Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নাসির ইউসুফ ( আরবি: الناصر يوسف ; ১২২৮-১২৬০) বা মালিকুন নাসির সালাহুদ্দিন ইউসুফ ইবনে আজিজ ইবনে যাহির ইবনে সালাহুদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব ইবনে শাজি (الملك الناصر صلاح الدين يوسف بن الظاهر بن العزيز بن صلاح الدين يوسف بن أيوب بن شاذى) আলেপ্পো (১২৩৬-১২৬০) থেকে সিরিয়ার আইয়ুবী আমির এবং ১২৫০ থেকে ১২৬০ সালে মঙ্গোলদের দ্বারা আলেপ্পোর পতন হওয়া পর্যন্ত আইয়ুবী সাম্রাজ্যের সুলতান ছিলেন।
নাসির ইউসুফ | |||||
---|---|---|---|---|---|
মালিকুন নাসির | |||||
দামেস্কের আমির | |||||
রাজত্ব | ১২৫০ – ১২৬০ | ||||
পূর্বসূরি | মুয়াযযাম তুরানশাহ | ||||
উত্তরসূরি | আমিরাত বিলুপ্ত | ||||
জন্ম | ১২২৮ | ||||
মৃত্যু | ১২৬০ | ||||
বংশধর | আজিজ | ||||
| |||||
পিতা | আজিজ মুহাম্মদ | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
নাসির ইউসুফ ছিলেন সালাহউদ্দিনের প্রপৌত্র। তিনি তার পিতা আজিজ মুহাম্মদের মৃত্যুর পর যখন আলেপ্পোর আইয়ুবী শাসক হন, তখন তিনি ৭ বছর বয়সী ছিলেন। তার দাদী দায়ফা খাতুন আদিল কন্যা, ১২৪২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অভিভাক হিসেবে শাসন করেছিলেন।
১২৫০ সালে, যখন মিশরের আইয়ুবী সুলতান সালিহ আইয়ুব মারা যান এবং তার ছেলে তুরানশাহকে মিশরের বাহরি মামলুকদের দ্বারা হত্যা করা হয়, তখন শাজারাতুদ দুর (সালিহ আইয়ুবের বিধবা) মিশরের সিংহাসন দখল করেন। নাসির ইউসুফ একজন আইয়ুবীয় হওয়ার কারণে, শাজারাতুদ দুরকে মিশরের সুলতানা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। এই দাবিকে সমর্থন করে সিরিয়ার আমিররা তাকে সিরিয়ার দামেস্ক শহর প্রদান করেন।[1]
এই ঘটনাগুলো দেখে শঙ্কিত হয়ে, মিশরের মামলুক নেতারা শাজারাতুদ দুররকে আতাবেগ (কমান্ডার ইন চিফ) আইবাকের সাথে প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১২৫০ সালের অক্টোবরে নাসির ইউসুফ মিশর জয় করতে এবং আইবাককে উৎখাত করার জন্য গাজায় বাহিনী পাঠান, কিন্তু ফারিসুদ্দিন আকতাইয়ের নেতৃত্বে মিশরীয় বাহিনী তাদের পরাজিত করে।[2][3]
১২৫১ সালের জানুয়ারীতে নাসির ইউসুফ আরেকটি সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিশরে আক্রমণ করেন এবং একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে আইবাকের সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। শেষপর্যন্ত তিনি পরাজিত হন। তিনি দামেস্কে ফিরে যান, যদিও তার কিছু সৈন্য যারা কায়রোতে পৌঁছাতে পেরেছিল, তারা মিশরের ভিতরে প্রাথমিক ধারণা ছড়িয়ে দেয় যে ইউসুফ যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। পরে যখন আইবাক চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন, তখন নাসির ইউসুফের সেসব সৈন্য ও তাদের সেনাপতিদের গ্রেফতার করা হয় এবং আইবাক প্রায় ৩,০০০ সৈন্যকে গাধার পিঠে করে দামেস্কে ফেরত পাঠায়।[3][4]
১২৫৩ সালে কিছু আমিরের মধ্যস্থতার মাধ্যমে, নাসির ইউসুফ এবং আইবাকের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল যা মিশরীয়দের গাজা, জেরুজালেম, নাবলুস এবং শামের উপকূলরেখার উপর নিয়ন্ত্রণ দেয়।
১২৫৪ সালে মিশরে আরেকটি ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে, কারণ আইবাক বাহরি মামলুকদের নেতা ফারিসুদ্দিন আকতাইকে হত্যা করে। আকতাইয়ের কিছু মামলুক, যেমন- বাইবার্স বুন্দুকদারি এবং কালাউন আলফি সিরিয়ার নাসির ইউসুফের কাছে পালিয়ে যান। তাকে চুক্তি ভঙ্গ করতে এবং মিশরে আক্রমণ করতে প্ররোচিত করেন। আইবাক নাসির ইউসুফকে এই মামলুকদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে লিখেছিলেন যারা সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং তাকে উপকূলে তাদের অঞ্চল দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু নাসির ইউসুফ তাদের বহিষ্কার করতে অস্বীকার করেন এবং পরিবর্তে তাদের অঞ্চলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যা আইবাক মঞ্জুর করেছিলেন।
১২৫৫ সালে নাসির ইউসুফ মিশরীয় সীমান্তে নতুন বাহিনী পাঠান। এবার তিনি বাইবার্স বুন্দুকদারি এবং কালাউন আলফিসহ আকতাইয়ের অনেক মামলুকের সাথে আসেন। কিন্তু তিনি আবার পরাজিত হন।
