Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিদআত (আরবি: بدعة অর্থ: নবসৃজন)[1] ইসলামি শরিয়তের অন্যতম বিতর্কিত, জটিল ও স্পর্শকাতর একটি মৌলিক হুকুম। ধ্রুপদি আরবী সাহিত্যে (আদব) এটি এটি গদ্য এবং কবিতার অসামান্য রচনাগুলির জন্য প্রশংসার একটি রূপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।[2]
ঐতিহাসিকভাবে ইসলামের ভেতর বিভিন্ন বিভাজন, দল ও উপদলের মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাসংঘাত ও মতবাদগত অনৈক্যের সৃষ্টি করেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে ওয়াহাবিবাদের মৌলিক দ্বন্দ্ব। উনবিংশ শতাব্দিতে উসমানী খেলাফতের সাথে সৌদি বংশের বিদ্রোহ, ওয়াহাবিবাদের উত্থান পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ এবং সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রধান মতবাদগত অস্ত্র হিসেবে বিদআতকে ব্যবহার করা হয়।[3][4]
আরবি শব্দমূল (মাসদার ) بدع এর দুটি পাঠ্যরীতি রয়েছে যাদের অর্থ ভিন্নপ্রকৃতির। প্রথম বর্ণ ب এর হরকত (ــِـ) যের হলে অর্থ হবে সর্বপ্রথম ;[5] যেমন আয়াতে এসেছে: قل ما كنت بدعا من الرسل , বলুন আমি রসুলদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রেরিত কেউ নই। আর যদি হরকত যবর (ــَـ) হয় তাহলে অর্থ নিসদৃশ উদ্ভাবন। ইমাম ফারাহিদি, জামাখশারি, ইবনে আরবী, রাগেব ইসপাহানি, ইবনে মানযুরসহ সকল আরবী ভাষাতাত্ত্বিকেরা এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। দ্বিতীয় অর্থে কুরআনে শব্দটি বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, "بديع السموات والارض" আল্লাহ হলেন আসমান ও জমীনের বদী' তথাপূর্বের যার কোন উপমাই ছিল না তার অস্তিত্বদাতা।
উক্ত মাসদার থেকে আরবী "বিদআত" (بدعة) কর্মবিশেষ্যের অর্থ "এমন কোন উদ্ভাবিত বিষয় বা বস্তু যার ইতোপূর্বে কোথাও কোন অস্তিত্ব, উল্লেখ বা পরিচিতি ছিল না।"[6] উদাহরণ, বস্তু—মোবাইল, ট্রেন, বিমান; কর্ম—মিছিল, লং মার্চ, মানববন্ধন; ব্যবস্থা—ব্যাংকিং, শেয়ার বাজার, ই-কমার্স ইত্যাদি এবং ভবিষ্যতে আরও যা কিছু উদ্ভাবিত হবে সবই আভিধানিকভাবে শাব্দিক বিদআত হবে।
সকল শব্দ তার আলোচনার রাজ্য পাল্টালে পারিভাষিক সংজ্ঞাও পরিবর্তন করে। বিদআত শব্দটি ইসলামী শরিয়তে একটি বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই বলে শব্দ অশিষ্ট হয়ে যায় না। এদিকেই ইঙ্গিত করে ইবনুল আরবী বলেন, "নিছক বিদআত ও মুহদাস শব্দদ্বয় বা তাদের অর্থের কারণে উদ্ভাবন ও আবিষ্কার ক্রিয়া দোষারোপযোগ্য নয়, বরং নিন্দনীয় হল দীন বিষয়ক এমন উদ্ভাবন (বিদআত) যা সুন্নাহ বিরোধী এবং এমন আবিষ্কার (মুহদাস) যা বিভ্রান্তিকেই আমন্ত্রণ করে।"[7] সকল ওলামা তার এই বক্তব্যের সাথে স্ব স্ব পুস্তকে ঐকমত্য দিয়েছেন; যেমন, ইমাম নববীর তাহযিবুল আসমা ওয়াস সিফাত কিতাবে।[8]
ইসলামে শরিয়তে বিদআতে সংজ্ঞাপ্রদানে ওলামাদের মধ্যে দুইটি ভাগ তৈরি হয়েছে। তদুপরি উভয় ধরনের সংজ্ঞা একই অর্থ বহন করে। বিদআত দশপ্রকার হুকুমের অংশও নয়। আবার আদত (অভ্যাস) বিদআতের ভেতর অনুপ্রবেশ করবে কিনা সে ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে।[9] ফলে সংজ্ঞাপ্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে সর্বসম্মত মতে, "বিদআত হল, সুন্নাহ লঙ্ঘনকারী নতুন প্রবর্তিত বিষয় যার উপরে সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীনদের সমর্থন নেই এবং যা আইনগত প্রমাণের চাহিদা মোতাবেক হয় না।"[10] অর্থাৎ এমন কোন বিষয় বা বস্তু যা দলিলস্বরূপ নির্দেশকারী শরিয়তের কোন ভিত্তি ছাড়াই উদ্ভাবিত হয়েছে।[11]
কুরআনে বিদ'অ (بدع) শব্দমূল থেকে বিভিন্ন উদ্ভুত (مشتق) ব্যবহৃত হলেও শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ বিদআতের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয় নি। তবে প্রায় একই অর্থে বহু আয়াত প্রবর্তন করা হয়েছে। "তোমাদেরকে রসুল যা দিয়েছেন তা গ্রহন কর; আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর" (হাশর:৬)। তবে বহু মুফাসসিরদের মতে এই আয়াতটি ব্যাপ্তার্থে এসেছে। এর দ্বারা সমগ্র শরিয়ত উদ্দেশ্য, শুধু বিদআত নয়। অনেকের মতে এটি বিদআতকেও উদ্দেশ্য করে।
আর আমি তার অনুসারীদের অন্তরে স্থাপন করেছি নম্রতা, দয়া, আর বৈরাগ্য যা তারা নিজেরাই উদ্ভাবন (ابتدعوها) করেছে, যা আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি; কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ছিল, আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার দিয়েছি। আর তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।
— হাদিদ ৫৭:২৭ এ খ্রিস্টানদের বিদআত সৃষ্টির ব্যাপারে বর্ণনা দেয়।
ধর্মীয় বিষয়ে ধর্মপুস্তকে কোন নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী উম্মতের বিদ'আত সৃষ্টি করার ব্যাপারে কুরআনে প্রশংসাবাণী এসেছে। তবে ভিন্ন ধর্মের বৈরাগ্যবাদ ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলামে বৈরাগ্যবাদের বিপরীতে সুফিবাদের প্রণয়ন করা হয়।
এটা করো না! কোন কোন দিন রোজা রাখো এবং কোন কোন দিন খাও। রাতের কিছু অংশ ঘুমাও এবং কিছু অংশে নামাজে দাঁড়াও। কারণ তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার অতিথির হক রয়েছে। রসুল সা. বড় আওয়াজে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে বলেন: "হায় তাদের জন্য! যারা অতিরঞ্জন করে [যারা খুব কঠোর]!" এবং, অন্য একটি জায়গায়, রসুল সা. বলেন: "সংযম, সংযম! কেননা শুধুমাত্র সংযম করলেই তুমি সফল হবে।
— হযরত মুহাম্মদ[12]
শরীয়তে বিদাআতের বিষয়ে বর্ণনা এসেছে মূলত হাদিসে। হাদিসে বিদআতের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।
"রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এই ধর্মের নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[13]
— হযরত আয়েশা, সহিহ।
"নবী বলেছেন, "কোন ব্যক্তি আমাদের আচার–অনুষ্ঠানের বিপরীত কিছু প্রবর্তন করলে তা বর্জনীয়।"[14]
— সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬০৬; হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, পার্থিব জীবনযাপনের বিষয়ে উপকারী বিদআত বৈধ এবং অপকারী বিদআত নিষিদ্ধ[15]।
ইবাদত ও ধর্মীয় নিয়মকানুন সংক্রান্ত বিষয়ে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিদআতের বিভিন্ন শ্রেণীর সংজ্ঞা প্রচলিত আছে, এগুলো হলো-
ধর্মগ্রন্থীয় ভিত্তি, কুরআনের
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম, এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দিন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (কুরআন ৫:৪)
এই আয়াতটিকে কিছু মুসলিম বিদআতের বিরুদ্ধে কুরআনের উদ্ধৃতি হিসেবে বিবেচনা করেন। নবী মুহাম্মাদের পাশাপাশি আলী, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস সহ বহু সাহাবী এবং সুফিয়ান আস-সাওরি সহ পরবর্তী বহু ইসলামী পণ্ডিত বিদআতের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন, এছাড়াও সমসাময়িক সালাফি আলেমগণ "বিদআত হাসানা"র সংজ্ঞাকে নাকচ করে দিয়ে[24]
সকল ধর্মীয় বিদআতকে গুরুতরভাবে তিরস্কার করেছেন। তবে ধর্মীয় বিষয়ে কোন কিছুকে বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যে সকল মানদণ্ড গ্রহণ করা হয় সে বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এক্ষেত্রে সালাফি আলেমগণ অধিক কঠোরতা এবং অনেক আলেম বিশেষত সুফি আলেমগণ এক্ষেত্রে তুলনামূলক শিথিলতা ও সহনীয়তা প্রদর্শনের পক্ষে যুক্তি দেন। এছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না সে বিষয়েও সুন্নি আলেমগণের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.