পীতজ্বর
ভাইরাসঘটিত রোগ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পীতজ্বর (ইংরেজি: Yellow fever) বা ইয়েলো ফিভার একটি ভাইরাসঘটিত রোগ।[3]
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), ও মাথাব্যথা।[3] লক্ষণগুলো সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়।[3]
কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো উন্নতি হওয়ার একদিনের মধ্যে পুনরায় জ্বর হতে পারে, পেটব্যথা শুরু হয় ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জন্ডিস হতে পারে ও শরীর হলুদ হয়ে যায়। এইজন্য এই রোগের নাম পীতজ্বর রাখা হয়েছে।[3] জন্ডিস হলে রোগীর রক্তক্ষরণ ও কিডনি ফেইলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে।[3]
যে ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় তা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস নামে পরিচিত। [3] Aedes aegypti প্রজাতির মশা এই ভাইরাসের বাহক।[3] এটি ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি আরএনএ ভাইরাস।[4] প্রাথমিক অবস্থায় অন্যান্য রোগ থেকে এটাকে পৃথক করা কঠিন।[3] এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রক্ত নমুনা নিয়ে পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন নামক পরীক্ষা করতে হয়।[5]
এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ টিকা বিদ্যমান।[3] টিকার পাশাপাশি বাহক মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করতে হবে।[3] যেসব এলাকায় পীতজ্বর হয় কিন্তু টিকার ব্যবস্থা নাই সেখানে মহামারী ঠেকানোর জন্য প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও টিকাদানের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।[3] উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হয়, সুনির্দিষ্ট কার্যকর কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই।[3][6]
প্রতিবছর দুই লক্ষ লোক পীতজ্বরে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ত্রিশ হাজার মৃত্যুবরণ করে।[3] প্রায় নব্বই শতাংশ রোগীই আফ্রিকার।[3][5] দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হলেও এশিয়াতে খুব একটা দেখা যায় না।[3][7] ১৯৮০ সাল থেকে পীতজ্বর রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।[3][8] এর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন, লোকজনের অধিক ভ্রমণ, শহরে বসবাসের প্রবণতা ও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দাস বাণিজ্যের ফলে এই রোগ আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে যায়।[1] সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে বেশ কয়েকবার মহামারী দেখা দেয়।[1] অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পীতজ্বরকে অন্যতম ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হত।[1] ১৯২৭ সালে সকল ভাইরাসের মধ্যে ইয়েলো ফিভার ভাইরাসকেই প্রথমবারের মতো পৃথক করা সম্ভব হয়েছিল।[4][9]