Loading AI tools
নিডারিয়ার প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভাসমান সন্ত্রাস (বৈজ্ঞানিক নাম: Physalia physalis; ফাইসেলিয়া ফাইসেলিস) হলো আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরে প্রাপ্ত এক ধরনের সামুদ্রিক হাইড্রোজোয়া। এরা পর্তুগিজ ম্যান অ’ ওয়ার বা ম্যান-অব-ওয়ার[6] (ম্যান অব ওয়ার = যুদ্ধজাহাজ) নামেও পরিচিত।[7] প্রশান্ত মহাসাগরে প্রাপ্ত “প্রশান্ত মহাসাগরীয় ম্যান অ’ ওয়ার”-ও একই প্রজাতিভুক্ত বলে মনে করা হয়। ভাসমান সন্ত্রাস ফাইসেলিয়া গণের দুইটি প্রজাতির অন্যতম (অপরটি Physalia utriculus, যা “নীল বোতল”, “ব্লুবোটল”, “ব্লু বোটল জেলিফিশ” বা “নীল বোতল জেলিফিশ” নামেও পরিচিত)। ফাইসেলিয়া আবার ফাইসেলিডি গোত্রের একমাত্র গণ।[8]
ভাসমান সন্ত্রাস পর্তুগিজ ম্যান অ’ ওয়ার | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | নিডারিয়া (Cnidaria) |
শ্রেণি: | Hydrozoa |
বর্গ: | Siphonophorae |
উপবর্গ: | Cystonectae ব্রান্ট, ১৮৩৫[1] |
পরিবার: | Physaliidae ল্যামার্ক, ১৮০১[2] |
গণ: | Physalia (লিনিয়াস, ১৭৫৮) |
প্রজাতি: | P. physalis |
দ্বিপদী নাম | |
Physalia physalis (লিনিয়াস, ১৭৫৮) | |
প্রতিশব্দ | |
|
ভাসমান সন্ত্রাস সমুদ্রের উপরের স্তরে ভাসমান জীব বা নিউস্টন জীবসম্প্রদায়ের সদস্য। এদের অসংখ্য আণুবীক্ষণিক নেমাটোসিস্ট থাকে, যার দংশনের ফলে নিষ্ক্রান্ত বিষ একটি ছোট মাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এর দংশন মানুষের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং কখনো কখনো মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ভাসমান সন্ত্রাস বাহ্যিকভাবে জেলিফিশের মতো দেখতে হলেও, প্রকৃতপক্ষে এরা সাইফনোফোর। অন্যান্য সাইফনোফোরদের মতো এরা কলোনি আকারে বসবাস করে, যার ক্ষুদ্রতম একককে জুয়োয়েড বলে।[9] একটি কলোনির সকল জুয়োয়েড জিনগতভাবে একই ধরনের; কিন্তু খাদ্যগ্রহণ ও জনন প্রভৃতি বিশেষ কাজ করে থাকে। একত্রে কাজ করার ফলে এদের কলোনি একটি একক জীবের মতো আচরণ করতে সক্ষম হয়।
“ভাসমান সন্ত্রাস” নামটি জীবের একটি উপনাম ফ্লোটিং টেরর-এর (floating terror) আক্ষরিক অনুবাদ। এরা একত্রে দলবদ্ধ অবস্থায় সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে থাকে এবং এদের নিডোসাইটের দংশন অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হওয়ায় এদের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ম্যান অ’ ওয়ার নামটি অষ্টাদশ শতকের পাল-তোলা যুদ্ধজাহাজ ম্যান-অব-ওয়ার থেকে এসেছে।[10] এই রকম পূর্ণাঙ্গ পাল-তোলা জাহাজের পর্তুগিজ সংস্করণের (কারাভেল) সাথে মিল থাকায় প্রাণীটির এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।[11][5][6]
ভাসমান সন্ত্রাস সুস্পষ্টভাবে নিউস্টন সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও এদের আচরণ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানা।[9] নিউস্টন হলো পানির উপরিভাগে ভাসমান সামুদ্রিক জীবসম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের জীবেরা উচ্চমাত্রার অতিবেগুনি রশ্মি, পানির অতিমাত্রায় শুষ্কীভবন, সমুদ্র ও সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমপরিবর্তনশীলতার মতো চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করে।[12] চরম পরিবেশের প্রতি সহনশীলতা এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭১% অঞ্চলে বিস্তৃত আবাস থাকা সত্ত্বেও এই পলিফাইলেটিক জীবসম্প্রদায়ের (ভিন্ন আদিজীব থেকে আগত, যার ফলে একই প্রজাতিভুক্ত নয় এমন জীবসম্প্রদায়) গঠন ও কার্যক্রম বিষয়ে খুব বেশি জানা যায় না।[13][9]
