শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

মহাদেবী বর্মা

ভারতীয় হিন্দি ভাষার লেখিকা, কবি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মহাদেবী বর্মা
Remove ads

মহাদেবী বর্মা (২৬ মার্চ, ১৯০৭ - ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দি-ভাষী কবি, প্রাবন্ধিক ও নকশাধর্মী গল্প লেখিকা। হিন্দি সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মহাদেবী বর্মাকে উক্ত সাহিত্যের "ছায়াবাদী" যুগের প্রধান চার স্তম্ভের[] অন্যতম জ্ঞান করা হয়।[] তাঁকে আধুনিক মীরা বলেও অভিহিত করা হয়।[] কবি সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী "নিরালা" একদা মহাদেবী বর্মাকে "হিন্দি সাহিত্যের বিশাল মন্দিরে সরস্বতী" বলে উল্লেখ করেছিলেন।[] মহাদেবী বর্মা স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় যুগের ভারতকেই দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের বৃহত্তর সমাজের জন্য কর্মরত এক কবি।[] শুধুমাত্র কবিতাই নয়, সমাজের মানোন্নয়ন ও নারীকল্যাণের যে কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন তাও মহাদেবীর সাহিত্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তা শুধু পাঠকদের প্রভাবিত করেছে, তা-ই নয়, সমালোচকদের মধ্যেও এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রসঙ্গে মহাদেবীর দীপশিখা উপন্যাসটির নাম করা যায়।[]

দ্রুত তথ্য মহাদেবী বর্মা, জন্ম ...

তিনি খড়ীবোলীতে হিন্দি কবিতার এক কোমল শব্দকোষ গড়ে তোলেন, পূর্বে যা কেবল ব্রজভাষার ক্ষেত্রেই সম্ভবপর বলে গণ্য করা হত। সেই কাজে তিনি সংস্কৃতবাংলা ভাষা থেকে কোমল শব্দগুলি নির্বাচন করেন এবং সেগুলিকে হিন্দিতে গ্রহণ করেন। মহাদেবী বর্মা সংগীতেও বিশেষ পারদর্শিনী ছিলেন। তাঁর গানের সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে তীক্ষ্ণ অভিপ্রকাশের সুভাষিত শৈলীতে ধৃত এক ভঙ্গিমায়।[] মহাদেবী কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। তিনি প্রয়াগ মহিলা বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষা হন। বিবাহ করলেও মহাদেবী সন্ন্যাসিনীর জীবনই বেছে নিয়েছিলেন।[][] তিনি ছিলেন একজন দক্ষ চিত্রকর এবং সৃজনশীল অনুবাদক। হিন্দি সাহিত্যের সকল গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারই তিনি অর্জন করেছিলেন। বিগত শতাব্দীর জনপ্রিয়তম মহিলা হিন্দি সাহিত্যিক হিসেবে তিনি সারাজীবনই সম্মান অর্জন করে এসেছিলেন।[] ২০০৭ সালে মহাদেবীর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। পরবর্তীকালে গুগলও এই দিনটি গুগল ডুডলের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করে।[]

Remove ads

জীবন ও শিক্ষা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রথম জীবন

মহাদেবী বর্মার জন্ম ১৯০৭ সালের ২৬ মার্চ[১০] ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশের ফারুকাবাদের[১১] এক হিন্দু চিত্রগুপ্তবংশী কায়স্থ[১২][১৩][১৪][১৫][১৬] পরিবারে। বাবা গোবিন্দ প্রসাদ বর্মা ছিলেন ভাগলপুরের একটি কলেজের অধ্যাপক এবং মা হেমরানি দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণা, স্নেহপ্রবণা, নিরামিশাষী এবং সংগীত বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী।[১০] শৈশবে মায়ের কাছে মহাদেবী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রামায়ণ, ভগবদ্গীতাবিনয় পত্রিকা পাঠ শুনতেন। অন্যদিকে গোবিন্দ প্রসাদ ছিলেন পণ্ডিত, সংগীতপ্রেমী, নাস্তিক, শিকারপ্রেমী ও হাসিখুশি ব্যক্তি। সুমিত্রানন্দন পন্তসূর্যকান্ত ত্রিপাঠী "নিরালা" ছিলেন মহাদেবী বর্মার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।[১৭] কথিত আছে, মহাদেবী ৪০ বছর ধরে নিরালার হাতে রাখি পরিয়ে এসেছিলেন।[১৮]

