Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ম্যারাথন (ইংরেজি: Marathon) দূরপাল্লার দৌড় খেলাবিশেষ। দাপ্তরিকভাবে এ দৌড়ের দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২.১৯৫ কিলোমিটার বা ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ।[1] সচরাচর খেলা পরিচালনায় রাস্তা ব্যবহার করা হয় বিধায় এটি রোড রেস বা রাস্তায় দৌড় খেলা নামে পরিচিত। প্রাচীন গ্রীক সৈনিক ফেইডিপ্পিডেস কর্তৃক ম্যারাথনের যুদ্ধ জয়ের সংবাদ বহন করে দৌড়ে এথেন্স নগরে নিয়ে এসেছিলেন। ম্যারাথনের যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ দৌড়ের নামকরণ করা হয় ম্যারাথন দৌড়।
১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় ম্যারাথন খেলা শুরু থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু ১৯২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ খেলার সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না। প্রতি বছর বিশ্বে গড়ে পাঁচ শতাধিক ম্যারাথন ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ খেলায় বিপুলসংখ্যক ক্রীড়াপ্রেমী শৌখিন দৌড়বিদগণ অংশ নিয়ে থাকেন। ক্ষুদ্রতম ম্যারাথন হিসেবে বিবেচিত স্ট্যানলী ম্যারাথনে শুধুমাত্র কয়েক ডজন প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেন।[2] কিন্তু বৃহৎ পরিসরের ম্যারাথনে দশ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করতে পারেন।[3]
গ্রীক বার্তাবাহক ফেইডিপ্পিডেস নামীয় ব্যক্তির সৌজন্যে ম্যারাথন নামটি এসেছে। লৌকিক উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে ম্যারাথনের যুদ্ধের ময়দান থেকে এথেন্সে প্রেরণ করা হয়েছিল। পারস্যদের পরাজয়ের সংবাদ ঘোষণা করার জন্যই যুদ্ধরত অবস্থা থেকে তাকে প্রেরণ করা হয়।[4] খ্রীষ্ট-পূর্ব ৪৯০ সালের আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে ম্যারাথনের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[5]
বলা হয়ে থাকে যে, তিনি পুরোটা দূরত্ব এক দৌড়ে, কোথাও নামে থেকে শুধুমাত্র νικωμεν’ (নিকোমেন), আমরা জয়ী হয়েছি বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। এথেন্সবাসীর কাছে সংবাদটি প্রদান করেই ভূপাতিত হন ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।[6]
কিন্তু পৌরাণিক উপাখ্যানে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[7][8] গ্রীকো-পার্সিয়ান যুদ্ধের প্রধান উৎসস্থলরূপে গ্রীক ইতিহাসবিদ হিরোডোটাস ফেইডিপ্পিডেসকে এথেন্স থেকে স্পার্টায় দৌড়ে বার্তা প্রদানের কথা বলেছেন। সেখানে তিনি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার কথা তুলে ধরে ২৪০ কিলোমিটার বা ১৫০ মাইলব্যাপী রাস্তা অতিক্রমের ঘটনা বর্ণনা করেন।[9][10]
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় ম্যারাথন দৌড়কে ক্রীড়াবিষয়রূপে অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রস্তাবনায় তুলে ধরা হয়। উদ্যোক্তা এবং সংগঠকগণ এ বৃহৎ জনপ্রিয় ক্রীড়াকে প্রাচীন গ্রীসের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মাইকেল ব্রিল ম্যারাথন দৌড়কে এথেন্সে ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়াসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করতে সচেষ্ট হন।
