ভারতের নদীসমূহ ভারতবাসীর জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। পানীয় জল, সুলভ যাতায়াত ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে, নদীগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভারতের প্রায় সকল প্রধান শহরগুলি,নদীর তীরে কেন অবস্থিত,এর সহজে ব্যাখ্যা হিসাবেই জন-জীবনে এদের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। আবার,হিন্দু ধর্মানুসারে নদীগুলির বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর নিকট নদীগুলি পবিত্র বলে পূজিত হয়।[1]
সাতটি প্রধান নদী তাদের অসংখ্য উপনদীগুলিসহ ভারতের নদী বিন্যাস গঠন করেছে। নদীগুলির বৃহত্তম অববাহিকা ব্যবস্থায় সমস্ত জল বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে;যদিও কিছু নদীর গতিপ্রবাহ দেশের পশ্চিম অংশের ভিতর দিয়ে বয়ে গিয়ে হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের পূর্ব দিক হয়ে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে।লাদাখের অংশবিশেষ,আরাবল্লী পর্বতশ্রেণীর উত্তরাঞ্চল,থর মরুভূমি বিন্যাসের অনুর্বর অংশের অভ্যন্তরীণ নিষ্কাশন আছে।
ভারতের সব বড় বড় নদীগুলি তিনটি প্রধান জলবিভাজিকা থেকে উদ্ভূত :
- হিমালয় এবং কারাকোরাম শ্রেণী
- বিন্ধ্য পর্বত এবং সাতপুরা শ্রেণী ও মধ্য ভারতে ছোটনাগপুর মালভূমি।
- পশ্চিম ভারতে সৈয়াদ্রী বা পশ্চিমঘাট পর্বতমালা।
ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয়ের হিমবাহসমূহ বিস্তৃতভাবে তিনটি নদী অববাহিকায় বিভক্ত করা হয় ,সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র।সিন্ধু অববাহিকার বৃহত্তম সংখ্যক (৩৫০০) হিমবাহ আছে,অথচ গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় যথাক্রমে ১০০০টি ও ৬৬০টি হিমবাহ আছে। [2].
ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি
গঙ্গা-শতদ্রুর ময়দান নামে পরিচিত (गँगा सतलज का मैदान), এই এলাকায় ১৬টি নদী দ্বারা আপীত হয়।হিমালয় থেকে নির্গত প্রধান নদীগুলি হল সিন্ধু, গঙ্গা, এবং ব্রহ্মপুত্র।নদীগুলি দীর্ঘ, এবং অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় উপনদীসমূহ এসে তাতে মিলেছে।হিমালয় থেকে নির্গত নদীগুলি তাদের উৎস থেকে সাগর অবধি(ভারত আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে) পৌছানর জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে।
গঙ্গা নদী প্রণালী
এই প্রণালীতে প্রধান নদীগুলি হল (পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, সমন্নয় ক্রমে) -
- গঙ্গা -উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে শুরু
- চম্বল -হিমালয় থেকে উৎসারিত নদী নয়,মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ হয়ে যমুনা নদীতে মিশেছে
- বেতোয়া - হিমালয় থেকে উৎসারিত নদী নয়,মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ হয়ে যমুনা নদীতে মিশেছে
- যমুনা -যমুনা এলাহাবাদে গঙ্গা নদীতে তার জল সংযোজন করার আগে বেশীরভাগ রাস্তাই গঙ্গার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলে।
- গোমতী - নেপাল, উত্তরাখণ্ড ও ইউপি এই তিনটি সীমার সংযোগস্থলের কাছাকাছি শুরু হয়।
- ঘাঘরা - উত্তরাখন্ডের কাছে নেপালে শুরু।
- সোন - -হিমালয় থেকে উৎসারিত নদী নয়,মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের মধ্যে দিয়ে গেছে ।এটি গঙ্গার দক্ষিণের উপনদীর মধ্যে বৃহত্তম।
- গন্ডক - নেপাল থেকে শুরু।
- কোশী - ভারত-নেপাল সীমান্তের কাছে বিহার থেকে শুরু।
- ব্রহ্মপুত্র -বাংলাদেশে পদ্মা বড় নদী তৈরী করে (কিন্তু দৈর্ঘ্যে ছোট) গঙ্গার সঙ্গে মিলে। উভয় নদীর প্রবাহবেগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মন্দীভূত হয় এখানে যেহেতু তারা এখন সমভূমিতে। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে, গঙ্গার একটি শাখানদী হুগলি যেটি সেচের জন্য জল সরবরাহ করে পশ্চিমবঙ্গে।