ভাসমান সন্ত্রাসের ক্রিয়াকলাপ অনেকটা জাহাজের মতোই: এদের পানির উপরে থাকা অংশটিতে কার্বন মনোক্সাইড ও বায়ুতে পরিপূর্ণ একটি প্রকোষ্ঠ থাকে, যা জাহাজের পালের মতো সমুদ্রে এদের মাইলের পর মাইল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এদের বিষাক্ত টেন্টাকলগুলো পশ্চাদ্বর্তী হয়, যার বিষ ছোট ছোট মাছের প্রাণ নেওয়ার মতো যথেষ্ট ভয়ঙ্কর।[14][15] সমুদ্রে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা ও ঋতুভিত্তিক বংশবিস্তার প্রক্রিয়ায় কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময় এদের দলবদ্ধভাবে সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসতে দেখা যায়। মানুষ তখন এদের যন্ত্রণাদায়ক বিষের সংস্পর্শে আসে। ফলে সাইফনোফরদের মধ্যে ভাসমান সন্ত্রাস যথেষ্ট কুখ্যাতি লাভ করেছে।[13][9]
ভাসমান সন্ত্রাসের দেহের গঠন, অঙ্গসংস্থান এবং এদের কলোনির সংগঠন অন্যান্য সাইফনোফোরদের থেকে ভিন্নতর।[9] কলোনি আকারে বসবাসকারী হাইড্রোজোয়ানদের মধ্যে সাইফনোফোরদের নিয়ে তুলনামূলক কম গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এদের কলোনিতে বিশেষায়িত কিছু কোষ থাকে, যাদের জুয়োয়েড বলা হয়। এরা মুক্তজীবী প্রাণীদের সমসংস্থ হিসেবে আচরণ করে। কিছু প্রজাতি প্লাঙ্কটনসদৃশ; সমুদ্রের গভীরতম স্থান থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত এদের পাওয়া যায়।[16][17][18] এরা ভঙ্গুর এবং এদের অক্ষত অবস্থায় সংগ্রহ করা খুবই কষ্টসাধ্য। এদের দূরনিয়ন্ত্রিত নিমজ্জিত জলযানের সাহায্যে বা মাঝসমুদ্রে ডুব দিয়ে খালি হাতে কিংবা অঞ্চলবিশেষে পানির স্থানিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।[19][20] তবে ভাসমান সন্ত্রাস প্রকৃতিতে অন্যদের তুলনায় সহজে পাওয়া যায়; এরা তুলনামূলক সুস্পষ্ট ও শক্ত সাইফনোফোর। এই কারণে এই প্রজাতি সম্পর্কে বিস্তৃত লেখালেখি হয়েছে; এমনকি এদের ফাঁপা অংশের রাসায়নিক উপাদান, বিষ (বিশেষ করে বিষক্রিয়া), প্রকৃতিতে সহজপ্রাপ্যতা, ভৌগোলিক বিস্তৃতি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।[13][21][22][23][24][25][26][27][28][29][30][31] তবে ভাসমান সন্ত্রাসের বিস্তারিত গঠন, প্রধান প্রধান জুয়োয়েড কোষের সংস্থানিক বর্ণনা, কলোনি গঠনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গবেষণা হয়েছে তুলনামূলকভাবে কম।[32][33][34][35] এই গবেষণাগুলো নিউস্টন জীবসম্প্রদায়ের অঙ্গসংস্থান, কোষীয় কাঠামো ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রতিষ্ঠা করে। ভাসমান সন্ত্রাসের কলোনি অন্যান্য সাইফনোফোরের তুলনায় কিছুটা ভিন্নভাবে বিকশিত হয় এবং এতে তিন মাত্রার শাখা কাঠামো গঠিত হয়। ফলে সাইফনোফোরের অঙ্গসংস্থান দিয়ে ভাসমান সন্ত্রাস কলোনির অঙ্গসংস্থান, গঠন ও পরিবর্ধন ব্যাখ্যা করা কিছুটা কঠিন হয়।[9]
