Loading AI tools
১৯৫৬-এর আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত চলচিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুখ ও মুখোশ বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) প্রথম স্থানীয়ভাবে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র।[1] ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি পরিচালনা করেন আব্দুল জব্বার খান।[2] ইকবাল ফিল্মস্ এই ছবিটি অর্থায়ন ও চিত্রায়নে সহায়তা করে। চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল টকিজে (বর্তমান আজাদ প্রেক্ষাগৃহ)। এটি ঢাকার রূপমহল, চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড ও খুলনার উল্লাসিনী প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পায়।[3] সেই অঞ্চলের প্রথম চলচ্চিত্র হিসাবে দর্শকমহলে এটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্রটি প্রথম দফায় মুক্তির পর ৪৮,০০০ রুপি আয় করে।[4]
মুখ ও মুখোশ | |
---|---|
পরিচালক | আব্দুল জব্বার খান |
প্রযোজক |
|
রচয়িতা | আব্দুল জব্বার খান |
উৎস | আব্দুল জব্বার খানের 'ডাকাত' অবলম্বনে |
শ্রেষ্ঠাংশে | পূর্ণিমা সেন
|
সুরকার | সমর দাস |
চিত্রগ্রাহক | মুরারী মোহন
জামান |
সম্পাদক | আব্দুল লতিফ |
পরিবেশক | ইকবাল ফিল্মস |
মুক্তি | ৩ আগস্ট ১৯৫৬ |
স্থিতিকাল | ৯৯ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ পাকিস্তান |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | ৬৪,০০০ রুপি |
আয় | ৪৮,০০০ রুপি |
আবদুল জব্বার খান রচিত ফরিদপুরে সংঘটিত একটি ডাকাতির কাহিনীকে উপজীব্য করে লেখা ডাকাত নাটক হতে চলচ্চিত্রটির কাহিনী নেয়া হয়।[3] ১৯৫৩ সালে তিনি চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করেন। সে সময় দৃশ্যত পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কোন চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠেনি। স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ. দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে জব্বার খান চলচ্চিত্রটি নির্মাণে উদ্যোগী হন।[5] জব্বার খান দুই বছর ধরে ছবিটির কাজ করেন।
সিনেমার শুটিং শুরু হয় ১৯৫৩ সালের কালীগঞ্জে। পরে রাজারবাগের কৃষি ক্ষেত্র, কমলাপুর বৌদ্ধমন্দির এলাকার পুকুরপাড়, লালমাটিয়া ধান খেত, মিরপুর ও তেজগাঁয়ের জঙ্গল জিনজিরা ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায়।
১৯৫৪ সালের ৬ই আগস্ট আবদুল জব্বার খান তার পরিচালনায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর মহরত করেন হোটেল শাহবাগে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা ছবির মহরতের উদ্বোধন করেন।[6] স্থানীয় অভিনেতারা, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিনা পারিশ্রমিকে এই ছবিতে অভিনয় করেন।[4] স্থানীয়ভাবে কোন ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও না থাকায়, ছবির নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়। লাহোরের শাহনূর স্টুডিওতে ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পরিস্ফুটন কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৬ সালে ছবির কাজ শেষ হয় কিন্তু তিনি ছবিটি নিয়ে প্রথমে ঢাকায় ফেরার অনুমতি পাননি। ‘মুখ ও মুখোশ’র প্রথম প্রদর্শনী হয় লাহোরে। ঢাকায় ফিরে আসার পর ছবিটি প্রদর্শনীর বিষয়ে কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়াও পাননি। তবে এ অবস্থা কাটাতে বেশি সময় লাগেনি। অল্পদিন পরেই ‘মুখ ও মুখোশ’ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং খুলনার উল্লাসিনী সিনেমায় একযোগে প্রদর্শিত হয়। ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় রূপমহল প্রেক্ষাগৃহে।
আবদুল জব্বার ছবিটির জন্য নারী চরিত্রের জন্য চিত্রালী পত্রিকায় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন।[7] ইডেন কলেজের ছাত্রী পেয়ারী বেগম নাজমা (মৃত্যু ২০২৩), এবং তার বন্ধু জহরত আরা (মৃত্যু ২০২১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং মুসলেহউদ্দিনের বোন, ইকবাল ফিল্মসের ঢাকার নবাব কাটরায় অফিসে গিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তারা দুজনেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। যেহেতু ১৯৫০-এর দশকে নারী অভিনেতাদের অভাব ছিল, তাই খান প্রাথমিকভাবে চলচ্চিত্রের জন্য একজন পুরুষকে নারীর পোশাকে রাখার কথা ভাবতেন যা সেই সময়ে মঞ্চ নাটকে একটি সাধারণ অভ্যাস ছিল। খানও কলিম শরাফীর কাছে যান এবং তার তৎকালীন স্ত্রী কামেলা শরাফিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কিন্তু তারা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এদিকে ছবির গানগুলো কেমন হবে এবং কাকে দিয়ে গানগুলো লেখাবেন, তা নিয়ে ছবির পরিচালক খানিকটা চিন্তিতই ছিলেন। তখন হঠাৎই তিনি তাঁর বন্ধুবর এম, এ, গফুর (সারথী) কে অনুরোধ করলেন এই ছবির গানগুলো লিখার জন্য। সারথীও এ সুযোগ লুফে নিলেন। এই ছবির সব গানের কথা লিখেছেন এম, এ, গফুর (সারথী)।
অভিনেতা ইনাম আহমেদ ছবিটির প্রধান চরিত্রে উপস্থিত ছিলেন এবং খান নিজেই দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রধান অভিনেত্রী পূর্ণিমা সেনগুপ্তা চট্টগ্রামের পাথরঘাটা থেকে অভিনয় করেছিলেন।
১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলেও, ১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট ঢাকার হোটেল শাহবাগে (বর্তমানে বিলুপ্ত) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা।[8]
১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট, ছবিটি সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে (বর্তমানে বিলুপ্ত) মুক্তি পায়। মুক্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এ. কে. ফজলুল হক। ছবিটির অন্য তিনটি প্রিন্ট চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড এবং খুলনার উল্লাসিনী সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়।[9]
২০২২ সালের আগস্টে, আসল স্ক্রিপ্ট, পর্দার পিছনের স্থিরচিত্র এবং ছবিতে ব্যবহৃত একটি পিয়ানো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ (বিএফএ) জেসমিন জামান কর্তৃক হস্তান্তর করা হয়েছিল, যিনি ইকবাল ফিল্মসের মালিক নুরুজ্জামানের কন্যা ছিলেন। সুরকার সমর দাস ছবির স্কোর লিখতে পিয়ানো ব্যবহার করেন। নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী কটন মিলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন একজন ব্রিটিশের কাছ থেকে নুরুজ্জামান ১৮৮১ থেকে ১৮৯২ সালের মধ্যে জেজে হপকিনসন পিয়ানো কোম্পানির তৈরি পিয়ানোটি কিনেছিলেন।[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.