Loading AI tools
মিশরের আইয়ুবীয় সুলতান (১২৫০) উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তুরানশাহ বা তুরান শাহ (আরবি: توران شاه; অজ্ঞাত-২ মে ১২৫০ খ্রি.) ছিলেন মিশরের একজন কুর্দি শাসক। তিনি ছিলেন সুলতান সালিহ আইয়ুবের পুত্র। ১২৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালিকুল মুয়াযযাম গিয়াসুদ্দিন তুরানশাহ (আরবি: الملك المعظم غياث الدين توران شاه) উপাধি ধারণ করে আইয়ুবীয় রাজবংশের উত্তরাধিকার হিসেবে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মিশরের সালতানাতে অধিষ্ঠিত হন।
গিয়াসুদ্দিন তুরানশাহ | |||||
---|---|---|---|---|---|
মালিকুল মুয়াযযাম | |||||
মিশরের সুলতান | |||||
রাজত্ব | ২২ নভেম্বর ১২৪৯ – ২ মে ১২৫০ | ||||
পূর্বসূরি | সালিহ আইয়ুব | ||||
উত্তরসূরি | শাজারাতুদ দুর | ||||
জন্ম | অজ্ঞাত | ||||
মৃত্যু | ২ মে ১২৫০ | ||||
| |||||
পিতা | সালিহ আইয়ুব | ||||
ধর্ম | ইসলাম |
তুরানশাহকে তার পিতা উপযুক্ত মনে করতেন না। তিনি তাকে মিশরীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য হিসনে কাইফায় পাঠিয়েছিলেন।[১] তিনি তার পিতার বাহরি মামলুকদের সেনাপতি ফারিসুদ্দিন আকতাইয়ের কাছ থেকে তার পিতার মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছিলেন। আকতাই তাকে ফিরিয়ে আনতে এবং ফ্রান্সের নবম লুই এবং সপ্তম ক্রুসেডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মিশর থেকে তার কাছে গিয়েছিলেন। আকতাই ৬৪৭ হিজরির রমজানের প্রথম দিকে (১২৪৯ ডিসেম্বর) হিসনে কাইফায় পৌঁছেন। ১১ রমজান (১৮ ডিসেম্বর) নাগাদ তুরানশাহ এবং প্রায় পঞ্চাশজন সাথী মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।[২] দলটি বিরোধী আইয়ুবীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হওয়ার জন্য একটি বিকল্প পথ গ্রহণ করে। এবং ২৮ রমজান ৬৪৭ হিজরিতে (৪ জানুয়ারী ১২৫০) তারা দামেস্কের নিকটবর্তী কুসায়ের গ্রামে পৌঁছান। পরের দিন তুরানশাহকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুলতান ঘোষণা করা হলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শহরে প্রবেশ করে।[৩]
তুরানশাহ তিন সপ্তাহ ধরে দামেস্কে অবস্থান করেন। শহরের সৈন্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আনুগত্য রক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিতরণ করেন। এরপর তিনি মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং ১৯ যিলকদ (২৩ ফেব্রুয়ারি) শুধুমাত্র একটি ছোট দল নিয়ে মানসুরায় পৌঁছান। বাহরি মামলুকদের সম্মান ও নির্ভর করার বিষয়ে তার পিতার লিখিত উপদেশ উপেক্ষা করে, তিনি দ্রুত তার নিজস্ব (মুয়াযযামি) মামলুকদের প্রধান পদে নিয়োগ করতে শুরু করেন।[৪] তিনি অনেক কৃষ্ণাঙ্গ দাসকেও উচ্চপদে উন্নীত করেছিলেন। একজন কালো নপুংসককে উস্তাদার (রাজকীয় পরিবারের প্রধান) করা হয়েছিল এবং অন্য একজন আমির জান্দার (রাজকীয় প্রহরীর প্রধান) হয়েছিলেন।[৫] এই উভয় ক্ষেত্র থেকেই তিনি পূর্ববর্তী বাহরি মামলুকদের দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
মামলুক আমলে ইতিহাসবিদদের লেখা তুরানশাহের বিবরণের উপর নির্ভর করা নিরপেক্ষতা হয়না। তবে তাদের মতে, তুরানশাহ ভারসাম্যহীন, কম বুদ্ধি আর স্নায়বিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতেন।[৬] একবার তিনি মোমবাতির উপরিভাগ কেটে ফেলতে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, 'আমি বাহরি মামলুকদের সাথে এভাবেই মোকাবিলা করব!'[৭]
তুরানশাহ ১২৫০ সালে ফারিসকুরের যুদ্ধে মিশরীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটি সপ্তম ক্রুসেডের শেষ যুদ্ধ ছিল। এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এবং ফ্রান্সের লুই নবম বন্দী হয়।
শেষপর্যন্ত বাহরিরা তার প্রতি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা সম্ভবতঃ ধারণা করেছিল (অথবা সত্যই হয়ত), তিনি ক্রুসেডারদের থেকে দামইয়াত পুনরুদ্ধার করার পর তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু করবেন। বাইবার্সের নেতৃত্বে বাহরিদের একটি দল তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ঐতিহাসিক জিন ডে জোনভাইল বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।[৮]
২৮শে মুহাররম ৬৪৮ হিজরিতে (২রা মে ১২৫০) তুরানশাহ একটি বড়সড় ভোজের আয়োজন করেন। ভোজের শেষে বাইবার্স এবং একদল মামলুক ছুটে এসে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। তরবারির আঘাতের ফলে তুরানশাহের একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত হয়ে তিনি নীলনদের পাশের একটি বুরুজে পালিয়ে যান। মামলুকরা তাকে ধাওয়া করে ও বুরুজে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি
তিনি নদীর দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে অগ্নিশিখার দ্বারা নিচে নামিয়েছিলেন, কিন্তু একটি বর্শা দ্বারা পাঁজরে আঘাত করা হয়েছিল। সে বর্শা পিছু পিছু নদীতে পালিয়ে গেল। তার অনুগামীরা তীরে দাঁড়িয়ে তাকে তীর দিয়ে গুলি করেছিল, এমনকি সে তার জীবনের জন্য ভিক্ষা করেছিল, ত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তীরে থেকে তাকে হত্যা করতে না পেরে বাইবার্স নিজেই পানিতে পড়ে সুলতানকে কুপিয়ে হত্যা করে। কথিত আছে যে ফারিস আদ-দিন আকতাই তার হৃদয় কেটে ফেলেন এবং পুরস্কার পাওয়ার আশায় বন্দী লুই নবম এর কাছে নিয়ে যান, যা তিনি করেননি। [৯] কিছু বর্ণনা অনুসারে এটি আসলে বাইবারদের চেয়ে আকতাই ছিল যারা তাকে হত্যা করেছিল। [১০]
তুরানশাহের পিতা সালিহ আইয়ুব ছিলেন রাজবংশের সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি মিশরের উপর কার্যকর শাসন এবং অন্যান্য আইয়ুবীয় অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ছয় বছর বয়সী শিশু আশরাফ মুসাকে বাদ দিলে মিশরে শাসন করার প্রধান আইয়ুবীদের মধ্যে তুরানশাহই শেষ ছিল, যাকে বাহরি মামলুক আইবাক আইয়ুবিদের ব্যহ্যাবরণ হিসেবে মিশরে মামলুকদের শাসনের বৈধতার জন্য উপস্থাপন করার জন্য সংক্ষিপ্তভাবে নামমাত্র সুলতান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেসময়ে সিরিয়ার আইয়ুবীয়রা আক্রমণ করার হুমকি দিচ্ছিল।[১১]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.