ভাসমান সন্ত্রাস দেখতে জেলিফিশের মতো হলেও এটি আদতে একটি সাইফনোফোর। এরা জুয়োয়েড নামের বিভিন্ন ধরনের স্বতন্ত্র আণুবীক্ষণিক সত্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি কলোনি।[36] এতে পরস্পর-নির্ভরশীল চার ধরনের জুয়োয়েড থাকে, যারা বেঁচে থাকতে ও বিভিন্ন ধরনের জৈবিক কার্যকলাপ সংবহন করতে একে অপরের উপর নির্ভরশীল থাকে। যেমন: গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েড (পরিপাক), গনোজুয়োয়েড (জনন) ও ডাকটাইলোজুয়োয়েড (শিকার) ইত্যাদি। সর্বশেষ জুয়োয়েড, তথা নিউম্যাটোফোর, গ্যাসপূর্ণ একটি ভাসমান থলি গঠন করে অন্য জুয়োয়েডের অবলম্বন হিসেবে কাজ করে এবং ভাসমান সন্ত্রাস কলোনিকে ভেসে থাকতে ও চলাচলে সাহায্য করে। বস্তুত, থলিটি একটি পালের মতো কাজ করে, যার ফলে সামুদ্রিক বায়ুপ্রবাহ ও স্রোতের মাধ্যমে এরা ভেসে যেতে পারে। এদের দীর্ঘ টেন্টাকল পানিতে নিমজ্জিত থেকে খাবার শিকার করে এবং পরিপাককারী জুয়োয়েডের কাছে মৃত শিকারকে টেনে নিয়ে আসে।[36][37]
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভাসমান সন্ত্রাস (Physalia physalis) বা নীল বোতল (Physalia utriculus) জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলীয় সমুদ্রসৈকতগুলোতে পাওয়া যায়, যাদের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার পর্যটক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন।[38] এই প্রজাতি ক্রান্তীয়, উপক্রান্তীয় এবং কখনো কখনো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলসহ পৃথিবীর সমস্ত সামুদ্রিক এলাকায় পাওয়া যায়।[9][37]
অন্য সকল সাইফনোফোরের মতো ভাসমান সন্ত্রাস কলোনি আকারে বসবাস করে। প্রতিটি ভাসমান সন্ত্রাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক (জুয়োয়েড) গুচ্ছাকারে বায়ুপূর্ণ নিউম্যাটোফোরের নিচের দিকে অবস্থা করে।[39] মুকুলোদ্গমের মাধ্যমে নতুন জুয়োয়েড সৃষ্টি হয় এবং কলোনি বৃদ্ধি পায়। ভাসমান সন্ত্রাসে অন্তত সাত ধরনের জুয়োয়েড বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মেডুসয়েড ধরনের (গনোফোর, নেক্টোফোর ও ভেস্টিজিয়াল নেক্টোফোর) এবং চারটি পলিপয়েড ধরনের (মুক্ত গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েড, টেন্টাকলবাহক জুয়োয়েড, গনোজুয়োয়েড ও গনোপ্যালপন)।[40] তবে গ্রন্থভেদে এই জুয়োয়েডগুলোর নাম ও শ্রেণিবিন্যাস ভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলোর অধিকাংশের ভ্রূণতাত্ত্বিক ও বিবর্তনঘটিত সম্পর্ক এখনও অস্পষ্ট।[9]
নিউম্যাটোফোর বা বায়ুথলি ভাসমান সন্ত্রাসের সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও বৈশিষ্ট্যময় অংশ। এটি স্বচ্ছ ও ঈষৎ নীলচে, বেগুনি, গোলাপি বা রক্তবেগুনি রঙের হয়ে থাকে। এটি ৯ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার (৩+১⁄২ থেকে ১২ ইঞ্চি) লম্বা এবং ১৫ সেমি (৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত পানির ওপরে ভাসমান থাকতে পারে। নিউম্যাটোফোর বা বায়ুথলি ভাসন ব্যবস্থা এবং চলাচল উভয়টিই নিয়ন্ত্রণ করে; যার কারণে বায়ুপ্রবাহের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ জৈব ব্যবস্থাটি স্থান পরিবর্তন করে।[9][39] বায়ুথলির গ্যাসের কিছু অংশ কার্বন মনোঅক্সাইড (০.৫–১৩%) যা প্রাণীর দেহে সক্রিয়ভাবে উৎপন্ন হয়। অবশিষ্ট অংশ অন্যান্য বায়বীয় গ্যাস (নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস), যা পরিবেষ্টিত বায়ু থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে প্রবেশ করে।[41] সমুদ্রপৃষ্ঠে কোনো প্রকার আক্রমণের শিকার হলে বায়ুথলি চুপসে যেতে পারে, যার মাধ্যমে পুরো কলোনি অস্থায়ীভাবে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বিপদ থেকে রক্ষা পায়।[42]