শিক্ষা

মহাদেবী বর্মাকে প্রথমে একটি কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করায় এবং অনড় মনোভাব দেখানোয় পরে তাঁকে ভর্তি করানো হয় এলাহাবাদের ক্রস্থওয়েট গার্লস কলেজে।[] মহাদেবী বলেছিলেন, ক্রস্থওয়েটে হোস্টেলে থাকার সময় তিনি একতার শক্তি শিক্ষা করেছিলেন। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ছাত্রীরা একসঙ্গে থাকত। মহাদেবী গোপনে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু কক্ষসঙ্গিনী ও বয়োজ্যেষ্ঠা সুভদ্রা কুমারী চৌহান (তিনি স্কুলে কবিতা লিখতেন) মহাদেবীর কবিতার গোপন কাগজপত্র আবিষ্কার করে ফেলায় তাঁর প্রতিভা প্রকাশিত হয়ে পড়ে।[১৯]

সবাই যখন বাইরে খেলা করত, আমি আর সুভদ্রা একটি গাছে বসে আমাদের চিন্তাভাবনার স্রোত বইয়ে দিতাম... সে লিখত খড়ীবোলীতে, আমিও কিছুদিনের মধ্যেই খড়ীবোলীতে লেখা শুরু করলাম... এইভাবে আমরা দিনে একটি কি দু'টি কবিতা লিখে ফেলতাম...

মহাদেবী বর্মা, স্মৃতি চিত্র বঙ্গানুবাদ[২০]

তিনি ও সুভদ্রা দু'জনেই সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলিতে কবিতা পাঠাতে শুরু করেন। তাঁদের কয়েকটি কবিতা ছাপাও হয়। উদীয়মান এই দুই কবিই কবি সম্মেলনে যোগ দিতে শুরু করেন। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে খ্যাতনামা হিন্দি কবিদের আলাপ হয় এবং দর্শকদের সামনে তাঁরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করার সুযোগ পান। সুভদ্রা ক্রস্থওয়েট থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত দু'জনের এই জুটি বজায় ছিল।[২১]

নিজের শৈশবস্মৃতি মেরে বচপন কে দিন গ্রন্থে[২২] মহাদেবী বর্মা লিখেছিলেন, যে যুগে কন্যাসন্তানকে পরিবারের বোঝা মনে করা হত সেই যুগে এক উদারমনস্ক পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য তিনি অর্জন করেছিলেন। কথিত আছে, মহাদেবীর ঠাকুরদাদা তাঁকে এক বিদূষীতে পরিণত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন; যদিও তিনি চাইতেন মহাদেবী পুরনো প্রথা মেনে চলুন এবং নয় বছর বয়সে বিবাহ করুন।[২৩] মহাদেবীর মা শুধুমাত্র ধর্মপ্রাণা নারীই ছিলেন না, তিনি সংস্কৃত ও হিন্দি উভয় ভাষাই ভালোভাবে শিক্ষা করেছিলেন। মহাদেবী লিখেছিলেন যে, মায়ের অনুপ্রেরণাতেই তিনি কবিতা লিখতেন এবং সাহিত্য বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[২৪]

১৯২৯ সালে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মহাদেবী তাঁর স্বামী স্বরূপ নারায়ণ বর্মার কাছে গিয়ে থাকতে একেবারেই অস্বীকার করেন। কারণ, তিনি মনে করতেন তাঁরা দু'জন পরস্পরের উপযুক্ত নন। মহাদেবীর কাছে তাঁর স্বামীর শিকারপ্রিয়তা ও আমিষাহার গ্রহণ অসহ্য মনে হত।[২৫] শৈশবেই তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। তাই প্রথা অনুযায়ী, শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তাঁকে স্বামীর কাছে গিয়েই থাকতে হত। কিন্তু বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি স্বামীর সংসারে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। মহাদেবীর বাবা অনুতপ্ত হয়ে মহাদেবীকে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব দেন, যাতে তিনি স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে পুনরায় বিবাহ করতে পারেন (সেই যুগে হিন্দুদের বিবাহবিচ্ছেদ আইনসিদ্ধ ছিল না)। তিনি নিজেও কন্যার সঙ্গে ধর্মান্তরিত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাদেবী সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে তিনি সারাজীবন একাই থাকতে চান।[২৬] তিনি চেয়েছিলেন তাঁর স্বামী পুনরায় বিবাহ করুন। কিন্তু স্বরূপ নারায়ণ বর্মা তা করতে রাজি হননি।[২৩] কথিত আছে, মহাদেবী এক বৌদ্ধ ভিক্ষুণি হওয়ার কথাও চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা আর হননি। অবশ্য তিনি স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার অঙ্গ হিসেবে বৌদ্ধ পালিপ্রাকৃত সাহিত্য অধ্যয়ন করেছিলেন।[২৩]

