Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দালাইলুল খাইরাত (دلائل الخیرات) বা দলিল উ'ল খয়রাত ওয়া শরীক উ'ল আনওয়ার ফী যিকরি'স সালাত আলান নাবিয়্যি'ল মুখতার (অর্থ:নির্বাচিত নবীর উপর বর্ষিত রহমতের স্মরণে আলোর উজ্জ্বল স্ফূরণ এবং কল্যাণ কামনার উপায়) হলো ইসলামী নবী মুহাম্মদ (স.)-এর জন্য প্রার্থনা করার একটি বিখ্যাত সংকলন যেটি লিখেছিলেন মরক্কোর সাধিলি সুফি এবং ইসলামী পণ্ডিত মুহাম্মাদ সুলাইমান আল-জাযুলী আশ সাধিলি(মৃত্যু ১৪৬৫)। এটি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী মুসলিমগণের নিকট বিশেষভাবে উত্তর আফ্রিকা, লেভ্যান্ট, তুরস্ক, ককেশাস, দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় এবং প্রত্যহ পাঠ করার সুবিধার্থে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করা আছে।
মরোক্কোর হাদীস বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল তালিদি দালাইলুল খাইরাত সম্পর্কে লিখেছেন: পূর্ব থেকে পশ্চিমে লক্ষ লক্ষ মুসলমান এটি পাঠ করেছে এবং এর কল্যাণ, এর মঙ্গল এবং বহু শতাব্দী ও প্রজন্ম ধরে পাওয়া উপকার খুঁজে পেয়েছে, এবং এর অবিশ্বাস্য আধ্যাত্মিক কল্যাণ এবং উজ্জ্বলতা প্রত্যক্ষ করেছে। মুসলিমরা অতি আগ্রহ সহকারে একাকী কিংবা দল বেঁধে, ঘরে এবং মসজিদে প্রিয়তমের কল্যাণ কামনায় এবং তাঁর প্রশংসা করে এটি পড়তো। [1]
দালাইলুল খাইরাত ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বড় আকারের গ্রন্থ যাতে মুহাম্মাদ (স.) এর উপর শান্তি এবং রহমত বর্ষণ বিষয়ক প্রার্থনা-সঙ্গীত প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও এটি সৃষ্টিকর্তার নিকট তারঁ (মুহাম্মদ (স.)) জন্য কল্যাণ কামনা বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত গ্রন্থ। কতিপয় সুন্নি ধারায়, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সাধিলি-জাযুলী ধারায় এটি পাঠ করা প্রাত্যহিক রীতি। অন্যদের মাঝে এটি পাঠ করা পুরোপুরি ঐচ্ছিক প্রাত্যহিক রীতি। এটি পাঠ করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা'লার ৯৯টি নাম দিয়ে শুরু করা হয় এবং পরে মুহাম্মাদের শতাধিক নাম পাঠ করা হয়। [2]
দালাইলুল খাইরাতের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত কিংবদন্তীটি হলো, আল-জাযুলী একবার সকালের নামাজে দেরি করে ঘুম থেকে জেগেছিলেন এবং ওযু করার জন্য পাক-পবিত্র পানির অনুসন্ধানে নিরর্থক চেষ্টা করেন। আল-জাযুলী তার অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে একটি যুবতী মেয়ের সম্মুখীন হন যে আল-জাযুলীর ধার্মিকতার খ্যাতি সম্পর্কে অবগত এবং বিস্মিত হয়েছিল যে আল-জাযুলী পবিত্র পানি কেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মেয়েটি তখন একটি কুয়োর মধ্যে থুথু নিক্ষেপ করে যা অলৌকিকভাবে আল-জাযুলীর জন্য বিশুদ্ধ মিষ্টি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। প্রার্থনা সম্পন্ন করার পর, আল-জাযুলী মেয়েটির নিকট এমন আধ্যাত্মিক ক্ষমতা অর্জনের উপায় জানতে চান। মেয়েটি জবাব দেয়, এটি কেবল আল্লাহর নিকট সৃষ্টির সেরা জীবের প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দনের সমসংখ্যক অবিরাম রহমত বর্ষণের জন্য একনিষ্ঠ প্রার্থনার ফল।
আল-জাযুলী তখন আল্লাহর নিকট মুহাম্মাদ (স.) এর প্রতি রহমত এবং ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করার জন্য প্রার্থনার সঙ্গীতের একটি গ্রন্থ লিখতে স্থিরপ্রতিজ্ঞ হন। আল-জাযুলী তখন পূর্ব দিকে মদিনায় স্থানান্তরিত হন, যেখানে তিনি মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ (স.) এর রওজায় প্রতিদিন দু'বার করে দালাইলুল খাইরাত পাঠ করেন। দালাইলুল খাইরাতকে তখন থেকে মুহাম্মাদ (স.) এর প্রতি ভালবাসা এবং প্রগাঢ় আকাঙ্ক্ষার সাক্ষ্যপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দালাইলুল খাইরাতের উপর অনেক ব্যাখ্যা লিখা হয়েছিলো-সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ইউসুফ আন-নাভানীর আফদাল আল-সালাত এবং আবদ আল-মজিদ আল-শারনুবী আল-আজহারী এর শারহে দলিল আল খয়রাত। কারা দাউদ নামক একজন উসমানীয় আলেম এর একটি ক্ল্যাসিক উসমানীয় যুগের লেখনী মুয়াফিক-উল খয়য়াত লিনায়েল-ইল বারকাত ফি খিদমত-আস সাদাত যা সংক্ষেপে কারা দাউদ নামে পরিচিত দালাইলুল খাইরাতের একটি জনপ্রিয় ব্যাখ্যা পত্র।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.