দুই ধরনের জুয়োয়েডের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভাসমান সন্ত্রাসের কলোনি শিকার করে ও খাদ্যের সংস্থান করে। দুই ধরনের জুয়োয়েড হলো: গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েড ও টেন্টাকলবাহী জুয়োয়েড, যা ডাক্টাইলোজুয়োয়েড[9] বা টেন্টাকুলার প্যালপন নামে পরিচিত। ডাক্টাইলোজুয়োয়েডে টেন্টাকল থাকে, যা সাধারণত ১০ মি (৩০ ফু) লম্বা হলেও, প্রায় ৩০ মি (১০০ ফু) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।[43][44] প্রতিটি টেন্টাকলে ক্ষুদ্র, প্যাঁচানো সুতার মতো কাঠামো থাকে, যাকে নেমাটোসিস্ট বলে। নেমাটোসিস্ট বিভিন্ন মাছ ও স্কুইডের লার্ভার সংস্পর্শে এসে খুলে যায় এবং দংশন করে বিষ ঢেলে দেয়। ফলে সেগুলো পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয় এবং অনেক সময় মারা যায়। প্রায় ১,০০০ সংখ্যার ভাসমান সন্ত্রাসের একটি বৃহৎ দলের কারণে মৎস্যসম্পদের ক্ষতি করে।[40][42] টেন্টাকলের সংকোচনের ফলে শিকার উপরে উঠে আসে এবং পরিপাককারী গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েডের সংস্পর্শে আসে। গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েড শিকারকে পরিবেষ্টন করে ও বিভিন্ন উৎসেচক নিঃসরণের মাধ্যমে খাদ্যকে পরিপাক করে।
এদের প্রধান জনন জুয়োয়েড গনোফোর, যা গনোড্রিয়া নামক কাঠামোয় অবস্থান করে। গনোফোর পুং ও স্ত্রীজননকোষ উৎপন্ন করে (জীবনচক্র দ্রষ্টব্য)। গনোফোরের পাশাপাশি প্রতিটি গনোডেন্ড্রনে অসংখ্য বিশেষায়িত জুয়োয়েড থাকে। যেমন: গনোজুয়োয়েড (আনুষঙ্গিক জুয়োয়েড), নেক্টোফোর (পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এরা বিচ্ছিন্ন গনোডেন্ড্রনকে সাঁতার কাটতে সহায়তা করে) ও ভেস্টিজিয়াল নেক্টোফোর (জেলি পলিপও বলা হয়; এদের কাজ সম্পর্কে বেশি জানা যায় না)।[9]
ভাসমান সন্ত্রাসকে কলোনিয়াল জীবিসত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। একটি কলোনির প্রতিটি জুয়োয়েড বিবর্তনমূলকভাবে হয় পলিপ অথবা মেডুসা, তথা নিডারিয়ানদের দেহের গঠনগত দুইটি মৌলিক তল থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[45][46] উভয় কাঠামোই কলোনিবিহীন নিডারীয় প্রজাতিতে সম্পূর্ণ দেহ ধারণ করে (যেমন: একটি জেলিফিশ হলো একটিমাত্র মেডুসা; একটি সি অ্যানিমোন হলো একটিমাত্র পলিপ)। ভাসমান সন্ত্রাসের প্রতিটি জুয়োয়েড একটিমাত্র নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সৃষ্টি হয়, যার কারণে সম্পূর্ণ কলোনি জিনগতভাবে একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এরা আজীবন দৈহিকভাবে পরস্পর সংলগ্ন থাকে এবং একটি দেহের অঙ্গসমূহের মতো কাজ করে। এইভাবে বাস্তুগত কারণে ভাসমান সন্ত্রাস একক জীবসত্তা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ভ্রূণতাত্ত্বিকভাবে এরা একাধিক স্বতন্ত্র জীবসত্তার সমন্বয়ে গঠিত।[45]
বেশিরভাগ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক জলভাগে ভাসমান সন্ত্রাস দেখতে পাওয়া যায়।[47][48] ভাসমান সন্ত্রাস সমুদ্রের পৃষ্ঠে বসবাস করে। বায়ুপূর্ণ থলি বা নিউম্যাটোফোর সমুদ্রপৃষ্ঠে ভাসমান থাকে এবং বাকি অংশ পানিতে ডুবে থাকে।[49] ভাসমান সন্ত্রাসের নিজস্ব চলনক্ষমতা নেই; এরা বাতাসের প্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ ও জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে নিষ্ক্রিয়ভাবে স্থানান্তরিত হয়।
বায়ুপ্রবাহের সাথে এরা উপসাগর বা সমুদ্রসৈকতে এসে পৌঁছায়। প্রায়শই দেখা যায়, একটি ভাসমান সন্ত্রাস দৃশ্যমান হওয়ার পর নিকটেই আরও ভাসমান সন্ত্রাস দৃশ্যমান হয়।[43] টেন্টাকলের সংস্পর্শে যন্ত্রণাদায়ক দংশনের কারণে সৈকতগামী পর্যটকদের কাছে ভাসমান সন্ত্রাস খুবই পরিচিত।[37] সৈকতে ভেসে আসা ভাসমান সন্ত্রাসের দংশনের কারণে সৈকত বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।[50][51]
