞ্চুরি ছিল। এরফলে গড়ের দিক দিয়ে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন।[8][28] বল হাতে ২৭ উইকেট পেলেও ২৫.৩৩ গড় তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।[9][29] কাউন্ট দলটি চ্যাম্পিয়নশীপে চতুর্থ স্থান দখল করে যাতে মিডলসেক্স শিরোপা জয় করে।[30] ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত, কিলনার আরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বোলিং করতে পারতেন। ইয়র্কশায়ারের প্রধান স্লো বামহাতি স্পিনার উইলফ্রেড রোডসের সাথে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি। তুলনামূলকভাবে বয়োঃজ্যেষ্ঠ ৪২ বছর বয়সী রোডস তার বোলিং ভারবহনের জন্য সেরা পছন্দ হিসেবে কিলনারকে কাছে পেতে চাইতেন ও তার বামহাতি স্পিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগাতেন।[29] পাশাপাশি শীত মৌসুমে কিলনার ওম্বওয়েল হোটেলের উঠানে বোলিং অনুশীলন করতেন। এখানেই তার বাবা জমিদারী করতেন।[29] একই সময়ে দ্বিতীয় সন্তানের জন্মদিন উদ্যাপন করেন। মেজর বুথের নামানুসরণে তার নাম ‘মেজর’ রাখেন।[31]
১৯২৩ মৌসুমে ছয়জন ব্যাটসম্যানের একজন হিসেবে দলের পক্ষে সহস্রাধিক প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছিলেন। অন্যরা হচ্ছেন - মরিস লেল্যান্ড, পার্সি হোমস, হার্বার্ট সাটক্লিফ, উইলফ্রেড রোডস ও এডগার ওল্ডরড।[32] পূর্ববর্তী মৌসুমের চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর উপহার দেয়ার প্রেক্ষিতে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা পান তিনি। ১৯২২ থেকে ১৯২৫ সময়কালে ইয়র্কশায়ার দল উপর্যুপরী চার মৌসুমে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছিল।
ভারতে আরও একবার শীতকালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ও বোলিং অনুশীলন করতে থাকেন।[33] ১৯২৪ সালের ইংরেজ গ্রীষ্মকালে ১৩.২৮ গড়ে ১৪৫টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান।[9] দলীয় সঙ্গী জর্জ ম্যাকাউলের পিছনে অবস্থান করে জাতীয় গড়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।[34] তবে, ব্যাটিংয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ২০.৮৮ গড়ে ৭৩১ রান করেন যা তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বনিম্ন গড় ছিল। ১৯১২ সালের পর প্রথম ১,০০০ রানের নিচে সংগ্রহ করেন।[8] মৌসুমের প্রথম ছয় খেলায় ৩৩ উইকেট পান ও তার সুন্দর ক্রীড়াশৈলীর দরুণ দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে টেস্ট অনুশীলনীমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।[35][36] তিন খেলায় ১৯ উইকেট লাভের প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য মনোনীত হন।[35] তন্মধ্যে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই পেয়েছিলেন সাত উইকেট। অভিষেক টেস্টে দলের বিশাল সংগ্রহে তিনি সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৯ রান তুলেন। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার দল প্রথম ইনিংসে কিলনার তার বোলিং করার পূর্বেই ৩০ রানে অল-আউট হয়।[37] দ্বিতীয় ইনিংসে ২২ ওভার বোলিং করলেও কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হন। ধারাভাষ্যকারদের কাছ থেকে কোন প্রশংসা পাননি তিনি। দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে পরের দুই টেস্ট থেকে বাদ দেয়া হয়। জে. ডব্লিউ. হার্ন তার স্থলাভিষিক্ত হন।[36][38][39] হার্নের পরিবর্তে চতুর্থ টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু প্রথমদিনের পর বাদ-বাকি সময় প্রবল বৃষ্টির কারণে খেলাটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হন। ১২ ওভার বোলিং করে কোন উইকেট পাননি তিনি। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, তিনি তার প্রথম দুই টেস্টে কোন ডিসমিসাল ঘটাতে পারেননি। হার্ন ফিরে আসলে শেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। দূর্বলতম ব্যাটিং স্বত্ত্বেও বোলিংয়ে বেশ ভালো করায় শীতকালে ১৯২৪-২৫ মৌসুমে এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য মনোনীত হন।[34]
