বোডেন সংস্কৃত অধ্যাপক নির্বাচন, ১৮৬০
From Wikipedia, the free encyclopedia
১৮৬০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোডেন সংস্কৃত অধ্যাপক পদের নির্বাচনে সংস্কৃত শিক্ষাদানের দুই ভিন্ন প্রণালী প্রস্তাবকারী মোনিয়ার উইলিয়ামস ও ম্যাক্স মুলারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। অক্সফোর্ডে শিক্ষিত উইলিয়ামস ছিলেন ইংরেজ এবং তিনি ব্রিটিশ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কাজের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণকারীদের ১৪ বছর সংস্কৃত শিক্ষা দিয়েছিলেন। বৈদিক সংস্কৃত স্তোত্র সংকলন ঋগ্বেদের একটি সংস্করণ সম্পাদনার কাজে মুলার বহু বছর অতিবাহিত করেছিলেন। পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। উইলিয়ামস কাজ করতেন বস্তুগত প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে। মুলারের "মহাদেশীয়" ধারায় সংস্কৃত গবেষণার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন সংস্কৃত গবেষণার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে এবং সেটি হল ভারতকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। অন্যদিকে মুলার মনে করতেন যে, তার কাজ ধর্মপ্রচারকদের সহায়তা হলেও তার আসল উদ্দেশ্য ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে বৃহত্তর জ্ঞান অর্জন।
১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের উত্থানে ভারতে ইংল্যান্ডের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ বিতর্কের সময় এই নির্বাচন আয়োজিত হয়। ভারতীয়দের ধর্মান্তরিত করার বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত নাকি স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রথাগুলির প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রাখা উচিত তা নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদের মতামত দ্বিধাবিভক্ত ছিল। দুই প্রার্থীই ইস্তাহার ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্বাচকমণ্ডলীর (বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, ৩,৭৮৬ জন স্নাতককে নিয়ে গঠিত) কাছে নির্বাচনী প্রচার চালান। প্রচারের সময় উইলিয়ামস বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেন যে এই অধ্যাপক পদের প্রতিষ্ঠাতার উদ্দেশ্য ছিল পদাধিকারী ধর্মগ্রন্থ বিতরণের মাধ্যমে ভারতীয়দের ধর্মান্তরিত করতে সহায়তা করবেন। মুলারের মতে, তার সম্পাদিত ঋগ্বেদ ধর্মপ্রচারকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান বিবেচিত হয়েছিল এবং তিনি তার সাক্ষ্যপত্রও দাখিল করেন। এছাড়া মুলার চেয়েছিলেন ধর্মপ্রচারক, গবেষক ও রাজকর্মচারীদের কাজের সুবিধার জন্য ভারতের ইতিহাস ও ভারতীয় সাহিত্যের মতো বৃহত্তর বিষয়গুলি শিক্ষা দিতে। শেষোক্ত প্রস্তাবটির সমালোচনা করে উইলিয়ামস বলেছিলেন এটি মূল দাতার ইচ্ছার অনুরূপ নয়। প্রচারের সময় সংবাদপত্রের উভয় প্রার্থীর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় এবং ইস্তাহার বিতরণ করা হয়। এক-একটি সংবাদপত্র এক-এক প্রার্থীর পক্ষ অবলম্বন করে। সাধারণভাবে পাণ্ডিত্যের বিচারে মুলারকে উইলিয়ামস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর মনে করা হলেও কারও কারও মতে মুলার দু’টি অসুবিধার সম্মুখীন হন: প্রথমত, তিনি ছিলেন জন্মসূত্রে জার্মান, এবং দ্বিতীয়ত মতাদর্শের দিক থেকে তিনি ছিলেন উদারনৈতিক খ্রিস্টান। উইলিয়ামসের পক্ষাবলম্বনকারী কয়েকটি সংবাদপত্র যে বিবৃতি দিয়েছিল তার মূল বক্তব্য ছিল জাতীয় স্বার্থে ভারত শাসন ও ভারতবাসীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে সহায়তার জন্য একজন ইংরেজকেই বোডেন অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করা উচিত।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেই দিন সমাবর্তনের অনাবাসী সদস্যদের ভোটদানের সুবিধা করে দিতে অক্সফোর্ডের উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এক আক্রমণাত্মক প্রচারাভিযানের পর উইলিয়ামস ২২৩টি ভোটে গরিষ্ঠতা অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি অক্সফোর্ডে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন, নাইটহুড প্রাপ্ত হন এবং ১৮৯৯ সালে মৃত্যুর পূর্বাবধি পদটি অলংকৃত করেন। পরাজয়ের ফলে মুলার অত্যন্ত হতাশ হলেও অবশিষ্ট জীবন তিনি অক্সফোর্ডেই অতিবাহিত করেন; কিন্তু সেখানে আর কোনও দিন সংস্কৃত শিক্ষাদানের কাজ তিনি করেননি। ১৮৬০ সালের নির্বাচনটিই ছিল শেষ নির্বাচন, যার মাধ্যমে সমাবর্তন বোডেন অধ্যাপককে নির্বাচিত করেছিল। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি সংস্কার বলে সমাবর্তনের এই ক্ষমতাটি প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৭ সালে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক পদটির অস্তিত্ব এখনও আছে এবং এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবশিষ্ট সংস্কৃত অধ্যাপকের পদ।