খুব সহজে প্রাপ্ত হলেও সৈকতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত ভাসমান সন্ত্রাস বা নীল বোতলের উৎস সম্পর্কে জানা যায় না; এমনকি সমুদ্রে এদের প্রবাহগতি প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বেশি জানা যায় না।[37]
প্রতিটি ভাসমান সন্ত্রাস বা নীল বোতলের চূড়া বাম অথবা ডানমুখী হতে পারে (দ্বিরূপতা)। ধারণা করা হয়, সমগ্র প্রজাতি সৈকতে ভেসে গিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিযোজনমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।[52][53] বামমুখী ভাসমান সন্ত্রাস বাতাসের দিকের সাথে ডানে এবং পক্ষান্তরে ডানমুখী ভাসমান সন্ত্রাস বামে স্থানান্তরিত হয়। বায়ুপ্রবাহের ফলে দুই ধরনের ভাসমান সন্ত্রাস দুইটি ভিন্ন দিকে পরিচালিত হয়। ফলে নিদেনপক্ষে দলের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সৈকতে পৌঁছে এবং মারা যায়।[52][53] আটলান্টিক ভাসমান সন্ত্রাস ও নীল বোতলকে একই প্রজাতির সদস্য বলে গণ্য করা হয়। তবে আটলান্টিক ভাসমান সন্ত্রাসের আকার তুলনামূলক বড় এবং এদের শিকারের জন্য টেন্টাকলগুলোও লম্বা হয়। নীল বোতলের চূড়া বা পাল কদাচিৎ ১০ সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা হয়; শিকারের টেন্টাকলগুলোর দৈর্ঘ্য ৩ মিটারের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আটলান্টিক ভাসমান সন্ত্রাসের চূড়া বা পাল ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়, এমনকি ৩০ সেন্টিমিটার পালের ভাসমান সন্ত্রাসের নজিরও রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কলোনিতে একাধিক টেন্টাকল থাকে, যেগুলো পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় ৩০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।[9][37]
ভাসমান সন্ত্রাস কিছুটা অপ্রতিসম আকৃতির হয়ে থাকে। কলোনির জুয়োয়েডগুলো নিউম্যাটোফোর বা বায়ুথলির ঠিক মধ্য বরাবর অবস্থান করে ঝুলে না। কিন্তু মধ্যরেখার দুই পাশে অবস্থান করে। অনুগামী টেন্টাকলগুলো সি অ্যাংকরের মতো কাজ করে কলোনিকে ডানমুখিতা ও বামমুখিতার ওপর নির্ভর করে উভয় দিকেই বায়ুপ্রবাহের সাথে ৪৫° কোণে প্রবাহিত করে।[54][55] কলোনির দিকমুখিতাকে অভিপ্রয়াণের অংশ হিসেবে মনে করা হয়, যার ফলে এরা নির্দিষ্ট পথ অনুযায়ী গমন করে।[54] পূর্বে ধারণা করা হতো কলোনি যখন যাতায়াত করে, তখন বায়ুপ্রবাহের দিকের ওপর ভিত্তি করে চূড়া গঠিত হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভাসমান সন্ত্রাসের জীবদ্দশার যে অংশে এরা সমুদ্রের নিচে নিমজ্জমান থাকে, তখন এদের চূড়া গঠিত হয়।[9]
ভাসমান সন্ত্রাস বা নীল বোতলের সাঁতার কাটার অক্ষমতার কারণে এদের ওপরে ক্রিয়াশীল বলের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে অথবা মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহে কণার স্থানান্তর মডেল ব্যবহার করে গাণিতিকভাবে এদের গতিপথের মডেলিং করা যায়। এর পূর্বে সমুদ্রসৈকতে এদের অবস্থানের প্রধান প্রধান ঘটনা ব্যাখ্যার জন্য ল্যাংরাঞ্জিয়ান কণিকা অনুসরণ মডেল ব্যবহার করা হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ফেরার ও পাস্তর বাস্ক উপকূলে ভাসমান সন্ত্রাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাগমের উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হন।