Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তাশখন্দ চুক্তি হচ্ছে ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে পাকিস্তান ও ভারত এর মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি,যা ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সমাধান করে।[1] জাতিসংঘ,আমেরিকা ও সোভিয়েতর চাপে তাশখন্দ সম্মেলনে,ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের পূর্বের চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে বাধ্য করেছিল-একে অপরের জয়যুক্ত অঞ্চলগুলি ছেড়ে দিতে এবং কাশ্মীরের ১৯৪৯ সালের যুদ্ধবিরতির সীমান্ত চুক্তি মেনে চলা।[2][3]
ধরণ | শান্তি চুক্তি |
---|---|
প্রেক্ষাপট | ১৯৬৫-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ |
স্বাক্ষর | ১০ জানুয়ারি ১৯৬৬ |
স্থান | তাসখন্দ,উজবেকিস্তান |
স্বাক্ষরকারী | লাল বাহাদুর শাস্ত্রী (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) মুহাম্মদ আইয়ুব খান (পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি) |
অংশগ্রহণকারী | ভারত পাকিস্তান |
ভাষাসমূহ | বাংলা |
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তিনটি রণাঙ্গনে যুদ্ধ বাধে। এর ১৭ দিন পরে যুদ্ধ বিরতি কার্যকরী হয়। জাতিসংঘ দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী কে ১৯৬৫ সালের ৫ই আগস্টের অবস্থানে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়। যুদ্ধবিরতির পরেও সৈন্য অপসারণসহ বেশ কিছু প্রশ্নে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। এই বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান, সোভিয়েত ইউনিয়ন এর প্রধানমন্ত্রী নিকলাই কোসিগিনের উদ্যোগে তাশখন্দ শহরে মিলিত হয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন,যা তাশখন্দ চুক্তি নামে পরিচিত।[4][5]
দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি তাশখন্দ চুক্তির মূলকথা। দুই পক্ষ নিজেদের বিরোধ মীমাংসার জন্য পরস্পরের মধ্যে শক্তি প্রয়োগ না করে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ উপায় গ্রহণ করবেন বলে একমত হন। পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, কোন বিরুদ্ধ প্ররোচনায় উৎসাহ না দেওয়া এবং ১৯৬১ সালের,ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত হন। [1] দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কার্যকরী করার ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে বিবেচনা করবেন বলেও একমত হন তারা। যুদ্ধবন্দিদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় এই চুক্তিতে। যুদ্ধের সময় এক দেশ অন্য দেশের যে সম্পদ দখল করেছে তা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারেও সম্মত হন দুই পক্ষ।[6]
ভারতে চুক্তির সমালোচনা করা হয়েছিল কারণ আর কোন যুদ্ধ নয় চুক্তি বা কাশ্মীরের গেরিলা যুদ্ধবিগ্রহের আত্মত্যাগ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। চুক্তি স্বাক্ষর পর,ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর তাসখন্দে রহস্যজনকভাবে মারা যান।[6] শাস্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যুর ফলে হয়ে ওঠে ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের দিকে যে তাকে বিষ দেওয়া হয়।[7] ভারত সরকার তার মৃত্যুর উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করতে প্রত্যাখ্যান করে,দাবি করা হয় যে তাতে বিদেশী সম্পর্ক ক্ষতি করতে পারে,দেশে বিভেদের কারণ হতে পারে এবং সংসদীয় বিশেষ সুবিধা লঙ্ঘন করতে পারে।[7] তাসখন্দ ঘোষণা অনুযায়ী,মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ১ এবং ২ মার্চ ১৯৬৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।এই আলোচনাগুলি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও,বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে কূটনৈতিক বিনিময় অব্যাহত ছিল।কাশ্মিরের সমস্যা নিয়ে মতপার্থক্য থাকার কারণে এই আলোচনায় কোন ফল পাওয়া যায়নি।১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় এক রমরমা গড়ে উঠেছিল,যা পাকিস্তানে জনগণের ধারণায় তারা যুদ্ধ জয় করতে যাচ্ছে।তাশখন্দ ঘোষণার সংবাদে পাকিস্তানের জনগণকে বিস্মিত করে,যারা কিছু ভিন্ন প্রত্যাশা করেছিল।পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায় কারণ আইয়ুব খান চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কারণগুলি ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানান।পাকিস্তান জুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও দাঙ্গা সূত্রপাত হয়।[6] জনগণের রাগ ও বিভ্রান্তি দুরীভূত করবার জন্যে আইয়ুব খান ১৯৬৬ সালের ১৪ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে জনগণের সামনে বিষয়টি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন।তাশখন্দ ঘোষণার ওপর পার্থক্য ছিল,যার ফলে শেষ পর্যন্ত জেড।এ।ভুট্টোকে অপসারণ করেছিল আইয়ুবের সরকার,যিনি পরবর্তীকালে তার নিজস্ব দল তৈরি করেন,“পাকিস্তান পিপলস পার্টির” নামকরণ করে।যদিও আইয়ুব খান জনগণের বিভ্রান্তি সন্তুষ্ট করতে সক্ষম ছিলেন,তাশখন্দ ঘোষণার ফলে তার ভাবমূর্তি ক্ষতি হয় এবং এটি একটি কারণ যা তার পতন ঘটায়।[8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.