দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার (তিব্বতি: དགའ་ལྡན་, ওয়াইলি: dga' ldan) বা দ্গা'-ল্দান-র্নাম-র্গ্যাল-গ্লিং (ওয়াইলি: dga' ldan rmam rgyal gling) মধ্য তিব্বতের লাসা বিভাগে অবস্থিত দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধবিহার।
দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার | |
---|---|
স্থানাঙ্ক: | ২৯°৪৫′২৮.৮″ উত্তর ৯১°২৮′৩০″ পূর্ব |
মঠের তথ্য | |
অবস্থান | তিব্বত, চীন |
প্রতিষ্ঠাতা | ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা |
স্থাপিত | ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দ |
ধরন | তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম |
ধর্মীয় গোষ্ঠী | দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায় |
প্রধান লামা | দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা |
মহাবিদ্যালয় | ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয় শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয় |
১৪১০ খ্রিষ্টাব্দে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের আর্থিক সাহায্যে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা নামক দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা লাসা শহর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার পূর্বে ৪৩০০ মিটার উচ্চতায় 'ব্রোগ-রি (ওয়াইলি: 'Brog ri) পর্বতে দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।[1] ভবিষ্যতের বুদ্ধ মৈত্রেয়ের পবিত্র বাসস্থান তুষিতা (তিব্বতীতে দ্গা'-ল্দান) স্বর্গের নামকরণ অনুসারে এই বিহারের নামকরণ করা হয়। ঐ বছরেই বিহারের মূল মন্দির এবং সত্তরটির ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা চক্রসম্বর, বজ্রভৈরব ও গুহ্যসমাজতন্ত্র নামক অনুত্তরযোগতন্ত্রের তিন তন্ত্রকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি ত্রিমাত্রিক মন্ডল নির্মাণ করেন, যা তার জীবনের চতুর্থ মহান কৃতিত্ব হিসেবে পরিচিত।
দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহারের প্রধানদের দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা (তিব্বতি: དགའ་ལྡན་ཁྲི་པ་, ওয়াইলি: dga' ldan khri pa) বা গানদেন ত্রিপা বলা হয়ে থাকে। স্মোন-লাম-লেগ্স-পা'ই-ব্লো-গ্রোস নামক অষ্টম দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পার সময় থেকে এই পদে পর্যায়ক্রমিক ভাবে ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়র প্রধান বা ব্যাং-র্ত্সে-ছোস-র্জে (ওয়াইলি: Byang-rtse Chos-rje) এবং শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়র প্রধান বা শার-র্ত্সে-ছোস-র্জে (ওয়াইলি: Shar-rtse Chos-rje) অধিষ্ঠিত থাকেন। ব্স্তান-'দ্জিন-লেগ্স-ব্শাদ নামক ছত্রিশতম দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পার সময়কালে এই বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শার-র্ত্সে (ওয়াইলি: Shar-rtse) এবং ব্যাং-র্ত্সে (ওয়াইলি: byang rtse) মহাবিদ্যালয়ের ভিক্ষুদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে এবং শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের ভিক্ষুরা বিহারের প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করেন। এই রকম বিরোধের নিরসনের জন্য নিয়ম করে দেওয়া হয় যে বিহারের দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা সর্বোচ্চ সাত বছরের বেশি প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। নিম্নে এই বিহারের সকল প্রধানের তালিকা প্রদত্ত হল।
দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার তিব্বতের অন্যতম প্রধান একটি ধর্মীয় বিশ্বপবিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠে। ম্খাস-গ্রুব-র্জে-দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং নামক বিহারের তৃতীয় প্রধানের সময়কালে এই বিহার দ্পাল-ল্দান (ওয়াইলি: dpal-ldan), য়ার-'ব্রোগ (ওয়াইলি: Yar-'brog), পাঞ্চেন শাক্যশ্রী এবং ছোস-গ্রাগ্স (ওয়াইলি: Chos-grags) এই চারটি মহাবিদ্যালয়ে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে দ্পাল-ল্দান (ওয়াইলি: dpal-ldan) ও য়ার-'ব্রোগ (ওয়াইলি: Yar-'brog) মহাবিদ্যালয় দুটিকে একত্র করে ব্যাং-র্ত্সে (ওয়াইলি: Byang-rtse) মহাবিদ্যালয় এবং পাঞ্চেন শাক্যশ্রী ও ছোস-গ্রাগ্স (ওয়াইলি: Chos-grags) মহাবিদ্যালয় দুটিকে একত্র করে শার-র্ত্সে (ওয়াইলি: Shar-rtse) মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়। ব্যাং-র্ত্সে