Loading AI tools
বাংলাদেশি সামরিক ব্যক্তিত্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (জন্ম: ১৯৪৩, সিলেট - মৃত্যু: ১০ অক্টোবর ২০১০ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধি প্রদান করে।[1]
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৩ সিলেট |
মৃত্যু | ১০ অক্টোবর ২০১০ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
মইনুল হোসেন চৌধুরীর জন্ম সিলেটের গোলাপগঞ্জে। তার পৈত্রিক নিবাস সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শিওরখাল গ্রামে। তার বাবার নাম নূরুল হোসেন চৌধুরী এবং মায়ের নাম রিজিয়া খাতুন চৌধুরী। তার স্ত্রী রুবি চৌধুরী, ছেলে আসিফ চৌধুরী ও মেয়ে আম্বেরিন চৌধুরী।
মইনুল হোসেন চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে মেজর হিসেবে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তখন এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ইতিহাসে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি বাঙালীদের ওপর গুলি চালাতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশ সরাসরি অমান্য করেন। ২৫ মার্চের পর এই জয়দেবপুর থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাঙালী সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। কামালপুরসহ আরও কয়েক স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন। মইনুল হোসেন চৌধুরী মেজর জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত থাকাকালে প্রেষণে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হন।
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর-৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে মইনুল হোসেন চৌধুরী ও তার সহযোদ্ধারা একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কয়েক মাস আগে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের যুদ্ধে প্রায় ৩৫ জন সহযোদ্ধাকে নিজ চোখের সামনে শহীদ হতে দেখেন। আগে ঠিক করা ছিল, মিত্রবাহিনীর গোলন্দাজ দল ঠিক রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলাবর্ষণ শুরু করবে। চারদিকের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ঠিক সময়ে গোলাবর্ষণ শুরু হলো। গোলাবর্ষণের প্রচণ্ডতা এমন যে, অনেক দূরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের নিচের মাটি কাঁপছিল। মইনুল হোসেন চৌধুরী তার সহযোদ্ধাদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তার নির্দেশ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে হটিয়ে তিতাস নদীর পার, মুকুন্দপুর, সিংগাইর বিল আর আজমপুর মুক্ত করা তাঁদের লক্ষ্য ছিল। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি (আনুমানিক ৪০০ মিটার দূরে) হওয়া মাত্র পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে তাঁদের দূরপাল্লার কামানের গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর দুই পক্ষের মেশিনগান ও রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি শুরু হলো। প্রকৃতপক্ষে কুয়াশায় ঢাকা সেই রাতে যুদ্ধ পরিচালনা অত্যন্ত কঠিন ছিল। ভোরের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পাকিস্তানি সেনাদের তুমুল পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত তাদের দুর্ধর্ষ প্রকৃতির প্রসিদ্ধ পাঠান রেজিমেন্ট-১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, এর সঙ্গে তাদের ভারী কামানের গোলাবর্ষণ। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দুটি স্যাবর জেটও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে গোলা ফেলতে থাকল। সব মিলে প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ। মইনুল হোসেন চৌধুরী এতে বিচলিত হলেন না। সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। সারা দিন যুদ্ধ চলল। একের পর এক পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও পাকিস্তানিরা সফল হতে পারল না। মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে থাকেন। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়।[2][3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.