নাসিরের ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের সাথে যোগাযোগ ও চিঠিপত্র ছিল এবং তিনি আক্রার ব্যারনদের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি পরোক্ষভাবে ফ্রান্সের রাজা নবম লুইকে মিশর জয়ে সহায়তার বিনিময়ে লুইয়ের কাছে জেরুজালেম সমর্পণের সম্ভাবনার পরামর্শ দেন। কিন্তু লুই ইতিমধ্যে সপ্তম ক্রুসেডের সময়ে মিশরে একটি সেনাবাহিনী হারানোর কারণে এবং তার বন্দী সৈন্যদের মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় তখনও এই ধরনের চুক্তি করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। লুই অবশ্য আড়ধনুক তৈরির জন্য উপকরণ ক্রয় করতে তার রাজকীয় অস্ত্রধারীকে দামেস্কে পাঠান এবং ১২৫৪ সালে নাসির ক্রুসেডারদের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেন।
মিশরীয় শাসক আইবাককে ১২৫৭ সালে হত্যা করা হয় এবং তার যুবক পুত্র মানসুর আলী মাত্র ১৫ বছর বয়সে কুতুযকে সহকারী সুলতানের সাথে নতুন সুলতান হন। পরের বছর (১২৫৮) হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বাগদাদ বিজয় করে।
বাইবারস বুন্দুকদারি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নাসির ইউসুফের উচিত তার সেনাবাহিনীকে একত্রিত করা এবং সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কিন্তু এর পরিবর্তে ইউসুফ তার ছেলে মালিক আজিজকে উপহার দিয়ে হালাকুর কাছে পাঠান, মিশর আক্রমণে হালাকুর সহায়তার অনুরোধ করেন। হালাকুর উত্তরে কেবল একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছিল যে, ইউসুফকে দ্রুত মঙ্গোল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এই উত্তরটি নাসির ইউসুফকে ভীত করে তোলে। তিনি সাথেসাথে মিশরে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, সাহায্যের অনুরোধ করেছিলেন। মিশরের সহকারী সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুয মঙ্গোলদের মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি অল্প বয়স্ক বালক দ্বারা শাসন করার সময়ে মিশর নিকটবর্তী বিপদের মুখোমুখি হতে পারে না বলে যুক্তি দিয়ে কুতুয নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেছিলেন এবং একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন করতে শুরু করেছিলেন। যদিও তিনি নাসির ইউসুফকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মঙ্গোলদের বিপদ কাটিয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তার পদক্ষেপ ছিল একটি সাময়িক ব্যবস্থা।
মঙ্গোলরা আলেপ্পোর দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে নাসির ইউসুফের কিছু উপদেষ্টা সর্বোত্তম সমাধান হিসাবে হালাকুর কাছে আত্মসমর্পণের সুপারিশ করেছিলেন। যা বাইবার্স এবং তার মামলুকদের ক্ষুব্ধ করে। এমনকি তারা নাসির ইউসুফকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি তার ভাইয়ের সাথে দামেস্কের দুর্গে পালিয়ে যান এবং তার স্ত্রী, ছেলে এবং অর্থ মিশরে প্রেরণ করেন। দামেস্কের অনেক নাগরিকও সেসময়ে মিশরে পালিয়ে যায়।
মঙ্গোলরা ১২৫৯ সালের ডিসেম্বরে আলেপ্পোতে পৌঁছেছিল। নাসির ইউসুফের চাচা তুরানশাহ আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন।[5] সাত দিন অবরোধের পর মঙ্গোলরা আলেপ্পোতে প্রবেশ করে এবং আরও ছয়দিন ধরে এর জনকগণকে হত্যা করে। তুরানশাহ শহর ত্যাগ করেন এবং কিছুদিন পর মারা যান। আলেপ্পোর পতনের খবর নাসির ইউসুফের কাছে পৌঁছলে তার বাহিনী নিয়ে ৩১শে জানুয়ারী গাজার দিকে পালিয়ে যান, নাবলুসে বেশ কয়েক দিন থামেন এবং একটি দল রেখে যান যা সম্ভবত একটি পৃষ্ঠরক্ষীবাহিনী হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল।[6]
আলেপ্পো পতনের ১৬ দিন পর, জেনারেল কিতবুগার অধীনে দামেস্ক মঙ্গোলদের হাতে পড়ে। দামেস্কের আমিররা বিনা প্রতিরোধে আত্মসমর্পণ করে।[6]
দামেস্ক দখলের পর, কিছু মঙ্গোল সৈন্য ফিলিস্তিনে আক্রমণ করে এবং নাবলুসের জলপাই খাঁজে নাসিরের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করে। এবং তার পুরো বাহিনীকে পরাজিত করে।
যখন মিশরের সীমান্তে পৌঁছেন, নাসির ইউসুফের কিছু আমির তাকে পরিত্যাগ করে এবং কুতুযের সাথে যোগ দেয়। নাসির ইউসুফ, তার ছেলে আজিজ এবং তার ভাই যাহিরকে গাজা থেকে তার এক ভৃত্য অপহরণ করেছিল এবং হালাকুর কাছে পাঠানো হয়েছিল।[7][তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কুতুয এবং বাইবার্সের নেতৃত্বে একটি মিশরীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা আইন জালুতে মঙ্গোল সেনাবাহিনীর পরাজয়ের খবর শোনার পর হালাকু ৩শে সেপ্টেম্বর, ১২৬০ সালে নাসির এবং তার ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।[8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.