মাইকেল ব্রিলের এ পরিকল্পনাটি গ্রীকদের পাশাপাশি আধুনিক অলিম্পিকের জনক পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ বেশ সমর্থন করেন। এর প্রেক্ষাপটে গ্রীস ১০ মার্চ, ১৮৯৬ সালে অলিম্পিক ম্যারাথনে দৌড়বিদ মনোনয়নের জন্য প্যান হেলেনিক গেমস ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে চেরিলাউস ভ্যাসিলাকোস নামীয় গ্রীক ক্রীড়াবিদ ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট সময় নিয়ে জয়ী হন।[11] এ দৌড়টিই ছিল বিশ্বের প্রথম ম্যারাথন দৌড়। ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম অলিম্পিক ম্যারাথন ক্রীড়া ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্পাইরিডন স্পাইরোজ লুইস নামীয় গ্রীক পানিবাহক ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তখন ম্যারাথন দৌড়ের ব্যাপ্তি ছিল ২৫ মাইল।[3]
মহিলাদের অংশগ্রহণে ম্যারাথন ক্রীড়া অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসে। এ দৌড়ে আমেরিকার জোয়ান বেনোইট নাম্নী দৌড়বিদ ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে জয়ী হন।[12]
আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়াসূচীতে সূচনালগ্ন থেকেই ম্যারাথন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এটি দৌড় প্রতিযোগিতার সর্বশেষ ক্রীড়া বিষয় হিসেবে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সমাপ্তি ঘটে। ২০০৪ সালের অলিম্পিক গেমসে প্রথা অনুযায়ী ম্যারাথন শহর থেকে এথেন্সের প্যানাথিনাইকো স্টেডিয়ামে এসে ম্যারাথন দৌড় শেষ হয়। উল্লেখ্য, প্যানাথিনাইকো স্টেডিয়ামে ১৮৯৬ সালের অলিম্পিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০০৮ সালের অলিম্পিকে পুরুষদের ম্যারাথনে ২:০৬:৩২ সময় নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন কেনিয়ার নাগরিক স্যামুয়েল কামাউ ওয়ানজিরু।[13] মহিলাদের অলিম্পিকে ২:২৩:১৪ সময় নিয়ে ২০০০ সালে বিশ্বরেকর্ড গড়েন জাপানের অধিবাসী নাওকো তাকাহাশি।[14]
অলিম্পিকে ম্যারাথনের ন্যায় দূরপাল্লার দৌড় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে প্রমিলা ক্রীড়াবিদগণ এতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। তাস্বত্ত্বেও অল্প কিছুসংখ্যক নারী ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু আনুষ্ঠানিক ফলাফলে তারা অন্তর্ভুক্ত হননি।[15] মারী-লুইস লেদ্রু হচ্ছেন প্রথম নারী যিনি ম্যারাথনে প্রথম অংশগ্রহণ করেন।[16][17][18] প্রথম নারী হিসেবে ভায়োলেট পিয়ের্সি ম্যারাথনে আনুষ্ঠানিকভাবে সময়ে যুক্ত করা হয়।[15]
অলিম্পিকে ম্যারাথনের দূরত্ব | ||
বছর | দূরত্ব (কি.মি.) |
দূরত্ব (মাইল) |
---|---|---|
১৮৯৬ | ৪০ | ২৪.৮৫ |
১৯০০ | ৪০.২৬ | ২৫.০২ |
১৯০৪ | ৪০ | ২৪.৮৫ |
১৯০৬ | ৪১.৮৬ | ২৬.০১ |
১৯০৮ | ৪২.১৯৫ | ২৬.২২ |
১৯১২ | ৪০.২ | ২৪.৯৮ |
১৯২০ | ৪২.৭৫ | ২৬.৫৬ |
১৯২৪ থেকে বর্তমান | ৪২.১৯৫ | ২৬.২২ |