Remove ads

কর্মজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সাহিত্য

১৯৩০ সালে নীহার,[২৭] ১৯৩২ সালে রশ্মি,[২৮] ১৯৩৩ সালে নীরজা[২৯] রচনা করেন মহাদেবী বর্মা। ১৯৩৫ সালে সন্ধ্যা গীত নামে তাঁর একটি কবিতা-সংকলন প্রকাশিত হয়।[৩০] ১৯৩৯ সালে অলংকরণ-সমেত যামা নামে আরেকটি কবিতা-সংকলনও প্রকাশিত হয়।[৩১] কবিতা ছাড়াও তিনি ১৮টি উপন্যাস ও ছোটোগল্প রচনা করেছিলেন। অন্যান্য বইয়ের মধ্যে মেরা পরিবার, স্মৃতি কে রেখায়েঁ, পথ কে সাথি, শৃঙ্খলা কে কড়িয়েঁঅতীত কে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ।[৩২] মহাদেবী বর্মাকে ভারতে নারীবাদেরও অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়।[৩৩]

নারীবাদী কার্যকলাপ

Thumb
১৯৮২ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের হাত থেকে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার গ্রহণ করছেন মহাদেবী বর্মা (ডানদিকে)।

মহাদেবী বর্মার কর্মজীবনের কেন্দ্রে ছিল সাহিত্য রচনা, সম্পাদনা ও শিক্ষতা। এলাহাবাদের প্রয়াগ মহিলা বিদ্যাপীঠের উন্নতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।[] সে যুগে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরনের কাজকে বিপ্লবাত্মক গণ্য করা হত। তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষাও হয়েছিলেন।[৩৪] ১৯২৩ সালে তিনি মেয়েদের অগ্রণী পত্রিকা চাঁদ-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে ইলচন্দ্র যোশীর সহায়তায় এলাহাবাদে মহাদেবী বর্মা সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজে এই সংস্থার পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই ভারতে নারী কবিদের সম্মেলনের সূত্রপাত ঘটান।[৩৫] মহাদেবী বর্মা বৌদ্ধধর্ম কর্তৃক গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে তিনি জনসেবামূলক কাজকর্ম শুরু করেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঝাঁসি অঞ্চলে এই কাজ চালিয়ে যান।[৩৬] ১৯৩৭ সালে নৈনিতাল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে উমাগড় নামে একটি গ্রামে (রামগড়, উত্তরাখণ্ড) মহাদেবী একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি এটির নাম দেন মীরা মন্দির। তিনি যতদিন সেখানে ছিলেন ততদিন গ্রামবাসীদের জন্য ও তাদের শিক্ষার জন্য কাজ করেছিলেন। বিশেষভাবে মেয়েদের শিক্ষা ও তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার জন্য তিনি অনেক কাজ করেছিলেন। বর্তমানে এই বাংলোটি মহাদেবী সাহিত্য সংগ্রহালয় নামে পরিচিত।[৩৭][৩৮][৩৯] বহু চেষ্টার মাধ্যমে তিনি নারীমুক্তি ও বিকাশের জন্য সাধারণের মধ্যে সাহস ও দৃঢ়নিশ্চয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৪০] যেভাবে তিনি সামাজিক গতানুগতিকতাগুলির নিন্দা করেছিলেন, তাতেই তিনি নারীমুক্তিবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[৪১] মেয়েদের শিক্ষা ও অবস্থার উন্নতির জন্য তিনি যে সব জনসেবামূলক কাজ করেছিলেন তার প্রেক্ষিতে তাঁকে সমাজ সংস্কারকও মনে করা হয়।[৪২] তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে কোথাও যন্ত্রণা বা মনঃকষ্টের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় না, বরং সমাজকে পরিবর্তিত করার এক অদম্য ইচ্ছাই তাঁর সৃজনীশক্তির মধ্যে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।[৪২][৪৩]