প্রথম দুই টেস্ট খেলেননি তিনি। উভয় টেস্টেই ইংল্যান্ড দল পরাজিত হয়।[34] তৃতীয় টেস্টে বোলিং আক্রমণ পরিচালনার জন্য তাকে মাঠে নামানো হয়। এ খেলায় সতীর্থদের আঘাতপ্রাপ্তির ফলে কিলনারের উপর বেশ চাপ পড়ে। প্রায় নয়ঘণ্টা ইংল্যান্ড দল ফিল্ডিং করে। আট বল নিয়ে গড়া ওভারে ৫৬ ওভার বোলিং করে ৪/১২৭ লাভ করেন। আর্থার রিচার্ডসনকে আউট করে প্রথম টেস্ট উইকেটের সন্ধান পান।[40] আঘাতপ্রাপ্ত জিলিগান পরবর্তীকালে মন্তব্য করেন যে, কিলনার প্রকৃতপক্ষেই সেরা ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন।[41] দ্বিতীয় ইনিংসে ৪/৫১ পান।[41][42] ৩৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে কিলনার করেছিলেন ২৪ রান। খেলায় ইংল্যান্ড মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত হবার পাশাপাশি ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।[40]
চতুর্থ টেস্টেও বেশ স্বাচ্ছন্দেই ইংল্যান্ড জয় পায়। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭৯ রান তোলার সময় ডজার হোয়াইসলের সাথে ১৩৩ রানের জুটি গড়েন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকালে খেলায় কিলনার পাঁচ-উইকেট পান ও অন্যতম সেরা বোলারের মর্যাদা লাভ করেন।[43][44] চূড়ান্ত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪/৯৭ পেলেও স্বাগতিক দলের চতুর্থ জয়রথকে থামাতে পারেননি।[45] সিরিজে কিলনার ২৯.৮০ গড়ে ১২৯ রান তুলেন। মূলতঃ আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামতেন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, যখনই দলের রানের দরকার পড়েছে তখনি তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন।[46][47][48] টেস্টগুলোয় তিনি ২৩.৪৭ গড়ে ১৭ উইকেট দখল করেন। উইজডেন আরও মন্তব্য করে যে, সর্বাপেক্ষা সফলতম বোলার হিসেবে মরিস টেটের সহায়তা পেয়েছেন। অন্য কোন বোলারই ১১ উইকেটের বেশি পাননি ও প্রধান বোলারেরা প্রায় ৫০ গড়ে রান দিয়েছেন।[46][49][50] প্রথম-শ্রেণীর সকল খেলায় ২৪.৮৮ গড়ে ৪৮৮ রান ও ২৫.১৭ গড়ে ৪০ উইকেট পান তিনি।[8][9]
১৯২৫ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার পুরস্কার লাভ করেন। ঐ মৌসুমে তার ব্যাটিং উত্তরণ লক্ষ্য করা গেলেও তার বোলিং নিম্নগামী হতে শুরু করেছে বলে ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত। স্পিন বোলিংয়ের উপযোগী পিচে তার বোলিংয়ের কার্যকারিতা দেখা গেলেও ফ্লাটার পিচে কার্যকরী ছিল না যেমনটি দেখা গেছে ১৯২৫ সালের গ্রীষ্মকালে।[51] ক্রিকেটবিষয়ক সাময়িকী দ্য ক্রিকেটারে নেতিবাচকধর্মী লেগ তত্ত্বের দিকে তার ধাবমানতার বিষয়ে সমালোচিত হয় ও ব্যাটিং উপযোগী পরিবেশের মধ্যেও রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় ব্যাটিংয়ের কথা তুলে ধরা হয়।[52] ১৭.৯২ গড়ে ১৩১ উইকেট নিয়ে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে দ্বিতীয় স্থান দখল করে দলকে উপর্যুপরী চতুর্থবার কাউন্ট চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন।[9][52][53] এরফলে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনে তৃতীয়বারের মতো ‘ডাবল’ লাভ করেন।[8] ১৯২৫ সালে কিলনারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছে।[52] মিডলসেক্সের বিপক্ষে আর্থিক সুবিধাদির খেলায় তিনদিন ধরে ৭১,০০০ দর্শক উপস্থিত হলে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় £৪,১০৬ পাউন্ডে যা ২০০৮ সালের হিসেবে £১৭৫,০০০ পাউন্ড। এরফলে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে নতুন রেকর্ড দাঁড় করান।[54][55][56] ১৯২৫ সালে কোন টেস্ট খেলা হয়নি। তবে, লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় একবার অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ৫৯ রান ও খেলায় পাঁচ-উইকেট পান। পূর্ববর্তী শীতকালে এমসিসি দলের পক্ষে মৌসুমের কিছু খেলায় তার অংশগ্রহণ ছিল।[26]
১৯২৫-২৬ মৌসুমের শীতকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য এমসিসি দলের সদস্য মনোনীত হন। এ সফরে কোন টেস্ট খেলা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে তেমন সফলতা না পেলেও কিছু কার্যকরী ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন।[55] ২২.৬৩ গড়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ২৪৯ রান তুলেন। তন্মধ্যে, একবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলেন[8] ও ২৯.৫০ গড়ে ৩৪ উইকেট পান।[9]
