Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে ও ধর্মে নিরামিষভোজন তত্ত্ব ও অনুশীলন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নিরামিষভোজন মতবাদ এর মূল খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন ভারত এর হিন্দু ধর্ম (সনাতন) এর অনুসারী এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের কিছু জনগোষ্ঠীর মধ্যে। নিরামিষভোজন হচ্ছে স্বেচ্ছায় কোনো প্রকার মাছ, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, প্রাণীর মাংস (সামুদ্রিক প্রাণীসহ) না খাওয়ার তত্ত্ব, অভ্যাস এবং অনুশীলন। তবে প্রাণীজাত দ্রব্য যেমন: দুধ, অথবা দুগ্ধজাতীয় খাবার ও উদ্ভিজ্জ খাবার যেমন: বাদাম, ছোলা, মুগ ডাল, বুটের ডাল প্রভৃতি নিরামিষ খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত ।[1] নিরামিষভোজনের ধারণা ও অনুশীলনের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতে[2] এবং প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার দক্ষিণাঞ্চলীয় ইতালি ও গ্রিসে কিছু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে।[3] উভয়ক্ষেত্রে খাদ্যগ্রহণ ধারণা হলো– প্রাণীর প্রতি অহিংস মতবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত, ভারতে অহিংসা নামে পরিচিত [4]। এই তত্ত্ব ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং দার্শনিকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হত। ৪র্থ-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাবে নিরামিষভোজন প্রায় হারিয়ে যায়[5]। তবে, মধ্যযুগীয় ইউরোপের কিছু সাধু বা সন্যাসী মাংস না খাওয়ার আদেশ দেন কিন্তু মাছ খাওয়ায় কোনো নিষেধ ছিলো না[6]। এসকল সাধুরা নিরামিষভোজী ছিলেন না। রেনেসাঁকালীন সময়ে ইউরোপে নিরামিষভোজনবাদ ফিরে আসে[7] এবং ১৯-২০ শতকে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাচীন বৈদিক যুগে তাদের আইনানুসারে নিরামিষ ভোজনের অনুমতি ছিল[8]। আইনশাস্ত্র মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, “মাংস খাওয়ায় কোন পাপ নেই…. কিন্তু বিরত থাকা নিয়ে আসবে বড় পুরস্কার”।[9]
৫ম শতকের প্রারম্ভে বিখ্যাত চীনা পর্যটক ফাহিয়েন ভারতের মগধ রাজ্য ভ্রমণকালে দেখতে পান সেখানকার জনগণ প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকে। তারা শূকর বা হাঁস-মুরগি পালে না এবং কোন প্রাণী বিক্রি করে না।[10]
নিরামিষভোজন সকল প্রকার যোগীদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো (এবং আছে)। একজন ভক্ত বিষ্ণু অথবা কৃষ্ণের কাছে খাওয়ার পূর্বে তার সকল খাবার প্রসাদ হিসেবে নিবেদন করে। [11] এবং শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার প্রসাদী হিসেবে গণ্য হবে।[12]
জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মে ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রথম থেকেই প্রাণীর প্রতি অহিংসা নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। জৈন ধর্ম, সম্ভবত অনেক পুরাতন, এই ব্যাপারে কঠোর ছিলো। সর্বপ্রাচীন তীর্থংকর পর্ষভ যিনি
৮ম-৭ম খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিলেন, তিনি অহিংসার কথা বলেন। ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহাবীরের সময়ে জৈন সম্প্রদায় এটা পালন করতো। ৪র্থ থেকে ১ম খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় দার্শনিক ভাল্লুবার, যাকে আধুনিক গবেষকগণ জৈন ধর্মানুসারী মনে করেন, তার লেখা তিরুক্ু[13] রালে নিরামিষভোজনের উপর বইঅধ্যায় লিখেছেন যার মধ্যে আছে জঅপ্রাণী খাবার (অধ্যাযঅহিংস,খাদ্য না করা (অধ্যায় ৩২) এবং হত্যা না করা (অধ্যায় ৩৩) ইত্যাদি।
তবে সবাই প্রাণীহত্যার বিপক্ষে বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকার পক্ষে ছিলো না। মাংস ভোজন নিয়ে সেখানে দুটি মত আছে। একদলের মতে বুদ্ধ এবং তার অনুগামীগণ মাংস ভোজন করতেন যদিনা আয়োজক বা ভিক্ষাদাতাগণ তাদের জন্যে বিশেষভাবে প্রাণীটি হত্যা করে না থাকে। অন্যদলের মতে বুদ্ধ এবং তার সংঘ কঠিনভাবে নিরামিষভোজী ছিলেন এবং মাংস গ্রহণের রীতি বৌদ্ধদের মধ্যে পরে চালু হয়েছে ।
পিথাগোরাস (৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ -৪৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) একজন নিরামিষভোজী ছিলেন। তিনি পিথাগোরীয় নিরামিষভোজনবাদের অনুপ্রেরণা ছিলেন।
অল্প কিছু ইহুদি পণ্ডিত ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি করেন তাওরাতে নিরামিষভোজনের পক্ষে বক্তব্য আছে।
গ্রীসে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসকে বলা হতো আত্মাযুক্ত বস্তু থেকে বিরত থাকা। বিভিন্ন দার্শনিকের শিষ্য অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ছোট ছোট দল এটা পালন করতো। প্রাক ইউরোপীয় /এশিয়া মাইনরের নিরামিষবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় হোমারের ওডেসিতে এবং হেরোডটাসের বর্ণনায়। হেরোডটাস লটোফোগিদের (পদ্ম-খাগী) উল্লেখ করেছেন যারা উত্তর আফ্রিকা উপকূলের আদিবাসী। হেরোডটাসের বর্ণনানুসারে তারা শুধু মাত্র পদ্মের ফল খেয়ে বেঁচে থাকতো। দিদোরাস সিকুলাস ইথিওপীয় নিরামিষভোজী গোত্রের উল্লেখ করেছেন। গ্রিসে নিরামিষভোজন তত্ত্ব এবং অনুশীলনের নির্ভরযোগ্য প্রাক উদাহরণ পাওয়া যায় ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.