হিন্দু স্ত্রী কা পত্নীত্ব গ্রন্থে তিনি বিবাহকে ক্রীতদাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করেন। কোনও রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুমোদিত না হয়েই তিনি লিখেছিলেন, মেয়েদের বাধ্যতামূলকভাবে পত্নী ও মা করে রাখা হয়। তাঁর নারীবাদ প্রায়শই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তাঁর কাব্যিক প্রতিভার দ্বারা। প্রভৃতি কবিতার মাধ্যমে তিনি নারী যৌনতার বিষয় ও ধ্যানধারণাগুলি তুলে ধরেন, আবার বিবিয়াঁ প্রভৃতি গল্পে তিনি তুলে ধরেন মেয়েরা কী রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হয় তার বিবরণ।[৪৪]

জীবনের অধিকাংশ সময় মহাদেবী বর্মা অতিবাহিত করেন উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ শহরে। এই শহরেই ১৯৮৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু ঘটে।[৪৫]

Remove ads

রচনাবলি

মহাদেবী বর্মা একাধারে ছিলেন কবি ও বিশিষ্ট গদ্য-রচয়িত্রী। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

কবিতা

  • নীহার[২৭] (১৯৩০)
  • রশ্মি[৪৬] (১৯৩২)
  • নীরজা[২৯] (১৯৩৩)
  • সন্ধ্যাগীত[৩০] (১৯৩৫)
  • প্রথম আয়াম[৪৭] (১৯৪৯)
  • সপ্তপর্ণা[৪৮] (১৯৫৯)
  • দীপশিখা[] (১৯৪২)
  • অগ্নি রেখা[৪৯] (১৯৮৮)

এছাড়াও মহাদেবী বর্মার আরও কয়েকটি কবিতা-সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলিতে উপরিউক্ত সংকলন থেকেও কিছু গান গ্রন্থিত হয়।

গদ্য রচনা

নিচে মহাদেবী বর্মার নির্বাচিত কিছু গদ্য রচনার নাম দেওয়া হল:[৩২]

  • অতীত কে চালচিত্র (১৯৬১)
  • স্মৃতি কি রেখায়েঁ (১৯৪৩)
  • পথ কে সাথি (১৯৫৬)
  • মেরা পরিবার (১৯৭২)
  • সংস্মরণ (১৯৪৩)
  • সম্ভাষণ (১৯৪৯)
  • শৃঙ্খলা কি কড়িয়াঁ (১৯৪২)
  • বিবেচাত্মক গদ্য (১৯৭২)
  • স্কন্ধ (১৯৫৬)
  • হিমালয় (১৯৭৩)

অন্যান্য

ছোটোদের জন্য লেখা মহাদেবী বর্মার কবিতারও দু'টি সংকলন প্রকাশিত হয়:

  • ঠাকুরজি ভোলে হ্যায়[৫০]
  • আজ খরিদেঙ্গে হাম জ্বালা[৫০]

সমালোচকদের বিশ্লেষণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সমালোচকদের একটি অংশ মনে করেন, মহাদেবী বর্মার কবিতা অতিমাত্রায় ব্যক্তিগত। তাঁর যন্ত্রণা, মনঃকষ্ট, সমবেদনার অভিব্যক্তিগুলি কৃত্রিম। রামচন্দ্র শুক্ল প্রমুখ নীতিবাদী সমালোচকেরা মহাদেবীর যন্ত্রণা ও অনুভূতিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শুক্ল লিখেছেন:

এই মনঃকষ্টের ক্ষেত্রে বলা চলে, তিনি হৃদয়ের এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, যা বহির্জাগতিক। এই জাতীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে এগুলি কতটা বাস্তব তা বলা যায় না।(বঙ্গানুবাদ)[৫১]

অন্যদিকে হাজারি প্রসাদ দ্বিবেদী মনে করেন যে তাঁর কবিতার প্রামাণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই:

[]