সিন্ধু নদ প্রণালী
সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের নিকট কৈলাশের উত্তর ঢাল থেকে উৎপত্তি হয়।যদিও নদীর অধিকাংশ গতিপথ প্রতিবেশী পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ন্ত্রণ হিসেবে দেখা যায়, ভারত শুধুমাত্র ২০ শতাংশ নদীর জল ব্যবহার করতে পারে।এটির একটি অংশ ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে গেছে, যেমন নিচে তালিকাভুক্ত এর পাঁচটি প্রধান উপনদী এদেশের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাবের নামের উৎস এই উপনদীসমূহ; নাম পাঞ্চ ("পাঁচ") থেকে প্রাপ্ত এবং অব হল' ("জল"), অতএব শব্দসংযোগ করে হল ( পাঞ্জাব ) যার অর্থ "পঞ্চনদীর দেশ"। সিন্ধু ৩,২০০ কিলোমিটার (২,০০০ মা) দীর্ঘ।
সিন্ধু নদ প্রণালীতে প্রধান নদীগুলি(তাদের দৈর্ঘ্য ক্রমানুযায়ী):
- সিন্ধু - ৩,২০০ কিলোমিটার (২,০০০ মা)
- চন্দ্রভাগা - ৯৬০ কিলোমিটার (৬০০ মা)
- বিতস্তা বা ঝিলম - ৮১৩ কিলোমিটার (৫০৫ মা)
- রবি - ৭২০ কিলোমিটার (৪৫০ মা)
- শতদ্রু - ৫২৯ কিলোমিটার (৩২৯ মা)
- বিপাশা বা বিয়াস - ৪৬০ কিলোমিটার (২৯০ মা)
- শ্যোক
- জাংস্কার
অববাহিকা সংখ্যা | নদী অববাহিকার একক | এলাকা | নিঃশেষিত | যে অঞ্চল হইতে বৃষ্টিপাতের দরূণ নদীতে জল সরবরাহ হয় (ভারতের জলসেচে নদীর শতাংশ) | গড় জলের বর্জ্য (কিমি৩) | অতিরিক্ত উপলব্ধ ভূ-উপরিস্থ জল (কিমি৩) |
---|---|---|---|---|---|---|
১.১ | গঙ্গা (GBM) | উত্তর | বাংলাদেশ | ২৬.৫ | ৫২৫.০২ | ২৫০ |
১.২ | ব্রক্ষপুত্র (GBM) | উত্তরপূর্ব | বাংলাদেশ | ৬ | ৫৩৭.২৪ | ২৪ |
১.৩ | মেঘনা/বরাক (GBM) | পূর্ব | বাংলাদেশ | ১.৫ | ৪৮.৩৬ | |
২ | অন্য উত্তরপূর্ব নদীগুলি | উত্তরপূর্ব | মায়ানমার, বাংলাদেশ | ১.১ | ৩১ | |
৩ | সুবর্ণরেখা | পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ০.৯ | ১২.৩৭ | |
৪ | ব্রাক্ষিণী-বৈতরণী | পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ১.৬ | ২৮.৪৮ | ৬.৮ |
৫ | মহানদী | মধ্য-পূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ৪.৪ | ৬৬.৮৮ | ১৮.৩ |
৬ | গোদাবরী | মধ্য | বঙ্গোপসাগর | ৯.৭ | ১১০.৫৪ | ৫০ |
৭ | কৃষ্ণা | মধ্য | বঙ্গোপসাগর | ৮ | ৭৮.১২ | - |
৮ | পেন্নার | দক্ষিণপূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ১.৭ | ৬.৩২ | ৫৮ |
৯ | কাবেরী | দক্ষিণ | বঙ্গোপসাগর | ২.৫ | ২১.৩৬ | ৬.৯ |
১০ | মহানদী এবং পেন্নার মধ্যে পূর্বদিকে প্রবাহিত নদীগুলি | মধ্য-পূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ২.৭ | ২২.৫২ | ১৯ |
১১ | কন্যাকুমারী ও পেন্নারের মধ্যে পূর্বে প্রবাহিত নদীগুলি | দক্ষিণপূর্ব | বঙ্গোপসাগর | ৩.১ | ১৬.৪৬ | ১৩.১ |
১২ | তাদ্রি এবং কন্যাকুমারীর মধ্যে পশ্চিমে প্রবাহিত নদীগুলি | দক্ষিণপশ্চিম | আরব সাগর | ১.৭ | ১১৩.৫৩ | ১৬.৭ |
১৩ | তাপি এবং তাদ্রির মধ্যে পশ্চিমে প্রবাহিত নদীগুলি | দক্ষিণপশ্চিম | আরব সাগর | ১.৭ | ৮৭.৪১ | ২৪.৩ |
১৪ | তাপি | মধ্য-পশ্চিম | আরব সাগর | ২ | ১৪.৮৮ | ১১.৯ |
১৫ | নর্মদা | মধ্য-পশ্চিম | আরব সাগর | ৩.১ | ৪৫.৬৪ | ১৪.৫ |
১৬ | মাহি | উত্তরপশ্চিম | আরব সাগর | ১.১ | ১১.০২ | ৩৪.৫ |
১৭ | সবরমতী | উত্তরপশ্চিম | আরব সাগর | ০.৭ | ৩.৮১ | ৩.১ |
১৮ | কুতস ও সৌরাষ্ট্রর মধ্যে পশ্চিমে প্রবাহিত নদীগুলি | উত্তরপশ্চিম | আরব সাগর | ১০ | ১৫.১ | ১.৯ |
১৯ | রাজস্থান অভ্যন্তরীণ অববাহিকা | উত্তরপশ্চিম | ভারত | ০ | নগণ্য | ১৫ |
২০ | সিন্ধু উপনদীসমূহ | উত্তরপশ্চিম | পাকিস্তান, ভারত | ১০ | ৭৩.৩১ | ৪৬ |
মোট (প্রতি আন্তর্জাতিক চুক্তি ) | ১০০ | ১৮৬৯.৩৭ |
আরও দেখুন
- ভারতীয় নদীগুলির আন্তঃ-সংযোগ
- আমাজন অববাহিকা
- রাইন নদী অববাহিকা
- দানিউব নদী অববাহিকা
- নীল নদী অববাহিকা
- ইয়াংসে নদী অববাহিকা
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.