১৯২৬ মৌসুমের গ্রীষ্মকালে অ্যাশেজ সিরিজে প্রথম চার টেস্টে খেলেন। কেবলমাত্র দুইবার ব্যাটিং করার সুযোগ পান। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ করেন ৩৬।[47] বল হাতে ৩৯.৪২ গড়ে সাত উইকেট পান।[50] তবে, উইজডেন সম্পাদক ইংরেজ বোলিংয়ের বিষয়ে সমালোচনায় মুখরিত হন। লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস দ্রুত শেষ করতেই কেবলমাত্র কিলনার ভূমিকা রেখেছিলেন।[57] চূড়ান্ত টেস্টে কিলনার বাদ পড়েন। তার পরিবর্তে ৪৮-বছর বয়সী উইলফ্রেড রোডসকে দলে আনা হয়। দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি পেলহাম ওয়ার্নার মন্তব্য করেন যে, কার্যকারিতাহীন বামহাতি স্পিনারের অভাব পূরণকল্পেই রোডসকে দলে রাখা হয়েছে।[58] এ খেলায় রোডস প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন। ১৯১২ সালের পর প্রথমবারের মতো অ্যাশেজ জয় করে ইংল্যান্ড দল। অন্যদিকে পূর্বের টেস্টই কিলনারের সর্বশেষ টেস্টে রূপান্তরিত হয়। নয় টেস্টে তিনি ৩৩.২৮ গড়ে ২৩৩ রান ও ৩০.৫৮ গড়ে ২৪ উইকেট পান।[59]
মরিস লেল্যান্ডের ন্যায় ইয়র্কশায়ারের বোলার হিসেবে ১৯২৭-২৮ মৌসুমে পাতিয়ালার মহারাজার আমন্ত্রণে পুনরায় ভারত সফরে খেলতে আসেন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন।[60] তবে, এ পর্যায়ে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন ও ইংল্যান্ডে ফেরার অল্প কিছুদিন পরই মৃত্যুমূখে পতিত হন।[61] কিলনারের বোন মোলি পরবর্তীকালে জানান যে, আমন্ত্রণ বার্তা পেয়ে তিনি বেশ উৎফুল্ল হন ও গ্রহণ করবেন কি-না সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন।[62] যাত্রা শুরুর পরদিন কিলনারের কাকা আরভিং ওয়াশিংটনের দেহাবসান ঘটে। কিলনারের বেশকিছু আচরণে বিশাদের কালোছায়া লক্ষ্য করা যায়।[62] তাস্বত্ত্বেও বেশ কয়েকটি বিশাল রানের সংগ্রহ সৃষ্টিতে প্রয়াস চালান। তন্মধ্যে প্রথম-শ্রেণীবিহীন অপরাজিত ২৮৩ রান সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।[62] সফরের শেষ পর্যায়ে জ্বরে আক্রান্ত হন। এ অবস্থাতেই মার্সেলিস থেকে বাড়ীর পথে রওয়ানা দেন।[62] সাউদাম্পটনে ফেরার পর তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখা যায়। ক্রিকেটের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি।[63] সাউদাম্পটনে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। বাড়ীতে ফেরার আগ্রহ ব্যক্ত করেন ও স্ত্রীর মুখোমুখি হতে চান।[64] ২৭ মার্চ, ১৯২৮ তারিখে উম্বওয়েল প্রত্যাবর্তন করলেও চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাড়ীতে প্রেরণ করেন। পরবর্তীকালে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। এরপর তাকে বার্নসলির কাছাকাছি কেনড্রে ফিভার হাসপাতালে নেয়া হয়। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনি শঙ্কটাবস্থা কাটিয়ে উঠেছেন। তবে এপ্রিলের শুরুর দিকে কয়েকদিন শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। ৫ এপ্রিল নিজ স্ত্রীকে সামনে রেখে তার দেহাবসান ঘটে।[54][64]
উম্বওয়েল জনগণ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। ১০ এপ্রিল শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রাস্তা জনাকীর্ণ আকার ধারণ করে। শহরের বাইরে থেকেও অনেক লোকের অংশগ্রহণ ঘটে। কিলনারের স্মরণে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে বলে জানা যায়।[65] সমাধিক্ষেত্রে হাজারো লোক উপস্থিত ছিলেন। ইয়র্কশায়ারের ক্রিকেটারেরা কফিন বহন করেছিলেন।[66] দুই বছর পর ১৯৩০ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল উম্বওয়েলে কিলনারের সমাধি পরিদর্শনে আসে ও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।[67]
শবানুষ্ঠান পরিচালনাকারী রেক্টর তার স্মরণে বলেন, ‘এক ইয়র্কশায়ার উইকেটের পতন ঘটেছে ও ইয়র্কশায়ারের অন্যতম সেরা লোকটি বিদায় নিয়েছেন। আমরা তাঁর জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।’[65]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.