বৃহন্নলা (পৌরাণিক চরিত্র)
বিরাটনগরে অজ্ঞাতবাসের সময় অর্জুনের নপুংসকরূপী নাম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিরাটনগরে অজ্ঞাতবাসের সময় অর্জুনের নপুংসকরূপী নাম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বৃহন্নলা (বৃহন্নদা বা বৃহন্নতা বলেও লেখা হয়) হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে অর্জুনের গ্রহণ করা এক পরিচয়। অজ্ঞাতবাসের একবছর অর্জুন বিরাট রাজার মৎস্য রাজ্যে বৃহন্নলা রূপ পরিগ্রহ করেছিলেন। তিনি এই সময়কালে রাজকুমারী উত্তরাকে নাচ ও গান শিখিয়েছিলেন।[1]
একবার অর্জুনকে পিতা ইন্দ্র তাঁর রাজসভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ইন্দ্রের রাজসভার অপ্সরা উর্বশী অর্জুনকে দেখে আকৃষ্ট হয়। ইন্দ্র এই কথা জানতে পেরে উর্বশীর মনস্কামনা পূর্ণ করতে বলেন। ইন্দ্রের কথামতো একরাতে উর্বশী অর্জুনের ঘরে উপস্থিত হয়। কিন্তু অর্জুন উর্বশীর প্রতি কামভাব না রেখে তাঁকে কুরুদের “মাতা” বলে সম্বোধন করেন কারণ উর্বশী কুরু রাজবংশের আদিরাজা পুরূরবার পত্নী ছিলেন। এই কথায় ক্রোধান্বিত হয়ে উর্বশী অর্জুনকে অভিশাপ দেন যে সমগ্র জীবন তিনি কিন্নর হয়ে থাকবেন এবং অন্য নারীদের সঙ্গে কেবল নাচ-গান করবেন। পরে ইন্দ্রের অনুরোধে উর্বশী এই শাপ একবছরে কমিয়ে আনেন। পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের ত্রয়োদশ বছরে এই অভিশাপ ফলে যায়।[2]
অজ্ঞাতবাসের ত্রয়োদশ বছরে অর্জুন বৃহন্নলা রূপে বিরাটের রাজসভায় উপস্থিত হন। ইন্দ্রের রাজসভার গন্ধর্ব চিত্রসেনের থেকে শিখে আসা গান এবং নৃত্যে তিনি বিরাট রাজাকে মোহিত করেন। তিনি রাজকুমারী উত্তরাকে নাচ-গান শেখানোর জন্য বৃহন্নলাকে আদেশ দেন। বৃহন্নলা নারীদের জন্য অন্দর মহলে থেকে মেয়ে এবং বধূদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন।
কৌরবগণ সন্দেহ করেছিলেন যে পাণ্ডবগণ বিরাটের রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাঁরা প্রথমে বিরাটের রাজ্যের প্রধান সম্পদ গরুগুলোকে চুরি করেন। পরদিন ভীষ্ম, দ্রোণ এবং কর্ণের নেতৃত্বে এক বৃহৎ সেনাবাহিনী মৎস রাজ্যের দিকে অগ্রসর হয়। মালিনী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে থাকা দ্রৌপদী, কুমার উত্তরকে এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সতর্ক করেন এবং বৃহন্নলাকে রথের সারথী হিসেবে পাঠিয়ে দেন। সেইদিনই পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস তথা অর্জুনের অভিশাপের শেষ দিন ছিল। যুদ্ধস্থলে গিয়ে বৃহন্নলা পুনরায় অর্জুনের রূপ ফিরে পান। তিনি তখন উত্তরকে পাণ্ডবদের কথা বলেন এবং প্রত্যেকটি অর্থের সাথে নিজের দশটা নাম বলেন (বিজয়, ধনঞ্জয়, সব্যসাচী, গুঢ়াকেশ, শ্বেতবাহন, বীভৎসু, কীরিটি, পার্থ, ফাল্গুণ এবং জিষ্ণু) বিশ্বাস জন্মান। তার পর অর্জুন গাণ্ডীব ধারণ করে কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করেন। উত্তরকে সারথী হিসেবে নিয়ে তিনি কৌরবদের পরাস্ত করেন এবং গোগুলিকে মৎস্য রাজ্যে ফিরিয়ে আনেন।
এই যুদ্ধে অর্জুন ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা ইত্যাদি সবার সাথেই যুদ্ধ করেন। তিনি সম্মোহন অস্ত্র মেরে সবাইকে নিদ্রিত করে ফেলেছিলেন। প্রাণ নাশ না করে নিদ্রাতে কীভাবে ফেললেন বলে উত্তর অর্জুনকে প্রশ্ন করে। অর্জুন বলেন যে মৃত লোকের বস্ত্র অপবিত্র হয়ে পড়ে। উত্তরা পুতল সাজানোর জন্য কৌরবদের বস্ত্রগুলি পেতেছিল। সেইমত উত্তর দুর্যোধন-এর রন্হা বস্ত্র, কর্ণ-এর গোলাপী বস্ত্র এবং দুঃশাসন-এর নীল বস্ত্র গুটিয়ে আনে।[3]
পাণ্ডবদের পরিচয় পেয়ে রাজা বিরাট আশ্চর্য হন। তিনি কুমারী উত্তরাকে বিয়ে করতে অর্জুনকে অনুরোধ জানান। কিন্তু উত্তরাকে শিক্ষক হিসেবে কন্যাজ্ঞান করার জন্য অর্জুন এই অনুরোধ নাকচ করেন। বিপরীতে তিনি পুত্র অভিমন্যু-এর সাথে উত্তরার বিবাহের প্রস্তাব দেন। রাজা এবং রাজকুমারী এই কথায় সম্মত হন।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.