Remove ads
অর্জুন-সুভদ্রার পুত্র ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভাগিনেয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অভিমন্যু মহাভারত মহাকাব্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র ও অর্জুন-সুভদ্রার পুত্র, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভাগিনেয় এবং মৎস্য রাজকন্যা উত্তরার স্বামী। শৌর্যে বীর্যে তিনি তার পিতা অর্জুন ও পিতামহ ইন্দ্রের সমতুল্য। অভিমন্যু নামের অভি অর্থ অত্যধিক; আর মন্যু অর্থ ক্রোধ। তাই অভিমন্যু নামের অর্থ দাড়ায় ক্রোধিত পুরুষ। যুদ্ধ ক্ষেত্রে অভিমন্যু তার পিতা অর্জুন ও মাতুল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমান। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিবসে মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার একমাত্র সন্তান পরীক্ষিৎ তার মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেন।
অর্জুনের বারো বছরের ব্রহ্মচর্য ও বনবাস সম্পূর্ণ হওয়ার পর অভিমন্যুর জন্ম হয়। মাতার গর্ভে থাকতেই তার শিক্ষা শুরু হয়েছিল। গর্ভাবস্থায় সুভদ্রা অর্জুনের নিকট চক্রব্যূহে প্রবেশের প্রণালী শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ায় অভিমন্যু কেবল চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে জানতেন, বাহির হতে জানতেন না।
পান্ডবগণের বনবাস ও অজ্ঞাতবাসের কারণে অভিমন্যু তার বাল্যকাল দ্বারকায় মাতুলালয়ে অতিবাহিত করেন। সেখানে কৃষ্ণ ও বলরামের অভিভাবকত্বে তিনি কৃষ্ণপুত্র প্রদ্যুম্ন এবং যাদববীর কৃতবর্মা ও সাত্যকীর নিকট অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করেন।
ঘটোৎকচের সহায়তায় তিনি বলরাম ও রেবতীর কন্যা শশীরেখা বা সুরেখা বা বৎসলাকে বিয়ে করেন। তাদের প্রথমে রেণুকা ও সত্যপ্রিয়া নামে দুটি যমজ, পরে আরো একটি কন্যা অভিলাশার জন্ম হয়।এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ ও দেবী প্রতিবির কন্যা সিতিসুন্দরীর গর্ভে জৈত্র, ভুরিবল ও রবি নামে তিনটি যমজ পুত্রের জন্ম হয়।
অজ্ঞাতবাসকালে পঞ্চপান্ডব ও দ্রৌপদী মৎস্যরাজ বিরাটের নিকট ছদ্মবেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তেরো বৎসর সম্পূর্ণ হওয়ার পর তারা আত্মপ্রকাশ করলে বিরাট স্বীয় কন্যা উত্তরার সঙ্গে অর্জুনের বিবাহের প্রস্তাব দেয়। তখন অর্জুন জানায় উত্তরা তাকে আচার্যের ন্যায় শ্রদ্ধা করে। তাই তিনি উত্তরাকে পুত্রবধূ রূপে গ্রহণ করবেন। তার পুত্র অভিমন্যুই মৎস্যরাজের জামাতা হওয়ার উপযুক্ত। এরপর উপপ্লব্য নগরীতে অভিমন্যু ও উত্তরার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এদের পুত্র পরীক্ষীত।
মহাভারতের যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে কৌরব সেনাপতি দ্রোণাচার্য একটি চক্রব্যূহ রচনা করেন। এই ব্যুহ ভেদের কৌশল মাত্র চার জনের জানা ছিল। তারা হলেন- কৃষ্ণ, প্রদ্যুম্ন,অর্জুন আর অভিমুন্য। এইসময়ে চক্রব্যূহ ভেদ করার জন্য পান্ডব শিবিরে অভিমন্যু ব্যতীত আর কেউ উপস্থিত না থাকায় যুধিষ্ঠির তার ওপর এই গুরুভার অর্পণ করেন। এরপর অভিমন্যু যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং চক্রব্যূহ ভেদ করে কৌরব সেনা মধ্যে উপস্থিত হন। তার শরবর্ষণে মদ্ররাজ শল্য ও দুঃশাসন মূর্ছিত হন। কর্ণের এক ভাই ও শল্যের ভ্রাতা নিহত হয় এবং শল্য রণভূমি থেকে পলায়ণ করেন। এইসময় যুধিষ্ঠির, ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখন্ডী, সাত্যকী, বিরাট ও দ্রুপদ ব্যূহে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে ধৃতরাষ্ট্রের জামাতা সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ শিবের বরে তাদের পরাস্ত করেন ও ব্যূহের প্রবেশ পথ রুদ্ধ করে্ন। কুরুসৈন্য বেষ্টিত অভিমন্যু একাকী যুদ্ধ করতে থাকেন। কৌরবসৈন্য ছত্রভঙ্গ হয় এবং যোদ্ধারা পালাতে থাকে। শল্যপুত্র রুক্মরথ, দুর্যোধনের পুত্র লক্ষণ ও কোশলরাজ বৃহদবল তার বাণে হত হন।
অভিমন্যুকে অপ্রতিরোধ্য দেখে কর্ণ দ্রোণের উপদেশে তাকে পিছন থেকে আক্রমণ করে তাকে রথচ্যূত ও ধনুর্হীন করেন এবং দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন ও শকুনি নিষ্করুণ ভাবে তার ওপর শরাঘাত করতে থাকেন। অভিমন্যু খড়গ, চক্র, গদা এমনকি রথের চাকা দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এইসময় দুঃশাসনের পুত্র তার মাথায় গদাঘাত করে। ফলে কৌরবসেনা নিপীড়িত বালক অভিমন্যুর প্রাণশূন্য দেহ ভূপাতিত হয়।[১] অভিমুন্যের বধের জন্য দ্রোণ, দ্রৌণি, কৃপ, কর্ণ, শল্য, কৃতবর্মা, শকুনি, বৃহদ্বল, ভূরি, ভুরিশ্রবা, শল, পৌরব আর বৃষসেনকে দায়ি করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.