[56] তারা সময়ের বিপরীত দিকে বায়ুপ্রবাহের গতি ব্যবহার করে একটি ল্যাংরাঞ্জিয়ান মডেল পরিচালনা করেন, যাতে ভাসমান সন্ত্রাসের গতির জন্য একটি বায়ুর টান সহগ ব্যবহার করেন। তারা দেখতে পান এদের উৎস ছিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উপক্রান্তীয় ঘূর্ণি অঞ্চল।[56] ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রিয়েটো ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সৈকতে ভাসমান সন্ত্রাস অবস্থানের প্রধান ঘটনা ব্যাখ্যায় সমুদ্রপৃষ্ঠীয় স্রোত উভয়টিই গ্রহণ করেন।[57] এই মডেল তারা ধারণা করেন যে ভাসমান সন্ত্রাসেরা পৃষ্ঠীয় স্রোতের প্রভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার সাথে প্রায় ১০ শতাংশের মতো উচ্চমাত্রার বায়ুর টান সহগ ক্রিয়া করে। একইভাবে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে হেডল্যাম ও অন্যান্য কয়েকজন বিজ্ঞানী ১৫০ বছরের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের তটরেখায় ভাসমান সন্ত্রাসের সর্বোচ্চ সমাবেশ থেকে পৃষ্ঠীয় স্রোত ও বায়ুর টানের সাহায্যে এদের উৎস নির্ণয় করেন।[58][37] এই সমস্ত গবেষণায় জীবসত্তার গতিপথ নির্ণয়ে সাধারণ অনুমাননির্ভর পদ্ধতির পাশাপাশি সরল গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে জটিল প্রবাহগতি হিসাবের বাইরে ছিল। ২০২১ সালে লি ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা নীল বোতল ও পালতোলা নৌকাকে সদৃশ ধরে নিয়ে ল্যাংরাঞ্জিয়ান মডেলভিত্তিক একটি পরামিতিক সমীকরণ উপস্থাপন করেন। এর মাধ্যমে তারা নীল বোতলের ওপর ক্রিয়াশীল জলগতীয় ও বায়ুগতীয় বল নির্ণয় করে এবং একটি সাম্যাবস্থা ধরে নিয়ে বায়ু ও সমুদ্রের স্রোতের ওপর ভিত্তি করে জীবসত্তার প্রবাহগতির বেগ ও প্রবাহের দিক নির্ণয় করার সাধারণ মডেল তৈরি করেন।[37]
ভাসমান সন্ত্রাস একটি মাংসাশী জীবসত্তা।[43] বিষাক্ত টেন্টাকল ব্যবহার করে এরা শিকারকে ফাঁদে ফেলে ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পৌষ্টিক পলিপের কাছে নিয়ে আসে। এরা সাধারণত ছোট ছোট মাছ, প্লাঙ্কটন ও কখনো কখনো চিংড়ির মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীব ভক্ষণ করে থাকে।
গুটিকয়েক শিকারি এই জীবসত্তাকে শিকার করে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে মুগুরমাথা সাগর কাছিম, যাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি বড় অংশই হলো ভাসমান সন্ত্রাস।[59] এই প্রজাতির কাছিমের ত্বক, বিশেষ করে জিহ্বা ও গলার চামড়া এত পুরু যে ভাসমান সন্ত্রাসের হুল এদের চামড়া ভেদ করে ঢুকতে পারে না। এছাড়া নীল রঙের সামুদ্রিক স্লাগ গ্লকাস আটলান্টিকাস[60] ও বেগুনি শামুক জ্যান্থিনা জ্যান্থিনা ভাসমান সন্ত্রাসদের ভক্ষণের জন্য বিশেষায়িত।[61] পূর্বে ধারণা করা হতো ওশান সানফিশ শুধুমাত্র জেলিফিশ খেয়ে থাকে; কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় এরা বিভিন্ন প্রজাতির জীব ভক্ষণ করে, যার মধ্যে ভাসমান সন্ত্রাস অন্যতম।[62][63]
কম্বল অক্টোপাস ভাসমান সন্ত্রাসের বিষের বিরুদ্ধে অনাক্রম্য। শিশু অবস্থায় ভাসমান সন্ত্রাসের ভাঙা টেন্টাকল বহন করতে দেখা যায়,[64] যা পুরুষ ও অপরিণত স্ত্রী প্রাণী আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহার করে।[65]
বহিঃস্থ ভিডিও | |
---|---|
How Portuguese Man O' War stings and eats prey (ইংরেজি) – ব্লু প্ল্যানেট ২ |
