মেহের বাবা
ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু / From Wikipedia, the free encyclopedia
মেহের বাবা (জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪ - ৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯), মেরওয়ান শেরিয়ার ইরানি, একজন ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু, যিনি নিজেকে অবতার বা [1][2][3] মানুষের রূপে ঈশ্বর বলে দাবী করতেন।[4][5]
মেহের বাবা | |
---|---|
![]() ১৯৪৫ সালে মেহের বাবা | |
জন্ম | মেরওয়ান শেরিয়ার ইরানি (১৮৯৪-০২-২৫)২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪ |
মৃত্যু | ৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯(1969-01-31) (বয়স ৭৪) মেহেরাবাদ, ভারত |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | স্রষ্টার বাণী, উপদেশাবলী |
প্রধান আগ্রহ | ধর্ম, দর্শনশাস্ত্র, চারুকলা, নীতিশাস্ত্র |
ভাবগুরু | |
ওয়েবসাইট | www |
স্বাক্ষর | |
![]() |
মেরওয়ার শেরিয়ার ইরানি ১৮৯৪ সালে ভারতের পুনে শহরে এক জরথুস্ট্রীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি সাত বছরের একটি আধ্যাত্বিক রূপান্তরের প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেন। [6][7] ২৭ বছর বয়সে, নিজের আধ্যাত্বিক মিশন শুরু এবং ১৯২২ সালে শিষ্য গ্রহণ করা পূর্বে তিনি পাচঁজন আধ্যাত্মিক গুরুর সান্নিধ্যে আসেন।[8]
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই থেকে জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত, মেহের বাবা নীরবতা পালন করেছিলেন, একটি বর্ণমালার বোর্ড অথবা হাতের বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাববিনিময় করতেন।[9][10][11] তার শিষ্যদের সাথে তিনি নির্জনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতেন, এই সময় তিনি প্রায় উপোস করতেন। তিনি প্রচুর ভ্রমণ করতেন, জনসমাবেশের আয়োজন করতেন এবং কুষ্ঠরোগী, দরিদ্র ও মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের সঙ্গে দাতব্য কাজ জড়িত ছিলেন। ১৯৩১ সালে, মেহের বাবা পশ্চিমা দেশে প্রথমবারের মত ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তিনি প্রচুর শিষ্যকে প্রভাবিত করেন। [12] ঊনবিংশ শতাব্দির চল্লিশ দশকের প্রায় পুরোটা সময়, মেহের বাবা আধ্যাত্বিক জগতে উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে তিনি আধ্যাত্বিক অভিজ্ঞতার মাধ্যম বিমোহিত করেন। [13] ১৯৪৯ এর শুরুরদিকে, কতিপয় নির্বাচিত মণ্ডলী সাথে নিয়ে, ছদ্মবেশে তিনি সমগ্র ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেন যে ভ্রমণের বিরাট একটি অংশ এখনো অপরিষ্কার রয়ে গেছে, তিনি এই সময়টির নাম দেন "নব জীবন"।[14]
দুইটি রোড দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর, একটি ১৯৫২ সালে আমেরিকায় এবং অন্যাটি ১৯৫৬ সালে ভারতে, তার চলাফেরার ক্ষমতা অনেকাংশেই সীমিত হয়ে পড়ে।[15][16] ১৯৬২ সালে, তিনি পশ্চিমা বিশ্বে অবস্খানরত তার শিষ্যদেরকে একটি মহান দর্শন, যা পাচ্য-পাশ্চাত্য সম্মেলন নামে পরিচিত, অংশগ্রহণ করার জন্য নিমন্ত্রণ পাঠান।[17] এলএসডি এবং অন্যান্য উন্মাদজনক মাদকদ্রব্য গ্রহণের হার মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেলে,[18] ১৯৬৬ সালে বাবা বিবৃতি দেন যে এগুলো আসলেই কোন উপকারে আসে না।[19] স্বাস্থের অবনতি সত্ত্বেও, তিনি তার মৃত্যু ৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯ সাল পযর্ন্ত উপোস এবং নির্জনতা, যেটিকে তিনি তার বৈশ্বিক কর্ম হিসেবে অভিহিত করেন, বজায় রাখেন। তার সমাধি (মাজার/কবর), যা ভারতের মেহেরাবাদে অবস্থিত, বর্তমানে আন্তর্জাতিক তীর্থযাত্রায় পরিণত হয়েছে।[20]
মেহের বাবা জীবনের উদ্দেশ্যসহ পুর্নজন্মবাদ সর্ম্পকে প্রচুর উপদেশ দিয়েছেন। তার মতে এই বিস্ময়কর পৃথিবীটা একটি মোহ। তিনি শিখিয়েছেন পৃথিবীটা হচ্ছে এমন এক কল্পনা যা স্রষ্টার অস্তিত্ব সর্ম্পকে ধারণা দেয়, এবং চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ধর্মশাস্ত্রের মূল বাণী বোধগম্য করে নিজ আত্মাকে পরমাত্মায় মিলিত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। স্রষ্টা অভিলাষী যারা স্বীয় আত্মা সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করতে এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে যারা মুক্তি পেতে চায় তাদের জন্য তিনি বাস্তবসম্মত উপদেশ দিয়েছেন।[21] তিনি সম্যক গুরু বা চেতন্যগুরু, অবতার এবং আধ্যাত্বিক জগতের বিভিন্ন মোকাম বা স্তর সর্ম্পকেও শিক্ষা দিয়েছেন। তার অমূ্ল্যবাণীসমূহ তার প্রধান গ্রন্থ উপদেশাবলী এবং স্রষ্টার বাণীতে লিপিবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
ভারতে তার প্রতিষ্ঠিত অবতার মেহের বাবা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, তীথযাত্রা এবং তথ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এবং সে সাথে সাথে পপ সঙ্গীতের শিল্পীদের উপর একটি প্রভাব বিস্তার এবং "হতাশ হয়ও না, সুখী হতে শিখ" এই সাধারণ অভি্ব্যক্তিটির প্রচারে ভূমিকা পালন করে।[22][23]
১৯২৫ সালের জুলাইয়ে, মেহের বাবা নির্বাক জীবন শুরু করেন, প্রথমদেক তিনি চক এবং স্লেটের মাধ্যমে, তারপর বর্ণমালা বোর্ডের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে হাতের বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাববিনিময় করতেন। ১৯২৭ সালের জানুয়ারীতে তিনি কলম বা পেন্সিল দিয়ে লেখালেখিও ছেড়ে দেন।