Loading AI tools
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী রাষ্ট্রসমূহ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ[lower-alpha 1] হল ১৯৭১ সালে সংগঠিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৈপ্লবিক স্বাধীনতা সংগ্রাম যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।[3] স্বাধীনতা সংগ্রামটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের এবং যুদ্ধটি নয় মাস স্থায়ী হয়েছিল। যুদ্ধটির মাধ্যমে বিশ্ব বিশাল এক নির্মমতার স্বাক্ষী হয়, প্রায় এক কোটি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হন।[4]
২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি বেসামরিক জনতা, শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী এবং সামরিক বাহিনীতে কর্মরত লোকজনের উপর অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নৃশংসতা চালায়, যারা পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের ১ম গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে মেনে নিতে দাবি জানায়, যেখানে পূর্বাঞ্চলীয় দল জয়ী হয়েছে, বা পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে আলাদা হিসেবে মেনে নিতে স্বীকৃতি জানায়।
বাঙ্গালী রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর অফিসার অপারেশন সার্চলাইটের জবাব হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাঙ্গালী সামরিক বাহিনীর সদস্য, আধাসামরিক এবং সাধারণ জনতা মিলে মুক্তিবাহিনী গঠন করে, যারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, ধর্মীয় মৌলবাদী[5][6] লোকের (রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস) মদদে, পর্যায়ক্রমিক গণহত্যা এবং বাঙ্গালী বেসামরিক নাগরিকদের উপর নৃশংসতায় ঝাঁপিয়ে পরে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর। [7][8][9][10][11] ভারতের রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।
ভারত ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে, যখন পাকিস্তান ভারতের উত্তরাঞ্চলে বিমান আক্রমণ চালায়। দ্বি যুদ্ধ রণক্ষেত্রে আচ্ছন্ন হয়ে, পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়ে। ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ এবং ভারতের মিত্র বাহিনী পাকিস্তানকে পরাজিত করে। ফলে এই আত্মসমর্পণ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুদ্ধবন্দীর সাক্ষী হয়।
জাতিসংঘ যদিও অপারেশন সার্চলাইট এর সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্গনের জন্য নিন্দা প্রস্তাব আনে, তবুও তারা যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বে রাজনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে অসমর্থ হয়েছিল।
১৯৭১ সালের মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলাতে রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক সাহায্যের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করে। বাঙালীদের উপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। যুদ্ধের দিকে বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ভারতের পক্ষে সামরিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ, যুদ্ধের পরে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়।[12] এমনকি, পাকিস্তানের পরাজয়ের পর, সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের স্বীকৃতিতে তৎক্ষণাৎ ভূমিকা রাখে।
যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণে, পাকিস্তান নিশ্চিত পরাজয় দেখতে পায়, এবং জাতি সংঘের কাছে মধ্যস্ততার সুপারিশ করে এবং ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে যেতে চাপ দেয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিগ্রহ বিষয়ে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনার পর ৭ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ "তাৎক্ষণিক যুদ্ধ-বিরতি এবং সেনা প্রত্যাহার" অধ্যাদেশ জারি করে। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমর্থন জানায়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন এই অধ্যাদেশে দুইবার ভেটো দেয় এবং যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এই অধ্যাদেশ থেকে বিরত থাকে।
১২ই ডিসেম্বর, পাকিস্তান আসন্ন পরাজয় দেখে, নিরাপত্তা পরিষদকে পুনরায় উত্থাপন করতে জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ জানায়। পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং বৈদেশিক মন্ত্রী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, যুদ্ধ-বিরতির জন্য অধ্যাদেশ জারি করাতে নিউ ইয়র্ক সিটির দিকে দ্রুত অগ্রসর হন। পরিষদে চারদিন বিচারবিবেচনা চলে। এরই মধ্যে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হয়ে যায়, পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করতে হয়, এবং পদক্ষেপটি নিছক একাডেমিক রয়ে যায়। অধ্যাদেশে ব্যর্থতার জন্য ভুট্টো, হতাশ হয়ে পড়েন এবং জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তার জন্য, তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে এবং পরিষদ ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেয়।[12]
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৬ ডিসেম্বর বিশ্বে ভুটানই সর্বপ্রথম সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে (ভারত দ্বিতীয়)।[13][14][15][16] ভুটান ও ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দেয়, তবে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে ভুটান স্বীকৃতি দিয়ে তারবার্তা পাঠায়।[17] ১৯৭৪ সালের জুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুক-এর রাজ্যাভিষেকে যোগ দেয়ার জন্য ভুটান সফর করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক এবং সামরিক উভয় দিক থেকে পাকিস্তানকে[18] সহায়তা প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন তখনকার অবস্থাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করে সে অবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু পাকিস্তানের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে নিক্সন বঙ্গোপসাগরে[19] যুদ্ধবিমান বাহিত ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ প্রেরণ করেন। যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজটি ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর তাদের গন্তব্যে এসে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ অব নেশনস-এর সদস্যপদ গ্রহণ করে। একারণে (বাংলাদেশের স্বীকৃতি বিষয়ে) ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী পাকিস্তান কমনওয়েলথের সদস্যপদ ত্যাগ করে। পরে অবশ্য, ১৯৭৫ সালে পাকিস্তান পুনরায় সদস্যপদ গ্রহণ করে। পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। যদিও পাকিস্তান বাংলাদেশে দূতাবাস খুলে ১৯৭৬ সালে।[20]
দেশ[21] | স্বীকৃতিদানের তারিখ | |
---|---|---|
১ | ভুটান | ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১[17][22] |
২ | ভারত | ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১[17] |
৩ | পোল্যান্ড | ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৪ | বুলগেরিয়া | ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৫ | বার্মা | ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৬ | নেপাল | ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৭ | বার্বাডোস | ২০ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৮ | যুগোস্লাভিয়া | ২২ জানুয়ারি ১৯৭২ |
৯ | সোভিয়েত ইউনিয়ন | ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১০ | টোঙ্গা | ২৫ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১১ | চেকোস্লোভাকিয়া | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১২ | সাইপ্রাস | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১৩ | হাঙ্গেরি | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১৪ | অস্ট্রেলিয়া | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১৫ | ফিজি | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১৬ | নিউজিল্যান্ড | ২৬ জানুয়ারি ১৯৭২ |
১৭ | সেনেগাল | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
১৮ | যুক্তরাজ্য | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
১৯ | পশ্চিম জার্মানি | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২০ | ফিনল্যান্ড | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২১ | ডেনমার্ক | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২২ | সুইডেন | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৩ | নরওয়ে | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৪ | আইসল্যান্ড | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৫ | ইসরায়েল | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৬ | জাপান | ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৭ | লুক্সেমবুর্গ | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৮ | নেদারল্যান্ডস | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
২৯ | বেলজিয়াম | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩০ | আয়ারল্যান্ড | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩১ | ইতালি | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩২ | ফ্রান্স | ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩৩ | কানাডা | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩৪ | সিঙ্গাপুর | ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩৫ | মরিশাস | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
৩৬ | সৌদি আরব | ১৬ আগস্ট ১৯৭৫ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.