ভাসমান সন্ত্রাস মাছ (নোমিয়াস গ্রনোভিয়ি) হলো আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের একটি মাছ। ভাসমান সন্ত্রাসের টেন্টাকলের মধ্যে বাস করার জন্য এরা সুপরিচিত। এরা ভাসমান সন্ত্রাসের টেন্টাকল ও গোনাড ভক্ষণ করে থাকে। সাগর কুসুমের মধ্যে বসবাসকারী ক্লাউনফিশের মতো পিচ্ছিল মিউকাস ক্ষরণ না করে দক্ষতার সাথে সাঁতরে নেমাটোসিস্ট থেকে সুরক্ষিত থাকে।[66][67] এই মাছের মেরুদণ্ডে কশেরুকার সংখ্যা বেশি (৪১), যা এদের সাঁতারের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রভাব রাখে।[67] প্রাথমিকভাবে এরা বক্ষপাখনা দিয়ে সাঁতরায়; এই বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্যের ফলে এরা সংকুচিত জায়গায় সহজে সাঁতরাতে পারে। এদের ত্বকের গঠন জটিল প্রকৃতির এবং এদের দেহে ভাসমান সন্ত্রাসের বিষের জন্য অন্তত একটি হলেও অ্যান্টিজেন থাকে।[67] অন্যান্য মাছের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি বিষ সহনশীল মনে হয় ডাক্টাইলোজুয়োয়েড (বৃহৎ টেন্টাকল) কর্তৃক এরা আক্রান্ত হয়। তাই এরা এই ধরনের টেন্টাকলগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।[66] ক্ষুদ্র গনোজুয়োয়েড সম্ভবত এদের দংশন করে না; এমনকি এই প্রজাতির মাছেদের প্রায়শই ছোট ছোট টেন্টাকলে ঠোকরাতে দেখা যায়।[66]
ভাসমান সন্ত্রাসকে আরও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সাথে পাওয়া যায়; বিশেষত ইয়েলো জ্যাক নামক মাছের সাথে। এরা ভাসমান সন্ত্রাসের দংশন টেন্টাকলের মাধ্যমে আত্মরক্ষা লাভ করে এবং এই ধরনের মাছের উপস্থিতির কারণে ভাসমান সন্ত্রাস শিকারের জন্য অন্য মাছকে আকৃষ্ট করতে পারে।[68]
প্রতিটি ভাসমান সন্ত্রাস সত্তা যৌন দ্বিরূপ, অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী কলোনি আলাদা।[39][9] কলোনির লিঙ্গভেদে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদনকারী গনোফোর গনোডেন্ড্রন নামক কাঠামোর ওপরে অবস্থান করে, যা জননকালে কলোনি থেকে পৃথক হয়ে যায়।[9] সাধারণত শরৎকালে গনোফোর থেকে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মুক্ত হয় এবং যৌন মিলন সম্পন্ন হয়।[39] এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে নিষেক ও প্রাথমিক গঠন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না হওয়ায়, সমুদ্রের কোন গভীরতায় এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়, তা জানা যায় না।[9]
ভাসমান সন্ত্রাসের নিষিক্ত ডিম লার্ভায় পরিণত হয়, যা থেকে আরও জুয়োয়েড উৎপন্ন হয় এবং কলোনি গঠন করে। এই প্রক্রিয়া সাধারণত পানির গভীরে সংঘটিত হয়। সমুদ্র থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন দশায় বিভিন্ন লার্ভা বিশ্লেষণ করে ধাপগুলো অনুমান করা হয়েছে।[9] কলোনির সর্বপ্রথম আবির্ভূত হওয়া অংশ দুইটি হচ্ছে এদের ভাসন পাল বা চূড়া (নিউম্যাটোফোর) এবং প্রোটোজুয়োয়েড নামক কিছু প্রাথমিক পৌষ্টিক জুয়োয়েড। পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রোজুয়োয়েড ও টেন্টাকলবাহী জুয়োয়েডের আবির্ভাব হয়। ধীরে ধীরে নিউম্যাটোফোর সমগ্র অপরিপক্ব কলোনিকে ভাসিয়ে রাখার মতো সক্ষম হলে এরা সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে।[9]
বিষপূর্ণ নেমাটোসিস্টে সমৃদ্ধ টেন্টাকলের সংস্পর্শে এলে ছোট মাছ ও অন্যান্য শিকারের দেহে নেমাটোসিস্ট বিদ্ধ হয় এবং বিষের প্রভাবে শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।[69] সৈকতে ভেসে আসা মৃত জীব বা বিচ্ছিন্ন টেন্টাকলের দংশন পানিতে থাকা পূর্ণাঙ্গ কলোনির টেন্টাকলের দংশনের মতোই বেদনাদায়ক। মৃত্যু বা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর পর্যন্ত এদের বিষ কার্যকর থাকে।[70]