কথাটির অর্থ উত্তর দিকের শিখর এবং শার-র্ত্সে কথাটির অর্থ পূর্ব দিকের শিখর। ব্লো-স্ব্যোং-ন্যি-মা'ই-'ওদ (ওয়াইলি: Blo-sbyong nyi-ma'i 'od) গ্রন্থের রচয়িতা হোর-স্তোন-নাম-ম্খা'-দ্পাল-ব্জাং (ওয়াইলি: Hor-ston nam-mkha' dpal-bzang) ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গ্নাস-ব্র্তান-রিন-ছেন-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: gnas-brtan rin-chen rgyal-mtshan)। দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং নামক বিহারের একুশতম প্রধানের সময়কালে নবপ্রতিষ্ঠিত গ্সাং-ফু-ন্যাগ-রোং (ওয়াইলি: gsang-phu nyag-rong) মহাবিদ্যালয়কে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্রীভূত করা হয়।[2]
ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে ক্লু-'বুম (ওয়াইলি: Klu-'bum), ত্শা-বা (ওয়াইলি: Tsha-ba), ব্সাম-লো (ওয়াইলি: bsam-blo), হার-গ্দোং (ওয়াইলি: Har-gdong), গ্সের-স্কোং (ওয়াইলি: gser-skong), ত্রে-হোর (ওয়াইলি: Tre-hor), র্গ্যাল-রোং (ওয়াইলি: rgyal-rong), স্বা-তি (ওয়াইলি: sba-ti), ম্ঙ্গা'-রিস (ওয়াইলি: mNga'-ris), র্দো-রা (ওয়াইলি: rdo-ra), ব্রা-ন্যি (ওয়াইলি: Bra-nyi), গো-বো (ওয়াইলি: Go-bo) এবং কোং-পো (ওয়াইলি: Kong-po) এই তেরোটি বিভাগ বা খাং-ত্শান (ওয়াইলি: khang-tshan) ছিল। পরবর্তীকালে স্বা-তি ও ম্ঙ্গা'-রিস বিভাগদুটির অবলুপ্তি ঘটানো হয় এবং ফা-রা নামক একটি নতুন বিভাগ (ওয়াইলি: Pha-ra) খোলা হয়। অপরদিকে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে র্দো-খাং (ওয়াইলি: rdo-khang), ফু-খাং (ওয়াইলি: Phu-khang), ন্যাগ-রে (ওয়াইলি: Nyag-re), ল্হো-পা (ওয়াইলি: Lho-pa), জুং-ছু (ওয়াইলি: Zung-chu), থে-পো (ওয়াইলি: The-po), চো-নি (ওয়াইলি: Co-ni), র্তা-'ওন (ওয়াইলি: rta-'on), ম্ঙ্গা'-রিস (ওয়াইলি: mnga'-ris), সোগ-পা (ওয়াইলি: Sog-pa) এবং গুং-রু (ওয়াইলি: Gung-ru) এই এগারোটি বিভাগ ছিল। ভিক্ষুরা তাদের জন্মভূমি অনুসারে এই বিভাগে ভর্তি হতে পারত, যেমন মঙ্গোলিয়ায় জন্মগ্রহণ করা কোন ভিক্ষু হার-গ্দোং বিভাগে ভর্তি হতে পারত।[2]
দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহারের এই দুইটি মহাবিদ্যালয়ে ভিক্ষুরা সূত্র ও তন্ত্র উভয় বিষয় সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে পারতেন। উভয় মহাবিদ্যালয়েই ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা, র্গ্যাল-ত্শাব-র্জে-দার-মা-রিন-ছেন এবং ম্খাস-গ্রুব-র্জে-দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং এই প্রথম তিনজন বিহার প্রধানের রচিত গ্রন্থ সম্বন্ধে পড়ানো হত। এছাড়া শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে পান-ছেন-ব্সোদ-নাম্স-গ্রাগ্স-পা নামক পঞ্চদশ দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা রচিত সূত্র সম্বন্ধীয় গ্রন্থগুলি সম্বন্ধে শিক্ষাদান করা হত।[2]
গণচীনের বিরুদ্ধে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতীদের বিদ্রোহের সময় দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লাল রক্ষক এই বিহারের ওপর গোলাবর্ষণ করে।[3]:৯৯ বিহারের ভিক্ষুদের বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পার সংরক্ষিত দেহ পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য করা হয়, শুধু তার মাথার খুলি একজন ভিক্ষু কোন রকমে সরিয়ে রাখতে সমর্থ হন।.[4] ১৯৮০-এর দশকে এই বিহারের পুনর্নির্মাণ শুরু হয়।[3]:৯৯,১০০
তিব্বতের নির্বাসিত জনগণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে মুন্ডগোদ নামক স্থানে ভারত সরকার দ্বারা প্রদত্ত জমিতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই বিহারে ১৩,০০০ ভিক্ষু বসবাস করতেন। যদিও এই বিহারে প্রাচীন পাঠ্যক্রমকেই অনুসরণ করা হয়, তবুও আধুনিক কলাকৌশল, যোগাযগ ব্যবস্থা, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা, হস্তশিল্পকেন্দ্র প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার সূচনা করা হয়েছে। র্দো-র্জে-শুগ্স-ল্দান বিতর্কে চতুর্দশ দলাই লামাকে বিরোধিতা করায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় র্দো-খাং বিভাগের প্রায় পাঁচশো ভিক্ষুকে এই বিহার থেকে নির্বাসিত করা হলে তারা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে নিকটেই শার গাদেন নামক একটি নতুন বৌদ্ধবিহার স্থাপন করেন। এরফলে র্দো-খাং বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়।[5]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.