শুরুর দিকে ম্যারাথনের সুনির্দিষ্ট কোন দূরত্ব নির্ধারিত ছিল না। তখন সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল এ বৃহৎ দূরত্বের প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ। অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শুরুর দিকের আসরে নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করা না হলেও আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল রাখা হয়।[19] ম্যারাথন নগর থেকে এথেন্স পর্যন্ত সমান্তরাল রাস্তার দূরত্বই ছিল খসড়া মানদণ্ড। সঠিক দূরত্বের অলিম্পিক ম্যারাথন দৌড় আয়োজনকারী শহরের রাস্তা-ঘাটের উপর নির্ভরশীল।
ম্যারাথন দৌড়ের আদর্শ মানদণ্ডের দূরত্ব মে, ১৯২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল এ্যামেচার এ্যাথলেটিক ফেডারেশন বা আইএএএফ কর্তৃক নির্ধারিত হয়।[20][21] এতে ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ বা ৪২.১৯৫ কিলোমিটারকে আদর্শ মানদণ্ড ধরা হয়। ২৪০ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিযোগিতার আইন-কানুন মেট্রিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।[22]
আইএএএফ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত পুরুষ ও মহিলাগণ দ্রুততম ম্যারাথন দৌড়বিদরূপে শীর্ষ-১ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।[23][24]
সময় | এ্যাথলেট | দেশ | তারিখ | স্থান |
---|---|---|---|---|
২:০৩:৩৮ | প্যাট্রিক মাকাউ | কেনিয়া | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১ | বার্লিন |
২:০৩:৪২ | উইলসন কিপস্যাং | কেনিয়া | ৩০ অক্টোবর, ২০১১ | ফ্রাঙ্কফুর্ট |
২:০৩:৫৯ | হেইল জেবসেল্যাসি | ইথিওপিয়া | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ | বার্লিন |
২:০৪:২৩ | আইলে এবশেরো | ইথিওপিয়া | ২৭ জানুয়ারি, ২০১২ | দুবাই |
২:০৪:২৭ | ডানকান কিবেট | কেনিয়া | ৫ এপ্রিল, ২০০৯ | রটারড্যাম |
২:০৪:২৭ | জেমস কুয়ামবাই | কেনিয়া | ৫ এপ্রিল, ২০০৯ | রটারড্যাম |
২:০৪:৪০ | ইম্যানুয়েল মুতাই | কেনিয়া | ১৭ এপ্রিল, ২০১১ | লন্ডন |
২:০৪:৪৮ | ইয়েম্যান সেগে | ইথিওপিয়া | ১৫ এপ্রিল, ২০১২ | রটারড্যাম |
২:০৪:৫০ | গেটু ফেলেক | ইথিওপিয়া | ১৫ এপ্রিল, ২০১২ | রটারড্যাম |
২:০৪:৫০ | দিনো সেফির কেমাল | ইথিওপিয়া | ২৭ জানুয়ারি, ২০১২ | দুবাই |
সময় | এ্যাথলেট | দেশ | তারিখ | স্থান |
---|---|---|---|---|
২:১৫:২৫ | পাউলা রেডক্লিফ | যুক্তরাজ্য | ১৩ এপ্রিল, ২০০৩ | লন্ডন |
২:১৮:২০ | লিলিয়া শোবুখোভা | রাশিয়া | ৯ অক্টোবর, ২০১১ | শিকাগো |
২:১৮:৩৭ | মেরি কিইতেনি | কেনিয়া | ২২ এপ্রিল, ২০১২ | লন্ডন |
২:১৮:৪৭ | ক্যাথেরিন দেরেবা | কেনিয়া | ৭ অক্টোবর, ২০০১ | শিকাগো |
২:১৮:৫৮ | টিকি গেলানা | ইথিওপিয়া | ১৫ এপ্রিল, ২০১২ | রটারড্যাম |
২:১৯:১২ | মিজুকি নোগুচি | জাপান | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ | বার্লিন |
২:১৯:১৯ | ইরিনা মিকিটেনকো | জার্মানি | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ | বার্লিন |
২:১৯:৩১ | এসেলেফেচ মার্গিয়া | ইথিওপিয়া | ২৭ জানুয়ারি, ২০১২ | দুবাই |
২:১৯:৩৪ | লুসি কেবু | কেনিয়া | ২৭ জানুয়ারি, ২০১২ | দুবাই |
২:১৯:৩৬ | দিনা কেস্তোর | যুক্তরাষ্ট্র | ২৩ এপ্রিল, ২০০৬ | লন্ডন |
|
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.