ভাসমান সন্ত্রাসের টেন্টাকলের সংস্পর্শে এলে দংশনের ফলে বিষক্রিয়ায় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং চাবুকের আঘাতের মতো লাল দাগ পড়ে, যা প্রাথমিক সংস্পর্শের দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দংশনের ফলে ব্যথা ব্যক্তিভেদে এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে উপশম হয়ে যায়। তবে, ভাসমান সন্ত্রাসের বিষ লসিকা গ্রন্থি পর্যন্ত সংবাহিত হয়ে অ্যালার্জির অনুরূপ লক্ষণ দেখা যেতে পারে; যেমন: স্বরযন্ত্রের স্ফীতি, শ্বাসতন্ত্রের অবরুদ্ধভাব, হৃদযন্ত্রের অস্থিরতা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা প্রভৃতি। এছাড়া অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর ও শক, এমনকি সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে।[71] তবে, ভাসমান সন্ত্রাসের টেন্টাকলের দংশনে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল। বিপুল সংখ্যক টেন্টাকলের সংস্পর্শে এলে তিন ঘণ্টার বেশি স্থায়ী তীব্র ব্যথা উপশমের জন্য ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা উপশমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হতে পারে। ছোট শিশুর ক্ষেত্রে টেন্টাকল সম্পূর্ণ পা পেঁচিয়ে ধরলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।[72]
এই প্রজাতি জীবের থেকে প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০,০০০ মানুষকে দংশনের ঘটনা ঘটে। এগুলোর বেশিরভাগই অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে ঘটে থাকে; পাশাপাশি দক্ষিণ ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় কিছু কিছু দংশনের ঘটনা ঘটে থাকে।[73]
ভাসমান সন্ত্রাসের দংশনের ফলে মানবদেহে তীব্র ডার্মাটাইটিস দেখা দেয়, যা চাবুকের আঘাতের মতো লম্বা, সরু ও উন্মুক্ত ক্ষত হিসেবে দেখা যায়।[74] টেন্টাকলের সংস্পর্শের প্রভাব বা কেটে যাওয়ার কারণে এই লক্ষণ দেখা যায় না, বরং টেন্টাকলের ছুলিজাতীয় চুলকানি সৃষ্টিকারী পদার্থের কারণে দেখা দেয়।[75][76] ক্ষতস্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সমুদ্রের পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে গায়ে লেগে থাকে অবশিষ্ট টেন্টাকলগুলো সরে যায়।[72][77][78][79]
অ্যাসিটিক অ্যাসিড (ভিনেগার) ব্যবহারে নেমাটোসিস্ট নিষ্ক্রিয় হয় এবং ব্যথা কিছুটা প্রশমিত হয়।[72] কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গবেষণায় দেখা যায়, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভিনেগার নেমাটোসিস্টের বিষপ্রয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং লক্ষণগুলো আরও তীব্র হয়।[77][80] ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রজাতির নিডোসাইটের দংশনের পর ভিনেগারের ব্যবহার রক্তক্ষরণ বৃদ্ধি করে বলেও জানা যায়।[81]
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি গবেষণায় ভাসমান সন্ত্রাসের দংশনের পর লঘুকরণহীন ভিনেগার বা দংশনের বিশেষায়িত স্প্রে “স্টিং নো মোর স্প্রে” ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।[82] ভিনেগার বা স্প্রে প্রয়োগের পরপরই ৪৫ °সে (১১৩ °ফা) তাপমাত্রার পানিতে ক্ষতস্থান চুবাতে হবে কিংবা ৪৫ মিনিটের জন্য হট প্যাক প্রয়োগ করতে হবে।[82][83]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.