পূর্ব পাকিস্তান
বর্তমানে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পূর্ব পাকিস্তান (ইংরেজি: East Pakistan, উর্দু: مشرقی پاکستان Mas̱ẖriqī Pākistān আ-ধ্ব-ব: [məʃrɪqiː pɑːkɪst̪ɑːn]) ছিল ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের পূর্ব অঙ্গ যা ১৯৭১-এ স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের নাম ছিল পূর্ববঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে। তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বঙ্গ নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৪৭-১৯৭১ এই সময়কে পাকিস্তান আমল হিসাবে উল্লেখ করে থাকে।
পূর্ব পাকিস্তান مشرقی پاکستان | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৯৫৫–১৯৭১ | |||||||||
অবস্থা | পাকিস্তানের প্রাক্তন পূর্ব অংশ | ||||||||
রাজধানী | ঢাকা | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | বাংলা (সরকারি) ভাষা উর্দু ইংরেজি | ||||||||
ধর্ম | ইসলাম | ||||||||
সরকার | সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র (১৯৫৫–১৯৫৮) রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র (১৯৬০–১৯৬৯) সামরিক সরকার (১৯৬৯–১৯৭১) | ||||||||
প্রশাসক | |||||||||
• ১৯৬০–১৯৬২ | আজম খান | ||||||||
• ১৯৬২–১৯৬৯ | আবদুল মোনেম খান | ||||||||
• ১৯৬৯–১৯৭১ | সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান | ||||||||
• ১৯৭১ | আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী | ||||||||
মুখ্যমন্ত্রী | |||||||||
• ১৯৫৫–১৯৫৬, ১৯৫৮ | আবু হুসাইন সরকার | ||||||||
• ১৯৫৬–১৯৫৮ | আতাউর রহমান খান | ||||||||
গভর্নর | |||||||||
• ১৯৫৫–১৯৫৬ | আমিরউদ্দিন আহমেদ | ||||||||
• ১৯৫৬–১৯৫৮ | এ কে ফজলুল হক | ||||||||
• ১৯৫৮–১৯৬০ | জাকির হুসাইন | ||||||||
আইন-সভা | আইনপরিষদ | ||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | স্নায়ুযুদ্ধ | ||||||||
১৯৫৫ | |||||||||
২২ নভেম্বর ১৯৫৪ | |||||||||
২৬ মার্চ ১৯৭১ | |||||||||
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ | |||||||||
• বিলুপ্তি | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ | ||||||||
আয়তন | |||||||||
১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার (৫৬,৯৮০ বর্গমাইল) | |||||||||
মুদ্রা | পাকিস্তানি রুপি | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | বাংলাদেশ |
১৯৫০ সালে ভূমি সংস্কারের অধীনে ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয়।;[1] কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়।[2] পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের মনে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।
পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা 'কপ'-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দোলনের মাইলফলক। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে। ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে। ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকেন।