Loading AI tools
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত একটি ক্যাথলিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের ধর্মযাজকদের দ্বারা কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ও ২০১৫ সালের ১৫ই জানুয়ারি এটির অভিষেক অনুষ্ঠান হয়। নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহ পূর্ণাঙ্গরূপে ছেলেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কলেজে ২৫০০+ শিক্ষার্থী, ৪৫ জন শিক্ষক এবং ৪৩+ জন অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মীবৃন্দ রয়েছেন।[3][4][5][6][7]
নীতিবাক্য | “জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো” |
---|---|
ধরন | বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক |
স্থাপিত | ২০১৪[1] |
মূল প্রতিষ্ঠান | পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘ |
ধর্মীয় অধিভুক্তি | ক্যাথলিক খ্রিষ্টান গির্জা |
বৃত্তিদান | খ্রিষ্টান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
অধ্যক্ষ | ড. ফাদার থাদেউস হেম্ব্রম, সিএসসি |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৪৩+ জন[2] |
শিক্ষার্থী | ২৫০০ |
অবস্থান | , |
শিক্ষাঙ্গন | নগর, বহুতল |
ভাষা | বাংলা ও ইংরেজি |
পোশাকের রঙ | ক্রিম (শার্ট) কালো (প্যান্ট) |
সংক্ষিপ্ত নাম | এনডিসিএম |
অধিভুক্তি | মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ |
ওয়েবসাইট | ndcm.edu.bd |
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশে কাথলিক ধর্ম বিশ্বাসের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পল পনেন কুবি পবিত্র ক্রুশ যাজক সংঘের কাছে নতুন একটি নটর ডেম কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র ক্রুশ যাজক সংঘের সাধারণ সভায় ময়মনসিংহে নটর ডেম কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর সম্ভাবনা ও বাস্তবায়নের জন্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ফাদার বকুল এস. রোজারিওকে। কমিটি বিভিন্ন সময়ে ময়মনসিংহে আসেন এবং বিশপ ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ময়মনসিংহের বাড়েরা বাইপাস মোড় এলাকায় চার একর জমি ক্রয় করেন।[8]
নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি ক্রয়ের পরপরই এর উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়া হয়। নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য ও অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করার জন্য পবিত্র ক্রুশ সংঘ ১ নভেম্বর ২০১২ সালে ফাদার বকুল এস. রোজারিও-কে দায়িত্ব প্রদান করেন। তহবিল সংগ্রহ, পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি সম্পন্ন করে ১লা মার্চ ২০১৩ সালে কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।[9] নতুন কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ যোসেফ মারিনো।[8]
নির্মাণ কাজের শুরুতেই পরিকল্পনা করা হয় যে ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে।[10] সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১ বছরে নির্মিত হয় কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন। ২০১৪ সালের ৮ই মে ফাদার বকুল এস. রোজারিও আনুষ্ঠানিকভাবে নবপ্রতিষ্ঠিত কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১ জুলাই ২০১৪ সালে ৬৫৮ জন শিক্ষার্থী এবং ১৮ জন শিক্ষকের বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহের যাত্রা শুরু হয়, এদিন একাদশ শ্রেণির ছাত্রদের ক্লাস শুরু হয়।[8] ১০ই জানুয়ারি, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
নটর ডেম কলেজের 'নটর ডেম' শব্দ দুটি ফরাসি ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে। যার অর্থ 'মহীয়সী নারী'। রোমান ক্যাথলিকগণ 'মহীয়সী নারী' বলতে যিশু খ্রিষ্টের মাতা মারিয়া বা মেরিকে বুঝিয়ে থাকেন। তাই ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত এই কলেজটির নাম সেই মহীয়সী নারীকে উৎসর্গ করে রাখা হয়।
কলেজের মূলনীতি হলো Diligite Lumen Sapientiae (দিলিজিতে লুমেন সাপিয়েন্সিয়ে), যার অর্থ “জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো”। ক্যাথলিক ধর্মমতে, যিশু খ্রিষ্টের মা মেরি হলেন জ্ঞানের প্রতীক। 'জ্ঞান' (Sapientiae) শব্দটি কলেজের মুখ্য উদ্দেশ্য একাধারে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানের উৎস স্রষ্টাকে লাভ করার প্রতি ইঙ্গিত করে। 'আলো' (Lumen) শব্দটি দ্বারা অন্ধকারকে দূরীভূত করা ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারার প্রতি ইঙ্গিত করে। আর 'ভালোবাসো' (Diligite) শব্দটি দ্বারা ভালোবাসার সাথে জ্ঞান আহরণের প্রতি ইঙ্গিত করে।
নটর ডেম কলেজের প্রতীকের সবচেয়ে ওপরে রয়েছে একটি খোলা বই, যার বাম পাতায় বড়ো হাতের গ্রিক অক্ষর 'আলফা' (Α) এবং ডান পাতায় বড়ো হাতের 'ওমেগা' (Ω) রয়েছে। আলফা-ওমেগা হলো গ্রিক বর্ণমালার, যথাক্রমে প্রথম ও শেষ অক্ষর। এর দ্বারা একই সাথে সমগ্র জ্ঞান এবং বাইবেলের রিভিলেশন অধ্যায়ের যিশুর একটি উক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে। এছাড়া বই হচ্ছে জ্ঞানের বাহক। ডানদিকের ক্ষেত্রটির জলময় নদী, চলমান নৌকা, সোনালি ধানক্ষেত আর সীমাহীন নীলাকাশশোভিত দৃশ্যটি সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের বুকে কলেজটির অবস্থান প্রতিকায়িত করে। নিচের ক্ষেত্রটিতে আড়াআড়িভাবে স্থাপিত দুটি নোঙরের বুকে স্থাপিত ক্রুশ চিহ্নটি পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের প্রতীক। এই প্রতীক দ্বারা প্রতীকায়িত করা হয় যে, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু যেমন মানব জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছিল, তেমনি ক্রুশার্পিত সেই যিশুকে নোঙরের ন্যায় আঁকড়ে ধরে পরিত্রাণ লাভ সম্ভব। নোঙর আশার প্রতীক। ক্রুশ থেকে চারদিকে যে আলো ছড়িয়ে পড়ছে, তা যিশুর আলো ও মহানুভবতার প্রতীক।
নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহে বর্তমানে “ডিরেক্টর অব গাইডেন্স” বা "ছাত্র পরিচালক" এবং “আসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব গাইডেন্স” বা "সহকারী ছাত্র পরিচালক" তাদের দপ্তর থেকে পাঠ কার্যক্রম এবং শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়গুলি তত্ত্বাবধান করেন। কলেজে শতভাগ উপস্থিতি প্রত্যাশিত, এবং ৮০ শতাংশের কম উপস্থিতি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের দুটি বাধ্যতামূলক কুইজ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়, যার ফলাফল তাদের সার্বিক ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত হয়। নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগারগুলো অন্যান্য সমমানের প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধ। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে গড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা চারটি বিষয়ের ব্যবহারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। ব্যবহারিক ক্লাসে কোনো ত্রুটি বা অবহেলা দেখা দিলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন স্থগিত করা হয়। ছাত্রদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এবং যারা এতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। [11]
এ কলেজে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহযোগী শিক্ষামূলক এমন কিছু কার্যক্রমের ব্যবস্থা আছে যা শিক্ষার্থীর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে এবং কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্নভাবে সহায়ক হয়। এসব ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ও কৃতিত্ব জীবনভর তাদের কাছে স্মৃতি হয়ে থাকে। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য কলেজে ১৪টি ক্লাব রয়েছে। প্রত্যেকটি ক্লাবের পরিচালক বা মডারেটর হিসেবে আছেন এক বা একাধিক শিক্ষক। তাঁর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন প্রকার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ক্লাবভিত্তিক সহযোগী শিক্ষাকার্যক্রম সমন্বয় করার জন্য আছেন একজন ক্লাব সমন্বয়কারী। ক্লাবের পরিচালক বা মডারেটরগণ তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনা করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এভাবে পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক বিদ্যার পাশাপাশি ছাত্রদের বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায়, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানার্জনে, বিতর্ক অনুশীলনে, সাহিত্য আলোচনায়, প্রকৃতি পরিদর্শনে, ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে মেধা ও মানবিক গুণাবলির বিকাশে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করা হয়। উপরন্তু, এ সকল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে এবং এভাবে নটর ডেম কলেজে তাদের অধ্যয়নকাল অধিকতর আনন্দময় হয়ে ওঠে। একজন ছাত্র সর্বোচ্চ ২টি ক্লাবের সদস্য হতে পারবে।
শরীরচর্চা পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে কলেজের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ছাত্রদের বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করায় উৎসাহিত করা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন কলেজ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠান শিক্ষকবৃন্দের সহায়তায় পরিচালিত হয়।
কলেজের নিজস্ব প্রকাশনা মাতৃকানন বার্ষিক মুখপত্র প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ক্লাবগুলো তাদের নিজস্ব সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, দেয়াল-পত্রিকাসহ বিভিন্ন নিউজ লেটার প্রকাশনা প্রকাশ করে থাকে। এ সমস্ত পত্রিকায় ছাত্রদের নিজস্ব লেখা প্রকাশিত হয়। [12]
নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহের বিতর্ক দল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্কে রানার-আপ ও আইইডি আয়োজিত নারী ও পরিবেশ বিষয়ক বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.