"দীপ" (নীহার কাব্যগ্রন্থ থেকে), "মধুর মধুর মেরে দীপক জল" (নীরজা কাব্যগ্রন্থ থেকে) ও "মোম সা তন গল হ্যায়" প্রভৃতি কবিতা শুধুমাত্র মহাদেবীর আত্মকেন্দ্রিকতার কথাই প্রকাশ করে না, বরং এগুলি তাঁর কবিতার সাধারণ ভঙ্গিমার প্রতিনিধিস্বরূপও বটে। সত্যপ্রকাশ মিশ্রের মতে, মহাদেবীর অধিবিদ্যার দর্শন সিনেম্যাটোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত:

মহাদেবী শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদ ও উদাহরণের গুণে ছায়াবাদ ও মরমিয়াবাদের বস্তুকেন্দ্রিকতা থেকে প্রথম যুগের কবিতাকে পৃথক ও স্বতন্ত্র রূপই দেননি, বরং তিনি দেখিয়েছেন কোন অর্থে তা মানবিক। তাঁর কবিতা অনুভূতির পরিবর্তন ও অভিপ্রকাশের নতুনত্ব বিষয়ক। তিনি কাউকে আবেগ, প্রশংসা ইত্যাদির কারণে অভিযুক্ত করেননি, বরং ছায়াবাদের প্রকৃতি, চরিত্র, রূপ ও স্বাতন্ত্র্যটি বর্ণনা করে গিয়েছেন।(ইংরেজি অনুবাদ)[৫২]

মার্কিন ঔপন্যাসিক ডেভিড রুবিন লিখেছেন:

What arrests us in Mahadevi's work is the striking originality of the voice and the technical ingenuity which enabled her to create in her series of mostly quite short lyrics throughout her five volumes a consistently evolving representation of total subjectivity measured against the vastness of cosmic nature with nothing, as it were, intervening—no human social relationships, no human activities beyond those totally metaphorical ones involving weeping, walking the road, playing the Veena, etc.[২৩]

প্রভাকর শ্রোত্রীয় মনে করেন যে, যাঁরা তাকে যন্ত্রণা ও মনোবেদনার নারী কবি মনে করেন, তাঁরা জানেন না যে যন্ত্রণার কী প্রকার আগুনে জীবনের সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন:

বাস্তকে মহাদেবীর অভিজ্ঞতা ও সৃজনের কেন্দ্রে রয়েছে আগুন, অশ্রুজল নয়। যা দৃশ্যমান তা চরম সত্য নয়, যা অদৃশ্য তাই মৌলিক ও অনুপ্রেরণাদায়ী পথ। এই অশ্রুজল সহজ সরল মনোবেদনার অশ্রুজল নয়, কিন্তু এর পিছনে রয়েছে অনেক আগুন, ঝঞ্ঝাবিক্ষোভ, মেঘের গর্জন ও গুপ্ত বিদ্রোহ।
(বঙ্গানুবাদ)[৫৩]

মহাদেবী বর্মার কবিতাগুলি ছায়াবাদের শ্রেণিভুক্ত হলেও, সেগুলিকে যুগের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে ভুল হবে। মহাদেবী ছিলেন সচেতন লেখিকা। ১৯৭৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষের সময় তিনি একটি কবিতা-সংকলন প্রকাশ করেন এবং বাংলা নিয়ে "বঙ্গ ভূ শান্ত বন্দনা" নামে একটি কবিতাও লেখেন।[৫৪] অনুরূপভাবে চীন যখন ভারত আক্রমণ করে তখন তিনি হিমালয় নামে আরেকটি কবিতা-সংকলন সম্পাদনা করেন।[৫৫]

Remove ads

সম্মাননা ও পুরস্কার

Thumb
১৯৯১ সালে মহাদেবী বর্মা ও জয়শঙ্কর প্রসাদের সম্মানে প্রকাশিত ডাকটিকিট

এছাড়া ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন মহাদেবী বর্মার চিনি ভাই গল্প অবলম্বনে নীল আকাশের নীচে ছবিটি পরিচালনা করেন।[৫৯][৬০] ১৯৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের ডাক বিভাগ মহাদেবী বর্মা ও জয়শঙ্কর প্রসাদের সম্মানে ২ টাকা মূল্যের এক জোড়া বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করে।[৬১]

Remove ads

সাহিত্যে অবদান

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
মহাদেবী বর্মা (নিচের পংক্তিতে বাঁদিক থেকে তৃতীয়), হাজারি প্রসাদ দ্বিবেদী ও অন্যান্য

সাহিত্য জগতে মহাদেবী বর্মার উত্থান এমন এক সময়ে ঘটেছিল যখন খড়ীবোলীর রূপ পুনর্নির্ধারিত হচ্ছিল। তিনি ব্রজ ভাষায় রচিত হিন্দি কবিতার কোমলতার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সংগীত-সংগ্রহের মধ্যে ভারতীয় দর্শনের প্রতি এক আন্তরিকতা ধ্বনিত হয়েছে। এইভাবে তিনি ভাষা, সাহিত্য ও দর্শন তিন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন্ম যা সমগ্র একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি এক স্বতন্ত্র ছন্দ ও সারল্য সৃষ্টি করেন গানের গঠনভঙ্গিমা ও ভাষার মধ্যে, সেই সঙ্গে তাঁর প্রতীকের ব্যবহার ছিল স্বাভাবিক এবং তার মাধ্যমে সহজেই তিনি শ্রোতার মনে দাগ কাটতে পারতেন।[৬২] ছায়াবাদী কবিতার বিকাশে তাঁর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জয়শঙ্কর প্রসাদ ছায়াবাদী কবিতার স্বাভাবিকীকরণ করেন, সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী "নিরালা" মুক্তির ধারণাটি যুক্ত করেন এর সঙ্গে এবং সুমিত্রানন্দন পন্ত এর মধ্যে সূক্ষ্মতা আনেন; কিন্তু মহাদেবী বর্মা ছায়াবাদী কবিতাকে জীবন দান করেছিলেন। মহাদেবীর কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি হল আবেগপ্রবণতা ও অনুভূতির গভীরতা। এই বৈশিষ্ট্যগুলিই তাঁকে করে তোলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছায়াবাদী কবি।[৬৩] হিন্দিতে প্রদত্ত তাঁর বক্তৃতাগুলির জন্যও তাঁকে শ্রদ্ধাসহকারে স্মরণ করা হয়। তাঁর বক্তৃতাগুলি ছিলে সাধারণ মানুষের প্রতি সমবেদনায় পূর্ণ এবং সত্যে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৩ সালে দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দি সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি।[৬৪]

মৌলিক রচনা ছাড়াও মহাদেবী বর্মা ছিলেন এক সৃজনশীল অনুবাদক। সপ্তপর্ণা (১৯৮০) নামক অনুবাদ গ্রন্থটি তাঁর অনুবাদ-কর্মের পরিচায়ক। নিজের সাংস্কৃতিক সচেতনার মাধ্যমে তিনি হিন্দি কবিতার ৩৯টি নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ অংশ উপস্থাপনা করেন, যার মাধ্যমে তিনি বেদ, রামায়ণ, থেরগাথা, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতিজয়দেবের রচনা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৬১ পৃষ্ঠার আপনা বাত গ্রন্থের গোড়ায় তিনি ভারতীয় প্রজ্ঞা ও সাহিত্যের বহুমূল্য ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে তা শুধুমাত্র মেয়েদের লেখার ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র হিন্দি সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেছে।[৬৫]

Remove ads

আরও দেখুন

  • ছায়াবাদ
  • জয়শঙ্কর প্রসাদ
  • সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী 'নিরালা'
  • সুমিত্রানন্দন পন্ত

পাদটীকা

  1. ছায়াবাদের অপর তিন স্তম্ভ হলেন জয়শঙ্কর প্রসাদ, সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী "নিরালা"সুমিত্রানন্দন পন্ত
  2. हिंदी के विशाल मन्दिर की वीणापाणी, स्फूर्ति चेतना रचना की प्रतिमा कल्याणी (বাংলা অনুবাদ: হিন্দির বিশাল মন্দিরে বীণাপাণিদেবী সরস্বতীর অপর নাম, তিনি সচেতন সৃষ্টির কল্যাণী প্রতিমা) - নিরালা
  3. সত্যটি হল এই যে মহাদেবীর দৃষ্টিভক্তি ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক। বিশ্বের ভালো থাকার মূল নিহিত রয়েছে তাঁর যন্ত্রণা, মনঃকষ্ট, সমবেদনা ও মর্ষকামিতার মধ্যে। (বঙ্গানুবাদ) - হাজারি প্রসাদ দ্বিবেদী
Remove ads

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads