Loading AI tools
বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি সামরিক বাহিনী যা সাধারণত সমুদ্র এবং পানিতে মিশন পরিচালনা করে। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশ। নৌবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার (৪৫,৮৭৪ মা২) সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইন এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বহিরনোঙ্গরে অবস্থিত সকল মার্চেন্টশিপ, কার্গোশিপ ইত্যাদিকে চাঁদাবাজি, চুরি এবং জিম্মি করা থেকে নিরাপদ রাখা, জেলেদের বৈধ মৎস্য আহরণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া, সকল মার্চেন্টশিপের এবং কার্গোশিপের নিরাপত্তা এবং মেরিটাইম ট্রাফিক কন্ট্রোল করা, মার্চেন্টশিপের ক্যাপ্টেনকে নিরাপত্তা দেওয়া, জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, বিদেশী জেলেদের অবৈধ মৎস্য শিকার রোধ করা, ভারত এবং মায়ানমার থেকে কোনো প্রকার জলদস্যুতা বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ না করতে দেওয়া, বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি এবং দেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত সকল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশের সকল সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা বিধান করা।[3][4] নৌবাহিনীর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো সমুদ্রে উদ্ভূত বহিঃশত্রুর হুমকি এবং আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা।[5] পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিদেশে মানবিক সহায়তা মিশনেও একটি নেতৃত্বস্থানীয় বাহিনী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নৌবাহিনী আঞ্চলিক সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমে একটি প্রধান অংশগ্রহণকারী শক্তি এবং জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।[6][7][8]
বাংলাদেশ নৌবাহিনী | |
---|---|
সক্রিয় | ১৯৭১ - বর্তমান |
দেশ | বাংলাদেশ |
আনুগত্য | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
ধরন | নৌবাহিনী |
ভূমিকা | নৌযুদ্ধ |
আকার | ২৭,৫০০ সদস্য[1] |
অংশীদার | বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী |
নৌসদর | বনানী, ঢাকা |
ডাকনাম | বিএন |
পৃষ্ঠপোষক | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
নীতিবাক্য | "শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়" |
রং | সাদা, নীল |
বার্ষিকী | ২৬ মার্চ, ২১ নভেম্বর |
যুদ্ধসমূহ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ অপারেশন জ্যাকপট বাংলাদেশ-মায়ানমার সমুদ্র বিরোধ ২০০৮ |
ওয়েবসাইট | www |
কমান্ডার | |
প্রধান সেনাপতি | রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
নৌবাহিনী প্রধান | অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান[2] |
প্রতীকসমূহ | |
নৌবাহিনীর পতাকা | |
জাতীয় পতাকা | |
বিমানবহর | |
হেলিকপ্টার | এডব্লিউ-১০৯,এম আই ১৭১ |
প্রহরী বিমান | ডরনিয়ার ডিও-২২৮এনজি |
দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলার অনেক পুরানো ঐতিহ্য। চতুর্দশ শতকে ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় এসে সোনারগাঁয়ে নির্মিত কাঠের জাহাজে ভ্রমণ করেছিলেন। ইউরোপীয় পর্যটক সিজার ফ্রেডরিকের মতে পঞ্চদশ শতকে চট্টগ্রাম ছিল সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের মূল কেন্দ্র। সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সুলতানের নৌবহর নির্মিত হয় চট্টগ্রামে। দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ বাংলায় শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের ভিত্তি তৈরি করে।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল শাসনের সময় মুঘল নৌবাহিনীর অধিকাংশ জাহাজ বাংলায় তৈরি হয়। মুঘলদের বাংলা দখলের পর জলদস্যুতা রুখতে তারা একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সে লক্ষ্যে তারা ভোলা, সন্দ্বীপ, নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল, খিজিরপুর, ঢাকা ইত্যাদি কৌশলগত জায়গায় নৌঘাঁটি স্থাপন করে। কিন্তু মুঘলরা সমুদ্রে দুর্বল হওয়ায় তারা বার্মিজ জলদস্যুদের থামাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে মুঘলরা শায়েস্তা খানকে জলদস্যু দমনের দায়িত্ব প্রদান করে। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় শায়েস্তা খান প্রায় ৩০০ নৌকা ও জাহাজ সংগ্রহ করেন। পরে তিনি বার্মিজ জলদস্যুদের দমন করেন এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং আরাকান বার্মিজদের থেকে ছিনিয়ে আনেন।
ব্রিটিশ শাসনামলে তারা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে। তবে তাদের মূল মনোযোগ ছিল পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে কেন্দ্রীভূত। বাংলাসহ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে কোন নৌ-অবকাঠামো নির্মাণের কোন উদ্যোগ ব্রিটিশরা গ্রহণ করে নি।
১৮০৫ সালের বিখ্যাত ট্রাফালগার যুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবাহিনী বাংলায় তৈরি জাহাজ ব্যবহার করে। ১৮১৮ সালে জার্মান নৌবাহিনীর কাঠ-নির্মিত ফ্রিগেট ডাচল্যান্ড চট্টগ্রামে তৈরি হয়।
পাকিস্তান সৃষ্টির পরও পূর্ব পাকিস্তানে নৌ-অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি গুরত্ব পায় নি। ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধের পর নৌবাহিনীর প্রতিকী উপস্থিতি হিসেবে প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে চারটি টহল জাহাজ মোতায়েন করা হয়। ১৯৭০ সালে খুলনায় সীমিত অবকাঠামো নিয়ে পিএনএস তিতুমীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই বছর চট্টগ্রামে নৌ কমান্ডারকে কমোডোর কমান্ডিং চিটাগাং এ উন্নীত করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে কোন অবকাঠামো বা সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বা আধুনিকায়ন করা হয় নি। ১৯৭১ সালের শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে নৌশক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে নৃশংস সামরিক আক্রমণ শুরু করে যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান নৌবাহিনীর ফ্রান্সে নির্মাণাধীন ডুবোজাহাজ পিএনএস ম্যাংরো থেকে ৮ জন বাঙালি নাবিক বিদ্রোহ করেন এবং বাংলাদেশে ফিরে নৌবাহিনীর ভিত্তি তৈরি করেন। পরবর্তীতে আরও বিদ্রোহী নৌসেনা তাদের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে সেক্টর কমান্ডার্স কনফারেন্সে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে নৌবাহিনীর জনবল ছিল ৪৫ জন আর সরঞ্জাম ছিল ভারত থেকে পাওয়া দুটি টহল জাহাজ পদ্মা ও পলাশ।[9] এই জাহাজগুলো পাকিস্তানি নৌবহরের উপর আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত হত। যুদ্ধের সময় ১০ নম্বর সেক্টর ছিল নৌ সেক্টর। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে নৌকমান্ডোরা সারা দেশেই অভিযান চালিয়েছেন। অন্য সেক্টরে অভিযান চালানোর সময় সেক্টর কমান্ডের সাথে সমন্বয় করে নেয়া হত।[10]
যুদ্ধের সময় নৌসেনাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সামুদ্রিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করা এবং সকল সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলা। সে লক্ষে তারা সারা দেশব্যাপী ৪৫টি প্রথাগত ও অপ্রথাগত আক্রমণ চালান। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর নৌযোদ্ধারা অপারেশন জ্যাকপট নামক একটি কমান্ডো অভিযান চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে। এই অভিযানে মোট ২৬টি জাহাজ ধ্বংস হয় ও আরও বহু জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জাহাজের মধ্যে রয়েছে এমভি হরমুজ, এমভি আল আব্বাস, ওরিয়েন্ট বার্জ নং-৬ এবং এসএস লাইটিং এর মত জাহাজ যারা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করছিল। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নৌকমান্ডোরা সারাদেশে অসংখ্য সফল অভিযান পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভুলবশত আক্রমণে পদ্মা ও পলাশ ডুবে যায়। অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধকালে নৌবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিল ৩৩৪ জন সদস্য যাদের মধ্য ২২ জন যুদ্ধে শহীদ হন।[11]
স্বাধীনতার পর পর নৌবাহিনীর সম্পদ বলতে ছিল চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর পরিত্যক্ত ঘাঁটি সাবেক পিএনএস বখতিয়ার, খুলনায় বিপর্যস্ত ঘাঁটি সাবেক পিএনএস তিতুমীর এবং ঢাকায় একটি পরিবহন শিবির। সে সময় নৌবাহিনীর কোন জাহাজ, ঘাঁটি, স্থায়ী আবাস, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, সাংগঠনিক কাঠামো কিছুই ছিল না। স্বাধীনতার পর পাকিস্তান হতে পলায়ন করা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার নুরুল হককে ঢাকায় এনে ক্যাপ্টেন পদে আসীন করা হয় ও নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৮০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। নৌবাহিনীর প্রথম সদর দপ্তর ছিল সেনাসদরের এক উইং এ। পরবর্তীতে তা পুরাতন বিমান সদরের এক উইং এ স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে বর্তমান বানৌজা হাজী মহসিন এর জায়গায় নৌসদর স্থাপন করা হয়।
১৯৭২ সালে নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মত ১০০ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হয় যাদের অধিকাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে। ১৯৭২ সালে সংস্থাপন বিভাগের দুইটি জলযানকে নদীভিত্তিক টহল জাহাজে রূপান্তরিত করে নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। ১৯৭২ সালে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি উপকূলীয় টহল জাহাজ উপহার দেয় যা বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বানৌজা পদ্মা নামে সংযুক্ত করা হয়। এই জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের মত সমুদ্রে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বন্ধুসুলভ দেশ থেকে আরও টহল জাহাজ যুক্ত করা হয়। ১৯৭৪ সালে একটি কানাডিয়ান কার্গো জাহাজকে সংস্কার করে বানৌজা শহীদ রুহুল আমিন নামে যুক্ত করা হয় এবং জাহাজটিকে নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ করা হয়। এটি ছিল নৌবাহিনীর প্রথম জাহাজ যা গভীর সমুদ্রে চলাচল করতে সক্ষম। ১৯৭৪ সালের মধ্যে নৌবাহিনীর ঘাঁটি ঈসা খান, হাজী মহসিন ও তিতুমীর স্থাপিত হয়।
১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জলদিয়ায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর ক্যাম্পাসে নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়। নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড পাচটি নদিভিত্তিক টহল জাহাজ নির্মাণ করে যা ছিল নৌবাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্থায়ী সদর দপ্তর বনানীর বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৭৬ সালে সাবেক ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ফ্রিগেট বানৌজা ওমর ফারুক যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর আরও দুইটি ফ্রিগেট যথাক্রমে বানৌজা আলী হায়দার ও বানৌজা আবু বকর হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়।[12] ১৯৮০ সালে কিছু মিসাইল বোট ক্রয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীকে পতেঙ্গার বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৯ সালে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয় প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রবাহি ফ্রিগেট বানৌজা ওসমান। পরবর্তীকালে টহল জাহাজ, দ্রুত আক্রমণকারী জাহাজ, মাইনসুইপার সহ নানা ধরনের জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়।
২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বপ্রথম ১৬ জন নারী ক্যাডেট হিসেবে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন; বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ ছিলো এই প্রথম।[13]
২০০৮ সালের মায়ানমার সরকার দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি দাইয়ুকে সেইন্ট মারটিন্স দ্বীপের ৫০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়। ২ নভেম্বর ২০০৮, দাইয়ু বিতর্কিত সীমায় অনুসন্ধান রিগ বসায়।[14] বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারকে অনুসন্ধান বন্ধ করার অনুরোধ জানায় কিন্তু মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোন সারা পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সেখানে ফ্রিগেট বানৌজা আবু বকর, টহল জাহাজ বানৌজা মধুমতি এবং ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী জাহাজ বানৌজা নির্ভয়কে মোতায়েন করে।[15] পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মায়ানমার ও দুইটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়।[16] পরবর্তীকালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয় এবং ৭ নভেম্বর মায়ানমার রিগ সরিয়ে নেয়।[17]
২০১১ সালে নৌবাহিনীর একটি উদ্ধার ও চিকিৎসক দলকে টোকিও ভূমিকম্প ও সুনামির পর জাপানে মোতায়েন করা হয়।[18] ২০১৩ সালে টাইফুন হাইয়ান এ আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় ১০ লক্ষ ডলার মূল্যের মানবিক সহায়তা সরঞ্জাম ও নৌবাহিনীর চিকিৎসক দল সহ বানৌজা সমুদ্র জয়কে ফিলিপাইনে মোতায়েন করা হয়।[19]
২০১৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ এর অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে ফ্রিগেট বানৌজা উমর ফারুক এবং সামুদ্রিক টহল বিমান ডরনিয়ার ডিও-২২৮এনজি মোতায়েনের মধ্য দিয়ে। বিমানটি ছিল একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০এআর মডেলের বিমান যা ১৪টি দেশের ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে চীনে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে বানৌজা উমর ফারুককে বানৌজা সমুদ্র জয় দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে একটি অস্ট্রেলীয় কোম্পানি বঙ্গোপসাগর এ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দাবি করলে অনুসন্ধান অভিযান পুনরায় শুরু হয়।[20]
২০১৪ সালে মালদ্বীপের পানি সংকটের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ছিল প্রথম যারা মানবিক সহায়তা ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। সেসময় বানৌজা সমুদ্র জয়কে ১০০ টন পানির বোতল সহ মোতায়েন করা হয়।[21]
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ নামক একটি দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বঙ্গোপসাগরের ভূকৌশলগত গুরুত্ব অনুধাবন করে নৌবাহিনীকে এই পরিকল্পনায় সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। পরিকল্পনায় নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করার কথা বলা হয়।[22] পটুয়াখালী জেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে নৌবাহিনীর জন্য বানৌজা শের-এ-বাংলা নামক ঘাঁটি স্থাপনের কাজ চলছে। এটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি যেখানে বিমান উড্ডয়ন ও ডুবোজাহাজ ভেড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে।[23] একই সাথে কক্সবাজারের পেকুয়ায় বানৌজা শেখ হাসিনা নামক ডুবোজাহাজ ঘাঁটির কাজও চলমান রয়েছে।[24]
জাহাজবহর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী চীন থেকে দুইটি ব্যবহৃত টাইপ ০৫৩এইচ২ (জিয়াংহু ক্লাস) ফ্রিগেট ক্রয় করে।[25] যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ড নৌবাহিনীকে ২০১৩[26] ও ২০১৫[27] সালে উপহার হিসেবে দুইটি হ্যামিল্টন ক্লাস কাটার প্রদান করে যা নৌবাহিনী বর্তমানে টহল ফ্রিগেট হিসেবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্য নৌবাহিনী থেকে ২০১১ সালে কেনা হয়েছে দুইটি ব্যবহৃত টহল জাহাজ যা সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী কর্ভেট হিসেবে। নৌবাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে পুরাতন জরিপ ও গবেষণা জাহাজও ক্রয় করেছে।[28] ২০১৬ সালে চীন থেকে দুইটি টাইপ ০৫৬ কর্ভেট কেনা হয়েছে এবং বর্তমানে আরও দুইটি নির্মাণাধীন রয়েছে।[29] ২০১৩ সালে চীন থেকে কেনা হয় দুইটি দুর্জয় ক্লাস বৃহৎ টহল জাহাজ।[30] ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দুইটি দুর্জয় ক্লাসের জাহাজ খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে এবং ২০১৭ সালে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে।[31]
২০১১ সালের ১৪ জুলাই দুইটি এডব্লিউ ১০৯ হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উড্ডয়ন শাখার উদ্বোধন হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে দুইটি ডরনিয়ার ডিও-২২৮এনজি সামুদ্রিক টহল বিমান উড্ডয়ন শাখায় যুক্ত হয়।[32]
২০১৬ সালের ৩০ মে প্রথমবারের মতো ৪৪ জন নারী নাবিক নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছিলো।[33][34]
২০১৭ সালে চীন থেকে দুইটি পুরাতন টাইপ ০৩৫জি (মিং ক্লাস) ডুবোজাহাজ সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সমুদ্রগর্ভে অপারেশনের সক্ষমতা অর্জন করে।[35][36] ডুবোজাহাজ সংযোজনের মাধ্যমে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘ মিশনে যুক্ত হয়।[37] ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মত স্বতন্ত্র নৌবাহিনী ইউনিট মোতায়েন করা হয় প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর ইরাক-কুয়েত সীমান্তের জলপথের নিরাপত্তায়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সুদানে একটি ফোর্স রিভারাইন ইউনিট (এফআরইউ) নামক নদীভিত্তিক টহল দল পাঠানো হয়।[38][39] এছাড়াও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন মিশনেও নৌসদস্যরা অংশ নিয়ে থাকেন। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী লেবাননে জাতিসংঘ মিশন ইউনিফিল এর আওতায় ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে আসছে। বর্তমানে এই মিশনে একটি ক্যাসল ক্লাস ক্ষেপণাস্ত্রবাহী কর্ভেট মোতায়েন রয়েছে।[40]
বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়মিতভাবে অন্যান্য নৌবাহিনীর সাথে মহড়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে যা মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন ও যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী এক্সারসাইজ সী ব্যাট নামক বার্ষিক সমুদ্র মহড়ায় অংশ নিত। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর বিশেষ বাহিনী এক্সারসাইজ টাইগার শার্ক নামক মহড়ায় অংশ নিয়ে আসছে। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর মধ্যে কোঅপারেশন অ্যাফ্লোট রেডিনেস অ্যান্ড ট্রেনিং (কারাত) নামক বাৎসরিক সামুদ্রিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।[41] ভারতীয় নৌবাহিনী আয়োজিত দ্বিবার্ষিক মহড়া মিলান এও নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ নিয়মিতভাবে অংশ নিয়ে থাকে।[42] ২০০৯ সাল থেকে আরব সাগরে পাকিস্তান নৌবাহিনী আয়োজিত দ্বিবার্ষিক মহড়া আমান এ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্রিগেট নিয়ে অংশগ্রহণ করে আসছে।[43] নৌবাহিনী কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত সংকট মোকাবিলা অনুশীলন মহড়া এক্সারসাইজ ফেরোশাস ফ্যালকন এও অংশ নিয়ে থাকে।[44][45] বানৌজা আবু বকর ২০১৪ সালে চীনের শ্যানডং প্রদেশের কুইংদাওতে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট প্যাসিফিক নেভাল সিম্পোজিয়াম (ডব্লিউপিএনএস) এ অংশগ্রহণ করে।[46] এছাড়া নৌবাহিনী ২০১৫ সাল থেকে মালেশিয়ায় অনুষ্ঠিত বহুজাতিক প্রদর্শনী মহড়া লাংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশন (লিমা) এ অংশগ্রহণ করে থাকে।[47] ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরীয় ফোরামের ব্যানারে বহুজাতিক সমুদ্র মহড়া ইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসআরইএক্স) আয়োজন করে। এটি ছিল নৌবাহিনীর আয়োজিত প্রথম বহুজাতিক মহড়া।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হচ্ছেন একজন চার তারকা অ্যাডমিরাল।[48] নৌপ্রধান নৌবাহিনীর সকল যুদ্ধকালীন এবং শান্তিকালীন সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। নৌবাহিনী সদর দপ্তরের চারটি শাখা রয়েছে: অপারেশন্স(ও), পার্সোনেল (পি), ম্যাটেরিয়াল (এম) এবং লজিস্টিকস (লগ)। প্রত্যেক শাখার প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন সহকারী নৌবাহিনী প্রধান। প্রত্যেক সহকারী নৌপ্রধানের অধীনে রয়েছে একাধিক পরিদপ্তর যার পরিচালক হিসেবে থাকেন একজন কমোডোর বা ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কর্মকর্তা। প্রত্যেক পরিচালকের অধিনে থাকেন সহকারী পরিচালক এবং স্টাফ অফিসার পদের কর্মকর্তাগণ। নৌবাহিনীতে নয়টি এলাকাভিত্তিক কমান্ড রয়েছে যার নেতৃত্বে আছেন একজন রিয়ার অ্যাডমিরাল বা কমোডোর পদমর্যাদার কর্মকর্তা।[49][50]
গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কর্মকর্তা:
দায়িত্ব | পদবি এবং নাম |
---|---|
কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ এলাকা (কমচিট) | রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী |
কমান্ডার বিএন ফ্লিট (কমব্যান) | রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক |
কমান্ডার খুলনা নেভাল এরিয়া (কমখুল) | কমোডোর এম শামসুল আলম |
কমোডোর সুপারইন্টেন্ডেন্ট ডকইয়ার্ড (সিএসডি) | কমোডোর মোহাম্মদ মঈনুল হক |
কমান্ডার ঢাকা নৌ অঞ্চল (কমঢাকা) | কমোডোর সেলিম রেজা হারুন |
কমোডোর নেভাল অ্যাভিয়েশন (কমনাভ) | কমোডোর মোহাম্মদ নাজমুল হাসান |
কমোডর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড ডাইভিং স্যালভেজে কমান্ড (কমসোয়াডস) | কমোডোর শাহ আসলাম পারভেজ |
কমোডোর নৌবাহিনী সাবমেরিন (কমসাব) | কমোডোর কামরুল হক চৌধুরী |
কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট) | কমোডোর এস এম মনিরুজ্জামান |
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ৬টি প্রশাসনিক শাখা রয়েছে:[51]
সমমানের ন্যাটো পদ | ডব্লিউও-৩ | ডব্লিউও-২ | ডব্লিউও-১ | ||||
বাংলাদেশ | |||||||
মাস্টার চিফ পেটি অফিসার | সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার | চিফ পেটি অফিসার |
সমমানের ন্যাটো পদ | ওআর-৬ | ওআর-৪ | ওআর-৩ | ওআর-১ | |||||
বাংলাদেশ | |||||||||
পেটি অফিসার | লিডিং সীম্যান | এবল সীম্যান | অর্ডিনারি সীম্যান |
২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে রয়েছে ৫টি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেট,[52] দুইটি টহল ফ্রিগেট, ৬টি কর্ভেট, ৩৮টি বিভিন্ন ধরনের ছোট যুদ্ধজাহাজ এবং ৩০টি সহায়ক যুদ্ধজাহাজ। ডুবোজাহাজ শাখায় রয়েছে দুইটি ডিজেল ইলেক্ট্রিক আক্রমণকারী ডুবোজাহাজ। নৌবাহিনীর উড্ডয়ন শাখার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার ও স্থির ডানার বিমান।[53] পাশাপাশি নৌবাহিনীর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ (সোয়াডস) নামে একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
১২ মার্চ ২০১৭ দুইটি টাইপ ০৩৫ (মিং ক্লাস) ডুবোজাহাজ সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ডুবোজাহাজ যুগে প্রবেশ করে।[54][55]
ক্লাস | ধরন | সংখ্যা | নোট |
---|---|---|---|
টাইপ ০৩৫ (মিং ক্লাস) | ডিজেল ইলেক্ট্রিক আক্রমণকারী ডুবোজাহাজ | ২ | ডুবোজাহাজ গুলো ৫৭ জন নাবিক এবং ৮টি টর্পেডো বহন করে। পাশাপাশি ৩২টি সামুদ্রিক মাইনও বহন করতে পারে। |
নাম | উৎস | ধরন | সংখ্যা | নোট |
---|---|---|---|---|
এডব্লিউ ১০৯ | ইতালি | অনুসন্ধান ও উদ্ধার হেলিকপ্টার | ২ | [56] |
ডরনিয়ার ডিও ২২৮ এনজি | জার্মানি | সামুদ্রিক টহল বিমান | ৪ | [56] |
নাম | ধরন | পাল্লা | উৎস | নোট |
---|---|---|---|---|
অটোম্যাট এমকে২ ব্লক ৪ | জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র | ২২০ কিমি | ইতালি | |
সি ৮০২এ[57] | জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র | ১৮০ কিমি | গণচীন | |
সি ৭০৪ | জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র | ৩৫ কিমি | গণচীন | |
এফএম ৯০ | বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র | ১৫ কিমি | গণচীন | |
এফএল ৩০০০এন | বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র | ১০ কিমি | গণচীন | |
কিউডব্লিউ-২ | ম্যানপ্যাডস | ৪ কিমি | গণচীন | |
এফএন-১৬ | ম্যানপ্যাডস | ৬ কিমি | বাংলাদেশ | |
এ২৪৪ এস | টর্পেডো | ১৩.৫ কিমি | ইতালি | |
ইটি ৫২সি | টর্পেডো | ৯.৫ কিমি | গণচীন | |
ইটি ৪০ | টর্পেডো | ৩০ কিমি | গণচীন |
নাম | ধরন | ক্যালিবার | উৎস | নোট |
---|---|---|---|---|
টাইপ ৯২ | আধা স্বয়ংক্রিয় পিস্তল | ৯x১৯ মিমি | গণচীন | |
টাইপ ৫৪ | আধা স্বয়ংক্রিয় পিস্তল | ৭.৬২x২৫ মিমি | গণচীন | বিশেষ বাহিনী ব্যবহৃত |
সিগ সাউয়ার পি২২৬/২২৮/২২৯ | আধা স্বয়ংক্রিয় পিস্তল | ৯×১৯ মিমি | জার্মানি | |
টাইপ ৫৬ | স্বয়ংক্রিয় রাইফেল | ৭.৬২×৩৯ মিমি | বাংলাদেশ গণচীন | বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় নির্মিত। |
বিডি-০৮ | স্বয়ংক্রিয় রাইফেল | ৭.৬২×৩৯ মিমি | বাংলাদেশ | |
এম৪এ১ | কারবাইন | ৫.৫৬×৪৫ মিমি | যুক্তরাষ্ট্র | সোয়াডস ব্যবহৃত। |
দাইয়ু কে ২সি | স্বয়ংক্রিয় রাইফেল | ৫.৫৬×৪৫ মিমি | দক্ষিণ কোরিয়া | সোয়াডস ব্যবহৃত। |
এম ২৪ | স্নাইপার রাইফেল | ৭.৬২×৫১ মিমি | যুক্তরাষ্ট্র | সোয়াডস ব্যবহৃত। |
হেকলার অ্যান্ড কচ এমপি ৫ | সাবমেশিন গান | ৯×১৯ মিমি | জার্মানি | |
দাইয়ু কে ৭ | সাবমেশিন গান | ৯×১৯ মিমি | দক্ষিণ কোরিয়া | |
ডিএসএইচকে | ভারি মেশিন গান | ১২.৭×১০৮ মিমি | রাশিয়া |
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে ফোর্সেস গোল ২০৩০ নামক একটি দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।[58] এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সব ধরনের সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।[58] বাংলাদেশ নৌবাহিনী পটুয়াখালী জেলার রাবনাবাদে বানৌজা শের-এ-বাংলা নামক একটি ঘাঁটি স্থাপন করছে যা হবে দেশের সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি। এই ঘাঁটিতে বিমান উড্ডয়ন এবং ডুবোজাহাজ ভিড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে।[23] এ ছাড়াও কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় বানৌজা শেখ হাসিনা নামক একটি ডুবোজাহাজ ঘাঁটির নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে।[24] একই সাথে ঢাকার খিলক্ষেতে বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটির নির্মাণ কাজ চলছে।[59] চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা সহ ফ্লিট হেডকোয়ার্টার্স এর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।[60]
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০১৫ সালে চীনের সাথে দুইটি টাইপ ০৫৬ কর্ভেট এর ক্রয়চুক্তি করে যা বর্তমানে পানিতে ভাসানো হয়েছে এবং ২০১৮ সালের শেষভাগে নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে।[29] খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর জন্য দুইটি জরিপ ও গবেষণা জাহাজ নির্মাণ করছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দুইটি উপকূলীয় জরিপ জাহাজ ক্রয়ের দরপত্র প্রকাশিত হয়। এই জাহাজদুটি কোন বাংলাদেশি শিপইয়ার্ড এ নির্মিত হবে।[61]
২০১৭ সালের ২৭ মার্চ দুইটি ডরনিয়ার ডিও-২২৮এনজি সামুদ্রিক টহল বিমান ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছর নৌবাহিনী দুইটি এডব্লিউ-১৫৯ ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী হেলিকপ্টার ক্রয়ের চুক্তিও সম্পন্ন করে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আরও দুইটি ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন হেলিকপ্টার ক্রয়ের দরপত্র প্রকাশিত হয়েছে।[62]
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে নৌবাহিনী হেলিকপ্টার উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি এক্স-ব্যান্ড নৌচালনা রাডার ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে।[63] একই সময়ে বানৌজা বঙ্গবন্ধুতে থাকা দুইটি ৪০ মিমি ফাস্ট ফর্টি প্রতিস্থাপনের জন্যও দরপত্র প্রকাশ করে।[64]
২০১৮ সালের মে মাসে নৌবাহিনী চীন থেকে দুইটি ব্যবহৃত টাইপ ০৫৩এইচ৩ ফ্রিগেট ক্রয়ের দরপত্র প্রকাশ করে।[65]
২০১৭ সালের জুলাই মাসে সংসদে প্রতিরক্ষা কার্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, পেকুয়ায় ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণের জন্য ৩৩৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঘাঁটিটি নির্মাণের জন্য চীনের সাথে সমঝোতা স্বারক সাক্ষরিত হয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য চারটি মাইনসুইপার এবং একটি পালযুক্ত প্রশিক্ষণ জাহাজ ক্রয় করা হবে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি আরও জানান যে চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে বিদেশি জাহাজ নির্মাণ সংস্থার সহযোগিতায় ছয়টি ফ্রিগেট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকার দেশেই ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত্রু-মিত্র চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।[66]
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে মন্ত্রী আনিসুল হক সংসদকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প সমন্ধে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান নৌবাহিনীর জন্য দুইটি সামুদ্রিক টহল বিমান এবং দুইটি হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নৌবাহিনীর জন্য দুইটি ফ্রিগেট, আরও টহল জাহাজ, ডুবোজাহাজ উদ্ধারকারী জাহাজ, রসদবাহী জাহাজ, টাগবোট, এবং ভাসমান ডক ক্রয়ের কার্যক্রম চলছে।[67]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.